তিস্তা চুক্তি- আশা ভঙ্গে মরুকরণের হাতছানি by তুহিন ওয়াদুদ
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশ আশার বাণী শুনিয়ে আসছে।
এই
দুই দেশের আশার বাণীতে দেশবাসী আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু মহাজোট সরকার
তার মেয়াদের শেষ সময়ে এলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিবিষয়ক সিদ্ধান্তের
কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং উভয় দেশের আশাবাদের ভিত্তি যে অনেক
দুর্বল, সেই সত্যতা বোঝা গেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, পশ্চিমবঙ্গ
সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তারা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করবে। অন্যদিকে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের উত্তরবঙ্গের তিস্তাপারবাসীর
সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সম্মতি পেলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে
সহমত পোষণ করবেন। তাহলে বলা যায়, এখন পর্যন্ত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি
নিয়ে যেসব কথা শোনা গেছে, তা কার্যত মৌখিক এবং সান্ত্বনাসূচক। প্রকৃত
অর্থে কোনো অগ্রগতিই এখনো হয়নি। ভারতের তিস্তাতীরবর্তী জনগণ যদি তিস্তার
পানি বণ্টন চুক্তিতে সম্মত হয়, তারপর হবে বণ্টনের হার নিয়ে আলোচনা।
ভারতের নির্বাচন আসন্ন। এ অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো তিস্তা
ইস্যু নিয়ে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্তে যাবেন না।
প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ উভয়েরই প্রত্যাশিত। গত ৪ আগস্ট প্রথম আলো ভারতের কয়েকজন সাবেক হাইকমিশনারের মত উল্লেখ করেছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। সেখানে সাবেক হাইকমিশনাররা তিস্তার পানি বণ্টন এবং স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারতের অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল বলে মত দিয়েছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ নদীর ওপর প্রথমত অধিকার নদীতীরবর্তী মানুষের। তাকে সীমানা দিয়ে ভাগ করে কাউকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। দেশবিভাগ পূর্ববর্তী সময়ে এ তিস্তায় সবার সমান অধিকার ছিল। শুধু ভৌগোলিক বিভাজনে উজানে থাকা ভারত তিস্তার পানি ব্যবহার নিজেদের জন্য করবে, সেটা হতে পারে না। বরং অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি।
তিস্তাকে কেন্দ্র করে বেঁচে আছে বাংলাদেশের উত্তর জনপদের জীববৈচিত্র্য। তিস্তাকে তাই উত্তরের জীবনরেখা বলা হয়। যদি ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হয় তাহলে উত্তরের জনজীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে তিস্তা। খরা মৌসুমে তিস্তায় পানিপ্রবাহ কম থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে পরিমাণ পানি থাকে, এতটা কম থাকার কথা নয়। ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে পানি বণ্টন চুক্তি হলে শুষ্ক মৌসুমে বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি পানি থাকবে, যা উত্তর জনপদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুই ধাপে তিস্তা সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানিস্বল্পতার কারণে প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় ধাপ আর শুরু করা যায়নি। ফলে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সেচ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন আর সম্ভব হয়নি। এমনকি বর্তমান যে অবস্থা চলছে, তাতে করে প্রথম ধাপের যে অংশ সেচ প্রকল্পের আওতায় এসেছে, তা-ও অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শুধু সেচ প্রকল্পজনিত সুবিধা-অসুবিধা নয়। তিস্তার পানি শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত না আসায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের ঢালুর অংশে পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তলদেশের পানির স্তর আরও নিচে নেমে যায়। যখন সেখানে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করে চাষাবাদ করা হয়, তখন আরও নিচে যায় পানির স্বাভাবিক স্তর। এ রকম চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
