খালেদার মামলা, মোটিভ এবং গণতন্ত্র by মিনা ফারাহ
‘ডক্টরেট’
এক উপদেষ্টা, ২০১০ সালে বলেছিলেন, ‘নিশ্চিত থাকেন, বিএনপি আর কখনোই
ক্ষমতায় আসবে না। আমাদের ওমুক ভাই ফিউচার পিএম। সেই ব্যবস্থা হয়ে গেছে।’
সেদিন কথার গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আগুন সন্ত্রাসী, পাকিস্তানপন্থী,
রাজাকারদের দোসর, মানুষ পুড়িয়ে মারা, স্বাধীনতাবিরোধী, গুপ্তচরের স্ত্রী
ইত্যাকার বহু পদবিপ্রাপ্ত খালেদাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর আয়োজন
যে কারণে। অতীতে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেফতারের পরই জামায়াতের
নেতাদের অন্যান্য মামলায় ‘শ্যোন’ অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছিল, এবার বিএনপির
পালা।
ডিজিটাল পৃথিবীতে যেন ‘জাহেলিয়া’ যুগের প্রত্যাবর্তন, যখন নারীকে
উৎসব করে কবর দিত সমাজপতিরা। খালেদার ওপর নির্যাতন বিলুপ্ত সতীদাহ,
বাল্যবিয়ের যুগকেই যেন ফিরিয়ে দিলো। দুই বছরের কন্যাশিশুকে ১০০ বছরের কুলীন
ব্রাহ্মণের সাথে বিয়ে দিয়ে স্বর্গের সিঁড়ি নিশ্চিত করত পরিবার। মৃত
স্বামীর সাথে চিতায় তুলে দিয়ে ঢোল-কর্তাল বাজাত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। আফগান
নারীদের ওপর কাঠমোল্লাদের নির্যাতনকেও ম্লান করে দিয়েছে এই নির্যাতন। এই
যুগের একজন খালেদা যাকে মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পরও দেশ-বিদেশে একজন
নারীবাদীকেও পাওয়া গেল না। মনে হলো, বাংলাদেশী পুরুষদের হৃদয়হীনতা,
‘নিষ্ঠুরতা’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। একজন বয়স্ক বিধবা,
ব্যাধিগ্রস্ত মহিলাকে যখন স্বামীর ভিটা থেকে উপড়ে ফেলা হলো, আট কোটি
পুরুষের একজনও রুখে দাঁড়ায়নি। পুত্রশোকে বিধ্বস্ত খালেদা যেদিন বিশেষ কাউকে
ঘরে ঢুকতে দিলেন না, প্রাপ্য সমবেদনার বদলে সমাজপতিরা তার বিচারে
বসেছিলেন। পুত্রশোকের বদলে বড় হয়ে উঠেছিল, ওমুক কত বড় মাপের ব্যক্তি। অথচ
সবাই জানে, কোকোর মৃত্যুর কারণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে মানসিক নির্যাতন।
মায়ের কাছ থেকে দুই সন্তানকে চিরতরে ছিনিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি,
হামলা-মামলা দিয়ে এমন ব্যস্ত রেখেছে, যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরো
পরিবারই ধ্বংস হয়ে যায়; সেটাই হলো।
নির্যাতকদের পূর্বসূরি মইনদের হাতে এক
পুত্রকে হত্যা, অন্যজনকে চিরতরে নির্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও, ন্যূনতম
সমবেদনাহীন সমাজবিজ্ঞানীরা। আগুন সন্ত্রাসীর অপবাদে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত
হলেও, কেউই জানতে চাইল না, অপরাধীদের কেন গ্রেফতার করা হয়নি! খুঁড়িয়ে হাঁটা
বয়স্ক বিধবাকে লাগাতার হাজিরায় বাধ্য করলেও, একজন ব্যারিস্টারও মোটিভ নিয়ে
প্রশ্ন তুললেন না। আদালতটি পুরান ঢাকায় স্থানান্তরিত করার বিরুদ্ধে একজন
নারীবাদীকেও রাস্তায় নামতে দেখলাম না। পরিত্যক্ত কারাগার বেছে নেয়ার
প্রশ্নে, বক পাখির মতো বালুতে মাথা গুঁজে ছিলেন সমাজবাদীরা। আট কোটি না হয়
মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছে, বাকি আট কোটিও কী এমন? সবাই ভুলে গেছে, ব্যক্তি
খালেদা কারো মা, বোন, স্ত্রী- যার অনুভূতিগুলো মরে যায়নি। উপগ্রহ থেকে উড়ে
আসেননি, কিংবা অর্ধমানবীও নন। বিশেষ করে আমাদের ধর্ম ও কালচারে নারীর স্থান
সর্বোচ্চ। মা-বোনের ওপর নির্যাতন হলে বেশির ভাগই পুলিশ আসা পর্যন্ত
