সুতার দাম যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর দাবি -বিকেএমইএর শ্রমিক উত্সব শুক্রবার

আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে স্থানীয় মিল মালিকেরা গত দুই মাসে সুতার দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। অস্বাভাবিকভাবে সুতার দাম বাড়ায় নিট পোশাকের উত্পাদনব্যয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন দেশের নিট পোশাকের রপ্তানিকারকেরা। সুতার দাম কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে না আনলে নিট খাতের রপ্তানি ২০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেকগুলো নিট কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় শ্রমিক উত্সব সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। ঢাকায় বিকেএমইর কার্যালয়ে আয়োজিত সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিকেএমইএর সভাপতি মো. ফজলুল হক। এ সময় সমিতির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ফজলুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মিল মালিকেরা সুতার দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ বর্ধিত মূল্যের আমদানি করা তুলা থেকে উত্পাদিত সুতা দেশের বাজারে আসতে কমপক্ষে তিন মাস লাগে।
বিকেএমইএর সভাপতি আরও বলেন, তুলার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি পাউন্ড ৮ থেকে ১০ সেন্ট পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ সুতার দাম প্রতি কেজিতে ৮০ সেন্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বর্ধিত দামে কেনা তুলা দেশে আসার আগেই দাম বাড়ানো হয়েছে। সুতার দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো গ্রহণযোগ্য।
দেশীয় নিট শিল্পের স্বার্থে সুতার দাম যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব করেন নিট শিল্প মালিকেরা। একই সঙ্গে তাঁরা কমপক্ষে তিন মাস আগে সুতার দাম বাড়ানোর আগাম ঘোষণার সুপারিশ করেন। কারণ রপ্তানির আদেশ নেওয়ার সময় স্থানীয় বাজার দাম সম্পর্কে ধারণা থাকলে উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের জন্য সুবিধা হয়।
শ্রমিক উত্সব সম্পর্কে মো. ফজলুল হক বলেন, ‘মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে এই উত্সবের আয়োজন করা হয়েছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এত বড় শ্রমিক উত্সব আগে কখনো হয়নি। এবার শুধু শ্রমিকদের অংশগ্রহণে একটানা সাত ঘণ্টার বেশি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া উত্সবে আনুমানিক এক লাখ শ্রমিক অংশ নেবেন।’
ফজলুল হক আরও জানান, নারায়ণগঞ্জের ইসদাইরে ওসমানী স্টেডিয়ামে আয়োজিত এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু।
সমাপনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
মেলার অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিকেএমইএর সভাপতি বলেন, পুরো অনুষ্ঠানটি শ্রমিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, জারি, দলীয় ও একক নাচ, দলীয় ও একক গান, কৌতুক, নাটিকা, ফ্যাশন শো আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ছাড়া দিনব্যাপী মেলায় হাতি, ঘোড়া, বানর খেলা, লাঠি খেলা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, ম্যাজিক শো, বেলুন ফোটানো, মাটির খেলনা, বারোয়ারি মেলাসহ আরও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান থাকবে।
তবে সমাপনীপর্বে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বালাম ও শাহনাজ বেলীর পরিবেশনায় কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চলতি বছরের ১৭ জুন শ্রমিক উত্সবের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ৩৫টি কারখানা এবং ৭০০ জন শ্রমিক আবেদন করে। দ্বিতীয় পর্বে ৫০০ জন ও তৃতীয় পর্বে ৩০০ জনকে নির্বাচিত করা হয়। চূড়ান্তপর্বে আজ রোববার মহড়ার মাধ্যমে ২০০ জন শ্রমিককে নির্বাচিত করা হবে।
ফজলুল হক আরও জানান, কেবল শ্রমিক উত্সবে অংশ নেওয়ার জন্য নিজ উদ্যোগে আনোয়ারা ফেব্রিক্সের সুমি নাচের স্কুলে ভর্তি হয় আর মডেল ডি ক্যাপিটালের শ্রমিক শাহনাজ ও ফকির অ্যাপারেলসের শ্রমিক সেন্টু গান শেখে। এ ছাড়া মেট্রো নিটিংয়ের আরিফ, মিডল্যান্ড নিটওয়্যারের রাসেল, ফকির অ্যাপারেলসের বিল্লাল, রূপসী গ্রুপের শামীম, মোহন নিয়মিত নাচ শেখে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অনুষ্ঠানের সব পর্ব কেবল নিট গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য উন্মুক্ত। নিট গার্মেন্টস শ্রমিক ছাড়া অন্য কেউ এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না। এ উত্সবে প্রবেশের জন্য শ্রমিকদের নিজ নিজ কারখানার পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.