প্রশ্ন ছাপাতেই হেলাফেলা! by সাহাদাত হোসেন পরশ
কারা
কীভাবে চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সরাসরি
জড়িত তা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে বের করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী। তবে প্রশ্ন ছাপাতেই যে বড় ধরনের হেলাফেলা ছিল, তার স্পষ্ট প্রমাণ
পাওয়া গেছে এরই মধ্যে। বিজি প্রেসে যে প্রক্রিয়ায় এসএসসির প্রশ্নপত্র ছাপা
হয়েছে, তাতে যে কারও পক্ষে সেখান থেকে সহজেই প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব বলে মনে
করছেন সংশ্নিষ্টরা। আশ্চর্যের বিষয়- এসএসসির প্রশ্নপত্র ছাপা হওয়ার পর তার
মূল প্লেট ধ্বংস করা হয়নি। মূল প্লেট রেখে দেওয়া হয়েছিল অরক্ষিত অবস্থায়।
সেখান থেকে যে কারও পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা সম্ভব। এমনকি প্রশ্নপত্র
ছাপানোর পর হাতে হাতে প্যাকেজিং করেন বিজি প্রেসের কর্মচারীরা। কারও হাতের
ছাপ ছাড়া অটোমেশন পদ্ধতিতে প্যাকেজিং করার ব্যবস্থা না থাকায় সেই প্রক্রিয়া
থেকেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বিজি প্রেসে যে পদ্ধতি
ব্যবহার করে সিসিটিভি বসিয়ে প্রশ্নপত্র ছাপানোর সঙ্গে জড়িতদের গতিবিধি
পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাতেও রয়েছে 'শুভঙ্করের ফাঁকি'। সিসিটিভিতে মুভিং
সিস্টেম বসানো। এতে একপাশ ঘুরে আসার সময় সিসিটিভির আওতার বাইরে থাকছে অন্য
পাশ। সমকালের অনুসন্ধান ও পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির
সদস্যদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাদের ভাষ্য- বর্তমানে যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়, তাতে প্রশ্ন ফাঁস মোকাবেলা করা কষ্টসাধ্য। এরই মধ্যে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বিজি প্রেসের প্রশ্ন ছাপানোর পদ্ধতির বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। তাদের পর্যালোচনায় এরই মধ্যে প্রশ্ন ছাপাতেই ত্রুটি ধরা পড়েছে বেশ কিছু। তারা বলছেন, যদি ছাপা হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে হয়, তাহলে প্রশ্ন মুদ্রণ পদ্ধতি পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমানে বিজি প্রেসে যেভাবে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়, তাতে একটি প্রশ্নপত্রের পাণ্ডুলিপি গ্রহণ থেকে শুরু করে প্যাকেজিং হওয়া পর্যন্ত ২০০-২৫০ জন সম্পৃক্ত থাকেন সংস্থাটির। সার্বক্ষণিক প্রশ্নপত্র নিয়ে কাজ করেন তারা। সবাই তখন প্রশ্নটি দেখতে পারেন। এতে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নটি আয়ত্তে আনা সম্ভব তাদের পক্ষে। এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা হতে সময় লেগেছিল প্রায় দুই মাসের বেশি। প্রতিটি প্রশ্নের দুটি করে সেট ছাপা হয়েছিল। ছাপা হওয়ার পর প্রশ্নের প্রুফ দেখতে ১৫-২০ জনের একটি দল থাকে।
পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসির (উত্তর) দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি নাজমুল হক সমকালকে বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়, তার পরিবর্তন করা জরুরি। ম্যানুয়ালি এত লোকের সংশ্নিষ্টতার ভেতর দিয়ে প্রশ্ন তৈরি করা হলে ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি থাকবেই। কম লোকের সংশ্নিষ্টতার ভেতর দিয়ে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশের পর্যবেক্ষণ সংশ্নিষ্টদের জানানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিও হয়েছে। তারা এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বিজি প্রেসে গতকাল সরেজমিন গিয়ে এ ব্যাপার কথা বলতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক আবদুল মালেককে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি।
সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের মনে হয়েছে তিনভাবে এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকতে পারে- এক. ছাপা হওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত কোনো অসাধু চক্রের মাধ্যমে, দুই. প্রশ্নপত্র ট্রেজারি হয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত যাতায়াতের সময়, তিন. প্রশ্নপত্র খোলার ঠিক আগ মুহূর্তে কারও মাধ্যমে। তবে তারা মনে করছেন, যে পদ্ধতিতে প্রশ্ন তৈরি করতে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়, তাতে ছাপাখানায় আসার আগে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সুযোগ কম। কারণ প্রশ্ন তৈরি করার জন্য আলাদা আলাদা প্রশ্ন প্রণেতা ও মডারেটর থাকেন। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত। ১২টি পৃথক প্রশ্ন তৈরি করার পর লটারি করে তার মধ্যে থেকে দুটি নির্বাচন করা হয়। কোন দুটি ছাপা হওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে, তা কোনো মডারেটরের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। দুটি প্রশ্ন নির্ধারিত হওয়ার পর তা ছাপানোর জন্য পরীক্ষার অন্তত দুই মাস আগে পাঠানো হয় বিজি প্রেসে। এরপর শুরু হয় ছাপার কাজ। ছাপা হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রশ্ন পাঠানো হয় ট্রেজারিতে। এরপর ট্রেজারি হয়ে তা চলে যায় কেন্দ্রে। সংশ্নিষ্টরা এরই মধ্যে তথ্য পেয়েছেন এবার এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন বিজি প্রেসে ছাপানোর পর তার মূল প্লেট ধ্বংস করা হয়নি। কেন এই প্লেট রেখে দেওয়া হয়েছিল- গোয়েন্দাদের তার সদুত্তর দিতে পারেনি বিজি প্রেসের সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা।
