যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বিভ্রমের অবসান সৌদি আরবের? by রবার্ট এফ. ওর্থ
কিছুদিন
আগে সৌদি আরবে যে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, তাতে শুধু কয়েকটি তেলের
ট্যাংকই ধ্বংস হয়নি। এমন একটি ধারণারও চূড়ান্ত মৃত্যু হয়েছে, যা অনেকদিন
ধরে এমনিতেই মিইয়ে যাচ্ছিল। আর সেই ধারণা হলো, যুক্তরাষ্ট্র একটি নিরাপত্তা
বলয় তৈরি করে রেখেছে, যা কিনা তেল-সমৃদ্ধ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে তাদের
শত্রু, বিশেষ করে ইরানের কাছ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে।
এই পরিস্থিতিতে আসতে সহায়ক হয়েছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভুল কিছু হিসাবনিকাশ। কিন্তু বর্তমানে যে উপসাগরীয় সংকট চলছে তা কেবল এই মার্কিন প্রশাসনের বিষয় নয়, কিংবা ইরানের বিরুদ্ধে এই প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগে’র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের মধ্য দিয়ে যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল, তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে যাচ্ছে। এর ফলে আমেরিকা এখন মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর এতটাই কম নির্ভরশীল যে, দেশটির কোনো প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবকে রক্ষার জন্য অকাতরে সম্পদ আর রক্ত ব্যয় করার ঝুঁকি নেবে, এমনটা চিন্তা করাও কষ্টকর।
বহু দশক ধরেই উপসাগরীয় নেতারা দৃশ্যত বিশ্বাস করতেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আমেরিকান সমরাস্ত্র কেনায়, তারা প্রায় অভেদ্য হয়ে উঠেছে। তারা নিয়মিতই আমেরিকান কূটনীতিক ও জেনারেলদের বলে আসছেন, ইরানের ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ ২০০৮ সালে তো বলেই দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ‘সাপের মস্তক কেটে ফেলা’। অর্থাৎ, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ সৌদি আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে দখলকৃত কুয়েত থেকে চলে যেতে বাধ্য করে।
কিন্তু আমেরিকান শক্তির ওপর এই আস্থার পেছনে হারিয়ে গেছে অনেক অস্বস্তিকর সত্য। সেটা হলো, ইরানের জনসংখ্যা ও সামরিক শক্তির তুলনায় উপসাগরীয় দেশগুলোর কিছুই নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র ১০ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। যেকোনো যুদ্ধে উপসাগরীয় শহরগুলো হবে ইরানের প্রধান টার্গেট। আর ইরানের না হলেও, উপসাগরীয় দেশগুলোর শহরগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। দুবাইয়ে যদি একবার বোমা হামলা হয়, তাহলে বাণিজ্য, যোগাযোগ ও পর্যটনের নিরাপদ কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দুবাইয়ের যে মর্যাদা, তা মুহূর্তেই চুরমার হয়ে যাবে।
এখন সেই দুঃস্বপ্নই দৃশ্যত সত্য হচ্ছে। গত শনিবার বেশ কয়েকটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সৌদি আরবের ব্যয়বহুল আমেরিকান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই তেল স্থাপনায় আঘাত হানলো। আর বিশ্বজুড়ে তেলের দাম গেল বেড়ে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয়তো সীমিত ছিলো। তবে যে বার্তা এই হামলা দিয়েছে, তা কিন্তু ছোটোখাটো নয়। সেটা হলো, ইরান যেকোনো মুহূর্তে উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রাণভোমরায় হামলা চালাতে পারে।
কিন্তু এই ঘটনার পর যা ঘটেছে তা-ও রিয়াদের জন্য ভীতিকর। নিজের পরবর্তী নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা বিনষ্ট করতে চান না ট্রাম্প। ফলে তিনি কোনো যুদ্ধে জড়াতে চান না। এ কারণেই হামলার পর হম্বিতম্বি করেই তিনি সেরেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যদিও বলেছেন, এই হামলা যুদ্ধের সমতুল্য। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন এই হামলার প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা সৌদি আরবকেই নিতে বলছে। আর সৌদিরা সেই দায়িত্ব নিতে কিছুটা নারাজ।
