দ্রুত সীমান্ত চুক্তির তাগিদ লোকসভা পার্লামেন্টারি কমিটির
বিলম্ব না করে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে ভারতের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি। তারা বলেছে এ চুক্তিতে রয়েছে জাতীয় স্বার্থ। এতে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। তাই বিলম্ব না করে এ চুক্তি উত্থাপন করতে হবে। এ বিষয়ে কমিটি গতকাল রিপোর্ট জমা দিয়েছে লোকসভায়। এ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন কংগ্রেসের সাবেক মন্ত্রী শশী ঠারুর। তারা সরকারকে যেসব ছিটমহল বিনিময় করা হবে তার ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত রাখতে বলেছে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। কিন্তু এখন তিনি সুর পাল্টে ফেলেছেন। সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তার সরকার কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে তিনি একটি ঝুঁকিপূর্ণ সংকীর্ণ পথে হাঁটার চেষ্টা করেছেন। এমন মন্তব্য করে গতকাল বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কেন তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে এসে সীমান্ত চুক্তির পক্ষে গেলেন তা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের মধ্যভাগে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে তিনি দলের জন্য আরও ভাল ফল বয়ে আনতে চান। এ জন্য এখন দলের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থের কথা বলছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যে সড়কপথে অনুপ্রবেশ ঘটে তার সবগুলো বন্ধ করে দেবেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি জাতীয় স্বার্থকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে তিনি আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী জনসভাগুলোতে বাংলাদেশবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সে বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন। যদি তিনি এ প্রতিশ্রুতি থেকেও ফিরে যান তাহলে সেটা হতে পারে তার জন্য এক রকম আত্মসমর্পণ। তাই তিনি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ ঠেকানোর কথা ঘোষণা করেছেন। রোববার তিনি আসামের গুয়াহাটিতে বিজেপির নেতাকর্মীদের নিয়ে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। তাতে উঠে আসে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির প্রসঙ্গ। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে এ চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল আসামের স্থানীয় ইউনিটের বিজেপি। মোদি তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, যদি এই চুক্তি কার্যকর হয় তাহলে তাতে সুবিধা ভোগ করবে ভারত। তাদেরকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি মোদি আসামে বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীর সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। এ ইস্যুতে তিনি আসামের বিজেপি নেতাদের আয়ত্তে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে তার দল আসামে কংগ্রেস ও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ অনুমোদন করেছে বলে তাদেরকে ঘায়েল করছে। সব মিলিয়ে তিনি সব কিছুর মধ্যে সমতা বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে রাজ্যসভার ভোট। সেই ভোটে বিজেপি চমক দেখানোর চেষ্টা করছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তার সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই চুক্তি দু’দেশের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে এ চুক্তি অনুমোদন করে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। কিন্তু ভারতে এ নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। এর ধারাবাহিকতায় এ ইস্যুটির সমাধান প্রলম্বিত হয়। অবশেষে ২০১১ সালে ভারতের রাজ্যসভায় এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব তোলা হয়। এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে। ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ পাবে ১১১টি ছিটমহল। এর আয়তন ১৭,১৬০ একর। অন্যদিকে বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারত পাবে ৫৭টি ছিটমহল। এর আয়তন ৭১১০ একর। এসব ছিটমহল আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে অবস্থিত। এই ছিটমহল বিনিময় অসম হবে এমন অভিযোগ তুলে তৃণমূল ও আসাম গণপরিষদ ইস্যুটি নিয়ে রাজনীতি করে। ওই সময় আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি এই বিলের তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। রোববার নরেন্দ্র মোদি পরিষ্কার করে বললেন- তিনি সংবিধানের ১১৯তম সংশোধনী পাস করাতে যাচ্ছেন। আসাম গণপরিষদ ও তৃণমূল এ ইস্যুটিকে আবার আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থের আত্মসমর্পণ হিসেবে এর বিরোধিতা করতে পারে। ওদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন আসাম সহ ভারতে বাংলাদেশী অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তখন কাছাড় ও মিজোরাম ফ্রন্টের বিএসএফ ইন্সপেক্টর জেনারেল ডি কে উপাধ্যায় বললেন, আসামের কাছাড় জেলায় বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। একই ভাবে সেখানে জিহাদি কর্মকা-েরও কোন খবর নেই তাদের কাছে। গতকাল এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে কাছাড়ের রয়েছে ১২৮ কিলোমিটার ও মিজোরামের ৩৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত।
No comments