দেশভাগ নিয়ে মিউজিয়াম হচ্ছে কলকাতায় by পরিতোষ পাল
দেশভাগের
যন্ত্রণা আজও মানুষ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। সত্তর বছর পেরিয়ে গেলেও অনেকের
কাছে দেশভাগের স্মৃতি নানাভাবে অনুভবে রয়েছে। তবে বর্তমান প্রজন্ম সেই
যন্ত্রণা ও অনুভববের কতটুকু উপলব্ধি করতে পারেন? শুধু বইয়ের পাতায় লেখা
ইতিহাসই তাদের আশ্রয়। তবে এবার পশ্চিমের মতো পূবেও তৈরি হচ্ছে দেশবিভাগ বা
পার্টিশন নিয়ে মিউজিয়াম। কয়েকবছর আগে পাঞ্জাবের অমৃতসরে চালু হয়েছে
পার্টিশন মিউজিয়াম। তবে সেই মিউজিয়ামে প্রধানত জায়গা পেয়েছে ভারতের
পশ্চিমদিকের দেশভাগের নানা কাহিনী। এবার কলকাতায় তৈরি হতে চলেছে ভারতের
পূর্বদিকে দেশভাগের যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের ছবিটি কেমন ছিল তা নিয়ে মিউজিয়াম।
শিল্পী শুভাপ্রসন্ন জানিয়েছেন, বাংলার ইতিহাসে দেশভাগ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে যন্ত্রণা, দুর্ভোগ ও কষ্টের ছবি। দেশভাগ নিয়ে বাংলায়
অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে। তৈরি হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র। দেশভাগের সেই
যন্ত্রণা ও অসহায়তা এবং তার বহমানতাকেই তুলে ধরা হবে এই মিউজিয়ামে। জানা
গেছে, আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেলের হেরিটেজ অংশে তৈরি হবে এই মিউজিয়াম।
কিছুদিন আগেই এই দুটি জেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্দিদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া
হয়েছে অন্যত্র। সম্প্রতি কলকাতার মেয়র হাকিম ও শুভাপ্রসন্ন জেল চত্বর ঘুরে
প্রাথমিকভাবে ঠিক করেছেন, আলিপুর জেলের হাসপাতাল ভবনেই তৈরি হবে পার্টিশন
মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে কি থাকবে? শুভাপ্রসন্ন জানিয়েছেন, পুরনো পেন্টিং, সেই
সময়ের খবরের কাগজের কাটিং, ছবি, ফিল্ম, মডেল ও লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের
মাধ্যমে দেশভাগের কাহিনীকে তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে রাখা হবে সেই সময়কার
মানুষের রেকর্ডকৃত বর্ণনা ও স্মৃতিচারণ। দেশভাগের সময়ের নানা সামগ্রীও রাখা
হবে এই মিউজিয়ামে। আসলে নতুন প্রজন্ম যাতে দেশভাগের সঠিক ইতিহাস জানতে
পারেন এবং উপলব্ধি করতে পারেন অসহায়তাকে সেটাই হবে এই মিউজিয়ামের লক্ষ্য।
এজন্য থাকবে স্থায়ী প্রদর্শনশালা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারই এই মিউজিয়াম তৈরি
করবে। এজন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে কমিটিও।
অবশ্য কলকাতা পার্টিশন মিউজিয়াম নামে একটি প্রকল্প কয়েকবছর আগে বেসরকারিভাবে হাতে নেয়া হয়েছে। বার্লিনের হলোকাস্ট মিউজিয়াম দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ঋতুপর্ণা রায় নামে এক নারী এই প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। পাশাপাশি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিল্পপতি সজ্জন মিত্তালও ঘোষণা দেন যে তারা রাজ্য সরকারের সহায়তায় পার্টিশন মিউজিয়াম করবেন। কিন্তু এবার জানা গেছে, রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগেই তৈরি হবে এই পার্টিশন মিউজিয়াম। এদিকে আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি চত্বরে তৈরি হচ্ছে আরো একটি মিউজিয়াম। এই দুটি জেলে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত বহু বিপ্লবী বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষ, লীলা রায়ের মতো অনেকেই বন্দি ছিলেন এই দুটি জেলে। আলিপুর জেলে ফাঁসি হয়েছিল বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত ও দীনেশ মজুমদারের। এই সব বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিতে তৈরি করা হচ্ছে ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড কলোনিয়াল জেল মিউজিয়াম। যে সব সেলে বিপ্লবীরা ছিলেন সেগুলোকে সাজিয়ে তোলা হবে। সংরক্ষণ করা হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চটিও। আন্দামানের সেলুলার জেলের মতোই এই জেল মিউজিয়ামে ঘুরে দেখতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