অপেক্ষা করে না। ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে ওয়াজকারীরা পর্যন্ত জাহেলি যুগের
নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি বয়ানও দেননি। এর কারণ তিনি খালেদা, যাকে বিলুপ্ত
না করলে, রাজনীতিতে বিলুপ্ত সামন্তবাদ প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হবে। অথচ শুধু
নারী নির্যাতনের অভিযোগেই ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বিতাড়িতদের তালিকা দীর্ঘ
হচ্ছে। পশ্চিমা মিডিয়ায় রক্ত ঝরাচ্ছে দুই নারীর রক্তাক্ত মুখের ছবি। ভারতে
নারী নির্যাতনের হার ন্যক্কারজনক হলেও তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর মানুষ আজো
প্রচুর। বাংলাদেশী সমাজে নৃশংসতার প্রতিবাদে একজনও নেই, এটা বিশ্বাস করা
কঠিন। উল্টা মিডিয়া, সমাজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা খালেদার বিচারে বসেছে! কেউ
সরকারি বাসভবনে নিজের পরিবার নিয়ে অপার সুখে। কেউবা নির্জন কারাগারে অপার
নরকে। খালেদা প্রমাণ করলেন, ক্ষমতাসীনদের নারীর উন্নয়ন-ক্ষমতায়ন-সংরক্ষিত
আসন ইত্যাদি স্রেফ প্রপাগান্ডা। বরং নারী নির্যাতনের জন্য হাইকমান্ডের
গিনেস বুকে যাওয়াই উচিত। ক্লাস টুর অঙ্ক।
দুই কোটি নাকি চার লাখ হাজার
কোটি, কোনটার পরিমাণ বেশি? আমাদের অর্থনীতিবিদেরা দারুণ অঙ্ক বিভ্রাটে
ভুগছেন বলেই ৯ বছরেও সামান্য অঙ্কটি সমাধানে ব্যর্থ। শত শত ‘দাউদ
ইব্রাহিমের কবলে’ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে যখন ৯ বছরে গড়ে ৭৬ হাজার
কোটি টাকা লুট হচ্ছে, তখন দুই কোটি টাকার মামলায় শাস্তির গ্রহণযোগ্যতা
নিয়ে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার গায়েবের ১০
দিন পরই ওই তলায় আগুন লাগার মতো প্রমাণ খালেদার বেলায় কোথায়? সোনালী
ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকা গায়েবের পর পরিচালনা পর্ষদের কয়জনের বিচার
হয়েছে? বরং পর্ষদের ক্রিমিনালরাই টকশোতে ব্যক্তিপূজা আর রাস্তায়
খালেদাওয়াশ- দুটোই করছে। অভিনব ফিনান্সিয়াল ক্রাইমের অন্তরালে দু’টি : অর্থ
মন্ত্রণালয়ের একটি অন্দরে, আরেকটি বাইরে। প্রতিটি জালিয়াতের খবর মন্ত্রীর
নখদর্পণে। কারণ লাইসেন্স দেয়া থেকে বাচ্চু-বারকাতদের নিয়োগের দায়িত্বে
যিনি, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দায় কি তার নয়? অতি
সাম্প্রতিককালে ফারমার্স কিংবা বেসিক ব্যাংকে ডাকাতি, প্রতিটি ঘটনাই এসব
বিপুল ক্ষমতাধরদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। বারবারই বলেন, কেন অপরাধীদের বিচার করা
সম্ভব নয়। সুতরাং বারকাতের আগে মন্ত্রীকে দুদকের ডাকার কথা। ‘ব্যাংকগুলোকে
শেষ করে দিয়েছে বারকাত’ বলেছেন তিনি। গভর্নর আতিউরের আমলে ১১৭ শতাংশ
ঋণখেলাপি কিংবা বারকাতের পূর্বসূরি হলমার্কের তানভিরের পকেটে সোনালী
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ- এসবই তার আমলে ঘটেছে। এখনো আমানত ছাড়াই একেকজনকে
হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে কার ইশারায়? দুর্নীতিগ্রস্ত
ব্যাংকগুলোকে প্রতি বছরই বিরাট অর্থ জোগান দিচ্ছে এই মন্ত্রীর বানানো
বাজেট। বাজেট নয়, যেন ঋণজালিয়াতদের সুয়েজ ক্যানেল, যেখান দিয়ে টাকার জাহাজ
ঢোকে আর বের হয়।
পত্রিকার হেডিং : দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন জোগান দেবে সরকার। টাকা নয়, যেন হরিলুটের বাতাসা। অথচ চারটি বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ লুটের দেশে একমাত্র ক্রিমিনাল খালেদা!
