বিশ্বজিতের খুনি মাহফুজের মাঃ আমার ছেলে ছাত্রলীগের কর্মী by ছোটন সাহা
ওকে বার বার রাজনীতি থেকে সরে আসতে বলেছি। কিন্তু ও আমার কোনো কথাই শুনলো না। গ্রামের বাড়িতে আসলেই শুধু ঢাকা থেকে বার বার ওর বন্ধুরা মোবাইলে ফোন করতো। তাই দুই এক দিনের বেশি গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারতো না সে। রাজনীতি ওর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের গ্রেফতার করা অন্যতম আসামি মাহফুজুর রহমান নাহিদের মা সামসুন নাহার (৬৭) কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন।মাহফুজ ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করে বলেন, “আমি সরকারের কাছে দাবি করছি যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়, তাদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।”
শনিবার দুপুর ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়নগর গ্রামে মাহফুজের গ্রামের বাড়িতে অনুসন্ধান চালায় বাংলানিউজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাহফুজের বাবা নাম আব্দুর রহমান। তিনি স্থানীয় দক্ষিণ জয়নগর হোসেনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মাহফুজ। প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা করলেও এরপরে ভর্তি হন মাদ্রাসায়। সেখান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
মাহফুজের বাসায় গেলে তাদের ঘরের জানালা-কপাট বন্ধ পাওয়া যায়। বহু ডাকাডাকির পর ভেতর থেকে মাহফুজের বোন পরিচয় দিয়ে একজন বাসায় মাহফুজের আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই জানিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
এক পর্যায়ে পাশের বাড়ির বেশ কয়েকজন নারীর সহায়তায় সংবাদকর্মীদের সামনে আসেন মাহফুজের মা সামসুন নাহার।
প্রথমে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “এলাকায় তার কোনো দুর্নাম নেই। সবাই তাকে ভদ্র ছেলে হিসেবে জানে।”
মাহফুজের এক সময়ের সহপাঠী ব্র্যাককর্মী হোসনে আরা বলেন, “মাহফুজের মতো ছেলে এমন কাজ করতে পারে, তা বিশ্বাস করতে পারছি না। সে তো ভদ্র ছেলে ছিল। তবে কেন এমন কাজ করলো আমার জানা নেই।”
মাহফুজের পাশের বাড়ির আমেনা বেগম ও মনসুরা বেগম বলেন, “মাহফুজের পরিবারটি অনেক ভালো। আমরা তাদের অনেক বছর থেকেই চিনি। যদি সে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিচার হওয়া প্রয়োজন। তবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা ভাবতে কষ্ট লাগছে।”
বিশ্বজিৎ হত্যার আসামি মাহফুজের বাবা আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বহু চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অনেক দিন থেকেই তিনি এলাকায় নেই জানায় এলাকাবাসী।
মাহফুজের এক আত্মীয় মাহফুজের বড় ভাই মাকসুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু তার ব্যবহৃত নম্বরে অনেক বার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে জানা গেছে, মাহফুজ কয়েক মাস আগে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে পরীক্ষা দিয়েছিল। চাকরির নিয়োগ নিশ্চিতের জন্য হয়ত ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে সে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর হাওলাদের সঙ্গে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাহফুজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কথা বললে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যান।
পরে তিনি বলেন, “দোষীদের শাস্তি হওয়া দরকার।”
এ বিষয়ে ভোলার পুলিশ সুপার বশির আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের মামলার এক আসামি ভোলার দৌলতখানে সেটা পুলিশ অবগত আছে। ওই পরিবারটির ওপর পুলিশি নজরদারি রয়েছে।
No comments