শ্রীকৃষ্ণ: পুণ্যপ্রভু পরমেশ্বর -জন্মাষ্টমী by তাপস কুমার নন্দী
সনাতনী ভারতবর্ষের ধর্ম ও ইতিহাসের প্রাণপুরুষ লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভাদ্র মাসের শ্রীকৃষ্ণাষ্টমীতে তাঁর আবির্ভাব। শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী সংক্ষেপে সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে জন্মাষ্টমী তিথি নামে বহুল সমাদৃত। তিনি এক সবর্গ, স্তবনীয়। তিনি স্বয়ং ভগবান। তাই সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে চিরকালীন বিশ্বাস ‘কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং’। তিনি সর্বকারণের কারণ। তিনি সত্ ও আনন্দস্বরূপ। তাঁর সমান কেউ নেই, তাঁর ঊর্ধ্বেও কেউ নেই। গোপাল তাপনী, উপনিষদের ভাষায়—‘তিনি এক সবর্গ ও স্তবনীয় পুরুষোত্তম’।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত একটু ভিন্ন ধরনের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক ঐতিহাসিক পটভূমি।
সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিনী নক্ষত্রে ভোজ বংশীয় রাজা উগ্র সেনের পুত্র কংসের কারাগারে দৈবকীর কোলে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শাস্ত্রে দেখা যায়, এই আবির্ভাব ছিল বসুদেব-দৈবকীর প্রতি ভগবানের তৃতীয়বারের প্রতিজ্ঞা পালন। অষ্টমী তিথিতে দৈবকীয় অষ্টম গর্ভে জন্ম নিয়েছিল বলে এই তিথির নাম ‘জন্মাষ্টমী’ তিথি। আর এ উপলক্ষে যে আয়োজন বা উত্সব, তার নাম ‘জন্মাষ্টমী’ উত্সব।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন অত্যাচারী কংসের কারাগারে জন্ম নিয়েছিলেন, তখন কংসের অত্যাচারে সমগ্র এলাকায় মহা ত্রাস দেখা দিয়েছিল। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মক্ষণে কোনো উত্সাহ-উদ্দীপনা হয়নি। শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি তো দূরের কথা, কোনো মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠানাদিও করা সম্ভব ছিল না। সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে এটা অত্যন্ত দুঃখ ও গ্লানিকর স্মৃতি। তবুও শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাবে ধরণী হয়েছে পাপভারমুক্ত। সাধুসজ্জন ভক্তদের মনে সঞ্চার হয়েছে বুকভরা আনন্দ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানবদেহ ধারণ করে ১২৫ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর এই জীবনকালকে বিন্যস্ত করলে দেখা যায়, ‘মথুরায় তাঁর জন্ম, গোকুলে নন্দালয়ে তাঁর পরিবর্ধন, মথুরায় করেছেন কংস বধ, রাজ্যাধিকার, কুরুক্ষেত্রে পাণ্ডবদের কাছে তিনি সখা, দ্বারকায় রাজধানী স্থানান্তর ও অতপর লীলাবসান।
সনাতনী সমাজে শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলায় পুতনাবধ, দাম বন্ধন লীলা, কালীয়দমন, গোবর্ধন ধারণ প্রভৃতি কার্যের মধ্যে তাঁর অলৌকিক শক্তির পরিচয় মেলে। এ ছাড়া মুষ্টিক ও চানুর নামক দুই মল্লযোদ্ধার নিধন, কংস বধ, অকাসুর বধ, শিশু পাল বধ প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশ লক্ষ করা গেছে। তবে কুরুক্ষেত্রে সমরাঙ্গনে যুদ্ধবিমুখ হতোদ্যম অর্জুনকে তিনি যুদ্ধকর্মে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভগবান বলে পরিচয় দিয়েছেন।