মহাজোট সরকার যদি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে, তিস্তা ঘেঁষে যে বিশাল জনপদ রয়েছে, তারা অনেকখানি মুখ ফিরিয়ে নেবে। এ চুক্তি না হলে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিশাল জনগোষ্ঠী তিস্তা নদীর প্রত্যক্ষ ক্ষতির শিকার হবে। মহাজোট সরকার রংপুর অঞ্চলে যে উন্নয়ন করেছে, তা অন্য কোনো সময়ের সরকার করেনি। এ কথা সত্যি হলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হলে তা যতখানি নির্বাচনে গণমানুষকে আশ্বস্ত করতে পারবে, তার তুলনা আর কোনোটা দিয়েই করা সম্ভব নয়। রংপুর বিভাগ, রংপুর সিটি করপোরেশন, তিস্তা সেতু, দ্বিতীয় তিস্তা সেতু, দ্বিতীয় ধরলা সেতু, নার্সিং ইনস্টিটিউট, সোনাহাট স্থলবন্দর, পীরগঞ্জ মেরিন একাডেমিসহ যে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত করেছে, তা চাপা পড়তে পারে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ার কারণে। জাতীয় পর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব যেমন পড়বে তেমনি আঞ্চলিক পর্যায়েও পড়বে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি চেষ্টার কম করেননি। তবে এ ব্যর্থতায় যে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই, তা বলা যাবে না। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে যে চেষ্টা চলছে তাতে বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রীকে খুব বেশি সংশ্লিষ্টই করা হয়নি।
তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যখন এ রকম অনিশ্চয়তা, তখন ভারত তিস্তার পানি নিজেদের মতো করে ব্যবহারের ব্যবস্থা করছে। তারা নিজেদের অংশে তিস্তার ওপর এরই মধ্যে অনেকগুলো জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এসব জলবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তার গুরুত্ব হারাবে। যদি ভারত উজানে পানি সরিয়ে নেওয়ার কাজ সম্পন্ন করে তাহলে পানি বণ্টন চুক্তি দিয়ে আমাদের কী হবে? তিস্তার পানিতে বাংলাদেশের অধিকার যৌক্তিক। তাই তিস্তার নাব্যতা ঠিক রাখার জন্য যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন, সেই পরিমাণ পানি নদীতে রেখে সমানভাবে পানি বণ্টন হওয়া খুব জরুরি।
যদি এ চুক্তি করা না যায় তাহলে আশীর্বাদরূপী তিস্তা অভিশাপরূপী হয়ে উঠবে। তিস্তার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, কৃষি ধ্বংস হবে, জলবায়ুর ওপর প্রভাব পড়বে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বন্যায় ভাঙবে আবাদি জমি, বসতবাড়ি-ভিটা আর দীর্ঘ মেয়াদে হয়তো সৃষ্টি হবে ধু ধু বালুর চর। প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যকার আস্থার সম্পর্কও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তুহিন ওয়াদুদ: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। সিনেটর, রিভারাইন পিপল।
wadudtuhin@gmail.com
প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ উভয়েরই প্রত্যাশিত। গত ৪ আগস্ট প্রথম আলো ভারতের কয়েকজন সাবেক হাইকমিশনারের মত উল্লেখ করেছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। সেখানে সাবেক হাইকমিশনাররা তিস্তার পানি বণ্টন এবং স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারতের অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল বলে মত দিয়েছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ নদীর ওপর প্রথমত অধিকার নদীতীরবর্তী মানুষের। তাকে সীমানা দিয়ে ভাগ করে কাউকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। দেশবিভাগ পূর্ববর্তী সময়ে এ তিস্তায় সবার সমান অধিকার ছিল। শুধু ভৌগোলিক বিভাজনে উজানে থাকা ভারত তিস্তার পানি ব্যবহার নিজেদের জন্য করবে, সেটা হতে পারে না। বরং অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা জরুরি।
