ফাইনালের বাঁশরিয়া
পুলিশ আর রেফারির মধ্যে মিল কোথায়? সাধারণ একটা মিল, দুজনের কাছেই থাকে বাঁশি। আরও কিছু মিল থাকলেও থাকতে পারে। সেটি সবচেয়ে ভালো জানার কথা হাওয়ার্ড ওয়েবেরই। ভদ্রলোক পেশায় শুধু রেফারিই নন, পুলিশও!
ইংল্যান্ডের সাউথ ইয়র্কশায়ারের এই পুলিশ সার্জেন্ট আগামীকাল পুলিশের খুঁতখুঁতে চোখ নিয়েই নামবেন জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপের ফাইনাল পরিচালনের দায়িত্ব যে বর্তেছে তাঁরই কাঁধে। একই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ আর বিশ্বকাপ—দুটো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে দায়িত্ব পালন করা প্রথম রেফারিও হতে যাচ্ছেন ওয়েব। রেফারিংয়ের কাজটা যেন নির্বিঘ্নে করতে পারেন, সে জন্য তাঁকে পুলিশের চাকরি থেকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের ছুটি। ওয়েবের এই ‘কৃতিত্বে’ ইয়র্কশায়ার পুলিশও নিশ্চয়ই গর্বিত!
ইংলিশরাও হয়তো খুশি। যাক, অন্তত ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব তো থাকছে। তবে স্পেন মোটেও খুশি হতে পারছে না। এবারের বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন স্প্যানিয়ার্ডরা। ওই অঘটনের ম্যাচের দায়িত্বে ছিলেন ওয়েব। যে ম্যাচে স্পেনের দুটো পেনাল্টির দাবিতে সাড়া দেননি এই ৩৮ বছর বয়সী। সেই দুঃখ তো আছেই, স্পেন ওয়েবকে তাদের জন্য অপয়াও ভাবতে পারে। ইতালিকে ৩-২ গোলে স্লোভাকিয়া যে হারিয়ে দিল, ওই ম্যাচের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এক বিশ্বকাপে দু-দুটো অঘটনের সাক্ষী হয়ে আছেন। কাল না জানি কী হয়!
ভয়ের কিছু নেই। রেফারিং নিয়ে তুমুল বিতর্কের এই বিশ্বকাপে ওয়েব এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ধারাবাহিক। ১৫টি পেনাল্টি আর ১৬টি লাল কার্ডের কোনোটাই তাঁর হাত দিয়ে হয়নি। মুণ্ডিত মস্তক, পেল্লায় শরীর—দেখতে ষন্ডামার্কা চেহারা হলেও মুখে সব সময়ই বন্ধুসুলভ হাসি। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে রাখতে হয়, সেটি ভালোই জানা আছে তাঁর। ২০০৫ সালে ফিফার রেফারি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে তাঁর দ্রুত উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ফিফা সেটারই স্বীকৃতি দিল ফাইনালের দায়িত্ব দিয়ে।
এত বড় একটা দায়িত্ব পেয়েছেন, ওয়েবের স্ত্রী কে ওয়েব খুশি নিশ্চয়ই। মনের ভেতর যা-ই থাক, মিসেস ওয়েব কিন্তু এই বলে খোঁচা দিলেন, মাঠে ২২ জন খেলোয়াড়কে ওয়েব কী করে সামলান, সেটি তাঁর মাথাতেই ঢোকে না। ব্রিটেনের জিএমটিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জানি না কাজটা ও কীভাবে করে। নিজের বাচ্চাদেরই তো ও সামলাতে পারে না। ফুটবল মাঠ কী করে সামলায়, কে জানে!’
