অন্তিম শয়ানে দুই মহীরুহ
মাটি ও মানুষের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তার চিত্রসাধনায় ফুটে উঠেছিল বাংলাদেশের রূপকল্প। শেষ কথা শুনতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই এ মহান চিত্র জাদুকরকে বিদায় জানালো বাংলাদেশের মানুষ। গতকাল শহীদ মিনারে নানা মত আর পথের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান বরেণ্য এই শিল্পীর প্রতি। সুধী আর বিদগ্ধজনেরা স্মরণ করেছেন তার বর্ণময় জীবনের নানা অধ্যায়ের। পরে জানাযা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। যেন মাটির ঘরেই ঠাঁই নিলেন মাটির মানুষ কাইয়ুম চৌধুরী। রোববার রাতে আর্মি স্টেডিয়ামে সংগীত উৎসবে হঠাৎ মঞ্চ থেকে পড়ে যান কাইয়ুম চৌধুরী। কিছুক্ষণ পরেই জানা যায়, এ পৃথিবীর মায়া সাঙ্গ করেছেন এই চিত্রসাধক। কাইয়ুম চৌধুরীর মতোই আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীকে। শনিবার আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রবীণ এ সাংবাদিক। সাংবাদিকতার পরিচয় ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক হিসেবেই যিনি খ্যাতিমান হয়ে উঠেছিলেন। গতকাল প্রিয় মানুষ জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীকে চোখের জলে বিদায় জানান তার সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা। বনানী মসজিদে প্রথম ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার প্রতি সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। সন্ধ্যায় আজিমপুর নতুন কবরস্থানে মায়ের কবরে তাকে সমাহিত করা হয়।
শোকে-শ্রদ্ধায় প্রিয় শিল্পীকে বিদায়
শোকাহত ও অশ্রুসিক্ত জনতার বিনম্র শ্রদ্ধায় বিদায় নিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। গতকাল বাদ আসর তাকে আজিমপুর গোরস্থানে শ্বশুর খান মোহাম্মদ বদরুদ্দিনের কবরে সমাহিত করা হয়। এর আগে তার সাবেক কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দুপুরে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হলে ঢল নামে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের। শিল্পীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান পর্বের আয়োজন করে। শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হলে প্রথমে ‘প্রথম আলো’র পক্ষ থেকে সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্যরা শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রেসিডেন্টের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন। এছাড়া মরদেহে একে একে শ্রদ্ধা জানান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর একান্ত সচিব শহীদ উল্লাহ ভূঁইয়া, গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর, উদীচীর সভাপতি ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএনপি’র পক্ষে যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সুলতানা কামাল, নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, মহিলা পরিষদের আয়শা খানম, মানবাধিকার নেত্রী মালেকা বেগম, ছড়াকার আখতার হুসেন, বিটিভি’র মহাপরিচালক আবদুল মান্নান, শিল্পী কালিদাস কর্মদাস প্রমুখ। শ্রদ্ধা জানায় আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলন (এ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী), স্বাধীনতা শিক্ষক পরিবার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সাংস্কৃতিক বিকাশ কেন্দ্র, ধরিত্রী বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক সমিতি, নাট্যদল আরণ্যক, আবৃত্তি পরিষদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ প্রভৃতি সংগঠনও। শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বের এক ফাঁকে কাইয়ুম চৌধুরীর প্রিয় দু’টি গান ‘সম্মুখে শান্তি পারাবার ও অল্প লইয়া থাকি সুখে’ পরিবেশন করে ছায়ানট ও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা। এরপর পিতার কথা বলতে এসে জাবেদ চৌধুরী বলেন, আমার বাবা শুধু ছবিই আঁকেননি, ছবি আঁকার মধ্যে বাস করে গেছেন। তিনি শুধু আমার বাবা নন এ দেশের বৃহৎ একটি সম্পদ। শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের বক্তব্যের পর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহ তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১টা ৫ মিনিটে চারুকলার গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগে তার মরদেহ নেয়া হলে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চারুকলার বর্তমান ডীন নেসার হোসেন, কালি ও কলমের সম্পাদক আবুল হাসনাত, শিল্পী রফিকুন নবী, নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, অধ্যাপক সমরজিৎ রায়, অধ্যাপক ইউনুস, চারুকলার সাবেক ডীন শিল্পী আবুল