এর ফলে কী ঘটতে পারে, তা বলার মতো সময় এখন আসেনি। ইরানের উস্কানি যদি শেষ অবদি চূড়ান্ত যুদ্ধে রূপ না নেয়, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন বা উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে কূটনীতিতে ইরান অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে।
উপসাগরীয় রাজপরিবারগুলোকে রক্ষা করার যে অঙ্গীকার আমেরিকার, তার মূল ১৯৪৫ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সউদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। শীতল যুদ্ধের সময় এই সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। হ্যারি ট্রুম্যান থেকে জর্জ বুশ- সকল মার্কিন প্রেসিডেন্টই বিশ্বাস করতেন যে, সৌদি আরবের তেলক্ষেত্র রক্ষা করা কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সম্পর্কে প্রথম আঘাত আসে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ৯/১১-এর আক্রমণের পর। সেবার ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারীর ১৫ জনই ছিলেন সৌদি। এরপর দ্বিতীয় আঘাত আসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়। সেবার উপসাগরীয় নেতারা ভাবতে শুরু করেন, ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় ওবামা প্রশাসন তাদেরকে পরিত্যাগ করেছে। ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আবার আগের মতো ঘনিষ্ঠ দেখাতে শুরু করে। সৌদি ও আমিরাতিরা প্রথমে ভেবেছিল যে, ট্রাম্প অন্তত ওবামার চেয়েও কঠোর হবেন। বিশেষ করে, ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন ও ইরানের ওপর ফের কড়া অবরোধ আরোপ করলেন, তখন যারপরনাই খুশি হয়েছিল সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে, ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর ও প্রকৃত পদক্ষেপের মধ্যে কোনো মিল দেখতে পাচ্ছেন না উপসাগরীয় নেতারা। ফলে তারা বেশ অস্বস্তিতে আছেন। জুনে, ট্রাম্প হুমকি দিলেন মনুষ্যবিহীন আমেরিকান ড্রোন ভূপাতিত করায় ইরানকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে। কিন্তু পরক্ষণেই প্রতিশোধ নেওয়া থেকে সরে আসেন। নিজের কট্টরপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে বরখাস্ত করার যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছেন, তা এই ধারণার পালে হাওয়া দিয়েছে যে, ট্রাম্প কোনো যুদ্ধ চান না। তবে অনেকের আশঙ্কা দুর্ঘটনাবশত ঠিকই যুদ্ধে জড়াবেন ট্রাম্প।
আরব আমিরাতি নেতারা এখন নিজেরাই ভাবছেন আদৌ এই প্রেসিডেন্টের ওপর বিশ্বাস করা যায় কিনা। পারস্য উপসাগরে বেশ কয়েকটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা হলেও, আমিরাত সরাসরি ইরানকে দায়ী করা থেকে বিরত থেকেছে। এরপর সবার অলক্ষে ইরানে কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। পাশাপাশি ইয়েমেন থেকে নিজেদের বেশিরভাগ সেনা সরিয়ে নিয়েছে আমিরাত।
সৌদি আরবও কি একই পদক্ষেপ নেবে? ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে তারা এক ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত। উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে শিক্ষা দেওয়া। সেই শিক্ষা এখন উল্টো তারাই পাচ্ছে। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি মিলিশিয়ারা গত সপ্তাহে সৌদি আরবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় শিকার করেছে। কেউই এই দাবি অতটা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিচ্ছে না। কিন্তু এটিও সত্য হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের দিকে ড্রোন ও মিশাইল হামলা ক্রমেই বাড়িয়েছে। সৌদিরা হয়তো এই উপলব্ধিতে আসতে বাধ্য হবে যে, কেবল কূটনীতির মাধ্যমেই এই যুদ্ধ সমাপ্তির দিকে আসবে।
ট্রাম্প হয়তো এখনও উপসাগরীয় দেশগুলোর এই আশা পূরণ করতে পারেন যে, তিনি ইরানকে নমনীয় করতে পারবেন। কিন্তু ট্রাম্পের নিষ্ক্রিয়তার কারণে হয়তো তারা একেবারে ভিন্ন একটি উপলব্ধিতেও পৌঁছাবে। তা হলো, তাদেরকে অবশ্যই আমেরিকান সাহায্য ছাড়াই ইরানকে মোকাবিলা করতে শিখতে হবে।
