আতঙ্ক নয়, আস্থার পরিবেশ চায় কমিশন



দল, পক্ষ, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে উঠে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা।  বৈষম্যের ঊর্ধ্বে থেকে রাগ অনুরাগ প্রশ্রয় না দিয়ে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞা ও মেধা খাটিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে হবে। আতঙ্ক নয়, কমিশন চায় আস্থার একটি পরিবেশ। একেবারে নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন করতে চাই, আমাদের কাছে কোনো দল কিংবা মত নেই। গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনী নির্দেশনামূলক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। প্রথম ধাপে গতকাল ২১৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। তিন ধাপে মোট ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দিকনির্দেশনা দেবে কমিশন। ভোটগ্রহণের আগের দিন, ভোটগ্রহণের দিন এবং ভোটগ্রহণের পরের দুইদিন নির্বাচনের মাঠে নিয়োজিত থাকবেন তারা।
নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্য করে সিইসি বলেন, আপনারা সংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনি স্বাধীন, আপনি নিরপেক্ষ, আপনি বিচারক, বিচারকের মাইন্ড আপনাকে অ্যাপ্লাই করতে হবে। কেএম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠুভাবে করবেন, সেটি আপনি আপনার মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে বিবেচনা করবেন। সংবিধান, জাতি, রাজনৈতিক  দল ও ভোটারের  কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন দায়বদ্ধ। আস্থা অর্জনের জন্য নিরপেক্ষভাবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন সিইসি। বিচারকদের উদ্দেশ্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে হলুদ গণতন্ত্র চাই না। চাই স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক গণতন্ত্র। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে স্বচ্ছ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মাহবুব তালুকদার বলেন, বিচারকের দৃষ্টি হতে হবে নির্মোহ। তিনি অবশ্যই আইনানুগ মন বা ‘লিগ্যাল মাইন্ডের’ অধিকারী হবেন। যিনি এই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হবেন, তিনি বিচারকের যোগ্যতা হারাবেন। তিনি বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ ও পরিপালনের পূর্বশর্ত হলো আইনের শাসন। আইনের শাসন না থাকলে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আমরা হলুদ গণতন্ত্র বলতে পারি। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে আইনসিদ্ধ করার বিষয়ে এসব বিচারকের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম বা বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করলে তা নির্বাচনকে ত্রুটিমুক্ত করার বিষয়ে অবদান রাখবে। বিচারকের দৃষ্টি হতে হবে নির্মোহ। তিনি অবশ্যই আইনানুগ মন বা ‘লিগ্যাল মাইন্ডের’ অধিকারী হবেন। যিনি এই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হবেন, তিনি বিচারকের যোগ্যতা হারাবেন। অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বিচারকদের সর্বোচ্চ সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার। জানান, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ভুয়া সাক্ষ্য প্রমাণে শাস্তি না পায়। মাহবুব তালুকদার বলেন, আপনাদের কাছে চাওয়া খুব সামান্য। একজন ভোটার নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, এটুকুই তো চাওয়া। রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই সামান্য চাওয়া বাস্তবায়িত করতে এক বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। কোনো প্রার্থী যেন ভোটের মাধ্যমে নিজের উপযুক্ততা প্রমাণ না করে সংসদের পবিত্র আসনে বসতে না পারে, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে বিচারকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, কালো টাকা ও পেশিশক্তির সুযোগ নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সংসদে কেউ যেন না যায় তার জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এজন্যই সমগ্র জাতির প্রত্যাশা একটি পরিচ্ছন্ন সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন আর সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন মানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। নির্ভয়ে সাহসিকতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি আহ্বান জানান এই কমিশনার। কেউ এ বিষয়ে শিথিলতা দেখালে বা পক্ষপাতিত্ব করলে ১৯৯১ সালের আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। পরে দিনব্যাপী ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের নানা বিষয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের অবহিত করেন নির্বাচন কমিশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নে বিচারকদের একক কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি কমিশন। ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জানান, কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তারা প্রবেশ করতে পারবেন। আবার আরেকজন নির্বাচন কমিশনার কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে আইনি বাধার কথা তুলে ধরেছেন। আরো কয়েকজন বিচারক জানান, এমন ধোঁয়াশা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে কিছুটা চ্যালেঞ্জের। আমাদের বিষয়টা আরো খোলাসা করার প্রয়োজন ছিল। মঙ্গলবার আরো ২১৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এই ব্রিফিংয়ে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়।

No comments

Powered by Blogger.