বারাক আলভী, নাট্য ব্যক্তিত্ব তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত প্রমুখ। এছাড়া চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও প্রিয় শিক্ষক ও শিল্পীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও। প্রায় আধা ঘণ্টা প্রিয় কর্মস্থলে রাখার পর ১১টা ৩৫ মিনিটে কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহ শহীদ মিনারের উদ্দেশে নিয়ে আসা হয়। ১১টা ৪৫ মিনিটে মরদেহ শহীদ মিনারে পৌঁছায়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিশিষ্ট এ তৈলচিত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে বাদ যোহর জানাযা হয়। সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ঢাবি ভিসি আআমস অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকসহ বিশিষ্টজনরা। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার আজিমপুরের বাসভবনে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর স্থানীয় ছাপড়া মসজিদে দ্বিতীয় ও শেষ নামাজে জানাজা হয়। এরপর সমাহিত করতে নিয়ে যাওয়া হয় আজিমপুর গোরস্থানে। সেখানে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে শ্বশুর খান মোহাম্মদ বদরুদ্দিনের কবরে সমাহিত করা হয় তাকে।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমরা একজন শুদ্ধ মানুষকে হারালাম। পরিণত বয়সে তার মৃত্যু হলেও এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তার শিল্পকর্মের স্বাতন্ত্র্যতা এতই উজ্জ্বল যে, একজন শিল্পানুরাগী মাত্রই কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পকর্ম আলাদা করে বলতে পারেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক গভীর। সুতরাং তার মৃত্যু নেই। কাইয়ুম চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সঙ্গী শিল্পী হাসেম খান বলেন, তিনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আমরা অনেক দিন একসঙ্গে কাজ করেছি। যতবার দেখা হয়েছে ততবারই বিস্ময়ের সঙ্গে তাকে দেখেছি যে, একটা মানুষ এই বয়সেও কিভাবে এত নিষ্ঠাবান হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, জীবনের শেষ যে বক্তব্যটা তিনি দিলেন, তাতে ছিল দেশের সংগীত, শিল্পকর্ম তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানান দিক। একজন শিল্পী হতে হলে যে সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে হয়, সে বিষয়েও তিনি আমাদের ওয়াকিবহাল করলেন। আমি দৃঢ়প্রত্যয়ে বলতে চাই, কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু নেই। চারুকলা অনুষদের ডীন শিল্পী আবুল বারাক আলভী বলেন, কাইয়ুম চৌধুরীর ভেতরে শিল্পের নানান দিকে বিচরণ ছিল। প্রচ্ছদ, ছবি আঁকা, লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবাধ বিচরণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি এ দেশের শিল্পাঙ্গনকেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। কাইয়ুম চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী বলেন, তিনি চিত্রশিল্পের পাশাপাশি সঙ্গীতাঙ্গনকেও প্রচ- ভালবাসতেন আর সে কথা বলতে গিয়েই তিনি মারা গেলেন। আমি মনে করি, এ মৃত্যু শান্তির মৃত্যু। শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, শিল্পের সব রকম পূর্ণতা আমি তার মধ্যে দেখেছি। বাংলাদেশের চিত্রকলায় তার ভূমিকা অসাধারণ। তার মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারছি না। এদিকে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু ঘোষণার পর আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের রাতভর উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব না চালিয়ে বন্ধ রাখা যেতো বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তিনি মনে করেন, এতে অনুষ্ঠানে আগত দর্শকরা হতাশ হলেও কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হতো। শহীদ মিনারে মরদেহে শ্রদ্ধা জানানোর আগে তিনি এ কথা বলেন। কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু ঘোষণার পর এ উৎসব ভোর পর্যন্ত অব্যাহত রাখাটা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রকম একটি বড় আয়োজনে কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রত্যাশিত ছিল না। মঞ্চ থেকে মৃত্যুর সংবাদটি যখন দেয়া হলো তখন আগত দর্শকদের হতাশ করে কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে রাখা যেতো। তিনি বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন বিখ্যাত শিল্পী জয়নুল আবেদীনের ছাত্র। তার চিত্রকর্মই কথা বলতো। তিনি কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তা তার ছবি দেখেই বোঝা যেতো। এদেশের শিল্পকলার মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন।
