ঢাকায় বাইক রাজত্ব by শাহনেওয়াজ বাবলু
দুই চাকার বাহন মোটরবাইক। গতিপ্রিয় মানুষদের প্রিয় যান। যানজটের ঢাকায় কারও কারও জন্য এটি বড় এক ত্রাতা। অনেকটা যানজট এড়িয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ব্যক্তিগত যাতায়াতে সহজ এই মাধ্যমটি এখন অনেকটা গণপরিবহনে রূপ পাওয়ার অবস্থা। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালু হওয়ায় রাজধানীজুড়ে ভাড়ায় চলছে লাখো মোটরবাইক। ব্যক্তিগত বাইকের সঙ্গে ভাড়ায় চলা বাইক যোগ হওয়ায় রাজধানীর সড়ক যেন এখন বাইকের সাম্রাজ্য। এমনিতেই ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে দ্রুত হারে বাড়ছে বাইকের সংখ্যা।
আর উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে অনেকে বাইক নিয়ে সড়কে নামায় এই সংখ্যা অনেকটা ধারণাতীত। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় রেজিস্ট্রেশন করা যেসব মোটরবাইক আছে এর চেয়ে ঢের বেশি সংখ্যক বাইক রাজধানীতে নেমেছে আশেপাশের জেলা থেকে আসা।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও বাইকাররা ঢাকা আসছেন ভাড়াভিত্তিক অ্যাপে বাইক চালাতে। আর বিপুল সংখ্যার এই বাইক চালকদের অনেকের প্রশিক্ষণ নেই, যথাযথ ট্রাফিক আইন জানেন না। এতে নগরে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
সড়কে চলা অন্য যানবাহন ও সাধারণ পথচারীদের অনেক ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হচ্ছে এই মোটরবাইক। পথচারীদের জন্য নির্ধারিত ফুটপাথে বাইক চলা বন্ধ করতে নানা উদ্যোগের পরও তা থামানো যাচ্ছে না। উচ্চ আদালত থেকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৬ সালে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে আসে উবার। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে শুধু ব্যক্তিগত গাড়ির মাধ্যমে এই সেবার সুযোগ করে দিলেও পরে মোটরসাইকেলও যুক্ত করে। একই সময়ে একে একে আসে পাঠাও, স্যাম, বাহন, সহজ, ওভাই, ওবোনসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে উবারের গাড়ি ও মোটরসাইকেল মিলিয়ে মোট এক লাখ চালক রয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে আড়াই হাজার চালক যুক্ত হচ্ছেন। তবে এরমধ্যে মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা কতো সেটা জানা যায় নি। গত বছরের নভেম্বর থেকে ঢাকায় প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল সেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। যার নাম রাখা হয় ‘উবার মোটো’।
ভারতের হায়দরাবাদে উবার প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার সেবা শুরু করলেও সেটা বাংলাদেশের মতো জনপ্রিয়তা পায়নি।
গত দুই বছরে ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল বাড়ার চিত্র পাওয়া যায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যে। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কার্যালয় থেকে ২০১৬ সালে যেখানে ৫৩ হাজার ৭৩৮টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল, সেখানে ২০১৭ সালে নিবন্ধিত হয় ৭৫ হাজার ২৫১টি। আর ২০১৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত মোটরসাইকেলের নিবন্ধন হয়েছে ৮২ হাজার।
এ হিসাবে, ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০৬টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছে। আর গত বছরের প্রথম আট মাসে প্রতিদিন গড়ে ২২৪টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছে। এ নিয়ে বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আগে হালকা যান এবং ভারী যানবাহনের নিবন্ধনের হার ছিল বেশি। কিন্তু গত দুই বছরে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের হার অনেকটাই বেড়েছে। অতিরিক্ত মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন বাড়ার কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমরা খুব ভালোভাবেই হ্যান্ডেল করছি। আর সব কিছু যাচাই বাছাই করে নিবন্ধন করাচ্ছি।