তিস্তাকে কেন্দ্র করে বেঁচে আছে বাংলাদেশের উত্তর জনপদের জীববৈচিত্র্য। তিস্তাকে তাই উত্তরের জীবনরেখা বলা হয়। যদি ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হয় তাহলে উত্তরের জনজীবনে অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে তিস্তা। খরা মৌসুমে তিস্তায় পানিপ্রবাহ কম থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে পরিমাণ পানি থাকে, এতটা কম থাকার কথা নয়। ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে পানি বণ্টন চুক্তি হলে শুষ্ক মৌসুমে বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি পানি থাকবে, যা উত্তর জনপদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুই ধাপে তিস্তা সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানিস্বল্পতার কারণে প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় ধাপ আর শুরু করা যায়নি। ফলে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সেচ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন আর সম্ভব হয়নি। এমনকি বর্তমান যে অবস্থা চলছে, তাতে করে প্রথম ধাপের যে অংশ সেচ প্রকল্পের আওতায় এসেছে, তা-ও অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শুধু সেচ প্রকল্পজনিত সুবিধা-অসুবিধা নয়। তিস্তার পানি শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত না আসায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের ঢালুর অংশে পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তলদেশের পানির স্তর আরও নিচে নেমে যায়। যখন সেখানে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করে চাষাবাদ করা হয়, তখন আরও নিচে যায় পানির স্বাভাবিক স্তর। এ রকম চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
মহাজোট সরকার যদি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে, তিস্তা ঘেঁষে যে বিশাল জনপদ রয়েছে, তারা অনেকখানি মুখ ফিরিয়ে নেবে। এ চুক্তি না হলে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিশাল জনগোষ্ঠী তিস্তা নদীর প্রত্যক্ষ ক্ষতির শিকার হবে। মহাজোট সরকার রংপুর অঞ্চলে যে উন্নয়ন করেছে, তা অন্য কোনো সময়ের সরকার করেনি। এ কথা সত্যি হলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হলে তা যতখানি নির্বাচনে গণমানুষকে আশ্বস্ত করতে পারবে, তার তুলনা আর কোনোটা দিয়েই করা সম্ভব নয়। রংপুর বিভাগ, রংপুর সিটি করপোরেশন, তিস্তা সেতু, দ্বিতীয় তিস্তা সেতু, দ্বিতীয় ধরলা সেতু, নার্সিং ইনস্টিটিউট, সোনাহাট স্থলবন্দর, পীরগঞ্জ মেরিন একাডেমিসহ যে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত করেছে, তা চাপা পড়তে পারে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ার কারণে। জাতীয় পর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব যেমন পড়বে তেমনি আঞ্চলিক পর্যায়েও পড়বে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি চেষ্টার কম করেননি। তবে এ ব্যর্থতায় যে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই, তা বলা যাবে না। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে যে চেষ্টা চলছে তাতে বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রীকে খুব বেশি সংশ্লিষ্টই করা হয়নি।
তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যখন এ রকম অনিশ্চয়তা, তখন ভারত তিস্তার পানি নিজেদের মতো করে ব্যবহারের ব্যবস্থা করছে। তারা নিজেদের অংশে তিস্তার ওপর এরই মধ্যে অনেকগুলো জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এসব জলবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তার গুরুত্ব হারাবে। যদি ভারত উজানে পানি সরিয়ে নেওয়ার কাজ সম্পন্ন করে তাহলে পানি বণ্টন চুক্তি দিয়ে আমাদের কী হবে? তিস্তার পানিতে বাংলাদেশের অধিকার যৌক্তিক। তাই তিস্তার নাব্যতা ঠিক রাখার জন্য যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন, সেই পরিমাণ পানি নদীতে রেখে সমানভাবে পানি বণ্টন হওয়া খুব জরুরি।
যদি এ চুক্তি করা না যায় তাহলে আশীর্বাদরূপী তিস্তা অভিশাপরূপী হয়ে উঠবে। তিস্তার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, কৃষি ধ্বংস হবে, জলবায়ুর ওপর প্রভাব পড়বে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বন্যায় ভাঙবে আবাদি জমি, বসতবাড়ি-ভিটা আর দীর্ঘ মেয়াদে হয়তো সৃষ্টি হবে ধু ধু বালুর চর। প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যকার আস্থার সম্পর্কও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তুহিন ওয়াদুদ: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। সিনেটর, রিভারাইন পিপল।
wadudtuhin@gmail.com
No comments