সরকারি ওয়েবসাইটে জব চার্ণক বিতর্ক
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্মী হিসেবে জব চার্ণক কলকাতায় এসে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি ২৪শে আগস্ট কলকাতার জন্মদিন বলেও প্রচারিত ছিল। সেই দিনই তিনি কলকাতায় পদার্পণ করেছিলেন বলা হয়। সেই প্রচলিত ধারণা অনেকদিন আগেই আদালতের নির্দেশে খারিজ হয়ে গেলেও সরকারি নথিতে সেই প্রচলিত ধারণার বশবর্তী হয়ে শহরের নথিভুক্ত ইতিহাস অনুযায়ী জব চার্ণকই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা বলে উল্লেখ করে এক সরকারি ওয়েবসাইট বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। অথচ কলকাতাসহ রাজ্যের ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষার দায়িত্ব যাদের উপরে সেই রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ওয়েবসাইটের এই তথ্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে কলকাতা, সুতানটি ও গোবিন্দপুরের মালিকানা যাদের হাতে ছিল সেই সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার। সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের বক্তব্য, ২০০৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, জব চার্ণক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন। ২৪শে আগস্ট কলকাতার জন্মদিনও নয়। সরকারি সমস্ত নথি থেকে শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চার্ণকের নাম মুছে দিতেও সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পরিষদের জনস্বার্থ মামলাতেই আদালত এই রায় দিয়েছিল। কিন্তু জব চার্ণক নিয়ে প্রচলিত ধারণার ভূত হেরিটেজ কমিশনের মাথা থেকে সরাতে প্রতিবাদ জানাতে হয়েছে। পরিষদের কর্ণধার দেবর্ষি রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, হেরিটেজ কমিশনের ওয়েবসাইটে কলকাতা নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে। যেমন লেখা হয়েছে, সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা, এই তিনটি গ্রাম স্থানীয় জমিদারদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কিন্তু পরিষদের বক্তব্য, এই তথ্যও ঠিক নয়। বার্ষিক ১৩০০ টাকা খাজনার বিনিময়ে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার শুধু ওই তিনটি গ্রামের প্রজাসত্ত্ব (রাইট টু রেন্ট) ব্রিটিশদের দিয়েছিল। বিক্রি তো করা হয়নি, এমনকি জমিদার সত্ত্বও দেয়া হয়নি। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ওই লিজ-চুক্তির প্রতিলিপিও রয়েছে। তারই একটি কপি বড়িশায় সাবর্ণ সংগ্রহশালায় প্রদর্শনের জন্য রাখা রয়েছে। পরিষদের আরো দাবি, কলকাতা গড়ে ওঠার পেছনে রায় চৌধুরী পরিবারের ভূমিকাও ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি কমিশনের ওয়েবসাইটে। শেষ পর্যন্ত হেরিটেজ কমিশন ভুল স্বীকার করে ওয়েবসাইটে কলকাতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরিয়ে সঠিক তথ্য সন্নিবেশিত করলেও প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ ১৫ বছর আগে আদালতের যুক্তি নির্ভর রায়ের পরও হেরিটেজ কমিশনের দেয়া প্রচলিত ধারণার তত্ত্ব আরো বিভ্রান্তিরই জন্ম দিচ্ছে নাকি?