চিরনিদ্রায় জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীকে গতকাল সমাহিত করা হয়েছে। বনানী মসজিদ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সব শ্রেণী পেশা ও মতের মানুষ। রাজনীতিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় চিরবিদায় জানানো হয় দেশবরেণ্য এই সাংবাদিককে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ডেইলী স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এমএ আজিজ, সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আবদুল হাই শিকদার, সাংবাদিক নেতা রহুল আমিন গাজী, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সঞ্জীব চক্রবর্তী প্রমুখ জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জানাজার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর একমাত্র পুত্র নাবিল আহমেদ চৌধুরী সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানান। এর আগে বাদ জোহর বনানী জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভান্যুধায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। তার দীর্ঘ জীবনের কর্মস্থল বাসস, প্রেস ক্লাব পরিবার, ডিক্যাব, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসসসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠন এ সময় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। জানাজা শেষে তার মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
এদিকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন তার সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা। এ সময় সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার এম জমীর বলেন, জগ্লুল আহ্মেদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ৪২ বছর ধরে। এই প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণেও আমরা অনেক আড্ডা দিয়েছি। সময় অসময়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতি ও রাজনীতি নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও লেখালেখি করেছি। সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ব্যাপার। আমি ৭টি দেশের রাষ্টদূত ছিলাম ৬২ দেশ ভ্রমণ করেছি, কিন্তু বাংলাদেশের মতো মানুষকে যানবাহন থেকে হঠাৎ করে নামিয়ে দিতে কোথাও দেখিনি। বিদেশে বাংলাদেশের মানুষ সব চাকরি পায় কিন্তু ড্রাইভারের চাকরি পায় না কারণ, এদেশের মানুষের আইনশৃঙ্খলা বোধ নেই। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জগ্লুল আহমেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন জগ্লুল আহমেদের সঙ্গে আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বন্ধুত্ব ছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় তার এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। ড্রাইভারদের দোষ দিয়ে সবাই সড়ক দুঘর্টনার সমাধান করে দিতে চান মন্তব্য করে তিনি বলেন এর জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সড়ক অবকাঠামো ও বিভিন্ন মহলের দুর্নীতিও দায়ী। বর্তমানে আমরা নৈরাজ্য ও অপরাধপ্রবণ সমাজে বাস করছি মন্তব্য করে তিনি বলেন ঢাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখন হাসপাতাল গড়ে উঠেছে অথচ সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই। হাসাপাতালগুলো রোগীদের আটকিয়ে বাণিজ্য করছে। লুটপাটের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। জগ্লুল আহ্মেদের মৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতের বড় ক্ষতি হলো। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বাসসের মতো নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে থেকেও জগ্লুল ভাই আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জগ্লুল আহ্মেদের মৃত্যুকে হত্যাকা- অভিহিত করে তিনি বলেন সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে গণমাধ্যম তার পক্ষে কথা বলে। কিন্তু মন্ত্রী ঘাতকের পক্ষ কথা বলেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে কেউ না থাকলেও ঘাতকের পক্ষে মন্ত্রী আছেন। আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বলেন জগ্লুল ভাইয়ের মৃত্যু যে হত্যাকা- এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঠেকাতে প্রচ- সামাজিক চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন জগ্লুল আহ্মেদের মৃত্যুতে দেশ উঁচু মানের সাংবাদিক হারালো।
