ইউক্রেনে সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ
ইউক্রেনে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার পর রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে ইনডিপেনডেন্স স্কয়ার এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারী ও দাঙ্গা পুলিশের মধ্যে আবার ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে বহু মানুষ। ইউক্রেনের চলমান সহিংসতায় দুই দিনে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অন্তত ২০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জড়িতদের ওপর অবরোধ আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফাবিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, এসব অবরোধের আওতায় কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার ভিসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও সম্পত্তি জব্দ করা হবে। তিন মাসব্যাপী রাজনৈতিক সংকট গত মঙ্গলবার থেকে রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা গত নভেম্বর থেকে ইনডিপেনডেন্স স্কয়ার দখল করে রেখেছেন। সেখান থেকে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সহিংসতা রক্তক্ষয়ী হয়ে ওঠে।সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ: ইইউর বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ এক আলোচনায় সমঝোতার জন্য বিরোধীদের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু কিয়েভে গতকাল নতুন করে সহিংসতার কারণে সমঝোতার সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। ইয়ানুকোভিচের সঙ্গে ওই আলোচনায় ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন।
চলমান সংকট মোকাবিলায় ইয়ানুকোভিচ একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। ইউক্রেনে স্বাধীনতার পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশটি বিভিন্ন বিষয়ে রাশিয়ার প্রতি এখনো নির্ভরশীল। মূলত রাশিয়ার চাপেই ইইউর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ। এতে দেশটির সরকারবিরোধীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করেন। সম্প্রতি পুলিশ ইনডিপেনডেন্স স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলো পুড়িয়ে দেয়। এর পরই দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে ইনডিপেনডেন্স স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ঘটে হতাহতের ঘটনা। গতকাল নিহতদের স্মরণে শোক পালন করেছেন সরকারবিরোধীরা। ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া উভয় পক্ষকেই সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে বলা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, তিনি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মর্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ইউক্রেনের সরকারের ২০ জন সদস্যের ভিসার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বেসামরিক ওই ব্যক্তিদের নাম অপ্রকাশিত রাখা হয়েছে। এদিকে, ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউক্রেনের সরকারবিরোধীদের সঙ্গেও পৃথক আলোচনায় অংশ নেবেন। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফাবিয়া বলেন, উভয় পক্ষকেই আলোচনায় ফিরতে হবে। সহিংসতা অবশ্যই ‘অগ্রহণযোগ্য’। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।
No comments