বিদ্যাসাগরের দুশো বছরে একাডেমি
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন উনবিংশ শতকের নবজাগরণের এক অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি একাধারে ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, অন্যদিকে ছিলেন সমাজ সংস্কারক। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেছিলেন। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তুলেছিলেন। রচনা করেছেন শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সেযুগে সামাজিক বাধাকে উপেক্ষা করে তিনি বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন। বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তিনি সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। পিতামাতার প্রতি তার ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল প্রবাদে রূপ নিয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি একাডেমি। উত্তর কলকাতায় বিদ্যাসাগরের বাড়িতেই তৈরি হবে এই একাডেমিটি। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর জন্মোৎসব কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি কমিটি।
ঐতিহাসিক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী জানিয়েছেন, আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর কলকাতায় বিদ্যাসাগরের বাড়িতে তার জন্ম দ্বিশতবর্ষের সূচনাতেই বিদ্যাসাগর একাডেমি কাজ শুরু করবে। একাডেমির লক্ষ্যই হবে, বিদ্যাসাগরকে নিয়ে গবেষণায় উৎসাহিত করা। সেই জন্য একটি মিউজিয়াম, আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার তৈরি করা হবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চার জন্য গড়ে তোলা হবে একটি ইনস্টিটিউট। এখনো বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত ব্যবহারের কিছু জিনিসপত্র অনেকের সংগ্রহে পাওয়া যাবে, সেগুলোকে নিয়ে এসে রাখা হবে একাডেমিতে। বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে এখনো পড়ে রয়েছে একটি সিন্দুক। সেটিকেও আনা হবে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে দান করা বিদ্যাসাগরের সংগ্রহ থেকে কিছু বইকে আনার চেষ্টা হবে বলেও জানা গেছে। বিদ্যাসাগরের জন্ম স্থান বীরসিংঘ গ্রামে অবশ্য বিদ্যাসাগরের নামে একটি মিউজিয়ামে রয়েছে। সেখানে রয়েছে বিদ্যাসাগরের সংগ্রহের কিছু বই। তবে জন্মদিনে বীরসিংহ গ্রামে হবে নানা অনুষ্ঠান। এদিকে, বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলার গর্বের পরম্পরাকে সামনে এনে ‘আমাদের বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করা হবে। বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের উন্নয়নের জন্যও অর্থ বরাদ্দ করবে রাজ্য সরকার।
হোটেল-রেস্টুরেন্টে স্তন্যদানের ব্যবস্থার দাবি
বড় বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে অধিকাংশ বড় বড় মলে নেই মায়েদের শিশুকে স্তন্যদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকজন মা তাদের সন্তানকে স্তন্য পান করানোর প্রয়োজনে কি ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন সেই দুর্ভোগের কথা বিস্তারিত জানানোর পরই সকলে নড়ে চড়ে বসেছেন। তবে কলকাতার সব পাঁচতারা বা সাততারা হোটেল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, স্তন্যপানের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই আলাদা ব্রেস্টফিডিংয়ের ব্যাবস্থা। তবে এক বহুজাতিক হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, এটা যদি সময়ের দাবি হয় তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই সেই ব্যবস্থা করা হবে। অবশ্য এ নিয়ে আগে বিতর্কও হয়েছে। কলকাতার একটি মলে এক মা সন্তানের স্তন্যপানের জন্য একটু আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। এর উত্তরে শুনতে হয়েছে বাড়ি চলে যান।
কিছুদিন আগেই কলকাতায় সদ্য চালু হওয়া একটি পাঁচতারা হেটেলে এক দম্পতি স্তন্যপান নিয়ে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানকার কাফেতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছিলেন, সদ্যোজাতের স্তন্যপানের কোনো ব্যবস্থাই নেই সেখানে। ফলে দ্রুত চলে আসতে হয়েছিল তাদের। হোটেলের নানা স্তরের কর্মীদের আবেদন করেও তারা একটু আড়াল খুঁজে পাননি। খিদেয় চিৎকার জুড়ে দেয়া শিশুকে মায়ের স্তন্যদানের জন্য। বরং শুনতে হয়েছে, প্রকাশ্যে খাওয়ান। এক ভুক্তভোগী প্রশ্ন তুলেছেন, ৫০০ রুপি দিয়ে এক কাপ কফি খাব অথচ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকবে না ? এক মা বড় হোটেল কর্তৃপক্ষের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, সদ্যোজাতকে নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে খেতে গেলে স্তন্যদানের প্রয়োজন তো হতেই পারে। একটা বেবি কেয়ার রুমের কথা কেন ভাবা হবে না? অবশ্য হোটেল রেস্টুরেন্ট এসোসিয়েশন থেকে বলা হয়েছে, দেশের পর্যটন বিধিতে এখনো হোটেলে আলাদা করে ব্রেস্ট ফিডিং রুম রাখার কথা বলা হয় নি। তবে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মায়েদের স্তন্যদান নিয়ে শোরগোল ওঠার পর জানিয়েছেন, রেস্টুরেন্ট ও শপিং মলে স্তন্যপান করানোর আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে দায়ী ইতিহাসের বৌরানি খাল!
