টানা বিভীষিকার পর আধা দিনের যুদ্ধবিরতি
টানা ১৯ দিনের বিভীষিকার পর গতকাল শনিবার ১২ ঘণ্টার জন্য দম নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ফিলিস্তিনের গাজাবাসী। ইসরায়েল-হামাস উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মানবিক অস্ত্রবিরতি। এই সময়টুকুতে বাড়ি ফিরে অনেক ফিলিস্তিনি ধ্বংসাবশেষের ভেতরে আটকে পড়া স্বজনদের তল্লাশির পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়ার ফুরসত পেয়েছেন। তবে অস্ত্রবিরতির ঠিক আগে ইসরায়েলের এক হামলাতেই নিহত হয়েছেন অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি। গাজার খান ইউনুস এলাকায় নিহত ওই ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের সদস্য অন্তত ১৬ জন। খবর এএফপি ও বিবিসির।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল আটটায় মানবিক অস্ত্রবিরতি শুরু হয়। তখন পর্যন্ত গাজায় ১৯ দিনের ইসরায়েলি অভিযানে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ৯৪০। আহত প্রায় ছয় হাজার। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষে নিহতের সংখ্যা ৩৮। ফিলিস্তিনের গাজা শাসনকারী ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি গত শুক্রবার রাতে বলেন, শনিবার ১২ ঘণ্টার জন্য একটি মানবিক অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে একটি ‘জাতীয় মতৈক্য’ হয়েছে। পরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীও (আইডিএফ) নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টে অস্ত্রবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে আক্রান্ত হলে জবাব দেওয়ারও হুমকি দেয় তারা। আইডিএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসীরা আইডিএফের সদস্যদের আক্রমণ করার জন্য এই সময়কে ব্যবহার করলে বা ইসরায়েলি বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়লে আমরা তার জবাব দেব।’ এ ছাড়া মানবিক অস্ত্রবিরতি চলাকালেও গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গগুলোর অবস্থান ‘নির্ণয় ও নিষ্ক্রিয় করা’ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় তারা। এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেই গতকাল সকাল আটটায় অস্ত্রবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজা উপত্যকায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে। ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শাজাইয়া, খান ইউনুস, বেইত হানুনসহ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় সকাল আটটার পরপরই লোকজনের ঢল নামে। যদিও তা না করতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। চারদিকে দেখা যায় ধ্বংসের চিহ্ন।
এদিকে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি একটি অস্ত্রবিরতির জন্য গতকালই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আন্তর্জাতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সেখানে তুরস্ক, কাতার, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টানা বৈঠকে মিলিত হন। অন্তত এক সপ্তাহের অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে কেরির শুক্রবারের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাঁর ওই অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েল এদিন প্রত্যাখ্যান করে। তবে কেরি দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে এখনো আশাবাদী। প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর মিসরের কায়রোতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একটি অস্ত্রবিরতির ব্যাপারে সম্মত হতে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের সামনে ‘কিছু পরিভাষা এখনো রয়েছে’। এরপর কেরি গতকাল ফ্রান্সের প্যারিসে উড়ে যান। সেখানে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াস গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওই বৈঠকের আয়োজন করেন। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গাজায় একটি অস্ত্রবিরতির জন্য যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি তৈরি করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে এককাট্টা করা।’ গাজা থেকে ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের রকেট নিক্ষেপ বন্ধ করার ধুয়া তুলে ৮ জুলাই ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী। এই অভিযান প্রথম দিকে আকাশ ও নৌপথ থেকে বোমা নিক্ষেপ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৭ জুলাই ট্যাংক ও কামান নিয়ে স্থল অভিযানও শুরু হয়।
No comments