রাইড শেয়ারিংয়ে যেসব মোটরসাইকেল চলে তার একটা বড় অংশ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার নম্বর প্লেটধারী। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মানুষ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করছে। এতে ভাড়া কম এবং যাতায়াতও করা যায় কম সময়ে। তাই রাজধানী ঢাকার অনেক মানুষই এখন যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকে। আর এতে হাজার হাজার যুবকের উপার্জনের ব্যবস্থাও হয়েছে। এইসব মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে বেকার ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে।
কেন জনপ্রিয় হলো মোটরসাইকেল: মূলত কম পয়সায় দ্রুত যাতায়াত, তারমধ্যে ডিসকাউন্ট সুবিধার কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইড সেবা। ঔষধ কোম্পানি বায়োফার্মায় চাকরি করেন রেদোয়ান আহমেদ। প্রায়ই তার কাজের প্রয়োজনে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। এই যাতায়াতের ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি এই মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভর করেন। মানবজমিনকে তিনি জানান, খুব ইমার্জেন্সি কোনো কাজ থাকলে বাইকে করে সবচেয়ে কম সময়ে সেখানে পৌঁছানো যায়। আমি যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করি সেগুলোর একটা না একটায় ডিসকাউন্ট থাকেই। তখন সেই ভাড়াটা অনেক কম আসে। তাছাড়া বাইকে করে আপনি এমন সব রাস্তায় যেতে পারবেন যেখানে হয়তো বড় গাড়ি চালানো সম্ভব না।
ট্রাফিক আইনে মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাছাড়া এই রাইড পরিবহন সেবাগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তায় কয়েকটি সেফটি ফিচার যুক্ত করায় মোটরসাইকেল রাইডে আগ্রহী হচ্ছেন নারীরাও। এসব সেফটি ফিচারের মধ্যে রয়েছে চালক ও গাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসহ জিপিএস ট্র্যাকিং, টু-ওয়ে ফিডব্যাক ও ট্রিপ ডিটেইলস শেয়ারিং। এ ছাড়া গাড়ি খোঁজা বা ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির কোনো ঝামেলা না থাকায় এই মোটরসাইকেল রাইড নেয়ার কথা জানান ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইকবাল হোসেন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, অফিস ছুটি হওয়ার পর বাসগুলোয় এত ভিড় থাকে যে, ওঠার উপায় থাকে না। উঠতে পারলেও এত বেশি ধাক্কাধাক্কি হয়। তাই অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করি। রাইডের মাধ্যমে বাইক ডাকলে বাস ভাড়া থেকে একটু বেশি খরচ পড়লেও গাড়ি থেকে অনেক কম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মোটরসাইকেলের মাধ্যমে দ্রুত যানজট ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। আর এটা আমাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেয় না। একদম গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা।
শেয়ারিং অ্যাপ তরুণদের জন্য অর্থ আয়ের সুযোগ: মোটরসাইকেল যানজটের মধ্যে দ্রুত পরিবহন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনেক তরুণদের জন্য অর্থ আয়েরও ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় প্রায় প্রতিদিনই অফিসে যাওয়া-আসার পথে এই রাইড সেবা দিয়ে থাকেন মাহফুজুর রহমান। এতে একদিকে যেমন তার বাইক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ উঠে আসে তেমনি ছুটির দিনে অবসরে কয়েক ঘণ্টা এই সার্ভিসের মাধ্যমে তার পকেট খরচও এসে পড়ে। মাহফুজ জানান, আমি আগে থেকেই বাইক চালাই, তাই বলতে গেলে এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে আমার কোনো কিছুই ইনভেস্ট করতে হয়নি। যা পাচ্ছি তার পুরোটাই লাভ। আমার মতো এখন অনেকেই ফ্রি-ল্যান্সার রাইড সার্ভিস দিচ্ছে। তবে এমন অনেককেই আমি চিনি যারা সকাল-সন্ধ্যা বাইক রাইড দেন। এখন এটাই তাদের পেশা।