এ মামলার দুই কোটি টাকা সম্পর্কে ড. জাফরুল্লাহ বলেছেন, ‘ব্যাংকে সুদে-আসলে সেই টাকা এখন তিন গুণ হয়েছে, তাহলে আত্মসাৎ হলো কোথায়?’ এটাই সত্য। একাধিক হাত ঘুরে ট্রাস্টের পুরো টাকাই এখনো অ্যাকাউন্টে। দুই কোটি সুদে-আসলে এখন ছয় কোটি। মামলা এবং শাস্তি নিয়ে পানি ঘোলা করা শেষ। অচিরেই অন্যান্য ক্রাইসিসের মতো এই ক্রাইসিসকেও মিডিয়া থেকে উপড়ে ফেলা হবে। মানুষ ভুলে যাবে। যেমন- ভুলে গেছে শেয়ারবাজার, সিনহা, ট্রাইব্যুনাল, ১৫তম সংশোধনী, ৫ জানুয়ারির মতো ক্রাইসিসগুলো। খালেদাবিহীন নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিদেশীদের সাথে ক্ষমতাসীনদের বডিল্যাংগুয়েজ- আর কথার ধরনই এর প্রমাণ। অন্য দিকে, হাইকমান্ডের একাধিক ট্রাস্ট এবং ফাউন্ডেশনে যারাই নিয়মিত অর্থ দেয়ার বিনিময়ে সুবিধা ভোগ করেন, আসলে তারাই দুদকের আসল ক্লায়েন্ট। এক-এগারোর রিমান্ডে দেয়া ১৫ হাজার কোটি টাকা ঘুষের তথ্যগুলো কেন দুদক এড়িয়ে গেল? সুতরাং খালেদাকে খাঁচায় ভরার মোটিভ নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন। রায়ের দিন থেকে কপি পাওয়া পর্যন্ত সময়টা অভিনব। পুরো সাত দিন একা, যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথেষ্ট। অতীতে শুনেছিলাম, ‘কোথায় সিরাজ শিকদার’?
পত্রিকার হেডিং : দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন জোগান দেবে সরকার। টাকা নয়, যেন হরিলুটের বাতাসা। অথচ চারটি বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ লুটের দেশে একমাত্র ক্রিমিনাল খালেদা!
এ মামলার দুই কোটি টাকা সম্পর্কে ড. জাফরুল্লাহ বলেছেন, ‘ব্যাংকে সুদে-আসলে সেই টাকা এখন তিন গুণ হয়েছে, তাহলে আত্মসাৎ হলো কোথায়?’ এটাই সত্য। একাধিক হাত ঘুরে ট্রাস্টের পুরো টাকাই এখনো অ্যাকাউন্টে। দুই কোটি সুদে-আসলে এখন ছয় কোটি। মামলা এবং শাস্তি নিয়ে পানি ঘোলা করা শেষ। অচিরেই অন্যান্য ক্রাইসিসের মতো এই ক্রাইসিসকেও মিডিয়া থেকে উপড়ে ফেলা হবে। মানুষ ভুলে যাবে। যেমন- ভুলে গেছে শেয়ারবাজার, সিনহা, ট্রাইব্যুনাল, ১৫তম সংশোধনী, ৫ জানুয়ারির মতো ক্রাইসিসগুলো। খালেদাবিহীন নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিদেশীদের সাথে ক্ষমতাসীনদের বডিল্যাংগুয়েজ- আর কথার ধরনই এর প্রমাণ। অন্য দিকে, হাইকমান্ডের একাধিক ট্রাস্ট এবং ফাউন্ডেশনে যারাই নিয়মিত অর্থ দেয়ার বিনিময়ে সুবিধা ভোগ করেন, আসলে তারাই দুদকের আসল ক্লায়েন্ট। এক-এগারোর রিমান্ডে দেয়া ১৫ হাজার কোটি টাকা ঘুষের তথ্যগুলো কেন দুদক এড়িয়ে গেল? সুতরাং খালেদাকে খাঁচায় ভরার মোটিভ নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন। রায়ের দিন থেকে কপি পাওয়া পর্যন্ত সময়টা অভিনব। পুরো সাত দিন একা, যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথেষ্ট। অতীতে শুনেছিলাম, ‘কোথায় সিরাজ শিকদার’?