আট সুপারিশ :প্রচলিত পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আটটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এরই মধ্যে। তা হলো- এমসিকিউ বাতিল করতে হবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত বর্তমান আইন সংশোধন করে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের বিচার করতে হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোচিং সেন্টার স্থায়ীভাবে বন্ধ করা। পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্র-ছাত্রীদের নির্ধারিত সময়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে। কারও কাছে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেলে তার পরীক্ষা বাতিল বলে গণ্য হবে ও তাকে আইনের আওতায় আনার কথাও বলা হয়। পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও অধিক সচেতন হতে বলা হয়েছে।
কেন ডিজিটালাইশেজন হচ্ছে না প্রশ্নপত্র ছাপার পদ্ধতি :বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিজি প্রেসের কর্মচারীদের আটক করা হয়। ২০১৪ সালে সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসের অফসেট শাখার কর্মচারী আবদুল জলিলকে সোমবার আটক করা হয়। ২৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল তার কাছ থেকে। পরে জানা যায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিক্রি করে আবদুল জলিল ওই অর্থ পান। একই ঘটনায় বিজি প্রেসের কম্পোজিটর এ টি এম মোস্তফা, তার স্ত্রী লাবণী বেগম ও আরেক কর্মচারী শহীদুল ইসলাম ফকিরের নামও এসেছিল। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ জনকে আটক করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই সময় গোয়েন্দারা জানান, ওই চক্রের সঙ্গে বিজি প্রেসের এক অসাধু কর্মচারী জড়িত। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যখনই ছাপা হয়, তখনই ওই কর্মচারী প্রশ্ন মুখস্থের পর বাইরে জুয়েল নামের একজনকে লিখে দিত। এর পর জুয়েল তা দিত সাত্তারের কাছে। সাত্তারের মাধ্যমে তা চলে যেত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিজি প্রেসের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালে বিজি প্রেসের ছাপার কাজ পুরোপুরি ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডিজিটালাইজেশন করতে অর্থ বরাদ্দের একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া আছে। তবে সেটা পাস না হওয়ায় তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি ডিজিটাল করা সম্ভব হয়নি এখনও।
সংশ্নিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাদের ভাষ্য- বর্তমানে যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়, তাতে প্রশ্ন ফাঁস মোকাবেলা করা কষ্টসাধ্য। এরই মধ্যে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বিজি প্রেসের প্রশ্ন ছাপানোর পদ্ধতির বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। তাদের পর্যালোচনায় এরই মধ্যে প্রশ্ন ছাপাতেই ত্রুটি ধরা পড়েছে বেশ কিছু। তারা বলছেন, যদি ছাপা হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে হয়, তাহলে প্রশ্ন মুদ্রণ পদ্ধতি পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমানে বিজি প্রেসে যেভাবে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়, তাতে একটি প্রশ্নপত্রের পাণ্ডুলিপি গ্রহণ থেকে শুরু করে প্যাকেজিং হওয়া পর্যন্ত ২০০-২৫০ জন সম্পৃক্ত থাকেন সংস্থাটির। সার্বক্ষণিক প্রশ্নপত্র নিয়ে কাজ করেন তারা। সবাই তখন প্রশ্নটি দেখতে পারেন। এতে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নটি আয়ত্তে আনা সম্ভব তাদের পক্ষে। এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা হতে সময় লেগেছিল প্রায় দুই মাসের বেশি। প্রতিটি প্রশ্নের দুটি করে সেট ছাপা হয়েছিল। ছাপা হওয়ার পর প্রশ্নের প্রুফ দেখতে ১৫-২০ জনের একটি দল থাকে।
পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসির (উত্তর) দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি নাজমুল হক সমকালকে বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়, তার পরিবর্তন করা জরুরি। ম্যানুয়ালি এত লোকের সংশ্নিষ্টতার ভেতর দিয়ে প্রশ্ন তৈরি করা হলে ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি থাকবেই। কম লোকের সংশ্নিষ্টতার ভেতর দিয়ে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশের পর্যবেক্ষণ সংশ্নিষ্টদের জানানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিও হয়েছে। তারা এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বিজি প্রেসে গতকাল সরেজমিন গিয়ে এ ব্যাপার কথা বলতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক আবদুল মালেককে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি।
সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের মনে হয়েছে তিনভাবে এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকতে পারে- এক. ছাপা হওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত কোনো অসাধু চক্রের মাধ্যমে, দুই. প্রশ্নপত্র ট্রেজারি হয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত যাতায়াতের সময়, তিন. প্রশ্নপত্র খোলার ঠিক আগ মুহূর্তে কারও মাধ্যমে। তবে তারা মনে করছেন, যে পদ্ধতিতে প্রশ্ন তৈরি করতে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়, তাতে ছাপাখানায় আসার আগে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সুযোগ কম। কারণ প্রশ্ন তৈরি করার জন্য আলাদা আলাদা প্রশ্ন প্রণেতা ও মডারেটর থাকেন। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত। ১২টি পৃথক প্রশ্ন তৈরি করার পর লটারি করে তার মধ্যে থেকে দুটি নির্বাচন করা হয়। কোন দুটি ছাপা হওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে, তা কোনো মডারেটরের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। দুটি প্রশ্ন নির্ধারিত হওয়ার পর তা ছাপানোর জন্য পরীক্ষার অন্তত দুই মাস আগে পাঠানো হয় বিজি প্রেসে। এরপর শুরু হয় ছাপার কাজ। ছাপা হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রশ্ন পাঠানো হয় ট্রেজারিতে। এরপর ট্রেজারি হয়ে তা চলে যায় কেন্দ্রে। সংশ্নিষ্টরা এরই মধ্যে তথ্য পেয়েছেন এবার এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন বিজি প্রেসে ছাপানোর পর তার মূল প্লেট ধ্বংস করা হয়নি। কেন এই প্লেট রেখে দেওয়া হয়েছিল- গোয়েন্দাদের তার সদুত্তর দিতে পারেনি বিজি প্রেসের সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা।
আট সুপারিশ :প্রচলিত পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আটটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এরই মধ্যে। তা হলো- এমসিকিউ বাতিল করতে হবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত বর্তমান আইন সংশোধন করে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের বিচার করতে হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোচিং সেন্টার স্থায়ীভাবে বন্ধ করা। পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্র-ছাত্রীদের নির্ধারিত সময়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে। কারও কাছে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেলে তার পরীক্ষা বাতিল বলে গণ্য হবে ও তাকে আইনের আওতায় আনার কথাও বলা হয়। পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও অধিক সচেতন হতে বলা হয়েছে।
কেন ডিজিটালাইশেজন হচ্ছে না প্রশ্নপত্র ছাপার পদ্ধতি :বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিজি প্রেসের কর্মচারীদের আটক করা হয়। ২০১৪ সালে সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসের অফসেট শাখার কর্মচারী আবদুল জলিলকে সোমবার আটক করা হয়। ২৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল তার কাছ থেকে। পরে জানা যায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিক্রি করে আবদুল জলিল ওই অর্থ পান। একই ঘটনায় বিজি প্রেসের কম্পোজিটর এ টি এম মোস্তফা, তার স্ত্রী লাবণী বেগম ও আরেক কর্মচারী শহীদুল ইসলাম ফকিরের নামও এসেছিল। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ জনকে আটক করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই সময় গোয়েন্দারা জানান, ওই চক্রের সঙ্গে বিজি প্রেসের এক অসাধু কর্মচারী জড়িত। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যখনই ছাপা হয়, তখনই ওই কর্মচারী প্রশ্ন মুখস্থের পর বাইরে জুয়েল নামের একজনকে লিখে দিত। এর পর জুয়েল তা দিত সাত্তারের কাছে। সাত্তারের মাধ্যমে তা চলে যেত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিজি প্রেসের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালে বিজি প্রেসের ছাপার কাজ পুরোপুরি ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডিজিটালাইজেশন করতে অর্থ বরাদ্দের একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া আছে। তবে সেটা পাস না হওয়ায় তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি ডিজিটাল করা সম্ভব হয়নি এখনও।
No comments