রহস্য একটা আছে নিশ্চয়ই। না হলে দুই দশক ধরে কাজটা তিনি কীভাবে করে আসছেন। হ্যাঁ, এর মধ্যে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক যে হয়নি, তা নয়। সেটি কোন রেফারিকে নিয়ে হয় না। ওয়েব সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছিলেন ২০০৮ ইউরোয়, যখন তাঁর এক সিদ্ধান্তে পোল্যান্ডের বিপক্ষে যাওয়ার পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘ওকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে’ মন্তব্য করেছিলেন। পরে অবশ্য পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন তাঁর কাছে।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে রেফারিং শুরু করা ওয়েব গত ৩৬ বছরে প্রথম ইংলিশ রেফারি হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালের দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বশেষ ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানি বনাম হল্যান্ড ফাইনালে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইংল্যান্ডের জ্যাক টেলর। ওই ম্যাচে টেলর দুবার বাজিয়েছিলেন পেনাল্টির বাঁশি। প্রথমটি আবার ছিল একদম ম্যাচের শুরুতেই। বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথম পেনাল্টি ছিল ওটাই।
বোঝাই যাচ্ছে, টেলর কী পরিমাণ স্নায়ুর পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সপ্ততিপর বৃদ্ধ টেলর আশ্বস্ত, দরকার পড়লে ওয়েবও আগামীকাল সেটি দেবেন, ‘দুই বছর ধরে ওর উন্নতি আমি নজরে রেখেছি। ওকে ফাইনালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছি। ও সত্যিই এটার যোগ্য।’
রেফারিং জিনিসটা বোধ হয় ওয়েবের রক্তেই আছে। তাঁর বাবা-চাচাও ছিলেন এই পেশায়। বাবা বিলি জিএমটিভিকে বলেছেন, ‘আমি আমার ছেলেকে দায়িত্বটা নিতে অনুপ্রাণিত করেছি। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে এখনো বিস্ময় হয়ে আছে। আমার ছেলে বিশ্বকাপের ফাইনালে দায়িত্ব পালন করছে, এটি যেন আমি কল্পনাও করতে পারছি না!’
বিলির আর কল্পনা করে কাজ নেই। তিনি বরং আরেকটা দিন অপেক্ষা করুন। সকার সিটিতে ওয়েব লম্বা ফুঁ দেবেন বাঁশিতে। আর সেই ফুঁতেই শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপের আসল লড়াই।
ইংল্যান্ডের সাউথ ইয়র্কশায়ারের এই পুলিশ সার্জেন্ট আগামীকাল পুলিশের খুঁতখুঁতে চোখ নিয়েই নামবেন জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপের ফাইনাল পরিচালনের দায়িত্ব যে বর্তেছে তাঁরই কাঁধে। একই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ আর বিশ্বকাপ—দুটো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে দায়িত্ব পালন করা প্রথম রেফারিও হতে যাচ্ছেন ওয়েব। রেফারিংয়ের কাজটা যেন নির্বিঘ্নে করতে পারেন, সে জন্য তাঁকে পুলিশের চাকরি থেকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের ছুটি। ওয়েবের এই ‘কৃতিত্বে’ ইয়র্কশায়ার পুলিশও নিশ্চয়ই গর্বিত!
ইংলিশরাও হয়তো খুশি। যাক, অন্তত ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব তো থাকছে। তবে স্পেন মোটেও খুশি হতে পারছে না। এবারের বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন স্প্যানিয়ার্ডরা। ওই অঘটনের ম্যাচের দায়িত্বে ছিলেন ওয়েব। যে ম্যাচে স্পেনের দুটো পেনাল্টির দাবিতে সাড়া দেননি এই ৩৮ বছর বয়সী। সেই দুঃখ তো আছেই, স্পেন ওয়েবকে তাদের জন্য অপয়াও ভাবতে পারে। ইতালিকে ৩-২ গোলে স্লোভাকিয়া যে হারিয়ে দিল, ওই ম্যাচের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এক বিশ্বকাপে দু-দুটো অঘটনের সাক্ষী হয়ে আছেন। কাল না জানি কী হয়!
