মোদি যে বক্তব্য দিলেন, তাতে তেমন নতুন কোনো চমক নেই by ইমতিয়াজ আহমেদ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে বক্তব্য দিলেন,
তাতে তেমন নতুন কিছু পাওয়া গেল না। ফলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ
সফরের প্রথম দিনটি অনেকটা চমকহীনভাবেই কাটল বলে ধারণা করি। একটা জিনিস
লক্ষণীয় যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। এটা আসলে এ
বার্তাই তুলে ধরে যে এ সফর থেকে তেমন কিছু মিলবে না। তিনি যদি একটা বড়
প্রতিনিধিদল নিয়ে আসতেন, তাহলে বোঝা যেত নানা ক্ষেত্রে কার্যকর কিছু করার
পরিকল্পনা নিয়ে তিনি এসেছেন। এ সফরে এ পর্যন্ত যেসব চুক্তি ও সমঝোতা
স্মারক সই হয়েছে, তা ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই ধরে নিতে পারি। ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফর নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে যে বড়
ধরেনর আশাবাদ দেখা দিয়েছিল কিংবা গণমাধ্যমসহ নানা মহল থেকে যে ধরনের
প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছিল, তার তেমন প্রতিফলন অন্তত প্রথম দিনে টের পাওয়া
গেল না।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে আসছে। সেই ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এ সফরে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু হবে এমন আশা নিশ্চয়ই করা হয়নি। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি না পাওয়া একধরনের আশাভঙ্গই বলতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে ভারত সরকারের চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বেশি ক্ষমতাবান নেতা। তাই নরেন্দ্র মোদি এ সফরে তিস্তা নিয়ে নতুন কোনো কথাই শোনাতে পারেননি।
কানেক্টিভিটি দিয়ে শুধু এপারের জিনিস ওপারে আসা–যাওয়া করলেই খুব ফল পাওয়া যাবে না দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বা সংযোগের কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে, কিন্তু এর সুফল কতটুকু ও কীভাবে মিলবে, তা খুব পরিষ্কার নয়। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের চাওয়া–পাওয়ার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কানেক্টিভিটি দিয়ে শুধু এপারের জিনিস ওপারে আসা–যাওয়া করলেই খুব ফল পাওয়া যাবে না। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে আমাদের দরকার উৎপাদনকেন্দ্রিক অবকাঠামো। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এ বিনিয়োগ কী ধরনের হবে তা পরিষ্কার নয়। আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল পাইনি। এ ধরেনর কিছু থাকলে অন্তত একটি বার্তা পাওয়া যেত।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে এটা মনে হচ্ছে যে ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব এখনো কিছুটা রয়ে গেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই কংগ্রেসের সঙ্গে বিশেষ এবং কার্যত ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এমনকি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতের নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সমালোচনা করেছিলেন। কংগ্রেসের ক্ষেত্রে তিনি তা করেননি। এখন নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গেই সম্পর্ক ধরে রাখতে হচ্ছে। এটা দুই দেশের সরকারের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বাধা হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রসঙ্গও নরেন্দ্র মোদির বিবেচনায় থাকতে পারে। আমাদের কাছে হয়তো তা স্পষ্ট নয়। নরেন্দ্র মোদি হয়তো এমন কোনো বার্তা দিতে চাচ্ছেন না, যাতে এটা মনে হয় যে শুধু বর্তমান সরকারের সঙ্গেই তারা সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। মোদি হয়তো চান না যে তাঁর সফর থেকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারি দল খুব বেশি লাভবান হোক বা অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে—এমন দাবি করার ভিত্তি তৈরি হোক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমস্যা সমাধানের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টিও তাঁর কাছে বিবেচ্য হতে পারে।
ইমতিয়াজ আহমেদ: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে আসছে। সেই ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এ সফরে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু হবে এমন আশা নিশ্চয়ই করা হয়নি। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি না পাওয়া একধরনের আশাভঙ্গই বলতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে ভারত সরকারের চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বেশি ক্ষমতাবান নেতা। তাই নরেন্দ্র মোদি এ সফরে তিস্তা নিয়ে নতুন কোনো কথাই শোনাতে পারেননি।
কানেক্টিভিটি দিয়ে শুধু এপারের জিনিস ওপারে আসা–যাওয়া করলেই খুব ফল পাওয়া যাবে না দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বা সংযোগের কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে, কিন্তু এর সুফল কতটুকু ও কীভাবে মিলবে, তা খুব পরিষ্কার নয়। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের চাওয়া–পাওয়ার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কানেক্টিভিটি দিয়ে শুধু এপারের জিনিস ওপারে আসা–যাওয়া করলেই খুব ফল পাওয়া যাবে না। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে আমাদের দরকার উৎপাদনকেন্দ্রিক অবকাঠামো। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এ বিনিয়োগ কী ধরনের হবে তা পরিষ্কার নয়। আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল পাইনি। এ ধরেনর কিছু থাকলে অন্তত একটি বার্তা পাওয়া যেত।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে এটা মনে হচ্ছে যে ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব এখনো কিছুটা রয়ে গেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই কংগ্রেসের সঙ্গে বিশেষ এবং কার্যত ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এমনকি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতের নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সমালোচনা করেছিলেন। কংগ্রেসের ক্ষেত্রে তিনি তা করেননি। এখন নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গেই সম্পর্ক ধরে রাখতে হচ্ছে। এটা দুই দেশের সরকারের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বাধা হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রসঙ্গও নরেন্দ্র মোদির বিবেচনায় থাকতে পারে। আমাদের কাছে হয়তো তা স্পষ্ট নয়। নরেন্দ্র মোদি হয়তো এমন কোনো বার্তা দিতে চাচ্ছেন না, যাতে এটা মনে হয় যে শুধু বর্তমান সরকারের সঙ্গেই তারা সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। মোদি হয়তো চান না যে তাঁর সফর থেকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারি দল খুব বেশি লাভবান হোক বা অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে—এমন দাবি করার ভিত্তি তৈরি হোক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমস্যা সমাধানের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টিও তাঁর কাছে বিবেচ্য হতে পারে।
ইমতিয়াজ আহমেদ: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments