দেশে চাকরি প্রার্থী কত? by নূর মোহাম্মদ
পল্লী
বিদ্যুৎ সমিতির ৪৩ পদে নিয়োগে আবেদন পড়ে ৭৩ হাজার প্রার্থীর। সর্বশেষ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আবেদন পড়েছে ১৯
লাখ। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন ৫ লাখের বেশি
প্রার্থী। প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর
আবেদনের এ তথ্যই অনেকটা বলে দেয় দেশের চাকরির বাজারের হাল হকিকত কেমন? তবে
প্রশ্ন হলো, আসলে দেশে মোট চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা কত? বিভিন্ন সরকারি
সংস্থা ও সরকারি তথ্যের মধ্যে রকমফের রয়েছে এ বিষয়ে। তবে সব সংস্থার তথ্যই
বলছে, দিনে দিনে দেশে শিক্ষিত বেকার বা চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
প্রতি বছর যে পরিমাণই গ্রাজুয়েটস বের হচ্ছেন তাদের কর্মসংস্থান সে হারে
হচ্ছে না। এতে প্রতিবছর শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ চাকরির বাজার থেকে
ছিটকে পড়ছেন। যার ফলে চাকরি প্রার্থী এবং বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে তরুণদের আকৃষ্ট করতে। রয়েছে অধিক সংখ্যায় চাকরির ব্যবস্থা ও চাকরি প্রার্থীর বয়স বাড়ানোর।
দেশে বর্তমানে কতজন চাকরি প্রার্থী আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে এখন প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখের বেশি তরুণ বেকার। যাদের যোগ্যতা থাকার পরও প্রাপ্ত চাকরি মিলছে না। এজন্য প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে বাজারের কর্মসংস্থানের সমন্বয়হীনতা, বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের ধস, জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সমন্বয় না থাকা, কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সরকারের ভুল নীতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে এসব বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না দিলে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ বেড়ে যাবে। এজন্য নতুন সরকার তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে জোরালো উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর ৬ লাখের বেশি গ্র্যাজুয়েট তৈরি হলেও নতুন কর্মসংস্থান পাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০ হাজারের মতো। এতে শুধু চাকরি প্রার্থীই বাড়ছে না, চাকরি নিতে গিয়ে নানা ধরনের অনৈতিক পন্থায় জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। সামাজিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজের উপর। চাকরি দেয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর তিনটি বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের হিড়িক পড়ে। যা অতীতে সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার শূন্য আসনের বিপরীতে প্রায় ৩০ লাখ আবেদন পড়ে। মেধা তালিকায় প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধনধারীরা প্রায় ৭ লাখ আবেদনকারী গড়ে ৬টি করে আবেদন করেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিপরীতে সারা দেশে প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থীর আবেদন পড়েছে। প্রতি পদে বিপরীতে প্রার্থী ১৫৮ জন। প্রার্থী সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা নিতে হিমশিত খাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কেন্দ্র ও ভেন্যু খুঁজতে গিয়ে দুই দফা পরীক্ষা তারিখ দিয়েও তা স্থগিত করে। সারা দেশে এত সংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা সম্ভব না মনে করে কয়েক দফা পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল মানবজমিনকে বলেন, আমাদের ধারণার বাইরে আবেদন পড়েছে। কেউ কল্পনা করতে পারেনি এত সংখ্যক আবেদন পড়বে। বাধ্য হয়ে কয়েক দফায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সর্বশেষ ৪০তম বিসিএসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় পৌনে ৫ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষিত যুবকদের আগ্রহ বেড়েছে এজন্য আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়াও বিসিএসে উত্তীর্ণ হলে এখন ক্যাডার সার্ভিসে না হলেও নন-ক্যাডারে চাকরি পাওয়া যায়। এসব কারণে আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে চাকরির প্রার্থীর তুলনায় চাকরির সংখ্যা কম এটা বলা যায়। পল্লী বিদ্যুতের একটি চাকরি বিজ্ঞপ্তির সংখ্যা উত্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আবুল বারাকাত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পল্লী বিদ্যুতের পরীক্ষায় ৪৩ পদের বিপরীতে যখন ৭৩ হাজার প্রার্থী আবেদন করে, তখন বুঝতে হবে চাকরি নেই। চাকরির বাজার তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে এ খাতের বিশেষজ্ঞতা বলছেন, বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়া এর মূল কারণ। বেসরকারি খাতে চাকরি সংখ্যা কমে যাওয়ায় সবাই সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাদের মতে, বেসরকরি খাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ার অন্যতম কারণ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সমন্বয় না থাকা। অর্থাৎ যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে একই হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে এই প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান তৈরিতে তেমন ভূমিকা রাখছে না। