৯৫ হাজার বন্দীর জন্য মাত্র ৮ জন চিকিৎসক by রোজিনা ইসলাম
- • ৬৮ কারাগারে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ১২৯টি
- • কারাগারে ৩৬ হাজার ৬১৪ জনের থাকার ব্যবস্থা
- • কিন্তু আসামির সংখ্যা প্রায় ৯৫ হাজার
- • চিকিৎসক চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বারবার চিঠি
- • স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না
দেশের
৬৮টি কারাগারে প্রায় ৯৫ হাজার বন্দীর জন্য এখন চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র আটজন।
বন্দী ও চিকিৎসকের এই অনুপাতই বলে দিচ্ছে, কারা হাসপাতালগুলোতে
চিকিৎসাসেবার কী অবস্থা। ছোটখোটো শারীরিক সমস্যার জন্যও বন্দীদের কারা
হাসপাতালের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।
তবে কারা কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে বন্দী থাকা মানসিক রোগী ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে। এমন বন্দীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তাঁদের নিয়মিত কাউন্সেলিং (পরামর্শ) ও বিশেষায়িত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু সে ব্যবস্থা কারাগারগুলোতে নেই।
কারা হাসপাতালগুলোর জন্য চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গত এক বছরে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কেও বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চিঠি–চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৬৮টি কারাগারে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ১২৯টি। এর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে দুজন, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, বরিশাল ও গাজীপুর জেলা কারা হাসপাতালে একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। দেশের কারাগারগুলোতে ৩৬ হাজার ৬১৪ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু আসামির সংখ্যা প্রায় ৯৫ হাজার।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই হাজার কারাবন্দীর জন্যে একজন চিকিৎসকও নেই। আমরা ধার করে সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসি। সত্যিকারের যাঁরা রোগী, তাঁদের কোনো চিকিৎসাই দিতে পারছি না।’ কারা হাসপাতালগুলোর জন্য চিকিৎসক চেয়ে গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শতাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিকিৎসক চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩৩টি। সেখানে মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৩২টি পদই শূন্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে গত ডিসেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কড়া ভাষায় চিঠি লেখা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সেখানে বলা হয়, ২০ জন চিকিৎসককে বিভিন্ন কারা হাসপাতালে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তাঁরা কাজে পর্যন্ত যোগ দেননি। যাঁরা যোগ দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে বলা হয়। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও চিকিৎসক পদায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কারা হাসপাতালে যেতে অনাগ্রহ রয়েছে বেশির ভাগ চিকিৎসকের। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে তাঁরা যেতে রাজি হন না। তিনি বলেন, ‘দেখি, এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করে?’
কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে ১১ হাজার বন্দীর জন্য ২ জন চিকিৎসক। বন্দীদের কোনো চিকিৎসাই আসলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন অন্তত দুই শ বন্দী বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারা হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, এক্সরে করার মতো কক্ষ নেই। হাসপাতালের কোনো সুবিধাই এত বড় কারাগারে আসলে নেই।
কারা হাসপাতালে চিকিৎসক–সংকটের সুযোগ নিয়ে খুনের আসামিসহ সাজাপ্রাপ্ত বন্দীরা বাইরের হাসপাতালে অবস্থান করার সুযোগ নেন বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, কারা হাসপাতালে চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকলে নানা অজুহাত দেখিয়ে ভিআইপি বন্দীদের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করা যেত। দুর্নীতিও কমে আসত।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক উপ-কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় এক লাখ কারাবন্দীর জন্য মাত্র আটজন চিকিৎসক থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক। বন্দী হিসেবে কারাগারে থাকলেও তাঁদের মানবাধিকারের বিষয়টি সবার ভাবা দরকার। তিনি বলেন, তাঁর সময়ে অবস্থা একই রকম ছিল। এখন সময় এসেছে অবস্থা পরিবর্তনের।
তবে কারা কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে বন্দী থাকা মানসিক রোগী ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে। এমন বন্দীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। তাঁদের নিয়মিত কাউন্সেলিং (পরামর্শ) ও বিশেষায়িত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু সে ব্যবস্থা কারাগারগুলোতে নেই।
কারা হাসপাতালগুলোর জন্য চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গত এক বছরে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কেও বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চিঠি–চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৬৮টি কারাগারে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ১২৯টি। এর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে দুজন, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, বরিশাল ও গাজীপুর জেলা কারা হাসপাতালে একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। দেশের কারাগারগুলোতে ৩৬ হাজার ৬১৪ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু আসামির সংখ্যা প্রায় ৯৫ হাজার।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই হাজার কারাবন্দীর জন্যে একজন চিকিৎসকও নেই। আমরা ধার করে সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসি। সত্যিকারের যাঁরা রোগী, তাঁদের কোনো চিকিৎসাই দিতে পারছি না।’ কারা হাসপাতালগুলোর জন্য চিকিৎসক চেয়ে গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শতাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিকিৎসক চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৩৩টি। সেখানে মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। বাকি ৩২টি পদই শূন্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে গত ডিসেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কড়া ভাষায় চিঠি লেখা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সেখানে বলা হয়, ২০ জন চিকিৎসককে বিভিন্ন কারা হাসপাতালে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তাঁরা কাজে পর্যন্ত যোগ দেননি। যাঁরা যোগ দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে বলা হয়। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও চিকিৎসক পদায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কারা হাসপাতালে যেতে অনাগ্রহ রয়েছে বেশির ভাগ চিকিৎসকের। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে তাঁরা যেতে রাজি হন না। তিনি বলেন, ‘দেখি, এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করে?’
কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে ১১ হাজার বন্দীর জন্য ২ জন চিকিৎসক। বন্দীদের কোনো চিকিৎসাই আসলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন অন্তত দুই শ বন্দী বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারা হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, এক্সরে করার মতো কক্ষ নেই। হাসপাতালের কোনো সুবিধাই এত বড় কারাগারে আসলে নেই।
কারা হাসপাতালে চিকিৎসক–সংকটের সুযোগ নিয়ে খুনের আসামিসহ সাজাপ্রাপ্ত বন্দীরা বাইরের হাসপাতালে অবস্থান করার সুযোগ নেন বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, কারা হাসপাতালে চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকলে নানা অজুহাত দেখিয়ে ভিআইপি বন্দীদের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করা যেত। দুর্নীতিও কমে আসত।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক উপ-কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় এক লাখ কারাবন্দীর জন্য মাত্র আটজন চিকিৎসক থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক। বন্দী হিসেবে কারাগারে থাকলেও তাঁদের মানবাধিকারের বিষয়টি সবার ভাবা দরকার। তিনি বলেন, তাঁর সময়ে অবস্থা একই রকম ছিল। এখন সময় এসেছে অবস্থা পরিবর্তনের।
No comments