দুর্ঘটনাও বাড়ছে: বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট- এআরআই’র হিসাবে ২০১৭ সালে রাজধানীতে ৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। গত বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) সেই সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি দুর্ঘটনা ঘটে। এই সময়ে ঢাকায় ৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৪৭ জনের মৃত্যু এবং ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলের চালক অথবা যাত্রীও ছিলেন।
গত ১৭ই সেপ্টেম্বর খিলক্ষেতে দুর্ঘটনায় মারা যান লাফিজুর রহমান নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী। ৩রা সেপ্টেম্বর রাতে মতিঝিল এলাকায় রিপন শিকদার এবং জানে আলম গাজী নামে দু’জন নিহত হন। এরও আগে ২০শে আগস্ট মোহাম্মদপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সোহেল পারভেজ, ৬ই জুলাই বিমানবন্দর গোলচত্বরের কাছে নাজমুল হাসান এবং ৬ই মার্চ তেজগাঁওয়ের আড়ং চেকপোস্টে কাজী মারুফ হাসান নামে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ট্রাফিক সূত্র বলছে, রাজধানীতে নিয়ম ভাঙার কারণে যানবাহনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয় এর বড় অংশই মোটরবাইক।
চালকের অদক্ষতা: মোটরবাইকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে অদক্ষ চালকের সংখ্যাও। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অদক্ষতা এবং নিরাপত্তা জ্ঞানের অভাবকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর পরিচালক ইলিয়াস কাঞ্চন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ের কারণে মোটরসাইকেলের চলাচল বেড়েছে, দুর্ঘটনা বাড়ার এটা একটা কারণ। মোটরসাইকেল চালকরা অনেকেই অপেশাদার চালক। তাদের ক্ষেত্রে ড্রাইভিং শিখে আসার বিষয়টা নেই। চালকদের অনেকেই বেপরোয়া, অনেকে দক্ষ হলেও নিরাপত্তা জ্ঞানের অভাব আছে।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। রাইড শেয়ারিংয়ের চালকদের দ্রুত ট্রিপ শেষ করার একটা ব্যাপার থাকে। এজন্য তারা দ্রুত চালাতে চান। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে বাইক চালকদের বক্তব্য অনেক সময় যাত্রীরাও তাড়া দেন। দ্রুত সময়ে তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে চান। অনেকে ট্রেন, লঞ্চ বা দূরে যাত্রার বাস ধরতে বাসা থেকে বের হন। তখন নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে তাড়া দেন। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
দুর্ঘটনার দায় আছে রাইড শেয়ার কোম্পানিগুলোরও: রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেখছে না- এমনটি স্বীকার করেছেন শেয়ার আ মোটরসাইকেল (স্যাম) এর প্রধান নির্বাহী ইমতিয়াজ কাসেম। তিনি বলেন, রাইড শেয়ারিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন অনেকে। অনেকে গ্রাম থেকে চলে এসেছেন মোটরসাইকেল চালাতে। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো শুধু লাইসেন্স থাকলেই চালানোর অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। কোনোমতে কাগজপত্র তৈরি করেই রাস্তায় নেমে যায়। কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন এম ইলিয়াসও স্বীকার করলেন, দুর্ঘটনার দায় কিছুটা তাদেরও আছে। তিনি বলেন, দায়ভার অবশ্যই কিছুটা আছে। কিন্তু এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে হলে সবাইকেই কাজ করতে হবে। আমরা যেহেতু সবাই মিলে কাজ করছি। ফল আসবেই।