>>>লেখক: রবার্ট এফ. ওর্থ মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাবেক প্রতিবেদক। তার এই নিবন্ধ নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আসতে সহায়ক হয়েছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভুল কিছু হিসাবনিকাশ। কিন্তু বর্তমানে যে উপসাগরীয় সংকট চলছে তা কেবল এই মার্কিন প্রশাসনের বিষয় নয়, কিংবা ইরানের বিরুদ্ধে এই প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগে’র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের মধ্য দিয়ে যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল, তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে যাচ্ছে। এর ফলে আমেরিকা এখন মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর এতটাই কম নির্ভরশীল যে, দেশটির কোনো প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবকে রক্ষার জন্য অকাতরে সম্পদ আর রক্ত ব্যয় করার ঝুঁকি নেবে, এমনটা চিন্তা করাও কষ্টকর।
বহু দশক ধরেই উপসাগরীয় নেতারা দৃশ্যত বিশ্বাস করতেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আমেরিকান সমরাস্ত্র কেনায়, তারা প্রায় অভেদ্য হয়ে উঠেছে। তারা নিয়মিতই আমেরিকান কূটনীতিক ও জেনারেলদের বলে আসছেন, ইরানের ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ ২০০৮ সালে তো বলেই দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ‘সাপের মস্তক কেটে ফেলা’। অর্থাৎ, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ সৌদি আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে দখলকৃত কুয়েত থেকে চলে যেতে বাধ্য করে।
কিন্তু আমেরিকান শক্তির ওপর এই আস্থার পেছনে হারিয়ে গেছে অনেক অস্বস্তিকর সত্য। সেটা হলো, ইরানের জনসংখ্যা ও সামরিক শক্তির তুলনায় উপসাগরীয় দেশগুলোর কিছুই নেই। আর যুক্তরাষ্ট্র ১০ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। যেকোনো যুদ্ধে উপসাগরীয় শহরগুলো হবে ইরানের প্রধান টার্গেট। আর ইরানের না হলেও, উপসাগরীয় দেশগুলোর শহরগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। দুবাইয়ে যদি একবার বোমা হামলা হয়, তাহলে বাণিজ্য, যোগাযোগ ও পর্যটনের নিরাপদ কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দুবাইয়ের যে মর্যাদা, তা মুহূর্তেই চুরমার হয়ে যাবে।
এখন সেই দুঃস্বপ্নই দৃশ্যত সত্য হচ্ছে। গত শনিবার বেশ কয়েকটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সৌদি আরবের ব্যয়বহুল আমেরিকান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই তেল স্থাপনায় আঘাত হানলো। আর বিশ্বজুড়ে তেলের দাম গেল বেড়ে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয়তো সীমিত ছিলো। তবে যে বার্তা এই হামলা দিয়েছে, তা কিন্তু ছোটোখাটো নয়। সেটা হলো, ইরান যেকোনো মুহূর্তে উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রাণভোমরায় হামলা চালাতে পারে।
কিন্তু এই ঘটনার পর যা ঘটেছে তা-ও রিয়াদের জন্য ভীতিকর। নিজের পরবর্তী নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা বিনষ্ট করতে চান না ট্রাম্প। ফলে তিনি কোনো যুদ্ধে জড়াতে চান না। এ কারণেই হামলার পর হম্বিতম্বি করেই তিনি সেরেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যদিও বলেছেন, এই হামলা যুদ্ধের সমতুল্য। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন এই হামলার প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা সৌদি আরবকেই নিতে বলছে। আর সৌদিরা সেই দায়িত্ব নিতে কিছুটা নারাজ।
এর ফলে কী ঘটতে পারে, তা বলার মতো সময় এখন আসেনি। ইরানের উস্কানি যদি শেষ অবদি চূড়ান্ত যুদ্ধে রূপ না নেয়, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন বা উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে কূটনীতিতে ইরান অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে।