হাওড়া থেকে গঙ্গা তথা ভাগিরথির নিচ দিয়ে কলকাতার বুক চিড়ে বাইপাস পেরিয়ে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ কলকাতার দ্বিতীয় মেট্রো (ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো) সময়ের সঙ্গে তাল রেখে এগিয়ে যেতে পারছে না। তবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে গঙ্গার নিচে টানেল খুঁড়তে অল্প সময় লাগলেও বাকি কয়েক, মিটার নির্মাণ কাজ বাকি থাকতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে মেট্রোর কাজ। মধ্য কলকাতার ঘিঞ্জি বসতি এলাকা বৌবাজারের নিচে টানেল খুঁড়তে গিয়ে উপরে ও নিচে বিপর্যয়ের মুখে কাজই বন্ধ রয়েছে। একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর নিচে পানির তোড়ে টানেলে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে রয়েছে দামি টানেল খোড়ার যন্ত্রটিও। তবে এই সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে ইতিহাসের কবর খুঁড়ে তুলে আনা হয়েছে অনেক তথ্য।
যেমন বলা হচ্ছে, বৌবাজারের নিচে এক সময়ে ছিল খাড়ি বা খাল। ভাগিরথির চাঁদপাল ঘাট থেকে হেস্টিংস স্ট্রিট, ওয়াটারলু স্ট্রিট, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, ক্রিক রো, শিয়ালদহ, বেলেঘাটা হয়ে সল্টলেক পর্যন্ত বিস্তৃত ওই পথে নৌকা চলত। ছিল মাছ ধরার কারবারও। পরবর্তী সেই খালের সংস্কার করেছিল ব্রিটিশরা। নাম হয়েছিল বৌরানি খাল। সেই খালের অস্তিত্ব বহুদিন আগে হারিয়ে গেলেও এখন ইতিহাসের সেই খালই সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ভিলেন হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সুড়ঙ্গ নির্মাণের আগে এই ইতিহাস কি আমলে নিয়েছিলেন সমীক্ষকরা? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তো বলেছেন, লন্ডনের টিউব রেলের মতো কলকাতাতেও এই রকম কাজ করা যায় কিনা তা নিয়ে ১৯০৫ সালে ‘দ্য অ্যাডভাইজরি বোর্ড অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ এবং ‘রয়্যাল কমিশন অব ট্রাফিক’ যৌথভাবে করা রিপোর্টে জানিয়েছিল, কলকাতার নিচে পিছল পলি এবং এঁটেল মাটি রয়েছে। ফলে মাটির তলায় লাইন পাতার কাজ সহজ হবে না। তিনি জানিয়েছেন, বৌবাজার এলাকার পুরনো মানচিত্র বা ইতিহাস যদি খতিয়ে দেখা হতো, তা হলে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে হয়তো রক্ষা পাওয়া যেত। তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা হতো না। অধ্যাপকের মতে, বৌরানি খালই মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী এটা মেনে নিতেই হবে।
অবশ্য কলকাতা পার্টিশন মিউজিয়াম নামে একটি প্রকল্প কয়েকবছর আগে বেসরকারিভাবে হাতে নেয়া হয়েছে। বার্লিনের হলোকাস্ট মিউজিয়াম দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ঋতুপর্ণা রায় নামে এক নারী এই প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। পাশাপাশি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিল্পপতি সজ্জন মিত্তালও ঘোষণা দেন যে তারা রাজ্য সরকারের সহায়তায় পার্টিশন মিউজিয়াম করবেন। কিন্তু এবার জানা গেছে, রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগেই তৈরি হবে এই পার্টিশন মিউজিয়াম। এদিকে আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি চত্বরে তৈরি হচ্ছে আরো একটি মিউজিয়াম। এই দুটি জেলে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত বহু বিপ্লবী বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষ, লীলা রায়ের মতো অনেকেই বন্দি ছিলেন এই দুটি জেলে। আলিপুর জেলে ফাঁসি হয়েছিল বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত ও দীনেশ মজুমদারের। এই সব বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিতে তৈরি করা হচ্ছে ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড কলোনিয়াল জেল মিউজিয়াম। যে সব সেলে বিপ্লবীরা ছিলেন সেগুলোকে সাজিয়ে তোলা হবে। সংরক্ষণ করা হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চটিও। আন্দামানের সেলুলার জেলের মতোই এই জেল মিউজিয়ামে ঘুরে দেখতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