শিক্ষানবিশ লাইসেন্স থাকলেই রাইড শেয়ার করার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লাইসেন্স থাকলেই কেউ ভালো ড্রাইভার নাও হতে পারে। যাই হোক, আমরা চিন্তা করছি কীভাবে এ বিষয়টি আরো নিয়মের মধ্যে আনা যায়। এখন আর লার্নার দিয়ে কাউকে রাইড দেয়ার সুযোগ দিচ্ছি না। রাইডারদের জন্য বাড়তি কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটাও আমরা ভেবে দেখছি।
মোটরসাইকেলে নিরাপত্তায় করণীয়: ঢাকায় ক্রমেই এই মোটরসাইকেল বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, গাড়ির ভেতরে আপনি যেমন চারদিক থেকে একটা নিরাপত্তা বলয় থাকেন, সেক্ষেত্রে মোটরবাইকের চারদিক খোলা। দুই চাকার ওপর ভারসাম্য গাড়ির মতো এত ভালো থাকে না। এ কারণে আরোহীদের পাশাপাশি পথচারীরাও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকেন।
ট্রাফিক আইনে মোটরসাইকেল চালকের পাশাপাশি যাত্রীর হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোয় এখন চালকরাই এই হেলমেট সরবরাহ করে থাকে। তবে এই হেলমেটগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, এখন রাস্তাঘাটের বেশিরভাগ মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরতে দেখা যায়। যেটা বেশ ইতিবাচক। তবে আরোহীরা যে হেলমেটগুলো পরেন, সেগুলোর মান খুবই খারাপ। বাইকের পেছনে বসা যাত্রীরা যে হেলমেট ব্যবহার করেন এগুলো দেখতে প্রায় বিল্ডিংয়ে কাজ করার সময় শ্রমিকরা যেই হেলমেট ব্যবহার করেন ঠিক সেগুলোর মতো। মানসম্পন্ন হেলমেট বলতে ভালো উপাদানের তৈরি এমন হেলমেট হতে হবে যেটা মাথাকে পূর্ণ সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি কান ও থুঁতনি রক্ষা করবে।
মোটরবাইকের চলাচলে শৃঙ্খলার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেপরোয়া কিংবা ফুটপাতেথ মোটরসাইকেল চালানোর বিরুদ্ধে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা সব সময় মোটরসাইকেলের চালকদের সচেতনভাবে ড্রাইভ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু আরোহীদের সচেতনতা এবং মানসিকতা না বদলালে এটি পুরোপুরি বন্ধ করা মুশকিল বলে মনে করেন তিনি।
আর উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে অনেকে বাইক নিয়ে সড়কে নামায় এই সংখ্যা অনেকটা ধারণাতীত। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় রেজিস্ট্রেশন করা যেসব মোটরবাইক আছে এর চেয়ে ঢের বেশি সংখ্যক বাইক রাজধানীতে নেমেছে আশেপাশের জেলা থেকে আসা।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও বাইকাররা ঢাকা আসছেন ভাড়াভিত্তিক অ্যাপে বাইক চালাতে। আর বিপুল সংখ্যার এই বাইক চালকদের অনেকের প্রশিক্ষণ নেই, যথাযথ ট্রাফিক আইন জানেন না। এতে নগরে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
সড়কে চলা অন্য যানবাহন ও সাধারণ পথচারীদের অনেক ক্ষেত্রে বিরক্তির কারণ হচ্ছে এই মোটরবাইক। পথচারীদের জন্য নির্ধারিত ফুটপাথে বাইক চলা বন্ধ করতে নানা উদ্যোগের পরও তা থামানো যাচ্ছে না। উচ্চ আদালত থেকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ২০১৬ সালে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে আসে উবার। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে শুধু ব্যক্তিগত গাড়ির মাধ্যমে এই সেবার সুযোগ করে দিলেও পরে মোটরসাইকেলও যুক্ত করে। একই সময়ে একে একে আসে পাঠাও, স্যাম, বাহন, সহজ, ওভাই, ওবোনসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে উবারের গাড়ি ও মোটরসাইকেল মিলিয়ে মোট এক লাখ চালক রয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে আড়াই হাজার চালক যুক্ত হচ্ছেন। তবে এরমধ্যে মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা কতো সেটা জানা যায় নি। গত বছরের নভেম্বর থেকে ঢাকায় প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল সেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। যার নাম রাখা হয় ‘উবার মোটো’।
