আলোচনা- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব আকাশচুম্বী' by ড. নিয়াজ আহম্মেদ
সাধারণ ও বিশেষ মানের শিক্ষার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ব্যবধান। বিশেষ মানের শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নের জন্য বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এতটাই বেশি যে এর মাধ্যমে একটি দেশ শুধু সামনের দিকেই এগিয়ে যেতে পারে না, বরং দেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল হয়।এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ কিছু দিন আগে পাটের জন্মরহস্য উদ্ঘাটন। কিছুস ংখ্যক তরুণ ও মেধাবী বিজ্ঞানী এবং তাঁদের পরিচালনাদানকারী অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী ও সরকারি আর্থিক সহায়তা আমাদের যে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তা আমরা লক্ষ করছি। বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কি পারবে না এ রকম আরো বহু অজানা রহস্য উন্মোচন করতে? কিন্তু কবে এবং কিভাবে? সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিবছর আমরা অসংখ্য মানুষ তৈরি করছি।
তাঁদের মধ্যে কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ পুলিশ অফিসার ও শিক্ষকতা পেশাসহ অন্যান্য বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন। কিছুটা সম্মান ও বেঁচে থাকার তাগিদে যে যাঁর পেশায় কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষকতা পেশা ছাড়া অন্যান্য পেশায় মেধার সুষ্ঠু ব্যবহার নিতান্তই কম। মেধা ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও কর্মকর্তারা বেশি মাত্রায় ব্যস্ত থাকেন তাঁদের সম্মান ও অন্যকে সম্মান প্রদানের মধ্যে। নির্দিষ্ট কিছু পেপার ওয়ার্ক আর সাধারণ মানুষের ওপর খবরদারি করা তাঁদের নিত্যদিনের কাজ। কাজগুলো তাঁরা নিজেরা যেমন উপভোগ করেন, তেমনি তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের উপভোগ করানোর জন্য উৎসাহিত করেন। কখনো কখনো সাধারণ মানুষদের এতটাই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন যে গাড়ি থেকে নেমে মারধর করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। কারণ একটাই_সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। এমনটা হওয়ায় এখন পর্যন্ত লোভনীয় চাকরি হিসেবে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন। বেশির ভাগই সাধারণ মানের শিক্ষায় শিক্ষিত। উপায় কী? বিশেষ মানের বিজ্ঞানী তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ আর্থিক ও কারিগরি প্রণোদনা এবং লেখাপড়ার পর চাকরির পর্যাপ্ত সুযোগ প্রয়োজন, আমরা কি আমাদের ছেলে-মেয়েদের তা দিতে পারছি?
সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার যখন মুখ্য হয়ে দেখা দেয়, তখন প্রতিটি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগ্রহ জাগে। এগুলো কিভাবে চলবে, উন্নতমানের বিজ্ঞানী তৈরি করতে পারবে কি না তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। একমাত্র মাথাব্যথা এলাকার লোকদের জানানো যে আমার এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য যদি হয় সাধারণ মানের মানুষ তৈরি করা, সে ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি সঠিক। কিন্তু আমরা যদি মনে-প্রাণে চাই যে আমরা আন্তর্জাতিকমানের বিজ্ঞানী তৈরি করব, সে ক্ষেত্রে আমাদের ভিন্নপথে হাঁটতে হবে। পথটির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সদিচ্ছা। আমরা যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদান করাই তাঁরা বিভিন্ন ফোরামে তাঁদের সীমাবদ্ধতার কথা বলে আসছি। কোনো পর্যায়ের শিক্ষাকে কম গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু মেধাবী বিজ্ঞানী তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গুরুত্ব আকাশচুম্বী। নইলে অজানা রহস্য কিভাবে বের হবে? কিভাবে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে? কিভাবে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অন্যান্য দেশের সঙ্গে চলতে পারব? আমাদের কর্তাব্যক্তিদের ভাবতে হবে ও ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। কিভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রহস্য উদ্ঘাটনকারী বিজ্ঞানী তৈরি করতে পারি, সেদিকে ভাবনাগুলো নিবিষ্ট করতে হবে। সরকার যখন দেশে কতগুলো (সংখ্যাটি সম্ভবত ৩০-এর কোঠায়) মডেল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ করে, তখন কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো এবং গবেষণাগার তৈরির জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেন না? আমাদের মতো বিশাল জনবহুল দেশে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ মানের শিক্ষার মাধ্যমে এম এ পাস মানুষ তৈরি করার চেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিজ্ঞানী তৈরি করা কি লাভজনক নয়? যে জ্ঞানের প্রয়োগ ক্ষেত্র রয়েছে এবং যার দ্বারা দেশের কৃষি, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রসায়ন ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বড় উপকার হয়_সেদিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া সমীচীন নয় কি? ভাবতে হবে, প্রতিবছর কতজন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করছি এবং কতজন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ তৈরি করছি। আমার ধারণা, এর ব্যবধান বিরাট। আমরা কখন এ ব্যবধান কমাতে সক্ষম হব? আদৌ আমরা পারব কি না_ সেটিও প্রশ্ন। