দ্রুততম কিশোর-কিশোরী উজ্জ্বল ও তানজিলা
হাজী নুরুল ইসলাম মুন্সি স্মৃতি জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সের দ্রুততম কিশোর নরসিংদীর উজ্জ্বল চন্দ্র সূত্রধর এবং দ্রুততম কিশোরী তানজিলা আক্তার। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা হওয়ার দৌড়ে উজ্জ্বল ১০.৮৩ সেকেন্ড এবং তানজিলা ১৩.১০ সেকেন্ড সময় নেয়। সব অ্যাথলেটেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা। সেই অধরা স্বপ্ন আরও একবার ধরা দিল নরসিংদীর উজ্জ্বল চন্দ্র সূত্রধরের হাতে। এর আগে ২০১৩ সালে জুনিয়রদের এ মঞ্চে দ্রুততম বালকের খেতাব অর্জনের পাশাপাশি লং জাম্পেও স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। পরের বছর জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ও লংজাম্পে দ্বিতীয় হন।
গেল বছর এ আসরের লং জাম্পে ৭.০৯ সেন্টিমিটার উচ্চতায় লাফিয়ে জাতীয় রেকর্ড গড়েন তিনি। পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাবে সেবার প্রিয় ইভেন্টে অংশ নেননি উজ্জ্বল। এবার তার আশা ছিল ১০০ মিটার স্প্রিন্টের পাশাপাশি লং জাম্পেও জাতীয় রেকর্ড গড়বেন। কিন্তু জ্বরের কারণে তা আর হয়নি। লং জাম্পে রুপা জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র উজ্জ্বল দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী থানার গচিহাটা গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বলের বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রি এবং মা গৃহিণী। দিনহীন পরিবারে থেকেও সাফল্য ছিনিয়ে আনায় খুব খুশি তিনি। উজ্জ্বলের কথায়, ‘জুনিয়র মিটে সবাইকে পেছনে ফেলতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এজন্য আখতারুজ্জামান স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। ওনার সহযোগিতার কারণেই এত পর্যন্ত আসতে পেরেছি।’ ভবিষ্যতের লক্ষ্য সম্পর্কে উজ্জ্বলের কথা, ‘ভবিষ্যতে সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণ জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। আর এজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের। আমি অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনকে অনুরোধ করব এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে।’ অন্যদিকে বিকেএসপির উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিলার কথা, ‘এর আগেও জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে তিনবার অংশ নিয়েছি। তবে ১০০ মিটারে প্রথম হলাম এবারই।
সেরা হওয়ার স্বপ্ন আমার অনেকদিনেরই। সেটা এবার পূর্ণ হওয়ায় খুবই খুশি।’ এর আগে এ আসরে ২০১৩ সালে তিনটি ইভেন্টে রুপা পেয়েছিল তানজিলা। ‘২০১৪ ও ২০১৫ সালে চোটের কারণে (লিগামেন্ট ইনজুরি) খেলতে পারিনি। এ প্রতিযোগিতার জন্য আমার প্রস্তুতি ছিল প্রায় তিন মাসের। ২০১৩ সালের আসরে ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড়ে এবং লং জাম্পে রুপা জিতেছিলাম। আমার কোচ আমাকে এবার যেভাবে ও যতটুকু অনুশীলন করিয়েছেন, তাতে আমি আÍবিশ্বাসী ছিলাম, এবার আমি কিছু একটা করতে পারব।’ কৃষক বাবা শামসুল ইসলামের সুযোগ্য কন্যা তানজিলা যোগ করে, ‘তবে কিছুটা সংশয়েও ছিলাম। কারণ অনেকদিন খেলায় ছিলাম না এবং বেশিদিন অনুশীলনও করতে পারিনি।’ অতীতে ফিরে গিয়ে তানজিলা বলল, ‘যখন হাইস্কুলে যাই, তখন আন্তঃস্কুল অ্যাথলেটিক্সে অনেক পুরস্কার জিতেছি। আর তখন থেকেই আমার খেলাধুলার প্রতি বাবার নেতিবাচক মনোভাব বদলে যেতে থাকে। স্কুল পর্যায়ে পুরস্কার হিসেবে জিতেছি ৪৫ প্লেট এবং ২৫টির বেশি মেডেল। তিন মাস ক্যাম্প করার পর ২০১২ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হই। ভবিষ্যতে আমি বিউটি আপার (নাজমুন নাহার বিউটি) মতো ১০০ মিটারে এবং সুবর্ণা আপার (সুবর্ণা আক্তার) ২০০ মিটার স্প্রিন্টের বাংলাদেশ গেমসের রেকর্ডটা ভাঙতে চাই।’ এ আসরে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জেতার পাশাপাশি ২০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং হাই জাম্পে রুপা জিতেছে তানজিলা।
No comments