সরকারি ওয়েবসাইটে জব চার্ণক বিতর্ক
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্মী হিসেবে জব চার্ণক কলকাতায় এসে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি ২৪শে আগস্ট কলকাতার জন্মদিন বলেও প্রচারিত ছিল। সেই দিনই তিনি কলকাতায় পদার্পণ করেছিলেন বলা হয়। সেই প্রচলিত ধারণা অনেকদিন আগেই আদালতের নির্দেশে খারিজ হয়ে গেলেও সরকারি নথিতে সেই প্রচলিত ধারণার বশবর্তী হয়ে শহরের নথিভুক্ত ইতিহাস অনুযায়ী জব চার্ণকই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা বলে উল্লেখ করে এক সরকারি ওয়েবসাইট বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। অথচ কলকাতাসহ রাজ্যের ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষার দায়িত্ব যাদের উপরে সেই রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ওয়েবসাইটের এই তথ্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে কলকাতা, সুতানটি ও গোবিন্দপুরের মালিকানা যাদের হাতে ছিল সেই সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার। সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদের বক্তব্য, ২০০৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, জব চার্ণক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন। ২৪শে আগস্ট কলকাতার জন্মদিনও নয়। সরকারি সমস্ত নথি থেকে শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চার্ণকের নাম মুছে দিতেও সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পরিষদের জনস্বার্থ মামলাতেই আদালত এই রায় দিয়েছিল। কিন্তু জব চার্ণক নিয়ে প্রচলিত ধারণার ভূত হেরিটেজ কমিশনের মাথা থেকে সরাতে প্রতিবাদ জানাতে হয়েছে। পরিষদের কর্ণধার দেবর্ষি রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, হেরিটেজ কমিশনের ওয়েবসাইটে কলকাতা নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে। যেমন লেখা হয়েছে, সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা, এই তিনটি গ্রাম স্থানীয় জমিদারদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কিন্তু পরিষদের বক্তব্য, এই তথ্যও ঠিক নয়। বার্ষিক ১৩০০ টাকা খাজনার বিনিময়ে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার শুধু ওই তিনটি গ্রামের প্রজাসত্ত্ব (রাইট টু রেন্ট) ব্রিটিশদের দিয়েছিল। বিক্রি তো করা হয়নি, এমনকি জমিদার সত্ত্বও দেয়া হয়নি। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ওই লিজ-চুক্তির প্রতিলিপিও রয়েছে। তারই একটি কপি বড়িশায় সাবর্ণ সংগ্রহশালায় প্রদর্শনের জন্য রাখা রয়েছে। পরিষদের আরো দাবি, কলকাতা গড়ে ওঠার পেছনে রায় চৌধুরী পরিবারের ভূমিকাও ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি কমিশনের ওয়েবসাইটে। শেষ পর্যন্ত হেরিটেজ কমিশন ভুল স্বীকার করে ওয়েবসাইটে কলকাতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরিয়ে সঠিক তথ্য সন্নিবেশিত করলেও প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ ১৫ বছর আগে আদালতের যুক্তি নির্ভর রায়ের পরও হেরিটেজ কমিশনের দেয়া প্রচলিত ধারণার তত্ত্ব আরো বিভ্রান্তিরই জন্ম দিচ্ছে নাকি?