ভারতের হায়দরাবাদে উবার প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার সেবা শুরু করলেও সেটা বাংলাদেশের মতো জনপ্রিয়তা পায়নি।
গত দুই বছরে ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল বাড়ার চিত্র পাওয়া যায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যে। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কার্যালয় থেকে ২০১৬ সালে যেখানে ৫৩ হাজার ৭৩৮টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল, সেখানে ২০১৭ সালে নিবন্ধিত হয় ৭৫ হাজার ২৫১টি। আর ২০১৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত মোটরসাইকেলের নিবন্ধন হয়েছে ৮২ হাজার।
এ হিসাবে, ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০৬টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছে। আর গত বছরের প্রথম আট মাসে প্রতিদিন গড়ে ২২৪টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছে। এ নিয়ে বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আগে হালকা যান এবং ভারী যানবাহনের নিবন্ধনের হার ছিল বেশি। কিন্তু গত দুই বছরে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের হার অনেকটাই বেড়েছে। অতিরিক্ত মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন বাড়ার কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমরা খুব ভালোভাবেই হ্যান্ডেল করছি। আর সব কিছু যাচাই বাছাই করে নিবন্ধন করাচ্ছি।
রাইড শেয়ারিংয়ে যেসব মোটরসাইকেল চলে তার একটা বড় অংশ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার নম্বর প্লেটধারী। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মানুষ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করছে। এতে ভাড়া কম এবং যাতায়াতও করা যায় কম সময়ে। তাই রাজধানী ঢাকার অনেক মানুষই এখন যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করে থাকে। আর এতে হাজার হাজার যুবকের উপার্জনের ব্যবস্থাও হয়েছে। এইসব মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে বেকার ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে।
কেন জনপ্রিয় হলো মোটরসাইকেল: মূলত কম পয়সায় দ্রুত যাতায়াত, তারমধ্যে ডিসকাউন্ট সুবিধার কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইড সেবা। ঔষধ কোম্পানি বায়োফার্মায় চাকরি করেন রেদোয়ান আহমেদ। প্রায়ই তার কাজের প্রয়োজনে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। এই যাতায়াতের ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি এই মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভর করেন। মানবজমিনকে তিনি জানান, খুব ইমার্জেন্সি কোনো কাজ থাকলে বাইকে করে সবচেয়ে কম সময়ে সেখানে পৌঁছানো যায়। আমি যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করি সেগুলোর একটা না একটায় ডিসকাউন্ট থাকেই। তখন সেই ভাড়াটা অনেক কম আসে। তাছাড়া বাইকে করে আপনি এমন সব রাস্তায় যেতে পারবেন যেখানে হয়তো বড় গাড়ি চালানো সম্ভব না।