৪০ বছর পর শুনলাম, ‘খালেদা
জিয়া এখন কোথায়’? যার যা বোঝার বুঝে নিন। ৭ তারিখে যুগান্তরে কেন্দ্রীয়
কারাগারের সামনে বন্দুক হাতে ছয় পুলিশের ছবিসহ খবরটি দেখে ভয় হচ্ছিল, এই
আয়োজন হওয়ার কথা দাউদ ইব্রাহিমের জন্য। রাস্তাঘাটে প্রশাসনের সাজসাজ রব এবং
গ্রেফতারের সাইজ দেখে মনে হচ্ছিল, জেল ভেঙে পালিয়ে গেছে দাউদ ইব্রাহিম ও
সাঙ্গোপাঙ্গ। খুনি আর মুদ্রা পাচারকারীরাও রাজবন্দীর স্ট্যাটাস পায়। কিন্তু
তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফাঁসির আসামির মতো আচরণ অবশ্যই
তাৎপর্যপূর্ণ। প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত সব অভিযুক্তই নির্দোষ। খালেদার
অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। জেলে নেয়ার আগে যেকোনো বন্দীর শারীরিক ও মানসিক
অবস্থা বিবেচনা বাধ্যতামূলক। হত্যার মোটিভ না থাকলে সলিটারি কনফাইনমেন্ট
যৌক্তিক। নির্জন প্রকোষ্ঠে নেয়ার আগে গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে বিদায় দেয়া
দুরভিসন্ধিমূলক। খালেদার অসুস্থতার কথা কে না জানে? তার পরও ‘জেলখানা কোনো
আরাম-আয়েশের জায়গা নয়’ বলে মহাসচিবের হুঁশিয়ারিতে কিসের ইঙ্গিত? এক-এগারোর
সাবজেলের মতো মানবিক না হলেও, কেন্দ্রীয় কারাগারের বদলে বিএনপি নেত্রীকে
আরেকটু কম নরকে অবশ্যই রাখা যেত। জামায়াতের অতীত থেকে শিক্ষণীয়, কোনোরকমে
জেলে ঢোকাতে পারলেই হলো। সেদিনও সন্দেহাতীত বিচার নিয়ে সারা বিশ্ব প্রশ্ন
তুললেও বাস্তবে কী হয়েছে? কেউ কী ফাঁসি থামাতে পেরেছে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা
বলবেন, দ্রুত অনেক কাজই শেষ হওয়া লক্ষণীয়। ডাক্তারসহ সবাইকে কারাগারের গেট
থেকে বিদায়, যা এক-এগারোর সাবজেলেও করা হয়নি। ৯ বছরে বহু রাজনৈতিক বন্দীর
হত্যার কারণ আজো অমীমাংসিত। প্রথম দফায় জামায়াতকে ধ্বংস করার পর ৫
‘জানুয়ারি’ কায়েম হয়েছিল। আশঙ্কা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় বিএনপিকে শেষ করে
২০১৮ কায়েম করা হবে।
৯২ দিনের আগুন সন্ত্রাস। টপ-টু-বটম, আওয়ামী লীগের সবার
মুখেই খালেদাওয়াশ। খালেদা নাকি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন, তাই জেলে যেতে
হয়েছে। কিন্তু অনেকেই বলবে, ৫ জানুয়ারির ক্রাইম যাদের, তারাই ৯২ দিনের আগুন
সন্ত্রাসের আর্কিটেক্ট। ওই আন্দোলনে নামতে যারা বাধ্য করল, ৫ জানুয়ারির
অপরাধ থেকে দৃষ্টি ফেরাতে, নিজেরাই আগুন সন্ত্রাসের বিতর্ক সৃষ্টি করা
অসম্ভব নয়। খালেদার রাজনৈতিক শক্তি দুর্বল বলে প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ার মানে
এটা নয় যে, সন্ত্রাস করেনি ক্ষমতাসীনেরা। খালেদার রায়ের পর আন্দোলন না করায়
নাখোশ আওয়ামী লীগ। কারণ আবারো অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ তোলার সুযোগ হারাল।
যত দিন খালেদাকে নিয়ে গালিগালাজের রাজনীতি জিইয়ে রাখবে, তত দিন লাভ। ১৫৪ জন
বিনাভোটের এমপি নিয়ে কী করে একটা দেশের সংসদ পাঁচ বছর চলতে পারে?