সনাতনী সম্প্রদায়ের অমূল্য সম্পদ মহাভারত, গীতা, ভাগ্বত ও বৈষ্ণবীয় পুরাণসমূহে শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ভক্তদের নিবিড় সাধনার পরম পুরুষোত্তম হিসেবে তিনি পূজিত।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের পরমাত্মীয় এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের আত্মা। তিনি যখন দেখলেন মাধুর্যের মাধ্যমে অত্যাচারীর দুঃশাসন থেকে মানব সমাজের সামগ্রিক মঙ্গল সাধন করা যাবে না, তখনই তাঁকে রাজার ভূমিকা নিতে হয়েছে। রথের সারথ্য গ্রহণ করে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। তিনি আধ্যাত্মিক বলে বলীয়ান মানব সমাজ একান্তভাবে কামনা করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ জানতেন, ভক্তির সঙ্গে শক্তি না থাকলে কল্যাণ রাষ্ট্র কোনো অবস্থাতেই গঠন করা যায় না। তাই তিনি একদিকে প্রেমের বাঁশি বাজিয়েছিলেন, অন্যদিকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অপশক্তির আস্ফাালন ধূলিসাত্ করে প্রমাণ করলেন ‘যথা ধর্ম তথা জয়’।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণীসমূহই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় স্থান পেয়েছে। সব বেদ ও উপনিষদের সারসংক্ষেপ হলো এই গীতা। গীতার ঈশ্বর সাধনার বিভিন্ন পথ আছে। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি যেকোনো পথ ধরে সাধনা করলে ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সবই পরিচালিত হচ্ছে ভগবানের ইচ্ছানুসারে। জীব হচ্ছে ভগবানের অংশ। ঈশ্বর, জীব, জরা প্রকৃতি এবং অনন্তকাল একে অপরের পরিপূরক এবং সর্বত্রই নিত্য। ভগবান হলেন সব চেতনার উত্স। জীব যেহেতু ভগবানের অংশ, তাই সে চেতন। তবে জীব কেবল তার নিজের দেহ সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু ভগবান হচ্ছে সব জীবের দেহসহ সবকিছু সম্পর্কে সচেতন। তা ছাড়া গীতার পরমতত্ত্ব পরম প্রাপ্তি, মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন বিশ্ব দর্শনের কথ্য বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।
মহাভারতের ঐতিহাসিকতা ও দেশি-বিদেশি পণ্ডিতদের মতামত থেকে এবং বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করে জানা যায়, পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একজন ঐতিহাসিক পুরুষ। তিনি অপরাজেয়, ধর্মাত্মা বেদজ্ঞ, লোকহিতৈষী, ক্ষমাশীল, নিরহঙ্কার, তপস্বী এবং পুণ্যময়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথিতে বিশ্বের সব মানব সমাজ ও জীবের কল্যাণ কামনা করছি। সব অনাচার, কুসংস্কার, সন্ত্রাস, যুদ্ধ, লোভ, হিংসা দূর করে প্রেম, প্রীতি আর মানবতার আদর্শে নতুন বিশ্ব সভ্যতা গড়ে উঠুক—ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে এ প্রার্থনাই করি।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত একটু ভিন্ন ধরনের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক ঐতিহাসিক পটভূমি।
সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিনী নক্ষত্রে ভোজ বংশীয় রাজা উগ্র সেনের পুত্র কংসের কারাগারে দৈবকীর কোলে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শাস্ত্রে দেখা যায়, এই আবির্ভাব ছিল বসুদেব-দৈবকীর প্রতি ভগবানের তৃতীয়বারের প্রতিজ্ঞা পালন। অষ্টমী তিথিতে দৈবকীয় অষ্টম গর্ভে জন্ম নিয়েছিল বলে এই তিথির নাম ‘জন্মাষ্টমী’ তিথি। আর এ উপলক্ষে যে আয়োজন বা উত্সব, তার নাম ‘জন্মাষ্টমী’ উত্সব।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন অত্যাচারী কংসের কারাগারে জন্ম নিয়েছিলেন, তখন কংসের অত্যাচারে সমগ্র এলাকায় মহা ত্রাস দেখা দিয়েছিল। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মক্ষণে কোনো উত্সাহ-উদ্দীপনা হয়নি। শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি তো দূরের কথা, কোনো মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠানাদিও করা সম্ভব ছিল না। সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে এটা অত্যন্ত দুঃখ ও গ্লানিকর স্মৃতি। তবুও শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাবে ধরণী হয়েছে পাপভারমুক্ত। সাধুসজ্জন ভক্তদের মনে সঞ্চার হয়েছে বুকভরা আনন্দ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানবদেহ ধারণ করে ১২৫ বছর জীবিত ছিলেন। তাঁর এই জীবনকালকে বিন্যস্ত করলে দেখা যায়, ‘মথুরায় তাঁর জন্ম, গোকুলে নন্দালয়ে তাঁর পরিবর্ধন, মথুরায় করেছেন কংস বধ, রাজ্যাধিকার, কুরুক্ষেত্রে পাণ্ডবদের কাছে তিনি সখা, দ্বারকায় রাজধানী স্থানান্তর ও অতপর লীলাবসান।
