দুই রাষ্ট্র সমাধানের ইতি কী করবেন ফিলিস্তিনিরা?
বেনিয়ামিন
নেতানিয়াহুর চতুর্থ ও ইসরাইলের ৩৪তম সরকার গঠন গঠিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনি
ভূখণ্ডে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২৪ বছর আগে মার্কিন
অর্থায়নে ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি ‘শান্তি প্রক্রিয়ায়’ শুরু করার পর এটা হবে
ইসরাইলের ১১তম জোট সরকার। নতুন সরকার আরো একটি চরম জাতীয়তাবাদী সরকার
হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন এর নেতৃত্বদাতা। তিনি আগের চেয়ে আরো কট্টর নীতি
অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ইতোমধ্যে ‘মহান বিজয়’
ঘোষণাকারী নেতানিয়াহু নির্বাচনের ফলাফলকে ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের উপনিবেশে
পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে নতুন ম্যান্ডেট হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
গড়ে প্রতি দুই বছরে ইসরাইলের নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে, তাই দেশটি ২০১৭ সালে আবারে নির্বাচনে যাবে এবং আরেকটি জোট প্রতিষ্ঠা হবে। পরে কে ক্ষমতায় আসবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া কী হবে তার ওপর নির্ভর করছে সেই সরকারের ধরন।
আরো চরম ডানপন্থা
ইসরাইলের অধিকতর পছন্দ নিয়ে দ্বিধা বা সংশয় ছিল না। যদিও নেতানিয়াহুর অধীনে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে ও অনিশ্চয়তা গভীরতর হচ্ছে, মনে হচ্ছে ইসরাইলিরা বিকল্প জয়েনিস্ট ইউনিয়নের চেয়ে তাকেই বেশি পছন্দ করেছে। নেতানিয়াহুর সমালোচকেরা ‘র্যাক লো নেতানিয়াহু’ (নেতানিয়াহুই একমাত্র নয়) স্লোগানের অধীনে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু ইসরাইলিরা টানা তিনবারের মতো নেতানিয়াহুকেই তাদের নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে!
নির্বাচনের সময় তিনি তার কথা খণ্ড খণ্ড করে বলেননি। নেতানিয়াহু যে স্পষ্ট ও বর্ণবাদী ঘোষণা দেন তা তার এ নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের উত্থান মেনে নিবেন না। আর এভাবে তিনি ফিলিস্তিনিদের সাথে নতুন আলোচনার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
তিনি ইসরাইলের নাগরিক সংখ্যালঘু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধেও বর্ণবাদী উত্তেজনা সৃষ্টি করেন এবং সতর্ক করে দেন যে, তাকে পদচ্যুত করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একজন সাংবাদিক বলেছেন, ‘নির্বাচনে জেতার জন্য নেতানিয়াহু বর্ণবাদী প্রতারণা অবলম্বন করেন।’
যারা ইসরাইলের গত কয়েক দশকের রাজনীতির ক্রমোন্নতি অথবা অবক্ষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাদের মতে, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের ইসরাইলি যুদ্ধ, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও উপনিবেশ সৃষ্টির পর ইসরাইল যে চরম ডানপন্থার দিকে মোড় নেয় নেতানিয়াহু হচ্ছেন তারই সম্প্রসারিত রূপ।
ক্ষমতায় লিকুদ পার্টির উত্থান ১৯৭৭ সালে। এটা ছিল ডানপন্থীর সাথে ডানপন্থীর জোটের নতুন যুগের সূচনা, যেটা ফিলিস্তিনে ইসরাইলের উপনিবেশ প্রকল্পকে সমর্থন ও গভীরতর করেছিল। এর ব্যতিক্রম ছিল তিনটি লেবার মধ্যস্ততাবাদী সরকার, যারা সবাই ঘটনাক্রমে তাদের পূর্ববর্তীদের তুলনায় কোনো অবৈধ উপনিবেশ নির্মাণ করেনি।
পরিষ্কারভাবে, ইরানের ব্যাপারে ওবামা প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কের ভাঙন এবং ইসরাইলের বেপরোয়া পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল। ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ইসহাক শামির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নির্বাচনে পরাজয় লাভ করেন। এইবার যদিও পশ্চিমা অথবা ফিলিস্তিনিদের নিকট থেকে শক্তিশালী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল, তারপরও ইসরাইলিরা নেতানিয়াহুকেই সমর্থন করেছে।
কেমন হবে ওবামার প্রতিক্রিয়া?
