চেয়ারম্যান সাইফুলের দখল সাম্রাজ্য: ক্ষমতার দাপটে অন্যের জমি, সরকারি খাল দখল করে গড়েছেন ফিসারি-খামার

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অন্যের জমি ও সরকারি খাল দখল করে পুকুর খনন, খামার নির্মাণ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় ‘বালুখোর’ নামে পরিচিত সাইফুল ইসলামের হাত থেকে গ্রামের নিরীহ মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও রক্ষা পায়নি। তাদের জায়গা জমি জবর দখল করে বিশাল মাছের ফিসারি গড়ে তুলেছে সাইফুল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং ভূমি অফিস চেয়ারম্যান সাইফুলের সকল অপকর্মের সত্যতা পেলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থাানীয়দের। তবে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের কচুরি মৌজার সরকারি জায়গায় এবং খাল অবৈধভাবে দখল করে পুকুর খনন করেছে এমনকি সেখানে মাছ চাষের পাশাপাশি মুরগির খামারও তৈরি করেছে। সরজমিন গিয়েও এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। এদিকে খাল ভরাট করায় বর্ষাকালে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে একদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি না পাওয়ায় কৃষকের ফসল বিনষ্ট হচ্ছে এবং অন্যদিকে বর্ষাকালে ফসল ডুবে লোকসানের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে ভয়ে কেউই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন না।

চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। ভারী ট্রাক্টর দিয়ে বালু পরিবহন করায় একদিকে স্থানীয় রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয়  মানুষদের বাড়িঘর এবং পার্শ্ববর্তী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অসংখ্য ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় না থাকলেও তার ক্ষমতা কমেনি। এখনো তিনি জবরদখল অব্যাহত রেখেছে। যেই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চায়, তাকেই সে নানাভাবে হয়রানি করে। এর আগে কয়েকবার সংখ্যালঘু ও গ্রামের নিরীহ মানুষের জায়গা-জমি জবরদখল করে মাছের খামার গড়ে তোলার অভিযোগে রয়েছে। প্রশাসনের কাছে বিচার চাইতে গেলে দলীয় প্রভাবের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল সরকারি জায়গায় এবং খাল দখল করে পুকুর খননের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা বলে জানান। এ সমস্ত জমিগুলো তাদের পৈতৃক সম্পত্তি বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং নিরীহ মানুষদের জোরপূর্বক জমি দখলের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা নিয়ে পূর্বে তদন্ত হলেও কোনো প্রমাণ নেই। বালু উত্তোলনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গায় এবং খাল দখল করে মাছের খামার নির্মাণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। আর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল জানান, যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বা সরকারি জায়গায় দখল করে পুকুর নির্মাণ করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.