ফ্রিজে রাখা হাত জুড়ল সাত ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে
প্রাণে
বাঁচার কথা ছিল না। আর বাঁচলেও কথা ছিল না বিচ্ছিন্ন অঙ্গ ফেরত পাওয়ার।
কিন্তু দু’টোই হয়েছে। অস্ত্রোপচারে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চলেছেন চল্লিশ
বছরের সরলা জৈন।
দুষ্কৃতীর চপারের এলোপাথাড়ি কোপে ছিন্নভিন্ন হয়েছিলেন জৈন দম্পতি। গত শনিবার কালী টেম্পল রোডের ওই ঘটনায় শিউরে উঠেছিল শহর। সেই সঙ্গেই শিউরে উঠেছিলেন চিকিৎসকেরা। বীভৎস অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল গুরুতর জখম সরলাদেবীকে। ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল মুখের প্রতিটি হাড়। মাথার খুলি রক্তাক্ত। ডান হাত চপারের কোপে ক্ষতবিক্ষত। আর বাঁ হাত কব্জির নীচ থেকে নেই!
‘‘শকে চলে গিয়েছিলেন তিনি। রক্তচাপ আশঙ্কাজনক রকমের কম ছিল। তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু অস্ত্রোপচারের মতো শারীরিক অবস্থা ছিল না তাঁর।’’— বললেন প্লাস্টিক সার্জন অনুপম গোলাশ। তাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতের অংশটি ফ্রিজে রেখে দিতে হয়েছিল। পরের দিন রোগিণীর শারীরিক অবস্থা একটু স্থিতিশীল হলে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সিএমআরআই হাসপাতালে ঘণ্টা সাতেকের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগে বিচ্ছিন্ন হাতটি। চিকিৎসকদের আশা, সময় লাগলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন ওই প্রৌঢ়া।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সরলাদেবীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্লাস্টিক সার্জন অনুপমবাবু হাতের অবস্থা দেখে জানান, তখনই অস্ত্রোপচার করলে হয়তো জোড়া লাগানো সম্ভব হবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে রক্তচাপ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নীচে। আশঙ্কাজনক রকম কম ছিল হিমোগ্লোবিন। ওই অবস্থায় অস্ত্রোপচারের ধকল নিতে পারতেন না রোগিণী। ফলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। তখন সিদ্ধান্ত হয়, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতটি ঠিক উপায়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। তা-ই হয়। ‘‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, এ ভাবে হাতটা রাখার পরেও সেটাকে আদৌ ফের জোড়া লাগানো সম্ভব হবে কি না।’’ — বললেন অনুপমবাবু। কিন্তু সেটাই হয়েছে।
ঘটনার পরদিন সকাল এগারোটা নাগাদ যখন একটু স্থিতিশীল হয় সরলাদেবীর অবস্থা, তখনই ফ্রিজ থেকে কাটা হাতটিকে বার করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেহেতু বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে ১৬ ঘণ্টা, তাই সাফল্যের সম্ভাবনা ৫০-৫০ ধরে নিয়েই অস্ত্রোপচার শুরু হয়। সাত ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। কব্জির শেষ প্রান্তে বিচ্ছিন্ন কোষ-কলা-নিউরোনগুলি কেটে যাওয়া হাতের অংশে সাড় পৌঁছে দেবে কি না, সে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জে জিতে যান শহরের চিকিৎসকেরাই।
চিকিৎসক মহলের মতে, বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফের জুড়ে দেওয়ার অস্ত্রোপচার এ শহরে আগেও হয়েছে একাধিক বার। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অঙ্গকে এতটা সময় ধরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখে, সেটিকেই বিনা জটিলতায় ফের জুড়ে দেওয়ার নজির কম। প্লাস্টিক সার্জন কৌশিক নন্দীর কথায়, ‘‘ওই পরিস্থিতিতেও যে চিকিৎসকেরা রোগিণীর প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন হাতটির কথা মাথায় রেখেছেন, তা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে।’’ তিনি জানান, এই অবস্থায় অঙ্গকে এমন ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, যাতে যথেষ্ট ঠান্ডা থাকে অঙ্গটি, কিন্তু জমে না-যায়। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা নেমে গেলেই কিন্তু ওই অঙ্গটি আর জোড়া লাগানো সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে সব দিক মাথায় রেখে যে এমন একটা সফল অস্ত্রোপচার দেখল শহর, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
দুষ্কৃতীর চপারের এলোপাথাড়ি কোপে ছিন্নভিন্ন হয়েছিলেন জৈন দম্পতি। গত শনিবার কালী টেম্পল রোডের ওই ঘটনায় শিউরে উঠেছিল শহর। সেই সঙ্গেই শিউরে উঠেছিলেন চিকিৎসকেরা। বীভৎস অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল গুরুতর জখম সরলাদেবীকে। ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল মুখের প্রতিটি হাড়। মাথার খুলি রক্তাক্ত। ডান হাত চপারের কোপে ক্ষতবিক্ষত। আর বাঁ হাত কব্জির নীচ থেকে নেই!
