১৫ বিচারপতির শপথ -বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা অগ্রহণযোগ্য
সুপ্রিম কোর্টের ১৫ অতিরিক্ত বিচারকের শপথ অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের অনুপস্থিতি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ১৭ বিচারপতির মধ্যে ১৫ জনকে প্রধান বিচারপতি রোববার শপথবাক্য পাঠ করান। দুজনকে শপথ না পড়ানোর চেয়ে এবারের বিচারক বাছাইয়ে সার্বিক অস্বচ্ছতা অনেক বেশি উদ্বেগজনক।
উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই। উচ্চ আদালতের বিচারকাজ প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে জটিল ও সংবেদনশীল কাজ। এখানে বিশেষজ্ঞ-জ্ঞান, উঁচু নৈতিকতা, সততা ও নিষ্ঠা না থাকলে কারও উচিত নয় এই পদ লাভের আশা করা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় মাঝেমধ্যেই দুর্ভাগ্যজনক সব ঘটনা ঘটেছে। বিচারক বাছাইয়ে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে সে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অন্তঃসারশূন্য হতে বাধ্য।
২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ বিচারক নিয়োগে একটি বিস্তারিত নীতিমালা তৈরি করে। ২০০৯ সালে আপিল বিভাগ তাতে কিছুটা সংশোধনী আনে। এই নীতিমালার মূল নির্দেশনা হলো, বিচারক নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। এই স্বচ্ছতা বিমূর্ত কোনো বিষয় নয়। কেউ একজন দাবি করলেই চলবে না যে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়েছে। আপিল বিভাগের রায় বলেছে, সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই প্রক্রিয়াটির অবশ্যই লিখিত রূপ থাকতে হবে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের বক্তব্য থেকে এটা অনুমান করতে অপারগ যে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার কোনো চেষ্টা আদৌ হয়েছিল। সে কারণে আমরা মনে করি, এবারের বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়া আপিল বিভাগের নিজের বেঁধে দেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী হয়নি। এটা ঠিক যে, নতুন নীতিমালায় প্রধান বিচারপতির পরামর্শকেই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতির একক কর্তৃত্ব খাটানোর কোনো সুযোগ সেখানে রাখা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দুঃখজনকভাবে দলীয় রাজনৈতিক রেখায় বিভক্ত। বিচারক নিয়োগের প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা একই দিন পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থী শীর্ষস্থানীয় নেতারা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুজন বিচারকের শপথ পাঠ না করাতে একটি অবস্থান নেন। কিন্তু তাঁরা সার্বিকভাবে বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়ার বৈধতা কিংবা শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা দেখেছি যে বিএনপির আমলে বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট অস্বচ্ছ। অযোগ্য ও অদক্ষ বিচারক নিয়োগের নিন্দা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার তখন লিখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ওই সিদ্ধান্তপ্রণেতারাই পরে ১০ বিচারকের মামলায় বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার প্রশ্নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এবার একই ধরনের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণের পর সেই সরব মুখগুলো আশ্চর্যজনক নীরবতা পালন করেছেন।
আপিল বিভাগের বিচারকেরা কেন শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকেছেন তা স্পষ্ট নয়, তবে বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়ার সার্বিক প্রক্রিয়াগত অস্বচ্ছতা নিরসনে তাঁরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। বিচারপতি মো. আবদুল মতিন তাঁর দীর্ঘ রায়ে ২১টি দেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে যথার্থই মন্তব্য করেছেন, সংসদীয় গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রবণতা হলো বিচারক বাছাইয়ে কমিশন গঠন করা। সংসদকে অবশ্যই এ-সংক্রান্ত বিলুপ্ত অধ্যাদেশের আদলে একটি আইন করতে হবে। ইতিমধ্যে সংসদীয় কমিটি যোগ্যতানির্ধারণী আইন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে আপিল বিভাগের রায় থাকা সত্ত্বেও বিচারক বাছাই যে স্বচ্ছ ও শুদ্ধ প্রক্রিয়ায় হলো না, তা মার্জনা করা যায় না।
উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই। উচ্চ আদালতের বিচারকাজ প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে জটিল ও সংবেদনশীল কাজ। এখানে বিশেষজ্ঞ-জ্ঞান, উঁচু নৈতিকতা, সততা ও নিষ্ঠা না থাকলে কারও উচিত নয় এই পদ লাভের আশা করা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় মাঝেমধ্যেই দুর্ভাগ্যজনক সব ঘটনা ঘটেছে। বিচারক বাছাইয়ে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে সে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অন্তঃসারশূন্য হতে বাধ্য।
২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ বিচারক নিয়োগে একটি বিস্তারিত নীতিমালা তৈরি করে। ২০০৯ সালে আপিল বিভাগ তাতে কিছুটা সংশোধনী আনে। এই নীতিমালার মূল নির্দেশনা হলো, বিচারক নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। এই স্বচ্ছতা বিমূর্ত কোনো বিষয় নয়। কেউ একজন দাবি করলেই চলবে না যে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়েছে। আপিল বিভাগের রায় বলেছে, সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই প্রক্রিয়াটির অবশ্যই লিখিত রূপ থাকতে হবে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের বক্তব্য থেকে এটা অনুমান করতে অপারগ যে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার কোনো চেষ্টা আদৌ হয়েছিল। সে কারণে আমরা মনে করি, এবারের বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়া আপিল বিভাগের নিজের বেঁধে দেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী হয়নি। এটা ঠিক যে, নতুন নীতিমালায় প্রধান বিচারপতির পরামর্শকেই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতির একক কর্তৃত্ব খাটানোর কোনো সুযোগ সেখানে রাখা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দুঃখজনকভাবে দলীয় রাজনৈতিক রেখায় বিভক্ত। বিচারক নিয়োগের প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা একই দিন পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থী শীর্ষস্থানীয় নেতারা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুজন বিচারকের শপথ পাঠ না করাতে একটি অবস্থান নেন। কিন্তু তাঁরা সার্বিকভাবে বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়ার বৈধতা কিংবা শুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা দেখেছি যে বিএনপির আমলে বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়াও ছিল যথেষ্ট অস্বচ্ছ। অযোগ্য ও অদক্ষ বিচারক নিয়োগের নিন্দা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার তখন লিখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ওই সিদ্ধান্তপ্রণেতারাই পরে ১০ বিচারকের মামলায় বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার প্রশ্নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এবার একই ধরনের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণের পর সেই সরব মুখগুলো আশ্চর্যজনক নীরবতা পালন করেছেন।
আপিল বিভাগের বিচারকেরা কেন শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকেছেন তা স্পষ্ট নয়, তবে বিচারক বাছাই-প্রক্রিয়ার সার্বিক প্রক্রিয়াগত অস্বচ্ছতা নিরসনে তাঁরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। বিচারপতি মো. আবদুল মতিন তাঁর দীর্ঘ রায়ে ২১টি দেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে যথার্থই মন্তব্য করেছেন, সংসদীয় গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রবণতা হলো বিচারক বাছাইয়ে কমিশন গঠন করা। সংসদকে অবশ্যই এ-সংক্রান্ত বিলুপ্ত অধ্যাদেশের আদলে একটি আইন করতে হবে। ইতিমধ্যে সংসদীয় কমিটি যোগ্যতানির্ধারণী আইন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে আপিল বিভাগের রায় থাকা সত্ত্বেও বিচারক বাছাই যে স্বচ্ছ ও শুদ্ধ প্রক্রিয়ায় হলো না, তা মার্জনা করা যায় না।
No comments