বঙ্গোপসাগরের দীর্ঘতম উপকূল রেখা আমাদের

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ‘ভূমিবেষ্টিত’ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে ভারতে। থাইল্যান্ডে চলমান বে-অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) সম্মেলনে ড. ইউনূসের কথার সূত্র ধরে বিমসটেকে ভারতের কৌশলগত ভূমিকার কথা জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি ৬৫০০ কিলোমিটার উপকূলরেখা এবং বিমসটেকের ৫টি সদস্য দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক সংযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন ভাষণে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ উপলক্ষে জয়শঙ্করের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, সর্বোপরি বঙ্গোপসাগরে আমাদের প্রায় ৬৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা আছে। ভারত শুধু ৫টি বিমসটেক সদস্যের সঙ্গেই তার সীমান্ত ভাগাভাগি করে এমন নয়,  একই সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং আসিয়ানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। বিশেষ করে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলটি বিমসটেকের জন্য একটি সংযোগকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এখানে সড়ক, রেলপথ, জলপথ, গ্রিড এবং পাইপলাইনের অসংখ্য নেটওয়ার্ক রয়েছে। তিনি বলেন, বিমসটেকের ২৮তম বার্ষিকীতে এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছি আমরা। বর্তমানে আমরা অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং এক অস্থির সময়ে, যখন বিশ্বব্যবস্থা নিজে থেকেই পরিবর্তনের মুখে। এটা আমাদেরকে বিমসটেককে আরও উচ্চাভিলাসী উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেবে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের আশপাশে এবং তার কাছাকাছি দেশগুলোর একটি অভিন্ন স্বার্থ ও উদ্বেগ রয়েছে। এর কিছু অংশ এসেছে আমাদের ইতিহাস থেকে। ফলে এ অঞ্চলের মঙ্গলের জন্য অন্য অগ্রাধিকারগুলোর চেয়েও বড়। এর ফল এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিমসটেক সদস্যদের মধ্যে সংযুক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ বা সেবাখাত যেটাই হোক না কেন, আমরা এসব ক্ষেত্রে আমাদের প্রকৃত সম্ভাবনার চেয়ে কম কাজ করছি। যদি সেটা পরিবর্তন করতে চাই আমরা তাহলে অতীত এবং ভবিষ্যৎ উভয়ই আমাদের বন্ধু। একটি হলো ঐতিহ্য, নীতি এবং অভ্যাস, যা এখন সমসাময়িক হতে পারে। অন্যটি হতে পারে নতুন হাতিয়ার এবং একেবারে নতুন সম্ভাবনা। উল্লেখ্য, চারদিনের চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভূমিবেষ্টিত। তাদের ‘সমুদ্রে যাওয়ার কোনো পথ নেই’।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তিনি তাদের সমুদ্রের সুযোগ পাওয়ার প্রাথমিক গেটওয়ে বলে মন্তব্য করেন। ড. ইউনূস বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর জন্য বেইজিংকে উৎসাহিত করেন। বলেন, এই অঞ্চলে বাংলাদেশ হলো সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। তার এ বক্তব্যের ফলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ভারতে। জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, আমরা এ বিষয়ে সচেতন যে, আমাদের পণ্য, পরিষেবা এবং এই বৃহৎ ভৌগোলিক ক্ষেত্রের জনগণের জন্য তা প্রবাহ করার জন্য সহযোগিতা ও সুবিধা প্রধান একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এই ভূ-কৌশলগত বিষয়কে মাথায় রেখে আমরা গত দশকে বিমসটেককে শক্তিশালী করার জন্য ক্রমবর্ধমান শক্তি ও মনোযোগ নিবেদন করেছি। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, সহযোগিতা হলো একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। এটা চেরি তোলার মতো সময় নয়। ওদিকে ড. ইউনূসের বক্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা। তিনি একে আক্রমণাত্মক এবং নিন্দনীয় বলে অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে এমন উস্কানিমূলক বিবৃতিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তিনি আরও সতর্ক করেছেন যে, ড. ইউনূসের এমন মন্তব্য চিকেন নেক করিডোর নিয়ে আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কৌশলগত দাবার ঘুঁটি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এমন অভিযোগ করেছেন মণিপুরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.