বেশি ভোট পরিবর্তনের ইঙ্গিত?

বিভিন্ন রাজ্যে ভোট পড়ার হিসাব
দিনের শুরু যদি সারা দিনের পূর্বাভাস হয়; তাহলে বলতেই হবে, ভারতের এবারের নির্বাচন আগের অনেক ভোটের শতাংশের হিসাবকে ছাপিয়ে যাবে। এবার বিপুল ভোট পড়ার রহস্য কী এবং তাতে কাদের লাভ, তা নিয়েই শুরু হয়ে গেছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। গত বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফায় দেশের ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সর্বত্রই ভোটের হার অনেক বেশি। শুধু বেশিই নয়, কোনো কোনো রাজ্যে ৫-৬ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার রাতে প্রদত্ত ভোটের যে হার জানিয়েছে, চূড়ান্ত গণনার পর তা আরও কিছুটা বাড়বে। সব সময়েই তা হয়। কারণ, সারির শেষ ব্যক্তিটির ভোটদান পর্যন্ত অপেক্ষা করা জরুরি। তা ছাড়া ডাকের ব্যালটের হিসাবও হয় পরে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দিল্লিতে সাত কেন্দ্রের ভোটের হার ৬৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। শেষ হিসাবে এই সংখ্যা ৬৬ শতাংশে যেতে পারে। যদি নাও বাড়ে, এই হার ১৯৮৪ সালের প্রদত্ত ভোটের হারের প্রায় সমান। ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর দিল্লিতে ভোট পড়েছিল ৬৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অবশ্য রাজধানীতে ১৯৭৭ সালে সবচেয়ে বেশি ৭১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অতীতে যে দুবার বেশি ভোট পড়েছে, দুবারই মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে। ১৯৭১ সালে কংগ্রেসকে পাল্টে জনতা দলের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, ১৯৮৪ সালের ভোটে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল ইন্দিরার চিতার ওপর দিয়ে। গত ডিসেম্বরে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট পড়েছিল ৬৭ শতাংশের মতো। সেবারও কিন্তু বেশি ভোট দেওয়ার মাধ্যমে দিল্লির মানুষ কংগ্রেসকে ছেড়ে আম আদমি পার্টিকে (এএপি) সমর্থন দিয়েছিল। দিল্লির মতোই অন্য রাজ্যগুলোতেও এবার ভোট পড়েছে যথেষ্ট বেশি। কেরালায় পড়েছে ৭৬ শতাংশ। ২০০৯ সালে পড়েছিল ৭৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
চণ্ডীগড়ে ৭৪ শতাংশ (২০০৯-এ ৬৫ দশমিক ৫১)। হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, ছত্তিশগড়েও একই চিত্র। লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল সুভাষ কাশ্যপ মনে করেন, ‘দিল্লিসহ অন্যত্র মানুষের আগ্রহের মধ্য দিয়ে এটুকু অন্তত বোঝা যায়, মানুষ অন্য এক উৎসাহ নিয়ে এবার ভোট দিয়েছে।’ সেই উৎসাহের অর্থ কি সরকারের বিরোধিতা? কংগ্রেসের শাকিল আহমেদ তা মনে না করলেও বিজেপির মীনাক্ষী লেখি বলেন, ‘বিধানসভার ভোট দেখলেই তা বোঝা যাবে। বিধানসভায় দিল্লির মানুষ দলে দলে ভোট দিয়েছে কংগ্রেসকে সরাতে। লোকসভায় ভোট দিচ্ছে মোদির সরকারকে আবাহন করতে।’ সাধারণভাবে মনে করা হয়, বেশি ভোটদানের মাধ্যমে মানুষ একটা বার্তা দিতে চায়। সেই বার্তা সাধারণভাবে সরকারবিরোধী হয়ে থাকে। কিংবা ১৯৮৪ সালের মতো যদি আবেগঘন কোনো বিষয় হয়। এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় বিশ্বাস, এই বিপুল ভোটদান প্রধানত কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণেই। কিন্তু সেই বিরোধিতা কি মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে আবাহন? কিন্তু উত্তর প্রদেশের মুসলমানরা কী ভেবে ভোট দিলেন? মুজাফফরনগরে এবার ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে, যা বহু বছর দেখা যায়নি। ফল বেরোলে বোঝা যাবে, বিজেপিকে রুখতে রাজ্যের মুসলিম জনতা কোন দলকে বেছে নিল। পাশাপাশি মোদিকে ঘিরে হিন্দু মেরুকরণ হলো কি না।
বিভিন্ন রাজ্যে ভোট পড়ার হিসাব
২০০৯ লোকসভা ৫২%
২০১৩ বিধানসভা ৬৫.৯%
দিল্লি ৬৬%
রাজ্য (আসন) ২০১৪ ২০০৯
কেরালা (২০) ৭৩.৪ ৭৩.২
হরিয়ানা (১০) ৭০.৮ ৫৭.৯
ওডিশা (১০+৭০*) ৬৭.০ ৬৫.৩
জম্মু-কাশ্মীর (১) ৬৬.৩ ৪৯.৭
উত্তর প্রদেশ (১০) ৬৫.০ ৫১.৩
মধ্যপ্রদেশ (৯) ৬০.০ ৫৩.৮
ঝাড়খন্ড (৪) ৫৮.০ ৫০.৯
মহারাষ্ট্র (১০) ৬২.৪ ৫৫.৭
বিহার (৬) ৫৫.০ ৪১.৬
ছত্তিশগড় (১) ৫১.৫ ৪৭.৩
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (আসন) ২০১৪ ২০০৯
লাক্ষ্মাদ্বীপ ৮০.০ ৮৫.৯
চণ্ডীগড় (১) ৭৪.০ ৬৪
আন্দামান ও নিকোবর (১) ৬৭.১ ৬৪.২
ইসির দেওয়া হিসাব *বিধানসভা শতাংশে হিসাব

No comments

Powered by Blogger.