ট্রাফিক আইনে মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাছাড়া এই রাইড পরিবহন সেবাগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তায় কয়েকটি সেফটি ফিচার যুক্ত করায় মোটরসাইকেল রাইডে আগ্রহী হচ্ছেন নারীরাও। এসব সেফটি ফিচারের মধ্যে রয়েছে চালক ও গাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসহ জিপিএস ট্র্যাকিং, টু-ওয়ে ফিডব্যাক ও ট্রিপ ডিটেইলস শেয়ারিং। এ ছাড়া গাড়ি খোঁজা বা ভাড়া নিয়ে দর কষাকষির কোনো ঝামেলা না থাকায় এই মোটরসাইকেল রাইড নেয়ার কথা জানান ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইকবাল হোসেন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, অফিস ছুটি হওয়ার পর বাসগুলোয় এত ভিড় থাকে যে, ওঠার উপায় থাকে না। উঠতে পারলেও এত বেশি ধাক্কাধাক্কি হয়। তাই অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করি। রাইডের মাধ্যমে বাইক ডাকলে বাস ভাড়া থেকে একটু বেশি খরচ পড়লেও গাড়ি থেকে অনেক কম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মোটরসাইকেলের মাধ্যমে দ্রুত যানজট ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। আর এটা আমাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেয় না। একদম গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা।
শেয়ারিং অ্যাপ তরুণদের জন্য অর্থ আয়ের সুযোগ: মোটরসাইকেল যানজটের মধ্যে দ্রুত পরিবহন নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনেক তরুণদের জন্য অর্থ আয়েরও ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় প্রায় প্রতিদিনই অফিসে যাওয়া-আসার পথে এই রাইড সেবা দিয়ে থাকেন মাহফুজুর রহমান। এতে একদিকে যেমন তার বাইক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ উঠে আসে তেমনি ছুটির দিনে অবসরে কয়েক ঘণ্টা এই সার্ভিসের মাধ্যমে তার পকেট খরচও এসে পড়ে। মাহফুজ জানান, আমি আগে থেকেই বাইক চালাই, তাই বলতে গেলে এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে আমার কোনো কিছুই ইনভেস্ট করতে হয়নি। যা পাচ্ছি তার পুরোটাই লাভ। আমার মতো এখন অনেকেই ফ্রি-ল্যান্সার রাইড সার্ভিস দিচ্ছে। তবে এমন অনেককেই আমি চিনি যারা সকাল-সন্ধ্যা বাইক রাইড দেন। এখন এটাই তাদের পেশা।
দুর্ঘটনাও বাড়ছে: বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট- এআরআই’র হিসাবে ২০১৭ সালে রাজধানীতে ৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। গত বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) সেই সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি দুর্ঘটনা ঘটে। এই সময়ে ঢাকায় ৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৪৭ জনের মৃত্যু এবং ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলের চালক অথবা যাত্রীও ছিলেন।
গত ১৭ই সেপ্টেম্বর খিলক্ষেতে দুর্ঘটনায় মারা যান লাফিজুর রহমান নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী। ৩রা সেপ্টেম্বর রাতে মতিঝিল এলাকায় রিপন শিকদার এবং জানে আলম গাজী নামে দু’জন নিহত হন। এরও আগে ২০শে আগস্ট মোহাম্মদপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সোহেল পারভেজ, ৬ই জুলাই বিমানবন্দর গোলচত্বরের কাছে নাজমুল হাসান এবং ৬ই মার্চ তেজগাঁওয়ের আড়ং চেকপোস্টে কাজী মারুফ হাসান নামে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ট্রাফিক সূত্র বলছে, রাজধানীতে নিয়ম ভাঙার কারণে যানবাহনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয় এর বড় অংশই মোটরবাইক।
চালকের অদক্ষতা: মোটরবাইকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে অদক্ষ চালকের সংখ্যাও। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অদক্ষতা এবং নিরাপত্তা জ্ঞানের অভাবকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর পরিচালক ইলিয়াস কাঞ্চন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ের কারণে মোটরসাইকেলের চলাচল বেড়েছে, দুর্ঘটনা বাড়ার এটা একটা কারণ। মোটরসাইকেল চালকরা অনেকেই অপেশাদার চালক। তাদের ক্ষেত্রে ড্রাইভিং শিখে আসার বিষয়টা নেই। চালকদের অনেকেই বেপরোয়া, অনেকে দক্ষ হলেও নিরাপত্তা জ্ঞানের অভাব আছে।