সনাতনী সমাজে শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলায় পুতনাবধ, দাম বন্ধন লীলা, কালীয়দমন, গোবর্ধন ধারণ প্রভৃতি কার্যের মধ্যে তাঁর অলৌকিক শক্তির পরিচয় মেলে। এ ছাড়া মুষ্টিক ও চানুর নামক দুই মল্লযোদ্ধার নিধন, কংস বধ, অকাসুর বধ, শিশু পাল বধ প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশ লক্ষ করা গেছে। তবে কুরুক্ষেত্রে সমরাঙ্গনে যুদ্ধবিমুখ হতোদ্যম অর্জুনকে তিনি যুদ্ধকর্মে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভগবান বলে পরিচয় দিয়েছেন।
সনাতনী সম্প্রদায়ের অমূল্য সম্পদ মহাভারত, গীতা, ভাগ্বত ও বৈষ্ণবীয় পুরাণসমূহে শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ভক্তদের নিবিড় সাধনার পরম পুরুষোত্তম হিসেবে তিনি পূজিত।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের পরমাত্মীয় এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের আত্মা। তিনি যখন দেখলেন মাধুর্যের মাধ্যমে অত্যাচারীর দুঃশাসন থেকে মানব সমাজের সামগ্রিক মঙ্গল সাধন করা যাবে না, তখনই তাঁকে রাজার ভূমিকা নিতে হয়েছে। রথের সারথ্য গ্রহণ করে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। তিনি আধ্যাত্মিক বলে বলীয়ান মানব সমাজ একান্তভাবে কামনা করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ জানতেন, ভক্তির সঙ্গে শক্তি না থাকলে কল্যাণ রাষ্ট্র কোনো অবস্থাতেই গঠন করা যায় না। তাই তিনি একদিকে প্রেমের বাঁশি বাজিয়েছিলেন, অন্যদিকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অপশক্তির আস্ফাালন ধূলিসাত্ করে প্রমাণ করলেন ‘যথা ধর্ম তথা জয়’।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণীসমূহই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় স্থান পেয়েছে। সব বেদ ও উপনিষদের সারসংক্ষেপ হলো এই গীতা। গীতার ঈশ্বর সাধনার বিভিন্ন পথ আছে। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি যেকোনো পথ ধরে সাধনা করলে ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সবই পরিচালিত হচ্ছে ভগবানের ইচ্ছানুসারে। জীব হচ্ছে ভগবানের অংশ। ঈশ্বর, জীব, জরা প্রকৃতি এবং অনন্তকাল একে অপরের পরিপূরক এবং সর্বত্রই নিত্য। ভগবান হলেন সব চেতনার উত্স। জীব যেহেতু ভগবানের অংশ, তাই সে চেতন। তবে জীব কেবল তার নিজের দেহ সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু ভগবান হচ্ছে সব জীবের দেহসহ সবকিছু সম্পর্কে সচেতন। তা ছাড়া গীতার পরমতত্ত্ব পরম প্রাপ্তি, মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন বিশ্ব দর্শনের কথ্য বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।
মহাভারতের ঐতিহাসিকতা ও দেশি-বিদেশি পণ্ডিতদের মতামত থেকে এবং বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করে জানা যায়, পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একজন ঐতিহাসিক পুরুষ। তিনি অপরাজেয়, ধর্মাত্মা বেদজ্ঞ, লোকহিতৈষী, ক্ষমাশীল, নিরহঙ্কার, তপস্বী এবং পুণ্যময়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথিতে বিশ্বের সব মানব সমাজ ও জীবের কল্যাণ কামনা করছি। সব অনাচার, কুসংস্কার, সন্ত্রাস, যুদ্ধ, লোভ, হিংসা দূর করে প্রেম, প্রীতি আর মানবতার আদর্শে নতুন বিশ্ব সভ্যতা গড়ে উঠুক—ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে এ প্রার্থনাই করি।
No comments