পাবনায় খুনের মিছিল
কেবল একটি জেলায় পাঁচ মাসে ৩২ জন কিংবা দেড় বছরে ১২১ জন মানুষের খুন হওয়ার ঘটনা মোটেই স্বাভাবিক বলা যায় না৷ পাবনায় প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদনে এই অস্বাভাবিক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে৷ নারায়ণগঞ্জ, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে উপর্যুপরি হত্যাকাণ্ডের পর পাবনার এই চিত্র কিসের ইঙ্গিত দেয়? সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতই স্বাভাবিক বলে দাবি করুক না কেন, কেবল পাবনা নয়, সারা দেশেই জনজীবন হয়ে পড়েছে প্রায় নিরাপত্তাহীন৷ গত বছরের খুনখারাবি ও রাজনৈতিক সংঘাতের দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো গেলেও গত ৫ জানুয়ারির পর সেটি আর ধোপে টেকে না৷ ১০ মে জেলার আতাইকুলা উপজেলায় স্থানীয় বিএনপির নেতা ইব্রাহিম মৃধা নিহত হওয়ার পর ৩১ মে পুষ্পপাড়া হাটে দিনদুপুরে ঝটিকা হামলা চালিয়ে চারজনকে খুন করা হয়৷ খুনের ধরন দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, এটি চরমপন্থীদের কাজ৷ এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা সুলতান আহমেদ সিকদারসহ দুই ব্যক্তি রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলেও অন্য দুজন দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ৷ একদা চরমপন্থীদের ঘাঁটি বলে পরিচিত পাবনায় ফের যে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলিই তার প্রমাণ৷ আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, আগে নানা বাহিনীর নামে প্রকাশ্যে চরমপন্থীরা তৎপরতা চালালেও এখন বিভিন্ন দলে ঢুকে খুনখারাবি চালাচ্ছে৷ পুষ্পপাড়ার হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাসীনেরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছে৷ অন্যদিকে, বিএনপির দাবি, হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই চরমপন্থী দলের মধ্যে বিরোধের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে৷
একসময় আতাইকুলা উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের আধিপত্য ছিল৷ কিন্তু গত নির্বাচনের পর স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতার আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ায় সেই আধিপত্য অনেকখানি খর্ব হয়৷ আর যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁরা একসময়ে চরমপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ এলাকার আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে চরমপন্থীদের দলে টানা বা ব্যবহার করার পরিণতি যে ভয়ংকর হতে পারে, নিকট অতীতে তার অজস্র উদাহরণ থাকলেও রাজনৈতিক নেতৃত্ব মোটেই আমলে নিচ্ছে না৷ এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে উত্তরাঞ্চলে চরমপন্থীদের হাতে একজন প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা খুন হওয়ার ঘটনায় সরকারি দলের মদদেই জেএমবি তথা বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছিল৷ এবার কে কোন পক্ষকে ব্যবহার করছে, সেটি খুঁজে বের করতে হবে নিরপেক্ষভাবেই৷ এ ক্ষেত্রে পক্ষপাত দেখালে পরিস্থিতিরই কেবল অবনিত হবে না, অপরাধীরাও পার পেয়ে যাবে৷ এসব ঘটনা বিরোধী দলের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের অপপ্রয়াস, না সরকারি দলের একচ্ছত্র দৌরাত্ম্যের ফল, সেটিও খুঁজে বের করা জরুরি৷ ধারণা করা হয়েছিল, শেখ হাসিনার আমলে চরমপন্থীদের আস্তানাগুলো উপড়ে ফেলা গেছে, এত দিন সরকারের তরফ থেকে সে ধরনের দাবিই করে অাসা হচ্ছিল৷ কিন্তু পাবনার ঘটনা বিপরীত বার্তাই দিচ্ছে৷ অতএব, যা করার এখনই করুন৷
No comments