স্বৈরাচারী এরশাদের সাথে আপস করে লীগের মতো বিরোধী দলে যাননি খালেদা।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বেও তিনি। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পূর্ণাঙ্গ
রূপদান করলেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় আসার রাস্তা
বানিয়ে দিলেন। তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনী গুম করে ৫ জানুয়ারির মতো কু-উদ্দেশ্য
চরিতার্থ করা থেকে বিরত থেকেছেন। নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে মাত্র চার মাস পরই
’৯৬-এর জাতীয় নির্বাচন। ‘এক-এগারো’র সময় হাসিনার মুক্তি দাবি করলেন। এদিকে
জিয়াই বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছেন বলে স্বীকার হাইকমান্ডের। যদিও রাজাকারের রঙ
চড়ানো হলো, কিন্তু সত্য-সত্যই। অন্যথায় আওয়ামী লীগ চিরতরে বিলুপ্ত হতো।
বাকি পরিবারকেও নির্বাসিতই থাকতে হতো। একদলীয় শাসন এতটাই লজ্জার, আওয়ামী
লীগ নিজেও দিবসগুলোয় শীতনিদ্রায় যায়। খালেদা জিয়া সক্রেটিস না হলেও বিষয়টি
প্রাসঙ্গিক। রোমান টায়রনরা সাধারণ একজন সক্রেটিসকে তার অসাধারণ মতবাদের
জন্য হত্যা করল। টায়রনদের অভিযোগ, যুবকদের মাথায় মন্দ দর্শন ঢুকিয়ে সমাজ
নষ্ট করছিলেন সক্রেটিস।
৫০০ বিচারক মিলে একজন সাধারণ নাগরিকের বিচার! তখন
রোম শহরে আজকের ঢাকার অবস্থা। বৃদ্ধকে টানাহেঁচড়া করে এবং ভুয়া বিচার শেষে
জেলে পাঠিয়ে হত্যার আগে প্রস্তাব- হয় দেশত্যাগ, নয় মৃত্যুদণ্ড। খালেদাও
অতীতে আপস করে কখনোই দেশ না ছাড়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খালেদা শুধু ব্যক্তি
নন, বরং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উত্তরাধিকারী, যাকে ভীষণ ভয় পায় ক্ষমতাসীন
মহল ও তাদের বিদেশী বন্ধুরা। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতার প্রশ্নটি
প্রাসঙ্গিক। কারণ, বিতর্কিত প্রধান বিচারপতিরা। খায়রুল হক সরাসরি কনফ্লিক্ট
অব ইন্টারেস্টের দায়ে অভিযুক্ত। দুই বিচারপতির (একজন ভারপ্রাপ্ত)
পদত্যাগের কারণ, বেআইনি কর্মকাণ্ডের সাথে আপস না করা। জামায়াত নেতাদের
একাধিক রায় লেখা একজন বিচারপতি সরাসরি খালেদা বিরোধী অ্যাক্টিভিজমের সাথে
জড়িত। জুরিসপ্রডেন্স বলে, ‘বিচার সন্দেহাতীত না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তি
নির্দোষ’। এতিমের টাকা এখনো অ্যাকাউন্টে থাকায় দোষ প্রমাণে ব্যর্থ, যে
দাবি ম খা এবং বারাকাতরা করতে পারবেন না। তাই অবিলম্বে খালেদাকে মুক্তি
দেয়া উচিত।
সারমর্ম : Injustice anywhere is a threat to justice everywhere. Whatever effect one directly, effect all indirectly -ড. মার্টিন লুথার কিং।
ই মেইল : farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com
সারমর্ম : Injustice anywhere is a threat to justice everywhere. Whatever effect one directly, effect all indirectly -ড. মার্টিন লুথার কিং।
ই মেইল : farahmina@gmail.com
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com
No comments