সাংবাদিক নেতা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন জগ্লুল আহ্মেদ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধু ছিল। তার আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ আর শোনা যাবে না। পড়া যাবে না। সড়ক পথে বিশৃঙ্খলার জন্য জগ্লুল আহ্মেদের মতো প্রতিভাবানরা মারা যাচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন যে প্রক্রিয়ায় চালকদের লাইন্সেস দেয়া হচ্ছে তার নিন্দা জানাই। গরু ছাগল চিনলে লাইন্সেস দেয়ার কথা যারা বলছেন তাদেরও বিচার দাবি করেন এই সাংবাদিক নেতা। আগামী ৫ই ডিসেম্বর শুক্রবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে মরহুমের কুলখানি হবে।
শোকে বিহ্বল পিয়াইম গ্রাম
রাজীব দেব রায় রাজু, মাধবপুর (হবিগঞ্জ) থেকে জানান, প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জের মাধবপুরের পিয়াইম গ্রামবাসী। এ গ্রামেই জন্মেছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও প্রথিতযশা সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী। শনিবার রাতেই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে তার মৃত্যু খবর। জগলুল আহমেদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে মুষড়ে পড়েন গ্রামের মানুষ। ঢাকায় বেড়ে উঠলেও এলাকার প্রতি ছিল তার প্রচ- টান। সুযোগ পেলেই ছুটে আসতেন নিজ বাড়িতে। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় উৎসাহ যোগাতে চালু করেন নাসির উদ্দিন, জমশেদ উদ্দিন, জাহেদ উদ্দিন ট্রাস্ট। এই ট্রাস্ট থেকে প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় কৃতী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হয়। সরজমিন পিয়াইম গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া। পথে দেখা মিলে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র হাসু মিয়ার সঙ্গে। চৌধুরী বাড়িতে যাবো বলতেই দৌড়ে এসে রাস্তা দেখিয়ে দেয়। কথা হয় জগলুল আহমেদের বাল্যবন্ধু সাজু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, জগলুল আমার খুব প্রিয় মানুষ। সব সময় হাসি-খুশি থাকতো। ৩-৪ বছর পর পর এলাকায় আসতো। এসেই সবার খোঁজখবর নিতো। সময় স্বল্পতার কারণে আসতে না পারলেও গ্রামের প্রতি ছিল প্রচ- টান। ঢাকার বাসায় গেলে ছাড়তো না। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেয়ার জন্য ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু করেন শিক্ষা ট্রাস্ট। তার পিতা ও পিতৃব্যদের নামে এই ট্রাস্ট করা হয়। জগলুল আহমেদের ভাইপো জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য আহাদ ইউ চৌধূরী শাহীন বলেন, চাচা বাড়িতে খুব কম আসতেন। তবে সময় ও সুযোগ পেলে ঠিকই নাড়ির টানে এলাকায় চলে আসতেন। পাশের ঘরটি দেখিয়ে বলেন, বাড়িতে এলে এখানেই তিনি থাকতেন। দূরে থাকলেও সব সময় এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিতেন। ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, উনি ছিলেন এলাকার উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগাতে উনার পিতা ও পিতৃব্যদের নামে একটি ট্রাস্ট করে বৃত্তি দিতেন। জগলুল আহমেদের ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ বলেন, তিনি খুব সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। সবসময় এলাকার খোঁজখবর নিতেন। এলাকার কম এলেও নিজ গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতেন তিনি।
শোকে-শ্রদ্ধায় প্রিয় শিল্পীকে বিদায়
শোকাহত ও অশ্রুসিক্ত জনতার বিনম্র শ্রদ্ধায় বিদায় নিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। গতকাল বাদ আসর তাকে আজিমপুর গোরস্থানে শ্বশুর খান মোহাম্মদ বদরুদ্দিনের কবরে সমাহিত করা হয়। এর আগে তার সাবেক কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দুপুরে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হলে ঢল নামে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের। শিল্পীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান পর্বের আয়োজন করে। শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হলে প্রথমে ‘প্রথম আলো’র পক্ষ থেকে সম্পাদক মতিউর রহমানসহ অন্যরা শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রেসিডেন্টের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন। এছাড়া মরদেহে একে একে শ্রদ্ধা জানান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর একান্ত সচিব শহীদ উল্লাহ ভূঁইয়া, গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর, উদীচীর সভাপতি ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএনপি’র পক্ষে যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সুলতানা কামাল, নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, মহিলা পরিষদের আয়শা খানম, মানবাধিকার নেত্রী মালেকা বেগম, ছড়াকার আখতার হুসেন, বিটিভি’র মহাপরিচালক আবদুল মান্নান, শিল্পী কালিদাস কর্মদাস প্রমুখ। শ্রদ্ধা জানায় আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলন (এ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী), স্বাধীনতা শিক্ষক পরিবার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সাংস্কৃতিক বিকাশ কেন্দ্র, ধরিত্রী বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশক সমিতি, নাট্যদল আরণ্যক, আবৃত্তি পরিষদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ প্রভৃতি সংগঠনও। শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বের এক ফাঁকে কাইয়ুম চৌধুরীর প্রিয় দু’টি গান ‘সম্মুখে শান্তি পারাবার ও অল্প লইয়া থাকি সুখে’ পরিবেশন করে ছায়ানট ও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা। এরপর পিতার কথা বলতে এসে জাবেদ চৌধুরী বলেন, আমার বাবা শুধু ছবিই আঁকেননি, ছবি আঁকার মধ্যে বাস করে গেছেন। তিনি শুধু আমার বাবা নন এ দেশের বৃহৎ একটি সম্পদ। শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের বক্তব্যের পর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহ তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১টা ৫ মিনিটে চারুকলার গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগে তার মরদেহ নেয়া হলে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চারুকলার বর্তমান ডীন নেসার হোসেন, কালি ও কলমের সম্পাদক আবুল হাসনাত, শিল্পী রফিকুন নবী, নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, অধ্যাপক সমরজিৎ রায়, অধ্যাপক ইউনুস, চারুকলার সাবেক ডীন শিল্পী আবুল বারাক আলভী, নাট্য ব্যক্তিত্ব তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত প্রমুখ। এছাড়া চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও প্রিয় শিক্ষক ও শিল্পীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও। প্রায় আধা ঘণ্টা প্রিয় কর্মস্থলে রাখার পর ১১টা ৩৫ মিনিটে কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহ শহীদ মিনারের উদ্দেশে নিয়ে আসা হয়। ১১টা ৪৫ মিনিটে মরদেহ শহীদ মিনারে পৌঁছায়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিশিষ্ট এ তৈলচিত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে বাদ যোহর জানাযা হয়। সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ঢাবি ভিসি আআমস অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকসহ বিশিষ্টজনরা। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার আজিমপুরের বাসভবনে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর স্থানীয় ছাপড়া মসজিদে দ্বিতীয় ও শেষ নামাজে জানাজা হয়। এরপর সমাহিত করতে নিয়ে যাওয়া হয় আজিমপুর গোরস্থানে। সেখানে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে শ্বশুর খান মোহাম্মদ বদরুদ্দিনের কবরে সমাহিত করা হয় তাকে।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমরা একজন শুদ্ধ মানুষকে হারালাম। পরিণত বয়সে তার মৃত্যু হলেও এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তার শিল্পকর্মের স্বাতন্ত্র্যতা এতই উজ্জ্বল যে, একজন শিল্পানুরাগী মাত্রই কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পকর্ম আলাদা করে বলতে পারেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক গভীর। সুতরাং তার মৃত্যু নেই। কাইয়ুম চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সঙ্গী শিল্পী হাসেম খান বলেন, তিনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আমরা অনেক দিন একসঙ্গে কাজ করেছি। যতবার দেখা হয়েছে ততবারই বিস্ময়ের সঙ্গে তাকে দেখেছি যে, একটা মানুষ এই বয়সেও কিভাবে এত নিষ্ঠাবান হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, জীবনের শেষ যে বক্তব্যটা তিনি দিলেন, তাতে ছিল দেশের সংগীত, শিল্পকর্ম তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানান দিক। একজন শিল্পী হতে হলে যে সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে হয়, সে বিষয়েও তিনি আমাদের ওয়াকিবহাল করলেন। আমি দৃঢ়প্রত্যয়ে বলতে চাই, কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু নেই। চারুকলা অনুষদের ডীন শিল্পী আবুল বারাক আলভী বলেন, কাইয়ুম চৌধুরীর ভেতরে শিল্পের নানান দিকে বিচরণ ছিল। প্রচ্ছদ, ছবি আঁকা, লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবাধ বিচরণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি এ দেশের শিল্পাঙ্গনকেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। কাইয়ুম চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী বলেন, তিনি চিত্রশিল্পের পাশাপাশি সঙ্গীতাঙ্গনকেও প্রচ- ভালবাসতেন আর সে কথা বলতে গিয়েই তিনি মারা গেলেন। আমি মনে করি, এ মৃত্যু শান্তির মৃত্যু। শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, শিল্পের সব রকম