দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা ও গণশুনানি by নাসিরউদ্দীন আহমেদ
দুর্নীতি
দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)
যৌথ উদ্যোগে সরকারি দপ্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে
পরীক্ষামূলকভাবে গণশুনানি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। গণশুনানির সঙ্গে থাকছে
তথ্যমেলা। সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের কাছে স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে
সেবা-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট সমস্যা উপস্থাপন এবং তা সমাধানকল্পে কার্যকর
ব্যবস্থা গ্রহণের একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা হলো গণশুনানি। অন্যদিকে, তথ্য
অধিকার আইন, ২০০৯ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং তথ্যপ্রত্যাশী ও তথ্য
প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করাই তথ্যমেলার মূল
উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮–২৯ ডিসেম্বর টিআইবির সহযোগিতায় দুদক প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ও গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাভার উপজেলায় তথ্যমেলা ও গণশুনানির আয়োজন করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো নাগরিকের জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের (ইউএনসিএসি) ১৩ অনুচ্ছেদে দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজের (সুশীল সমাজ, এনজিও, গণমাধ্যম ইত্যাদি) অংশগ্রহণ এবং তথ্যপ্রাপ্তি ও রিপোর্টিংয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তৃতীয়ত, সরকার অনুমোদিত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ২০১২-এ নাগরিকদের দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। চতুর্থত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এসডিজি) দুর্নীতি ও ঘুষ ব্যাপক হারে হ্রাস করা এবং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও নাগরিকের অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে (লক্ষ্য ১৬)। পঞ্চমত, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালে সরকারি সেবা প্রদানে গণশুনানি একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
গণশুনানির উদ্দেশ্য: সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকের অভিযোগ সরাসরি শুনে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি সরকারি দপ্তরে নাগরিক সনদের ভিত্তিতে নাগরিকদের প্রদেয় সেবার মান উন্নত করা।
গণশুনানির তাত্ত্বিক কাঠামো: বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০০৪-এ বর্ণিত সামাজিক দায়বদ্ধতাকাঠামো গণশুনানির তাত্ত্বিক কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে নাগরিকেরা মূলত নির্বাচনপদ্ধতির মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করেন (নাগরিকের কণ্ঠস্বর) এবং নীতিনির্ধারকেরা নীতি/বিধি প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মাধ্যমে সেবা প্রদানকারীকে নাগরিকের কাছে সরাসরি দায়বদ্ধ করা যায়।
গণশুনানির আইনগত কাঠামো: সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ (২) এ বলা হয়: ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো হলো: দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা (ধারা ১৭ চ); এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচিত অন্য যেকোনো কার্য সম্পাদন করা (ধারা ১৭ ট)।
গণশুনানি কার্যক্রম: দুর্নীতি দমন কমিশন মনে করে, দেশের সাধারণ মানুষকে ক্ষমতায়িত করার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধের কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে গণশুনানি অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। এই বহুপক্ষীয় সভায় দুর্নীতির উৎস চিহ্নিতকরণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে অনুসন্ধানমূলক আলোচনা করা হয় এবং সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায় বের করার প্রয়াস নেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসে জারি করা অফিস স্মারক অনুযায়ী কমিশন গণশুনানি পরিচালনা করছে। ২০১৪ সালের ১ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা অফিস স্মারক অনুযায়ী গণশুনানি গ্রহণের কতিপয় ব্যবস্থা হলো:
১. সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে অফিস চলাকালে গণশুনানি গ্রহণ। ২. লিখিত বা মৌখিক উভয় প্রকার অভিযোগ শুনানির জন্য গ্রহণ। ৩. অভিযোগের নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত প্রদান, সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ এবং ফলাফল সেবাপ্রত্যাশীকে অবহিতকরণ। ৪. সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ-সংক্রান্ত রেজিস্টার সংরক্ষণ; এবং ৫. গণশুনানি-সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্ধারিত ছকে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে উপজেলা কার্যালয় থেকে জেলা কার্যালয় এবং জেলা কার্যালয় কর্তৃক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগে প্রেরণ।
নাগরিকের জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রের এ দায়িত্ব পালনে গণশুনানি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতাপদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে কার্যকর করতে হলে এর নিরবচ্ছিন্ন ফলোআপ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন গণশুনানি কার্যক্রম অনুষ্ঠানের আগে পাঁচটি জেলার (ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর) ১০টি উপজেলায় জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের উদ্যোগে বেইসলাইন সার্ভে পরিচালিত হয়। এ জরিপে দুর্নীতির চিত্র ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণের সচেতনতার অভাবের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়।
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপজেলায় পরীক্ষামূলক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্যায়ে গণশুনানিতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপ্রবণ সরকারি দপ্তর যথা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস স্থান পেয়েছে। ধারণার ওপর নয় বরং দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার আলোকে নাগরিকেরা গণশুনানিতে অংশ নেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঞ্চালনায় পরিচালিত গণশুনানি আয়োজনে ও অংশগ্রহণকারী নির্বাচনে দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটিসহ (সনাক) গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গণশুনানি থেকে প্রত্যাশা: ১. সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ২. সেবা-সংক্রান্ত নাগরিকদের সমস্যা সমাধানকল্পে তাদের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা। ৩. সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকের অভিযোগ সরাসরি শ্রবণের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা। ৪. সেবা প্রদানের পদ্ধতির উন্নয়ন করা; এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে কার্যকর নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