‘‘শকে চলে গিয়েছিলেন তিনি। রক্তচাপ আশঙ্কাজনক রকমের কম ছিল। তৎক্ষণাৎ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু অস্ত্রোপচারের মতো শারীরিক অবস্থা ছিল না তাঁর।’’— বললেন প্লাস্টিক সার্জন অনুপম গোলাশ। তাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতের অংশটি ফ্রিজে রেখে দিতে হয়েছিল। পরের দিন রোগিণীর শারীরিক অবস্থা একটু স্থিতিশীল হলে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সিএমআরআই হাসপাতালে ঘণ্টা সাতেকের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগে বিচ্ছিন্ন হাতটি। চিকিৎসকদের আশা, সময় লাগলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন ওই প্রৌঢ়া।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সরলাদেবীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্লাস্টিক সার্জন অনুপমবাবু হাতের অবস্থা দেখে জানান, তখনই অস্ত্রোপচার করলে হয়তো জোড়া লাগানো সম্ভব হবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে রক্তচাপ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নীচে। আশঙ্কাজনক রকম কম ছিল হিমোগ্লোবিন। ওই অবস্থায় অস্ত্রোপচারের ধকল নিতে পারতেন না রোগিণী। ফলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। তখন সিদ্ধান্ত হয়, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতটি ঠিক উপায়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। তা-ই হয়। ‘‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, এ ভাবে হাতটা রাখার পরেও সেটাকে আদৌ ফের জোড়া লাগানো সম্ভব হবে কি না।’’ — বললেন অনুপমবাবু। কিন্তু সেটাই হয়েছে।
ঘটনার পরদিন সকাল এগারোটা নাগাদ যখন একটু স্থিতিশীল হয় সরলাদেবীর অবস্থা, তখনই ফ্রিজ থেকে কাটা হাতটিকে বার করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেহেতু বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে ১৬ ঘণ্টা, তাই সাফল্যের সম্ভাবনা ৫০-৫০ ধরে নিয়েই অস্ত্রোপচার শুরু হয়। সাত ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। কব্জির শেষ প্রান্তে বিচ্ছিন্ন কোষ-কলা-নিউরোনগুলি কেটে যাওয়া হাতের অংশে সাড় পৌঁছে দেবে কি না, সে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জে জিতে যান শহরের চিকিৎসকেরাই।
চিকিৎসক মহলের মতে, বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফের জুড়ে দেওয়ার অস্ত্রোপচার এ শহরে আগেও হয়েছে একাধিক বার। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অঙ্গকে এতটা সময় ধরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখে, সেটিকেই বিনা জটিলতায় ফের জুড়ে দেওয়ার নজির কম। প্লাস্টিক সার্জন কৌশিক নন্দীর কথায়, ‘‘ওই পরিস্থিতিতেও যে চিকিৎসকেরা রোগিণীর প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন হাতটির কথা মাথায় রেখেছেন, তা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে।’’ তিনি জানান, এই অবস্থায় অঙ্গকে এমন ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, যাতে যথেষ্ট ঠান্ডা থাকে অঙ্গটি, কিন্তু জমে না-যায়। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা নেমে গেলেই কিন্তু ওই অঙ্গটি আর জোড়া লাগানো সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে সব দিক মাথায় রেখে যে এমন একটা সফল অস্ত্রোপচার দেখল শহর, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
No comments