উপসাগরীয় রাজপরিবারগুলোকে রক্ষা করার যে অঙ্গীকার আমেরিকার, তার মূল ১৯৪৫ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সউদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। শীতল যুদ্ধের সময় এই সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। হ্যারি ট্রুম্যান থেকে জর্জ বুশ- সকল মার্কিন প্রেসিডেন্টই বিশ্বাস করতেন যে, সৌদি আরবের তেলক্ষেত্র রক্ষা করা কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সম্পর্কে প্রথম আঘাত আসে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ৯/১১-এর আক্রমণের পর। সেবার ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারীর ১৫ জনই ছিলেন সৌদি। এরপর দ্বিতীয় আঘাত আসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়। সেবার উপসাগরীয় নেতারা ভাবতে শুরু করেন, ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময় ওবামা প্রশাসন তাদেরকে পরিত্যাগ করেছে। ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আবার আগের মতো ঘনিষ্ঠ দেখাতে শুরু করে। সৌদি ও আমিরাতিরা প্রথমে ভেবেছিল যে, ট্রাম্প অন্তত ওবামার চেয়েও কঠোর হবেন। বিশেষ করে, ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন ও ইরানের ওপর ফের কড়া অবরোধ আরোপ করলেন, তখন যারপরনাই খুশি হয়েছিল সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে, ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর ও প্রকৃত পদক্ষেপের মধ্যে কোনো মিল দেখতে পাচ্ছেন না উপসাগরীয় নেতারা। ফলে তারা বেশ অস্বস্তিতে আছেন। জুনে, ট্রাম্প হুমকি দিলেন মনুষ্যবিহীন আমেরিকান ড্রোন ভূপাতিত করায় ইরানকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে। কিন্তু পরক্ষণেই প্রতিশোধ নেওয়া থেকে সরে আসেন। নিজের কট্টরপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে বরখাস্ত করার যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছেন, তা এই ধারণার পালে হাওয়া দিয়েছে যে, ট্রাম্প কোনো যুদ্ধ চান না। তবে অনেকের আশঙ্কা দুর্ঘটনাবশত ঠিকই যুদ্ধে জড়াবেন ট্রাম্প।
আরব আমিরাতি নেতারা এখন নিজেরাই ভাবছেন আদৌ এই প্রেসিডেন্টের ওপর বিশ্বাস করা যায় কিনা। পারস্য উপসাগরে বেশ কয়েকটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা হলেও, আমিরাত সরাসরি ইরানকে দায়ী করা থেকে বিরত থেকেছে। এরপর সবার অলক্ষে ইরানে কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। পাশাপাশি ইয়েমেন থেকে নিজেদের বেশিরভাগ সেনা সরিয়ে নিয়েছে আমিরাত।
সৌদি আরবও কি একই পদক্ষেপ নেবে? ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে তারা এক ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত। উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে শিক্ষা দেওয়া। সেই শিক্ষা এখন উল্টো তারাই পাচ্ছে। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি মিলিশিয়ারা গত সপ্তাহে সৌদি আরবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় শিকার করেছে। কেউই এই দাবি অতটা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিচ্ছে না। কিন্তু এটিও সত্য হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের দিকে ড্রোন ও মিশাইল হামলা ক্রমেই বাড়িয়েছে। সৌদিরা হয়তো এই উপলব্ধিতে আসতে বাধ্য হবে যে, কেবল কূটনীতির মাধ্যমেই এই যুদ্ধ সমাপ্তির দিকে আসবে।
ট্রাম্প হয়তো এখনও উপসাগরীয় দেশগুলোর এই আশা পূরণ করতে পারেন যে, তিনি ইরানকে নমনীয় করতে পারবেন। কিন্তু ট্রাম্পের নিষ্ক্রিয়তার কারণে হয়তো তারা একেবারে ভিন্ন একটি উপলব্ধিতেও পৌঁছাবে। তা হলো, তাদেরকে অবশ্যই আমেরিকান সাহায্য ছাড়াই ইরানকে মোকাবিলা করতে শিখতে হবে।
>>>লেখক: রবার্ট এফ. ওর্থ মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাবেক প্রতিবেদক। তার এই নিবন্ধ নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
No comments