আমেরিকা পাঠানোর কথা বলে নেপালে জিম্মি: ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
ভুক্তভোগী তারেক আজিজ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের খানাতুয়া গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে। অভিযুক্ত আশেক একই উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের মৃত ইছহাক মিয়ার ছেলে। তিনি কুমিল্লা পশ্চিম অঞ্চলের ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। শনিবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারেক বলেন, বিগত ২০২৩ সালের ১১ই নভেম্বর দুপুরে আশেক তার বাবাকে জানান, তার ছেলেকে কম কষ্টে সহজ রুটে আমেরিকা নেয়া হবে। বিনিময়ে ৪৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আশেক আরও জানান, বৈধ পথে ঙহ অৎৎরাধষ ভিসায় নেপাল গিয়ে সেখান থেকে ইঋঝ এর মাধ্যমে ভিসা নিয়ে ব্রাজিল হয়ে মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। আশেক একজন রাজনীতিবিদ হওয়ায় তারেকের বাবা ছেলের
ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রাজি হয়। পরে আশেক এবং তারেক ও তার পরিবারকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকার টুরিজম এইড লিমিটেড নামে একটি এজেন্সিতে নিয়ে যান। সেখানে চুক্তি হয় ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রথমে ২ লাখ টাকাসহ পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে জমা নেন। বাকি ৪৩ লাখ টাকা তারেক মেক্সিকো অবস্থান করছেন এমন সত্যতা নিশ্চিত করলে মধ্যস্থতাকারী লাকসাম উপজেলার আঙ্গারিয়া এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজাউল করিম রতনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করা হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ই ডিসেম্বর তারেককে নেপালের কাঠমুণ্ডুর একটি গোডাউনে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেখানে তার মোবাইল ফোন, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নেয় আশেকের ভাড়া করা লোকজন। পরে তারেকের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার বাবার হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ড পাঠাতে বাধ্য করে ‘তারেক মেক্সিকো অবস্থান করছে বলে’ বলতে। তারেক বাধ্য হয়ে তার বাবাকে ভয়েস পাঠান। রেকর্ড পেয়ে তার বাবা চুক্তির বাকি ৪৩ লাখ টাকার মধ্যে ৪০ লাখ টাকা রেজাউলের অ্যাকাউন্টে এবং ৩ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করেন।
টাকা পাওয়ার পর, চক্রটি তারেকের চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িতে করে কাঠমুণ্ডুর একটি রাস্তায় ফেলে চলে যায়। পরে ঘটনার কথা তারেক তার বাবাকে ফোন করে বিস্তারিত জানান।
পরে নেপাল পুলিশের সহযোগিতায় আউট পাসের মাধ্যমে ওই বছরের ২৩শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে ফেরত আসেন তারেক। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সহায়তায় কয়েক দফায় সালিশ বৈঠক বসে। সালিশে আশেক ৪৫ লাখ টাকা এবং ক্ষতিপূরণসহ ৪৬ টাকা পরিশোধ করবেন বলে স্ট্যাম্প করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারেক অভিযোগ করে বলেন, স্ট্যাম্প দেয়ার পরেও আশেক ১ টাকাও পরিশোধ না করে উল্টো হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। ২০২৪ সালের ৯ই মে ঢাকার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে চারজনকে আসামি করে মামলা করেন তারেক। কিন্তু মামলার পর পরোয়ানা জারি হলেও অদ্যাবধি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশের সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মশিউর রহমান বলেন, এ মামলার দেড় মাসের মধ্যে আমি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
No comments