রিমান্ডে আসামির মৃত্যু- পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ by আল আমিন
রাজধানী ঢাকার চকবাজার থানায় পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। গতকাল দুপুরে নিহত জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল মর্গে লাশ নিতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অভিযোগ, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার আগে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। গলায় দাগ থাকলেও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করা গেছে। তাকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা দোষী পুলিশের শাস্তি দাবি করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীরকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি। থানা হাজাতের শৌচাগারে কম্বল দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে জাহাঙ্গীর আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। ঘটনার সময় থানায় বিদ্যুৎ না থাকার কথা পুলিশ জানালেও আশপাশের দোকানদার ও বাসিন্দারা জানিয়েছে ঘটনার সময় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল। এতে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু নিয়ে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে সন্দেহ আরও বেশি দানা বেঁধেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে চকবাজার থানা হেফাজতে থাকা জাহাঙ্গীর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করে পুলিশ। সরজমিন চকবাজারের হাজতখানায় গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি গারদখানা। একটিতে থানার বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। অন্যটিতে আসামি রাখা হয়। হাজতখানাসংলগ্ন একটি বাথরুম রয়েছে। পুলিশের দাবি, ওইসময় হাজতখানায় অন্য কোনও আসামি ছিল না। এসময় বাথরুমের বিমের সঙ্গে গলায় কম্বল পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে জাহাঙ্গীর। তাকে ডাকাতির একটি মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
নিহতের বোন শাহীনূর কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাই কখনও ডাকাতিতে জড়িত ছিলেন না। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছে পুলিশ। কোনও দলের সঙ্গেও সক্রিয় ছিলেন না। এর আগে পুলিশ তাকে অন্যায়ভাবে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু পুলিশকে টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, জাহাঙ্গীর অনেকবার আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। দুই-তিনবার কারাগারেও থেকেছেন। কিন্তু, সেগুলো সব মাদক সেবন সংক্রান্ত মামলা। এর আগে পুলিশ তার ভাইকে গ্রেপ্তার করলেও এতটা নির্যাতন করেনি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, থানা হেফাজতে কম্বল দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা যায় এটি কেউ বিশ্বাস করবে? পুলিশ সদস্যরা আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি দোষী পুলিশের শাস্তি দাবি করেন। নইলে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান তিনি।
স্বজনরা জানান, নিহত জাহাঙ্গীর হোসেনের পিতার নাম আমীর হোসেন। পেশায় কৃষক। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার উত্তর সাহাপুর এলাকায়। নিহতের মা শাহিদা বেগম জানান, তার ছেলে পুরান ঢাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করতো। চকবাজারের ইসলামবাগের মাদরাসা গলির আলী বাবুর্চির বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে ভাড়ায় থাকতো। অনেক দিন ধরেই ওই বাড়িতে থাকতো। পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামের বাড়িতে থাকতো। তার ছেলে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত নয়। তাকে সন্দেহভাজন হিসাবে পুলিশের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর তার লাশ পুলিশের হেফাজত পাওয়া গেলো। এর রহস্য উদঘাটনের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক জানান, গত ৩রা ডিসেম্বরে চকবাজারের করিম টাওয়ারে একটি চিনির ট্রাক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নম্বর-৩। ওই চিনির ট্রাক আর উদ্ধার করা যায়নি। ওই ঘটনার সন্দেহভাজন আসামি ছিল জাহাঙ্গীর। গত ১৯শে মার্চ রাতে তাকে চকবাজারের মাদরাসা গলি থেকে আটক করা হয়। পরে আদালতে চালান দিলে আদালত তাকে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আরও জানান, রিমান্ডের প্রথম দিনের রাতে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে আসে। জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত ছিল ও খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশতো। নেশার টাকার জন্য জাহাঙ্গীর মা-বাবাকে মারধর করার ঘটনাও ঘটিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তাকে ধরে নিয়ে আসার পর থেকে ওই আসামি শুধু আমাকে বলতে থাকে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। গালিগালাজও করে। ওসি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে গেলে থানার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা গরম অনুভব করায় একটু বাইরে যায়। পরে এই ফাঁকে ওই আসামি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সঞ্জয় কুমারকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এছাড়াও লাশের ময়নাতদন্তও করা হয়েছে। তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম। সুরতহাল প্রতিবেদনে আমিনুল ইসলাম উল্লেখ করেন, শুক্রবার রাতে চকবাজার থানা হাজতের শৌচাগারের বীমের সঙ্গে বেগুনি রঙের কম্বল গলায় পেঁচানো অবস্থায় জাহাঙ্গীরের ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার পা মেঝে থেকে দেড় ফুট উপরে ছিল। এ সময় তার পরনে ছিল ছাই রঙের শার্ট ও কালো রঙের জিন্সের প্যান্ট। মৃতের শরীর কঙ্কালসার। গলায় আত্মহত্যাজনিত অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ রয়েছে। হাতে পুরানো কিছু কাটা দাগ রয়েছে।