ভয়ের কিছু নেই। রেফারিং নিয়ে তুমুল বিতর্কের এই বিশ্বকাপে ওয়েব এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ধারাবাহিক। ১৫টি পেনাল্টি আর ১৬টি লাল কার্ডের কোনোটাই তাঁর হাত দিয়ে হয়নি। মুণ্ডিত মস্তক, পেল্লায় শরীর—দেখতে ষন্ডামার্কা চেহারা হলেও মুখে সব সময়ই বন্ধুসুলভ হাসি। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে রাখতে হয়, সেটি ভালোই জানা আছে তাঁর। ২০০৫ সালে ফিফার রেফারি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে তাঁর দ্রুত উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ফিফা সেটারই স্বীকৃতি দিল ফাইনালের দায়িত্ব দিয়ে।
এত বড় একটা দায়িত্ব পেয়েছেন, ওয়েবের স্ত্রী কে ওয়েব খুশি নিশ্চয়ই। মনের ভেতর যা-ই থাক, মিসেস ওয়েব কিন্তু এই বলে খোঁচা দিলেন, মাঠে ২২ জন খেলোয়াড়কে ওয়েব কী করে সামলান, সেটি তাঁর মাথাতেই ঢোকে না। ব্রিটেনের জিএমটিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জানি না কাজটা ও কীভাবে করে। নিজের বাচ্চাদেরই তো ও সামলাতে পারে না। ফুটবল মাঠ কী করে সামলায়, কে জানে!’
রহস্য একটা আছে নিশ্চয়ই। না হলে দুই দশক ধরে কাজটা তিনি কীভাবে করে আসছেন। হ্যাঁ, এর মধ্যে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক যে হয়নি, তা নয়। সেটি কোন রেফারিকে নিয়ে হয় না। ওয়েব সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছিলেন ২০০৮ ইউরোয়, যখন তাঁর এক সিদ্ধান্তে পোল্যান্ডের বিপক্ষে যাওয়ার পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘ওকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে’ মন্তব্য করেছিলেন। পরে অবশ্য পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন তাঁর কাছে।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে রেফারিং শুরু করা ওয়েব গত ৩৬ বছরে প্রথম ইংলিশ রেফারি হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালের দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বশেষ ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানি বনাম হল্যান্ড ফাইনালে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইংল্যান্ডের জ্যাক টেলর। ওই ম্যাচে টেলর দুবার বাজিয়েছিলেন পেনাল্টির বাঁশি। প্রথমটি আবার ছিল একদম ম্যাচের শুরুতেই। বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথম পেনাল্টি ছিল ওটাই।
বোঝাই যাচ্ছে, টেলর কী পরিমাণ স্নায়ুর পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সপ্ততিপর বৃদ্ধ টেলর আশ্বস্ত, দরকার পড়লে ওয়েবও আগামীকাল সেটি দেবেন, ‘দুই বছর ধরে ওর উন্নতি আমি নজরে রেখেছি। ওকে ফাইনালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছি। ও সত্যিই এটার যোগ্য।’
রেফারিং জিনিসটা বোধ হয় ওয়েবের রক্তেই আছে। তাঁর বাবা-চাচাও ছিলেন এই পেশায়। বাবা বিলি জিএমটিভিকে বলেছেন, ‘আমি আমার ছেলেকে দায়িত্বটা নিতে অনুপ্রাণিত করেছি। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে এখনো বিস্ময় হয়ে আছে। আমার ছেলে বিশ্বকাপের ফাইনালে দায়িত্ব পালন করছে, এটি যেন আমি কল্পনাও করতে পারছি না!’
বিলির আর কল্পনা করে কাজ নেই। তিনি বরং আরেকটা দিন অপেক্ষা করুন। সকার সিটিতে ওয়েব লম্বা ফুঁ দেবেন বাঁশিতে। আর সেই ফুঁতেই শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপের আসল লড়াই।
No comments