যেহেতু নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহু দুই রাষ্ট্র সমাধান বিষয়টি ধ্বংস করে এর মৃত্যু ও কবর রচনা করেছেন, সেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর অন্য কিছুর চেষ্টা করতে পারবে না। অথবা প্রক্রিয়ার পেছনে লুকিয়ে থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠিন পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু করার ইচ্ছা কি ওবামা প্রশাসনের আছে?
তাত্ত্বিকভাবে বিশ্বের এই পরাশক্তি চাইলে ইসরাইলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। যখন ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে আলোচনার বিষয়টির সাথে নিশ্চিতভাবে ফিলিস্তিনে এবং ওই অঞ্চলে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। আমেরিকার সদিচ্ছা আছে কিনা তা দেখার বিষয়। তবে ফিলিস্তিনিরা এবং এই অঞ্চল ও এর বাইরে তাদের সমর্থকদের ওপর এ বিষয়টি নির্ভর করছে।
ফিলিস্তিনিরা এখন কী করবে?
দুই রাষ্ট্র সমাধানের ওপর ভিত্তি করে ইসরাইলের সাথে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন মাহমুদ আব্বাস। এ জন্য তার নেতৃত্বাধীন পিএলও সব ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা তাদের পক্ষে দরকষাকষি করেছে এবং ইসরাইলের সাথে করা সব অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে। এমনকি তারা ইসরাইলের নিরাপত্তা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সাহায্য করেছে। তারা আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু নিষ্পত্তি করার ভিত্তিতেই এসব করেছে। কিন্তু এখন সেই অঙ্গীকার ভেঙে গেছে এবং এই প্রক্রিয়া বিলুপ্ত হয়েছে। দখলদারিত্বের বিষয়ে এখন ফিলিস্তিনিরা কী করবে? আব্বাস কি পদত্যাগ করবেন? অথবা ইসরাইলের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রেখে ফিলিস্তিনিদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রীতদাসে পরিণত করবেন?
অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির ফলাফল হিসেবে গঠিত হওয়া জাতীয় কর্তৃপক্ষ কি তিনি ভেঙে দেবেন? অথবা একটি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির জন্য বিরোধীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে তিনি কি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবেন? ফিলিস্তিনিরা কি তখন নতুন করে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করবে?
আলজাজিরা অবলম্বনে
গড়ে প্রতি দুই বছরে ইসরাইলের নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে, তাই দেশটি ২০১৭ সালে আবারে নির্বাচনে যাবে এবং আরেকটি জোট প্রতিষ্ঠা হবে। পরে কে ক্ষমতায় আসবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া কী হবে তার ওপর নির্ভর করছে সেই সরকারের ধরন।
আরো চরম ডানপন্থা
ইসরাইলের অধিকতর পছন্দ নিয়ে দ্বিধা বা সংশয় ছিল না। যদিও নেতানিয়াহুর অধীনে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে ও অনিশ্চয়তা গভীরতর হচ্ছে, মনে হচ্ছে ইসরাইলিরা বিকল্প জয়েনিস্ট ইউনিয়নের চেয়ে তাকেই বেশি পছন্দ করেছে। নেতানিয়াহুর সমালোচকেরা ‘র্যাক লো নেতানিয়াহু’ (নেতানিয়াহুই একমাত্র নয়) স্লোগানের অধীনে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু ইসরাইলিরা টানা তিনবারের মতো নেতানিয়াহুকেই তাদের নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে!