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। রাইড শেয়ারিংয়ের চালকদের দ্রুত ট্রিপ শেষ করার একটা ব্যাপার থাকে। এজন্য তারা দ্রুত চালাতে চান। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে বাইক চালকদের বক্তব্য অনেক সময় যাত্রীরাও তাড়া দেন। দ্রুত সময়ে তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে চান। অনেকে ট্রেন, লঞ্চ বা দূরে যাত্রার বাস ধরতে বাসা থেকে বের হন। তখন নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে তাড়া দেন। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
দুর্ঘটনার দায় আছে রাইড শেয়ার কোম্পানিগুলোরও: রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেখছে না- এমনটি স্বীকার করেছেন শেয়ার আ মোটরসাইকেল (স্যাম) এর প্রধান নির্বাহী ইমতিয়াজ কাসেম। তিনি বলেন, রাইড শেয়ারিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন অনেকে। অনেকে গ্রাম থেকে চলে এসেছেন মোটরসাইকেল চালাতে। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো শুধু লাইসেন্স থাকলেই চালানোর অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে। কোনোমতে কাগজপত্র তৈরি করেই রাস্তায় নেমে যায়। কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন এম ইলিয়াসও স্বীকার করলেন, দুর্ঘটনার দায় কিছুটা তাদেরও আছে। তিনি বলেন, দায়ভার অবশ্যই কিছুটা আছে। কিন্তু এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে হলে সবাইকেই কাজ করতে হবে। আমরা যেহেতু সবাই মিলে কাজ করছি। ফল আসবেই।
শিক্ষানবিশ লাইসেন্স থাকলেই রাইড শেয়ার করার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লাইসেন্স থাকলেই কেউ ভালো ড্রাইভার নাও হতে পারে। যাই হোক, আমরা চিন্তা করছি কীভাবে এ বিষয়টি আরো নিয়মের মধ্যে আনা যায়। এখন আর লার্নার দিয়ে কাউকে রাইড দেয়ার সুযোগ দিচ্ছি না। রাইডারদের জন্য বাড়তি কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটাও আমরা ভেবে দেখছি।
মোটরসাইকেলে নিরাপত্তায় করণীয়: ঢাকায় ক্রমেই এই মোটরসাইকেল বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, গাড়ির ভেতরে আপনি যেমন চারদিক থেকে একটা নিরাপত্তা বলয় থাকেন, সেক্ষেত্রে মোটরবাইকের চারদিক খোলা। দুই চাকার ওপর ভারসাম্য গাড়ির মতো এত ভালো থাকে না। এ কারণে আরোহীদের পাশাপাশি পথচারীরাও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকেন।
ট্রাফিক আইনে মোটরসাইকেল চালকের পাশাপাশি যাত্রীর হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোয় এখন চালকরাই এই হেলমেট সরবরাহ করে থাকে। তবে এই হেলমেটগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, এখন রাস্তাঘাটের বেশিরভাগ মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরতে দেখা যায়। যেটা বেশ ইতিবাচক। তবে আরোহীরা যে হেলমেটগুলো পরেন, সেগুলোর মান খুবই খারাপ। বাইকের পেছনে বসা যাত্রীরা যে হেলমেট ব্যবহার করেন এগুলো দেখতে প্রায় বিল্ডিংয়ে কাজ করার সময় শ্রমিকরা যেই হেলমেট ব্যবহার করেন ঠিক সেগুলোর মতো। মানসম্পন্ন হেলমেট বলতে ভালো উপাদানের তৈরি এমন হেলমেট হতে হবে যেটা মাথাকে পূর্ণ সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি কান ও থুঁতনি রক্ষা করবে।
মোটরবাইকের চলাচলে শৃঙ্খলার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেপরোয়া কিংবা ফুটপাতেথ মোটরসাইকেল চালানোর বিরুদ্ধে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা সব সময় মোটরসাইকেলের চালকদের সচেতনভাবে ড্রাইভ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু আরোহীদের সচেতনতা এবং মানসিকতা না বদলালে এটি পুরোপুরি বন্ধ করা মুশকিল বলে মনে করেন তিনি।
No comments