অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ
বর্তমান
নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম নয়। ক্ষমতাসীন
দলের সুবিধা মতোই চলছে ওই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এমন নানা অভিযোগ তুলে
দেশের বিশিষ্টজনরা স্বাধীনতার চেতনা, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আসন্ন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিয়েছেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ তাগিদ দেন। স্কলার, প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন ‘দ্য ঢাকা ফোরাম’ এ আলোচনার আয়োজন করে। সেখানে রাজনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ফোরাম প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত এম. সিরাজুল ইসলাম। আলোচনায় বক্তারা নির্বাচন ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সহ সম-সাময়িক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেন। তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তারা স্পষ্ট করেই বলেন, দেশের স্বার্থেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। কিন্তু এমন নির্বাচনের আশা এখনও দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে তারা বলেন, একদল নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে। অন্য দল বন্দী। এমনকি একটি বড় দলের চেয়ারপারসনও জেলে। এতে জনমনে সন্দেহ তৈরির যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যে সবার অংশগ্রহণ ছাড়াই ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন চায়।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বিদ্যমান পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আশার আলো নেই। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া ও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আমলে নেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে এখনও ইসি কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের কোনো তৎপরতাও নেই। বরং তারা বলছে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা যাবে না। এটা হতে পারে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরি করা ইসি’র সাংবিধানিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই তাদের করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতীয় সেনা প্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এখনও ওই বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ হয়নি, এটা দুঃখজনক।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ভারত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হলে ভারত নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। সেভেন সিস্টারে শান্তি থাকবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যেও এটি বলেছেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দীন আহমেদ অবশ্য এখনই হাল ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না মন্তব্য করে বলেন, সবাই হতাশ হলে চলবে না। আমি আশাবাদী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। এটি দেশের জন্যই হতে হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অর্জন ধরে রাখতে হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতেই হবে। আলাপ-আলোচনার সুযোগ না থাকলে গণতন্ত্র ও সুশাসন থাকবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, আমাদের বড় ব্যর্থতা দেশে সরকার আছে কিন্তু জনগণ ভোট দিতে পারছে না। আমরা এমন এক পদ্ধতি চাচ্ছি, যার দ্বারা জনগণের পার্লামেন্ট গঠিত হয়। বর্তমান অবস্থায় সুশীল সমাজের কিছু করার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সবাই ভয়ভীতি আর আতঙ্কের মধ্যে আছে। গণতন্ত্র চর্চা না থাকলে চাটুকার আর দুর্নীতিবাজদের বিজয় হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে জনগণের ভোটের অধিকার থাকে না সেখানে চাটুকারিতা থাকে। দুর্নীতি থাকে। নির্বাচনে চুরি বা দুর্নীতি সব দুর্নীতির জন্মদাতা। আজকে বাংলাদেশে চাটুকার আর দুর্নীতিপরায়ণরা একটা ক্লাস আর বাকি নাগরিকরা একটা ক্লাস। এ অবস্থার অবসান হতে হবে। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ভোটে যাওয়ার সাহস নেই মন্তব্য করে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, অনেকে স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত স্বাধীনতার চেতনা সূর্য কিংবা চাঁদের আলো (সান লাইট বা মুন লাইট) নয়। গণতন্ত্রই স্বাধীনতার চেতনা। যারা গণতন্ত্রবিরোধী তারা স্বাধীনতার চেতনার বিপক্ষ শক্তি। তার মতে, তিনিসহ যারা গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকারের কথা বলেন তারাই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। আর বিরোধীরা ঘরেও অনুষ্ঠান করতে পারছেন না। ইসি বলছেন, তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবেন। কিন্তু তার কোনো আলামত নেই। ইসি’র ভূমিকা কী, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ইসি কোনো পদক্ষেপ নেবে, তা বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংসদও তাই একদলীয় হয়ে গেছে। বিএনপির ওই নেতা বলেন, প্রশাসন দলীয়করণের চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। আর বিচার ব্যবস্থা, সেখানে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান। এগুলো ছাড়া গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়। সবশেষ মার্কিন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এত ক্ষমতাধর ব্যক্তি ট্রাম্প, কিন্তু তাকেও অভিবাসন বিল নিয়ে ধাক্কা খেতে হয়েছে। কারণ সেখানে ইনস্টিটিউশনস বা সিস্টেম রয়েছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও হয়েছিল সংবিধানের কথা বলে। কোনো দলই তাদের নিজেদের দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আজ অবধি কোনো দল কথা বলেনি। যদিও এটি গণতন্ত্র চর্চার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের দুর্বলতার বড় কারণ নাগরিক সমাজের দুর্বলতা। জনগণ বুঝতে পারে নির্বাচন প্রহসন হবে। তিনি রাজনৈতিক দলের বাইরে নাগরিক সমাজের একটি নিরপেক্ষ ‘প্ল্যাটফর্ম’ গঠন করার পরামর্শ দেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে কূটনীতিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশা অনেকটা নিভে গেছে। ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হবে না, তা বিশ্বাস করার মতো উপাদান কমই আছে। কোনো দলের জন্য নয়, দেশের স্বার্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জরুরি। তা না হলে দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ব্যারিস্টার রুমিনা ফারহানা বলেন, কোনো সভ্য রাষ্ট্রে নির্বাচন নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা থাকে না। নির্বাচন কি আদৌ হচ্ছে? নির্বাচনটি কি রকম হবে? সেখানে কি বিরোধী দল অংশ নেবে? যদি অংশ নেয় তবে নির্বাচন কি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে? আমি কি আমার ভোটটি দিতে পারবো? ভোটটি কি গণনা হবে? এমন প্রশ্ন কারো মুখে শোনা যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে মুখে মুখেই তা শোনা যায়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ তাগিদ দেন। স্কলার, প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন ‘দ্য ঢাকা ফোরাম’ এ আলোচনার আয়োজন করে। সেখানে রাজনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ফোরাম প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত এম. সিরাজুল ইসলাম। আলোচনায় বক্তারা নির্বাচন ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সহ সম-সাময়িক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেন। তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তারা স্পষ্ট করেই বলেন, দেশের স্বার্থেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। কিন্তু এমন নির্বাচনের আশা এখনও দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে তারা বলেন, একদল নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে। অন্য দল বন্দী। এমনকি একটি বড় দলের চেয়ারপারসনও জেলে। এতে জনমনে সন্দেহ তৈরির যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যে সবার অংশগ্রহণ ছাড়াই ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন চায়।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বিদ্যমান পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আশার আলো নেই। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া ও নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আমলে নেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে এখনও ইসি কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের কোনো তৎপরতাও নেই। বরং তারা বলছে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা যাবে না। এটা হতে পারে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরি করা ইসি’র সাংবিধানিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য যা যা করা দরকার, তা-ই তাদের করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতীয় সেনা প্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এখনও ওই বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ হয়নি, এটা দুঃখজনক।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ভারত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হলে ভারত নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। সেভেন সিস্টারে শান্তি থাকবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যেও এটি বলেছেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দীন আহমেদ অবশ্য এখনই হাল ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না মন্তব্য করে বলেন, সবাই হতাশ হলে চলবে না। আমি আশাবাদী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। এটি দেশের জন্যই হতে হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অর্জন ধরে রাখতে হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতেই হবে। আলাপ-আলোচনার সুযোগ না থাকলে গণতন্ত্র ও সুশাসন থাকবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, আমাদের বড় ব্যর্থতা দেশে সরকার আছে কিন্তু জনগণ ভোট দিতে পারছে না। আমরা এমন এক পদ্ধতি চাচ্ছি, যার দ্বারা জনগণের পার্লামেন্ট গঠিত হয়। বর্তমান অবস্থায় সুশীল সমাজের কিছু করার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সবাই ভয়ভীতি আর আতঙ্কের মধ্যে আছে। গণতন্ত্র চর্চা না থাকলে চাটুকার আর দুর্নীতিবাজদের বিজয় হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে জনগণের ভোটের অধিকার থাকে না সেখানে চাটুকারিতা থাকে। দুর্নীতি থাকে। নির্বাচনে চুরি বা দুর্নীতি সব দুর্নীতির জন্মদাতা। আজকে বাংলাদেশে চাটুকার আর দুর্নীতিপরায়ণরা একটা ক্লাস আর বাকি নাগরিকরা একটা ক্লাস। এ অবস্থার অবসান হতে হবে। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ভোটে যাওয়ার সাহস নেই মন্তব্য করে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, অনেকে স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত স্বাধীনতার চেতনা সূর্য কিংবা চাঁদের আলো (সান লাইট বা মুন লাইট) নয়। গণতন্ত্রই স্বাধীনতার চেতনা। যারা গণতন্ত্রবিরোধী তারা স্বাধীনতার চেতনার বিপক্ষ শক্তি। তার মতে, তিনিসহ যারা গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকারের কথা বলেন তারাই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। আর বিরোধীরা ঘরেও অনুষ্ঠান করতে পারছেন না। ইসি বলছেন, তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবেন। কিন্তু তার কোনো আলামত নেই। ইসি’র ভূমিকা কী, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ইসি কোনো পদক্ষেপ নেবে, তা বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংসদও তাই একদলীয় হয়ে গেছে। বিএনপির ওই নেতা বলেন, প্রশাসন দলীয়করণের চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। আর বিচার ব্যবস্থা, সেখানে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান। এগুলো ছাড়া গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়। সবশেষ মার্কিন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এত ক্ষমতাধর ব্যক্তি ট্রাম্প, কিন্তু তাকেও অভিবাসন বিল নিয়ে ধাক্কা খেতে হয়েছে। কারণ সেখানে ইনস্টিটিউশনস বা সিস্টেম রয়েছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও হয়েছিল সংবিধানের কথা বলে। কোনো দলই তাদের নিজেদের দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আজ অবধি কোনো দল কথা বলেনি। যদিও এটি গণতন্ত্র চর্চার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের দুর্বলতার বড় কারণ নাগরিক সমাজের দুর্বলতা। জনগণ বুঝতে পারে নির্বাচন প্রহসন হবে। তিনি রাজনৈতিক দলের বাইরে নাগরিক সমাজের একটি নিরপেক্ষ ‘প্ল্যাটফর্ম’ গঠন করার পরামর্শ দেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে কূটনীতিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশা অনেকটা নিভে গেছে। ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হবে না, তা বিশ্বাস করার মতো উপাদান কমই আছে। কোনো দলের জন্য নয়, দেশের স্বার্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জরুরি। তা না হলে দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ব্যারিস্টার রুমিনা ফারহানা বলেন, কোনো সভ্য রাষ্ট্রে নির্বাচন নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা থাকে না। নির্বাচন কি আদৌ হচ্ছে? নির্বাচনটি কি রকম হবে? সেখানে কি বিরোধী দল অংশ নেবে? যদি অংশ নেয় তবে নির্বাচন কি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে? আমি কি আমার ভোটটি দিতে পারবো? ভোটটি কি গণনা হবে? এমন প্রশ্ন কারো মুখে শোনা যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে মুখে মুখেই তা শোনা যায়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
No comments