পূর্ণতা আমি তার মধ্যে দেখেছি। বাংলাদেশের চিত্রকলায় তার ভূমিকা অসাধারণ। তার মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারছি না। এদিকে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু ঘোষণার পর আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের রাতভর উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব না চালিয়ে বন্ধ রাখা যেতো বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তিনি মনে করেন, এতে অনুষ্ঠানে আগত দর্শকরা হতাশ হলেও কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হতো। শহীদ মিনারে মরদেহে শ্রদ্ধা জানানোর আগে তিনি এ কথা বলেন। কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু ঘোষণার পর এ উৎসব ভোর পর্যন্ত অব্যাহত রাখাটা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রকম একটি বড় আয়োজনে কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রত্যাশিত ছিল না। মঞ্চ থেকে মৃত্যুর সংবাদটি যখন দেয়া হলো তখন আগত দর্শকদের হতাশ করে কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে রাখা যেতো। তিনি বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন বিখ্যাত শিল্পী জয়নুল আবেদীনের ছাত্র। তার চিত্রকর্মই কথা বলতো। তিনি কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তা তার ছবি দেখেই বোঝা যেতো। এদেশের শিল্পকলার মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন।
চিরনিদ্রায় জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীকে গতকাল সমাহিত করা হয়েছে। বনানী মসজিদ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সব শ্রেণী পেশা ও মতের মানুষ। রাজনীতিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় চিরবিদায় জানানো হয় দেশবরেণ্য এই সাংবাদিককে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ডেইলী স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এমএ আজিজ, সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আবদুল হাই শিকদার, সাংবাদিক নেতা রহুল আমিন গাজী, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সঞ্জীব চক্রবর্তী প্রমুখ জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জানাজার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীর একমাত্র পুত্র নাবিল আহমেদ চৌধুরী সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানান। এর আগে বাদ জোহর বনানী জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভান্যুধায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। তার দীর্ঘ জীবনের কর্মস্থল বাসস, প্রেস ক্লাব পরিবার, ডিক্যাব, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসসসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠন এ সময় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। জানাজা শেষে তার মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
এদিকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিক জগ্লুল আহ্মেদের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন তার সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা। এ সময় সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার এম জমীর বলেন, জগ্লুল আহ্মেদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ৪২ বছর ধরে। এই প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণেও আমরা অনেক আড্ডা দিয়েছি। সময় অসময়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতি ও রাজনীতি নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও লেখালেখি করেছি। সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি দ্বিপক্ষীয় ব্যাপার। আমি ৭টি দেশের রাষ্টদূত ছিলাম ৬২ দেশ ভ্রমণ করেছি, কিন্তু বাংলাদেশের মতো মানুষকে যানবাহন থেকে হঠাৎ করে নামিয়ে দিতে কোথাও দেখিনি। বিদেশে বাংলাদেশের মানুষ সব চাকরি পায় কিন্তু ড্রাইভারের চাকরি পায় না কারণ, এদেশের মানুষের আইনশৃঙ্খলা বোধ নেই। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জগ্লুল আহমেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন জগ্লুল আহমেদের সঙ্গে আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বন্ধুত্ব ছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় তার এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। ড্রাইভারদের দোষ দিয়ে সবাই সড়ক দুঘর্টনার সমাধান করে দিতে চান মন্তব্য করে তিনি বলেন এর জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সড়ক অবকাঠামো ও বিভিন্ন মহলের দুর্নীতিও দায়ী। বর্তমানে আমরা নৈরাজ্য ও অপরাধপ্রবণ সমাজে বাস করছি মন্তব্য করে তিনি বলেন ঢাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখন হাসপাতাল গড়ে উঠেছে অথচ সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই। হাসাপাতালগুলো রোগীদের আটকিয়ে বাণিজ্য করছে। লুটপাটের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। জগ্লুল আহ্মেদের মৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতের বড় ক্ষতি হলো। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বাসসের মতো নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে থেকেও জগ্লুল ভাই আদর্শ সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জগ্লুল আহ্মেদের মৃত্যুকে হত্যাকা- অভিহিত করে তিনি বলেন সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে গণমাধ্যম তার পক্ষে কথা বলে। কিন্তু মন্ত্রী ঘাতকের পক্ষ কথা বলেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে কেউ না থাকলেও ঘাতকের পক্ষে মন্ত্রী আছেন। আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বলেন জগ্লুল ভাইয়ের মৃত্যু যে হত্যাকা- এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঠেকাতে প্রচ- সামাজিক চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন জগ্লুল আহ্মেদের মৃত্যুতে দেশ উঁচু মানের সাংবাদিক হারালো।
সাংবাদিক নেতা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন জগ্লুল আহ্মেদ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বন্ধু ছিল। তার আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ আর শোনা যাবে না। পড়া যাবে না। সড়ক পথে বিশৃঙ্খলার জন্য জগ্লুল আহ্মেদের মতো প্রতিভাবানরা মারা যাচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন যে প্রক্রিয়ায় চালকদের লাইন্সেস দেয়া হচ্ছে তার নিন্দা জানাই। গরু ছাগল চিনলে লাইন্সেস দেয়ার কথা যারা বলছেন তাদেরও বিচার দাবি করেন এই সাংবাদিক নেতা। আগামী ৫ই ডিসেম্বর শুক্রবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে মরহুমের কুলখানি হবে।
শোকে বিহ্বল পিয়াইম গ্রাম
রাজীব দেব রায় রাজু, মাধবপুর (হবিগঞ্জ) থেকে জানান, প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জের মাধবপুরের পিয়াইম গ্রামবাসী। এ গ্রামেই জন্মেছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও প্রথিতযশা সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী। শনিবার রাতেই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে তার মৃত্যু খবর। জগলুল আহমেদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে মুষড়ে পড়েন গ্রামের মানুষ। ঢাকায় বেড়ে উঠলেও এলাকার প্রতি ছিল তার প্রচ- টান। সুযোগ পেলেই ছুটে আসতেন নিজ বাড়িতে। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় উৎসাহ যোগাতে চালু করেন নাসির উদ্দিন, জমশেদ উদ্দিন, জাহেদ উদ্দিন ট্রাস্ট। এই ট্রাস্ট থেকে প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় কৃতী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হয়। সরজমিন পিয়াইম গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া। পথে দেখা মিলে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র হাসু মিয়ার সঙ্গে। চৌধুরী বাড়িতে যাবো বলতেই দৌড়ে এসে রাস্তা দেখিয়ে দেয়। কথা হয় জগলুল আহমেদের বাল্যবন্ধু সাজু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, জগলুল আমার খুব প্রিয় মানুষ। সব সময় হাসি-খুশি থাকতো। ৩-৪ বছর পর পর এলাকায় আসতো। এসেই সবার খোঁজখবর নিতো। সময় স্বল্পতার কারণে আসতে না পারলেও গ্রামের প্রতি ছিল প্রচ- টান। ঢাকার বাসায় গেলে ছাড়তো না। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেয়ার জন্য ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু করেন শিক্ষা ট্রাস্ট। তার পিতা ও পিতৃব্যদের নামে এই ট্রাস্ট করা হয়। জগলুল আহমেদের ভাইপো জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য আহাদ ইউ চৌধূরী শাহীন বলেন, চাচা বাড়িতে খুব কম আসতেন। তবে সময় ও সুযোগ পেলে ঠিকই নাড়ির টানে এলাকায় চলে আসতেন। পাশের ঘরটি দেখিয়ে বলেন, বাড়িতে এলে এখানেই তিনি থাকতেন। দূরে থাকলেও সব সময় এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিতেন। ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, উনি ছিলেন এলাকার উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগাতে উনার পিতা ও পিতৃব্যদের নামে একটি ট্রাস্ট করে বৃত্তি দিতেন। জগলুল আহমেদের ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী কাসেদ বলেন, তিনি খুব সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। সবসময় এলাকার খোঁজখবর নিতেন। এলাকার কম এলেও নিজ গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতেন তিনি।
No comments