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়া এবং সরকারি বিনিয়োগের কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে না। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করেছেন ৫ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৬ জন। এ ছাড়াও আরো শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর পাস করে বের হচ্ছে ৮৫ হাজারের বেশি। আর দেশে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যোগ্যতা থাকার পরও এর বেশি অংশ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। একই সঙ্গে সরকারি শূন্যপদগুলোও নিয়মিতভাবে পূরণ হয় না। আর বেসরকারি খাতে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ, কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিতদের চাহিদা বেশি। যে কারণে প্রচলিত ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বেসরকারি খাতে চাকরি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও উন্নয়ন গবেষক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, যারা স্বল্পশিক্ষিত তাদের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা কম। কিন্তু যখন উচ্চ শিক্ষিতের হার বাড়ে তখন বেকারত্বের হারও বাড়ে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষিত বেকারত্বের স্বাভাবিক কারণ হচ্ছে, যে পরিমাণ জনগোষ্ঠী প্রতিবছর কর্মবাজারে প্রবেশ করছে, সেই পরিমাণ কর্মসৃজন হচ্ছে না। আর শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাদারিত্বের যে চাকরি, সেই চাকরি সৃষ্টির সংখ্যা কম। ফলে, বেকারত্বের সংখ্যাটা আরো বড়ভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, বেকাররা চাকরি না পাওয়ায় যে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাই নয় সামাজিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। একদিকে চাকরি না পাওয়ায় এসব শিক্ষিত জনবলকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে বেকারদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়ছে নানা সামাজিক অপরাধে। আর চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কা ও হতাশা থেকে উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীদের একটি অংশ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। ফলে, তাদের মেধা ও সেবা দেশের কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করতে সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দেয় আগামী পাঁচ বছরে ১ কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির।
রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে তরুণদের আকৃষ্ট করতে। রয়েছে অধিক সংখ্যায় চাকরির ব্যবস্থা ও চাকরি প্রার্থীর বয়স বাড়ানোর।
দেশে বর্তমানে কতজন চাকরি প্রার্থী আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে এখন প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখের বেশি তরুণ বেকার। যাদের যোগ্যতা থাকার পরও প্রাপ্ত চাকরি মিলছে না। এজন্য প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে বাজারের কর্মসংস্থানের সমন্বয়হীনতা, বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের ধস, জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সমন্বয় না থাকা, কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সরকারের ভুল নীতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে এসব বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না দিলে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ বেড়ে যাবে। এজন্য নতুন সরকার তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে জোরালো উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর ৬ লাখের বেশি গ্র্যাজুয়েট তৈরি হলেও নতুন কর্মসংস্থান পাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০ হাজারের মতো। এতে শুধু চাকরি প্রার্থীই বাড়ছে না, চাকরি নিতে গিয়ে নানা ধরনের অনৈতিক পন্থায় জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। সামাজিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজের উপর। চাকরি দেয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর তিনটি বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের হিড়িক পড়ে। যা অতীতে সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার শূন্য আসনের বিপরীতে প্রায় ৩০ লাখ আবেদন পড়ে। মেধা তালিকায় প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধনধারীরা প্রায় ৭ লাখ আবেদনকারী গড়ে ৬টি করে আবেদন করেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিপরীতে সারা দেশে প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থীর আবেদন পড়েছে। প্রতি পদে বিপরীতে প্রার্থী ১৫৮ জন। প্রার্থী সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা নিতে হিমশিত খাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কেন্দ্র ও ভেন্যু খুঁজতে গিয়ে দুই দফা পরীক্ষা তারিখ দিয়েও তা স্থগিত করে। সারা দেশে এত সংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা সম্ভব না মনে করে কয়েক দফা পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল মানবজমিনকে বলেন, আমাদের ধারণার বাইরে আবেদন পড়েছে। কেউ কল্পনা করতে পারেনি এত সংখ্যক আবেদন পড়বে। বাধ্য হয়ে কয়েক দফায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সর্বশেষ ৪০তম বিসিএসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় পৌনে ৫ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষিত যুবকদের আগ্রহ বেড়েছে এজন্য আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়াও বিসিএসে উত্তীর্ণ হলে এখন ক্যাডার সার্ভিসে না হলেও নন-ক্যাডারে চাকরি পাওয়া যায়। এসব কারণে আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে চাকরির প্রার্থীর তুলনায় চাকরির সংখ্যা কম এটা বলা যায়। পল্লী বিদ্যুতের একটি চাকরি বিজ্ঞপ্তির সংখ্যা উত্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আবুল বারাকাত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পল্লী বিদ্যুতের পরীক্ষায় ৪৩ পদের বিপরীতে যখন ৭৩ হাজার প্রার্থী আবেদন করে, তখন বুঝতে হবে চাকরি নেই। চাকরির বাজার তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে এ খাতের বিশেষজ্ঞতা বলছেন, বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়া এর মূল কারণ। বেসরকারি খাতে চাকরি সংখ্যা কমে যাওয়ায় সবাই সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাদের মতে, বেসরকরি খাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ার অন্যতম কারণ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সমন্বয় না থাকা। অর্থাৎ যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে একই হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে এই প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান তৈরিতে তেমন ভূমিকা রাখছে না। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়া এবং সরকারি বিনিয়োগের কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে না। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করেছেন ৫ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৬ জন। এ ছাড়াও আরো শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর পাস করে বের হচ্ছে ৮৫ হাজারের বেশি। আর দেশে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যোগ্যতা থাকার পরও এর বেশি অংশ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। একই সঙ্গে সরকারি শূন্যপদগুলোও নিয়মিতভাবে পূরণ হয় না। আর বেসরকারি খাতে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ, কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিতদের চাহিদা বেশি। যে কারণে প্রচলিত ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বেসরকারি খাতে চাকরি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও উন্নয়ন গবেষক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, যারা স্বল্পশিক্ষিত তাদের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা কম। কিন্তু যখন উচ্চ শিক্ষিতের হার বাড়ে তখন বেকারত্বের হারও বাড়ে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষিত বেকারত্বের স্বাভাবিক কারণ হচ্ছে, যে পরিমাণ জনগোষ্ঠী প্রতিবছর কর্মবাজারে প্রবেশ করছে, সেই পরিমাণ কর্মসৃজন হচ্ছে না। আর শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাদারিত্বের যে চাকরি, সেই চাকরি সৃষ্টির সংখ্যা কম। ফলে, বেকারত্বের সংখ্যাটা আরো বড়ভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, বেকাররা চাকরি না পাওয়ায় যে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাই নয় সামাজিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। একদিকে চাকরি না পাওয়ায় এসব শিক্ষিত জনবলকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকে বেকারদের একটি অংশ জড়িয়ে পড়ছে নানা সামাজিক অপরাধে। আর চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কা ও হতাশা থেকে উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীদের একটি অংশ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। ফলে, তাদের মেধা ও সেবা দেশের কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করতে সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দেয় আগামী পাঁচ বছরে ১ কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির।
No comments