নাগরিকের জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রের এ দায়িত্ব পালনে গণশুনানি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে কার্যকর করতে হলে এর নিরবচ্ছিন্ন ফলোআপ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিয়মিত গণশুনানি পরিচালনা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন গণশুনানিতে গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করা। তাহলে গণশুনানি কর্মসূচি ফলপ্রসূ হবে।
ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ: কমিশনার (অনুসন্ধান), দুর্নীতি দমন কমিশন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮–২৯ ডিসেম্বর টিআইবির সহযোগিতায় দুদক প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ও গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাভার উপজেলায় তথ্যমেলা ও গণশুনানির আয়োজন করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো নাগরিকের জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের (ইউএনসিএসি) ১৩ অনুচ্ছেদে দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজের (সুশীল সমাজ, এনজিও, গণমাধ্যম ইত্যাদি) অংশগ্রহণ এবং তথ্যপ্রাপ্তি ও রিপোর্টিংয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তৃতীয়ত, সরকার অনুমোদিত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ২০১২-এ নাগরিকদের দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। চতুর্থত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো (এসডিজি) দুর্নীতি ও ঘুষ ব্যাপক হারে হ্রাস করা এবং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও নাগরিকের অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে (লক্ষ্য ১৬)। পঞ্চমত, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালে সরকারি সেবা প্রদানে গণশুনানি একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
গণশুনানির উদ্দেশ্য: সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকের অভিযোগ সরাসরি শুনে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি সরকারি দপ্তরে নাগরিক সনদের ভিত্তিতে নাগরিকদের প্রদেয় সেবার মান উন্নত করা।
গণশুনানির তাত্ত্বিক কাঠামো: বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০০৪-এ বর্ণিত সামাজিক দায়বদ্ধতাকাঠামো গণশুনানির তাত্ত্বিক কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে নাগরিকেরা মূলত নির্বাচনপদ্ধতির মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করেন (নাগরিকের কণ্ঠস্বর) এবং নীতিনির্ধারকেরা নীতি/বিধি প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মাধ্যমে সেবা প্রদানকারীকে নাগরিকের কাছে সরাসরি দায়বদ্ধ করা যায়।
গণশুনানির আইনগত কাঠামো: সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ (২) এ বলা হয়: ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো হলো: দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা (ধারা ১৭ চ); এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচিত অন্য যেকোনো কার্য সম্পাদন করা (ধারা ১৭ ট)।
গণশুনানি কার্যক্রম: দুর্নীতি দমন কমিশন মনে করে, দেশের সাধারণ মানুষকে ক্ষমতায়িত করার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধের কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে গণশুনানি অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। এই বহুপক্ষীয় সভায় দুর্নীতির উৎস চিহ্নিতকরণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে অনুসন্ধানমূলক আলোচনা করা হয় এবং সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায় বের করার প্রয়াস নেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসে জারি করা অফিস স্মারক অনুযায়ী কমিশন গণশুনানি পরিচালনা করছে। ২০১৪ সালের ১ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা অফিস স্মারক অনুযায়ী গণশুনানি গ্রহণের কতিপয় ব্যবস্থা হলো:
১. সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে অফিস চলাকালে গণশুনানি গ্রহণ। ২. লিখিত বা মৌখিক উভয় প্রকার অভিযোগ শুনানির জন্য গ্রহণ। ৩. অভিযোগের নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত প্রদান, সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ এবং ফলাফল সেবাপ্রত্যাশীকে অবহিতকরণ। ৪. সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ-সংক্রান্ত রেজিস্টার সংরক্ষণ; এবং ৫. গণশুনানি-সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্ধারিত ছকে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে উপজেলা কার্যালয় থেকে জেলা কার্যালয় এবং জেলা কার্যালয় কর্তৃক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগে প্রেরণ।
নাগরিকের জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রের এ দায়িত্ব পালনে গণশুনানি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতাপদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে কার্যকর করতে হলে এর নিরবচ্ছিন্ন ফলোআপ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন গণশুনানি কার্যক্রম অনুষ্ঠানের আগে পাঁচটি জেলার (ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর) ১০টি উপজেলায় জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের উদ্যোগে বেইসলাইন সার্ভে পরিচালিত হয়। এ জরিপে দুর্নীতির চিত্র ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণের সচেতনতার অভাবের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়।
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপজেলায় পরীক্ষামূলক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্যায়ে গণশুনানিতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপ্রবণ সরকারি দপ্তর যথা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস স্থান পেয়েছে। ধারণার ওপর নয় বরং দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার আলোকে নাগরিকেরা গণশুনানিতে অংশ নেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঞ্চালনায় পরিচালিত গণশুনানি আয়োজনে ও অংশগ্রহণকারী নির্বাচনে দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটিসহ (সনাক) গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গণশুনানি থেকে প্রত্যাশা: ১. সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ২. সেবা-সংক্রান্ত নাগরিকদের সমস্যা সমাধানকল্পে তাদের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা। ৩. সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকের অভিযোগ সরাসরি শ্রবণের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা। ৪. সেবা প্রদানের পদ্ধতির উন্নয়ন করা; এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে কার্যকর নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
নাগরিকের জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রের এ দায়িত্ব পালনে গণশুনানি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে কার্যকর করতে হলে এর নিরবচ্ছিন্ন ফলোআপ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিয়মিত গণশুনানি পরিচালনা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন গণশুনানিতে গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করা। তাহলে গণশুনানি কর্মসূচি ফলপ্রসূ হবে।
ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ: কমিশনার (অনুসন্ধান), দুর্নীতি দমন কমিশন।
No comments