এদিকে থানার পাশে আবদুল গনি নামে এক ঘড়ির মেকানিক জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর থানা ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ যায়নি। রাস্তায় বিদ্যুতের খাম্বা থেকে অবৈধভাবে লাইন নিয়ে আমরা ঘড়ি মেরামত করেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের এক কর্মচারী জানান, তার পিঠে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গলায় ফাঁস দিলে মুখ দিয়ে একটু জিহ্বা বের হয়ে থাকে তা লক্ষ্য করা যায়নি।
নিহতের বোন শাহীনূর কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাই কখনও ডাকাতিতে জড়িত ছিলেন না। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছে পুলিশ। কোনও দলের সঙ্গেও সক্রিয় ছিলেন না। এর আগে পুলিশ তাকে অন্যায়ভাবে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু পুলিশকে টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, জাহাঙ্গীর অনেকবার আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। দুই-তিনবার কারাগারেও থেকেছেন। কিন্তু, সেগুলো সব মাদক সেবন সংক্রান্ত মামলা। এর আগে পুলিশ তার ভাইকে গ্রেপ্তার করলেও এতটা নির্যাতন করেনি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, থানা হেফাজতে কম্বল দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা যায় এটি কেউ বিশ্বাস করবে? পুলিশ সদস্যরা আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি দোষী পুলিশের শাস্তি দাবি করেন। নইলে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান তিনি।
স্বজনরা জানান, নিহত জাহাঙ্গীর হোসেনের পিতার নাম আমীর হোসেন। পেশায় কৃষক। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার উত্তর সাহাপুর এলাকায়। নিহতের মা শাহিদা বেগম জানান, তার ছেলে পুরান ঢাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করতো। চকবাজারের ইসলামবাগের মাদরাসা গলির আলী বাবুর্চির বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে ভাড়ায় থাকতো। অনেক দিন ধরেই ওই বাড়িতে থাকতো। পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামের বাড়িতে থাকতো। তার ছেলে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত নয়। তাকে সন্দেহভাজন হিসাবে পুলিশের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর তার লাশ পুলিশের হেফাজত পাওয়া গেলো। এর রহস্য উদঘাটনের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক জানান, গত ৩রা ডিসেম্বরে চকবাজারের করিম টাওয়ারে একটি চিনির ট্রাক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নম্বর-৩। ওই চিনির ট্রাক আর উদ্ধার করা যায়নি। ওই ঘটনার সন্দেহভাজন আসামি ছিল জাহাঙ্গীর। গত ১৯শে মার্চ রাতে তাকে চকবাজারের মাদরাসা গলি থেকে আটক করা হয়। পরে আদালতে চালান দিলে আদালত তাকে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আরও জানান, রিমান্ডের প্রথম দিনের রাতে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে আসে। জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত ছিল ও খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশতো। নেশার টাকার জন্য জাহাঙ্গীর মা-বাবাকে মারধর করার ঘটনাও ঘটিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তাকে ধরে নিয়ে আসার পর থেকে ওই আসামি শুধু আমাকে বলতে থাকে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। গালিগালাজও করে। ওসি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে গেলে থানার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা গরম অনুভব করায় একটু বাইরে যায়। পরে এই ফাঁকে ওই আসামি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সঞ্জয় কুমারকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এছাড়াও লাশের ময়নাতদন্তও করা হয়েছে। তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম। সুরতহাল প্রতিবেদনে আমিনুল ইসলাম উল্লেখ করেন, শুক্রবার রাতে চকবাজার থানা হাজতের শৌচাগারের বীমের সঙ্গে বেগুনি রঙের কম্বল গলায় পেঁচানো অবস্থায় জাহাঙ্গীরের ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার পা মেঝে থেকে দেড় ফুট উপরে ছিল। এ সময় তার পরনে ছিল ছাই রঙের শার্ট ও কালো রঙের জিন্সের প্যান্ট। মৃতের শরীর কঙ্কালসার। গলায় আত্মহত্যাজনিত অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ রয়েছে। হাতে পুরানো কিছু কাটা দাগ রয়েছে।
এদিকে থানার পাশে আবদুল গনি নামে এক ঘড়ির মেকানিক জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর থানা ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ যায়নি। রাস্তায় বিদ্যুতের খাম্বা থেকে অবৈধভাবে লাইন নিয়ে আমরা ঘড়ি মেরামত করেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের এক কর্মচারী জানান, তার পিঠে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গলায় ফাঁস দিলে মুখ দিয়ে একটু জিহ্বা বের হয়ে থাকে তা লক্ষ্য করা যায়নি।
No comments