বিদ্যাসাগরের দুশো বছরে একাডেমি
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন উনবিংশ শতকের নবজাগরণের এক অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি একাধারে ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, অন্যদিকে ছিলেন সমাজ সংস্কারক। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেছিলেন। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তুলেছিলেন। রচনা করেছেন শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সেযুগে সামাজিক বাধাকে উপেক্ষা করে তিনি বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন। বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তিনি সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। পিতামাতার প্রতি তার ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল প্রবাদে রূপ নিয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি একাডেমি। উত্তর কলকাতায় বিদ্যাসাগরের বাড়িতেই তৈরি হবে এই একাডেমিটি। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর জন্মোৎসব কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি কমিটি।
ঐতিহাসিক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী জানিয়েছেন, আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর কলকাতায় বিদ্যাসাগরের বাড়িতে তার জন্ম দ্বিশতবর্ষের সূচনাতেই বিদ্যাসাগর একাডেমি কাজ শুরু করবে। একাডেমির লক্ষ্যই হবে, বিদ্যাসাগরকে নিয়ে গবেষণায় উৎসাহিত করা। সেই জন্য একটি মিউজিয়াম, আর্কাইভ ও গ্রন্থাগার তৈরি করা হবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চার জন্য গড়ে তোলা হবে একটি ইনস্টিটিউট। এখনো বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত ব্যবহারের কিছু জিনিসপত্র অনেকের সংগ্রহে পাওয়া যাবে, সেগুলোকে নিয়ে এসে রাখা হবে একাডেমিতে। বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে এখনো পড়ে রয়েছে একটি সিন্দুক। সেটিকেও আনা হবে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে দান করা বিদ্যাসাগরের সংগ্রহ থেকে কিছু বইকে আনার চেষ্টা হবে বলেও জানা গেছে। বিদ্যাসাগরের জন্ম স্থান বীরসিংঘ গ্রামে অবশ্য বিদ্যাসাগরের নামে একটি মিউজিয়ামে রয়েছে। সেখানে রয়েছে বিদ্যাসাগরের সংগ্রহের কিছু বই। তবে জন্মদিনে বীরসিংহ গ্রামে হবে নানা অনুষ্ঠান। এদিকে, বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলার গর্বের পরম্পরাকে সামনে এনে ‘আমাদের বিদ্যাসাগর’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করা হবে। বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের উন্নয়নের জন্যও অর্থ বরাদ্দ করবে রাজ্য সরকার।
হোটেল-রেস্টুরেন্টে স্তন্যদানের ব্যবস্থার দাবি
বড় বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে অধিকাংশ বড় বড় মলে নেই মায়েদের শিশুকে স্তন্যদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকজন মা তাদের সন্তানকে স্তন্য পান করানোর প্রয়োজনে কি ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন সেই দুর্ভোগের কথা বিস্তারিত জানানোর পরই সকলে নড়ে চড়ে বসেছেন। তবে কলকাতার সব পাঁচতারা বা সাততারা হোটেল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, স্তন্যপানের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই আলাদা ব্রেস্টফিডিংয়ের ব্যাবস্থা। তবে এক বহুজাতিক হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, এটা যদি সময়ের দাবি হয় তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই সেই ব্যবস্থা করা হবে। অবশ্য এ নিয়ে আগে বিতর্কও হয়েছে। কলকাতার একটি মলে এক মা সন্তানের স্তন্যপানের জন্য একটু আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। এর উত্তরে শুনতে হয়েছে বাড়ি চলে যান।
কিছুদিন আগেই কলকাতায় সদ্য চালু হওয়া একটি পাঁচতারা হেটেলে এক দম্পতি স্তন্যপান নিয়ে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানকার কাফেতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছিলেন, সদ্যোজাতের স্তন্যপানের কোনো ব্যবস্থাই নেই সেখানে। ফলে দ্রুত চলে আসতে হয়েছিল তাদের। হোটেলের নানা স্তরের কর্মীদের আবেদন করেও তারা একটু আড়াল খুঁজে পাননি। খিদেয় চিৎকার জুড়ে দেয়া শিশুকে মায়ের স্তন্যদানের জন্য। বরং শুনতে হয়েছে, প্রকাশ্যে খাওয়ান। এক ভুক্তভোগী প্রশ্ন তুলেছেন, ৫০০ রুপি দিয়ে এক কাপ কফি খাব অথচ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য কোনো ব্যবস্থা থাকবে না ? এক মা বড় হোটেল কর্তৃপক্ষের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, সদ্যোজাতকে নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে খেতে গেলে স্তন্যদানের প্রয়োজন তো হতেই পারে। একটা বেবি কেয়ার রুমের কথা কেন ভাবা হবে না? অবশ্য হোটেল রেস্টুরেন্ট এসোসিয়েশন থেকে বলা হয়েছে, দেশের পর্যটন বিধিতে এখনো হোটেলে আলাদা করে ব্রেস্ট ফিডিং রুম রাখার কথা বলা হয় নি। তবে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মায়েদের স্তন্যদান নিয়ে শোরগোল ওঠার পর জানিয়েছেন, রেস্টুরেন্ট ও শপিং মলে স্তন্যপান করানোর আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে দায়ী ইতিহাসের বৌরানি খাল!