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু আমাদের চেষ্টা আরো বেশি বেশি করে করা উচিত। বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে। সাধারণের কাজগুলো এখন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। এখন আর ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ফরম পূরণ করতে হয় না। মোবাইলের মাধ্যমে এ কাজ সমাধা করা হয়। গ্রামগঞ্জে এখন তথ্য-প্রযুক্তির হাওয়া বইছে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণার বড়ই অভাব। এ ক্ষেত্রেও ডিজিটাল প্রযুক্তির মতো হাওয়া বওয়া উচিত। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে গবেষণার একেকটি উর্বর ক্ষেত্র। তৈরি করতে পারে দক্ষ বিজ্ঞানী। কিন্তু কোথায় যেন গলদ। কেন যেন সদিচ্ছার অভাব? কেন যেন অবহেলা? রাষ্ট্রকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য আর্থিক ও কারিগরিসহ সব সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
=======================
ইতিহাস- 'প্রত্যন্ত জনপদে ইতিহাস-সঙ্গী হয়ে' by সাযযাদ কাদির আন্তর্জাতিক- 'জাতিসংঘ বনাম যুক্তরাষ্ট্র' by শহিদুল শহিদুল ইসলাম গল্পালোচনা- 'দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ?' by মহসীন মহসীন হাবিব স্বাস্থ্য আলোচনা- 'প্রসূতিসেবায় পিছিয়ে দেশ' by শেখ সাবিহা আলম রাজনৈতিক আলোচনা- 'বন্দিত কান্না, নিন্দিত হরতাল আর রাজকীয় অশ্রুপাতের গল্প' by ফারুক ওয়াসিফ খবর- উত্তর কোরিয়ার নতুন পরমাণু প্ল্যান্ট দেখে 'তাজ্জব' মার্কিন বিজ্ঞানীরা গল্পসল্প- 'মুজিব একবার আসিয়া সোনার বাংলা যাওরে দেখিয়ারে' by মোস্তফা হোসেইন আন্তর্জাতিক- 'ওবামা কি ক্লিনটনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন?' by সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী কৃষি আলোচনা- 'পোষের শেষ মাঘের বারো' by ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস মণিপুরি মহা রাসলীলা উৎসবের ইতিকথা by মুজিবুর রহমান প্রকৃতি- সমুদ্রে উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রবাল মড়ক মণিপুরি রাসমেলা উৎসব by আকমল হোসেন নিপু যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'মডার্ন হাম্মুরাবি এবং কাঠের ঘোড়া' by আলমগীর সাত্তার আলোচনা- 'কারাগার থেকে সংশোধনাগার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ' by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু শিল্প-অর্থনীতি 'ক্ষুদ্রঋণের বিড়ম্বনা' by আহমদ রফিক
কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ ড. নিয়াজ আহম্মেদ
সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহুজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
এই ইতিহাস'টি পড়া হয়েছে...
ইতিহাস- 'প্রত্যন্ত জনপদে ইতিহাস-সঙ্গী হয়ে' by সাযযাদ কাদির আন্তর্জাতিক- 'জাতিসংঘ বনাম যুক্তরাষ্ট্র' by শহিদুল শহিদুল ইসলাম গল্পালোচনা- 'দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ?' by মহসীন মহসীন হাবিব স্বাস্থ্য আলোচনা- 'প্রসূতিসেবায় পিছিয়ে দেশ' by শেখ সাবিহা আলম রাজনৈতিক আলোচনা- 'বন্দিত কান্না, নিন্দিত হরতাল আর রাজকীয় অশ্রুপাতের গল্প' by ফারুক ওয়াসিফ খবর- উত্তর কোরিয়ার নতুন পরমাণু প্ল্যান্ট দেখে 'তাজ্জব' মার্কিন বিজ্ঞানীরা গল্পসল্প- 'মুজিব একবার আসিয়া সোনার বাংলা যাওরে দেখিয়ারে' by মোস্তফা হোসেইন আন্তর্জাতিক- 'ওবামা কি ক্লিনটনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন?' by সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী কৃষি আলোচনা- 'পোষের শেষ মাঘের বারো' by ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস মণিপুরি মহা রাসলীলা উৎসবের ইতিকথা by মুজিবুর রহমান প্রকৃতি- সমুদ্রে উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রবাল মড়ক মণিপুরি রাসমেলা উৎসব by আকমল হোসেন নিপু যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'মডার্ন হাম্মুরাবি এবং কাঠের ঘোড়া' by আলমগীর সাত্তার আলোচনা- 'কারাগার থেকে সংশোধনাগার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ' by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু শিল্প-অর্থনীতি 'ক্ষুদ্রঋণের বিড়ম্বনা' by আহমদ রফিক
কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ ড. নিয়াজ আহম্মেদ
সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহুজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
এই ইতিহাস'টি পড়া হয়েছে...
No comments