নির্বাচনের সময় তিনি তার কথা খণ্ড খণ্ড করে বলেননি। নেতানিয়াহু যে স্পষ্ট ও বর্ণবাদী ঘোষণা দেন তা তার এ নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের উত্থান মেনে নিবেন না। আর এভাবে তিনি ফিলিস্তিনিদের সাথে নতুন আলোচনার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
তিনি ইসরাইলের নাগরিক সংখ্যালঘু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধেও বর্ণবাদী উত্তেজনা সৃষ্টি করেন এবং সতর্ক করে দেন যে, তাকে পদচ্যুত করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একজন সাংবাদিক বলেছেন, ‘নির্বাচনে জেতার জন্য নেতানিয়াহু বর্ণবাদী প্রতারণা অবলম্বন করেন।’
যারা ইসরাইলের গত কয়েক দশকের রাজনীতির ক্রমোন্নতি অথবা অবক্ষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাদের মতে, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের ইসরাইলি যুদ্ধ, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও উপনিবেশ সৃষ্টির পর ইসরাইল যে চরম ডানপন্থার দিকে মোড় নেয় নেতানিয়াহু হচ্ছেন তারই সম্প্রসারিত রূপ।
ক্ষমতায় লিকুদ পার্টির উত্থান ১৯৭৭ সালে। এটা ছিল ডানপন্থীর সাথে ডানপন্থীর জোটের নতুন যুগের সূচনা, যেটা ফিলিস্তিনে ইসরাইলের উপনিবেশ প্রকল্পকে সমর্থন ও গভীরতর করেছিল। এর ব্যতিক্রম ছিল তিনটি লেবার মধ্যস্ততাবাদী সরকার, যারা সবাই ঘটনাক্রমে তাদের পূর্ববর্তীদের তুলনায় কোনো অবৈধ উপনিবেশ নির্মাণ করেনি।
পরিষ্কারভাবে, ইরানের ব্যাপারে ওবামা প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কের ভাঙন এবং ইসরাইলের বেপরোয়া পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল। ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ইসহাক শামির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নির্বাচনে পরাজয় লাভ করেন। এইবার যদিও পশ্চিমা অথবা ফিলিস্তিনিদের নিকট থেকে শক্তিশালী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল, তারপরও ইসরাইলিরা নেতানিয়াহুকেই সমর্থন করেছে।
কেমন হবে ওবামার প্রতিক্রিয়া?
যেহেতু নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহু দুই রাষ্ট্র সমাধান বিষয়টি ধ্বংস করে এর মৃত্যু ও কবর রচনা করেছেন, সেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর অন্য কিছুর চেষ্টা করতে পারবে না। অথবা প্রক্রিয়ার পেছনে লুকিয়ে থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠিন পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু করার ইচ্ছা কি ওবামা প্রশাসনের আছে?
তাত্ত্বিকভাবে বিশ্বের এই পরাশক্তি চাইলে ইসরাইলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। যখন ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে আলোচনার বিষয়টির সাথে নিশ্চিতভাবে ফিলিস্তিনে এবং ওই অঞ্চলে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। আমেরিকার সদিচ্ছা আছে কিনা তা দেখার বিষয়। তবে ফিলিস্তিনিরা এবং এই অঞ্চল ও এর বাইরে তাদের সমর্থকদের ওপর এ বিষয়টি নির্ভর করছে।
ফিলিস্তিনিরা এখন কী করবে?
দুই রাষ্ট্র সমাধানের ওপর ভিত্তি করে ইসরাইলের সাথে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন মাহমুদ আব্বাস। এ জন্য তার নেতৃত্বাধীন পিএলও সব ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা তাদের পক্ষে দরকষাকষি করেছে এবং ইসরাইলের সাথে করা সব অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে। এমনকি তারা ইসরাইলের নিরাপত্তা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সাহায্য করেছে। তারা আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু নিষ্পত্তি করার ভিত্তিতেই এসব করেছে। কিন্তু এখন সেই অঙ্গীকার ভেঙে গেছে এবং এই প্রক্রিয়া বিলুপ্ত হয়েছে। দখলদারিত্বের বিষয়ে এখন ফিলিস্তিনিরা কী করবে? আব্বাস কি পদত্যাগ করবেন? অথবা ইসরাইলের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রেখে ফিলিস্তিনিদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রীতদাসে পরিণত করবেন?
অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির ফলাফল হিসেবে গঠিত হওয়া জাতীয় কর্তৃপক্ষ কি তিনি ভেঙে দেবেন? অথবা একটি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির জন্য বিরোধীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে তিনি কি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবেন? ফিলিস্তিনিরা কি তখন নতুন করে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করবে?
আলজাজিরা অবলম্বনে
No comments