হাওড়া থেকে গঙ্গা তথা ভাগিরথির নিচ দিয়ে কলকাতার বুক চিড়ে বাইপাস পেরিয়ে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ কলকাতার দ্বিতীয় মেট্রো (ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো) সময়ের সঙ্গে তাল রেখে এগিয়ে যেতে পারছে না। তবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে গঙ্গার নিচে টানেল খুঁড়তে অল্প সময় লাগলেও বাকি কয়েক, মিটার নির্মাণ কাজ বাকি থাকতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে মেট্রোর কাজ। মধ্য কলকাতার ঘিঞ্জি বসতি এলাকা বৌবাজারের নিচে টানেল খুঁড়তে গিয়ে উপরে ও নিচে বিপর্যয়ের মুখে কাজই বন্ধ রয়েছে। একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর নিচে পানির তোড়ে টানেলে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে রয়েছে দামি টানেল খোড়ার যন্ত্রটিও। তবে এই সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে ইতিহাসের কবর খুঁড়ে তুলে আনা হয়েছে অনেক তথ্য।
যেমন বলা হচ্ছে, বৌবাজারের নিচে এক সময়ে ছিল খাড়ি বা খাল। ভাগিরথির চাঁদপাল ঘাট থেকে হেস্টিংস স্ট্রিট, ওয়াটারলু স্ট্রিট, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, ক্রিক রো, শিয়ালদহ, বেলেঘাটা হয়ে সল্টলেক পর্যন্ত বিস্তৃত ওই পথে নৌকা চলত। ছিল মাছ ধরার কারবারও। পরবর্তী সেই খালের সংস্কার করেছিল ব্রিটিশরা। নাম হয়েছিল বৌরানি খাল। সেই খালের অস্তিত্ব বহুদিন আগে হারিয়ে গেলেও এখন ইতিহাসের সেই খালই সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ভিলেন হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সুড়ঙ্গ নির্মাণের আগে এই ইতিহাস কি আমলে নিয়েছিলেন সমীক্ষকরা? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তো বলেছেন, লন্ডনের টিউব রেলের মতো কলকাতাতেও এই রকম কাজ করা যায় কিনা তা নিয়ে ১৯০৫ সালে ‘দ্য অ্যাডভাইজরি বোর্ড অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ এবং ‘রয়্যাল কমিশন অব ট্রাফিক’ যৌথভাবে করা রিপোর্টে জানিয়েছিল, কলকাতার নিচে পিছল পলি এবং এঁটেল মাটি রয়েছে। ফলে মাটির তলায় লাইন পাতার কাজ সহজ হবে না। তিনি জানিয়েছেন, বৌবাজার এলাকার পুরনো মানচিত্র বা ইতিহাস যদি খতিয়ে দেখা হতো, তা হলে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে হয়তো রক্ষা পাওয়া যেত। তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা হতো না। অধ্যাপকের মতে, বৌরানি খালই মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী এটা মেনে নিতেই হবে।
No comments