বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য উন্নয়ন-সাহায্য বিতর্ক by আসজাদুল কিবরিয়া
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পক্ষে ও বিপক্ষে যা-ই যুক্তি থাকুক, বাস্তবতা হলো বিদেশি সাহায্য বাংলাদেশ গ্রহণ করছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের আর্থিক পরিমাণ অনেক কমে এসেছে। তবে কৌশলগত উন্নয়ন সহায়তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি।
সে কারণেই বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামে (বিডিএফ) আর্থিক সাহায্যের পরিমাণগত প্রতিশ্রুতির বিষয়টি অনেক আগেই বাদ পড়েছে। সরকার আর এখন নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতির জন্য উদ্বিগ্ন নয়। অন্যদিকে কথিত উন্নয়ন সহযোগীরাও তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য নির্দিষ্ট না করে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে আগ্রহী।
এই বাস্তবতার পাশাপাশি এবার বিডিএফের জন্য বৈশ্বিক প্রেক্ষিতটিও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণটি হলো বিশ্বমন্দা। ২০০৮ সালের শেষ ভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে আর্থিক সংকট দেখা দেয়, তার জের ধরে বিশ্বমন্দা তৈরি হয়। যদিও বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলো এখন মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
আবার আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে থাকা এবং মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ সৃষ্টি হওয়ার মধ্য দিয়ে এটাও প্রতিফলিত হচ্ছে যে বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ছে। তার মানে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য বিশ্বমন্দার বিষয়টি দুভাবে দেখার অবকাশ আছে। একটি হলো, মন্দায় রপ্তানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। অন্যটি হলো, মন্দা কাটতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে আমদানি ব্যয়বহুল হওয়ার আশঙ্কা।
কিন্তু এ দুই সীমিত পরিসর ছাড়িয়ে যেটা আরও বড় করে দেখার সুযোগ আছে, সেটা হলো বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক সহায়তার পটপরিবর্তন। মন্দার অজুহাতে সহায়তা কমানো বা অন্তত না বাড়ানোর যে প্রয়াস উন্নত দেশগুলোর তরফ থেকে রয়েছে, তা বাংলাদেশের বিদেশি সাহায্য সমীকরণে সংগত কারণেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিডিএফকে আমরা সাহায্যের চাহিদা ও জোগানের সমঝোতা করার কাঠামোয় বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে।
বাংলাদেশকে যে সহায়তা দেওয়া হবে বা হতে পারে, তা অর্থনীতির পরিভাষায় বাড়তি সম্পদের স্থানান্তর। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ধনী বা উন্নত দেশগুলো যে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত সম্পদের অধিকারী হয়, তার কিছু সাহায্যের নামে পুনর্বণ্টন হয় অভাবি বা গরিব দেশগুলোতে।
সুতরাং, উদ্বৃত্ত সম্পদ যদি কম হয়, তাহলে তা স্থানান্তরের সুযোগও কমে যায়। ফলে যাদের প্রয়োজন, তারা তা পায় না। যা পায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিশ্বমন্দার জের ধরে উদ্বৃত্ত সম্পদের ঘাটতির বিষয়টি উন্নত দেশগুলো সম্প্রতি বিভিন্নভাবেই বলে আসছে। বিডিএফেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এটা বলা হবে।
প্রশ্ন হলো, এ দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত? একটু আগেই বিশ্বপণ্যের বাজারের দাম বাড়ার যে কথা বলা হয়েছে, তাতে কিন্তু এটা বোঝা যায় যে আবারও বাড়তি সম্পদ সৃষ্টির সুযোগটা চলে এসেছে। আর তাই সহায়তা সম্প্রসারণে যারা রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করবে, তা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরির একটা কৌশল হিসেবেই আসবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মোটামুটি স্পষ্টভাবেই চাহিদার দিকটি তুলে ধরা হচ্ছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। অর্থাৎ কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কী কী কারণে আমরা সহায়তা চাইছি, তা অনেকটাই স্পষ্ট।
এখানে উল্লেখ্য, সরকার দারিদ্র্য হ্রাসের কৌশলপত্রের (পিআরএসপি) সঙ্গে সংগতি রেখে সহায়তার বিষয়ে আলোচনার টেবিলে বসলেও দ্বিতীয় এই পিআরএসপি কথিত দাতাগোষ্ঠী ও সংস্থার মন জুগিয়ে সেভাবে প্রণীত হয়নি, যেমনটা প্রথমটিতে হয়েছিল।
সুতরাং, চাহিদা উপস্থাপন করলেই যে মেনে নিয়ে তা পূরণের জন্য জোগান দেওয়ার জন্য কথিত উন্নয়ন সহযোগীরা এগিয়ে আসবে, এটা ভাবার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। তাই প্রয়োজন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দরকষাকষির দক্ষতা দেখানো।
মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বৃত্ত সম্পদ স্থানান্তরের তথা সহায়তা দেওয়ার সুযোগ কমে যাওয়ার যুক্তি মেনে নিলেও বাংলাদেশের প্রয়োজন কিন্তু হ্রাস পাবে না। তার মানে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যতটুকু পারা যায় সহায়তা আদায় করা। সে ক্ষেত্রে সমঝোতার কাজটি অন্য মাত্রা পাবে। আর তা হলো, ব্যয়বহুল সাহায্য নেওয়ার চিন্তা।
যেহেতু চূড়ান্ত বিচারে সাহায্য-সহায়তার নির্ণায়ক টাকার অঙ্কেই বিবেচনা করা হয়, সেহেতু তা ঋণ, না অনুদান সেটা গুরুত্বপূর্ণ। অনুদান যখন নানা ধরনের শর্তযুক্ত হয়ে আসে, তখন তাকে ব্যয়বহুল বিবেচনা করা হয়।
আবার অনুদান ও ঋণের মধ্যে ফেরতযোগ্যতার কারণে ঋণকেই ব্যয়বহুল বিবেচনা করা হয। আর ঋণের ক্ষেত্রেও শর্তের বিষয়টি প্রযোজ্য। এর পাশাপাশি চলে আসে সুদের বিষয়টি। যে ঋণে সুদের হার বেশি, সে ঋণ তত বেশি ব্যয়বহুল।
বস্তুত মন্দা-পরবর্তী সময়ে অপ্রতুলতার কারণে যখন সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে অনীহা ভাব দেখানো হচ্ছে, তখন অনুদানের বদলে ঋণ দিতে আগ্রহী হলে তা বাংলাদেশের জন্য ব্যয়বহুল সহায়তা হিসেবেই পরিগণিত হবে। অনিবার্যভাবেই এখানে ঋণের সুদ হার একটি বড় বিবেচ্য বিষয়।
ইতিমধ্যে তুলনামূলক বেশি সুদে বিদেশি ঋণ নেওয়ার একটি ঝোঁক ইদানীং পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা ঋণদানে আগ্রহীদের নজর এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। বিডিএফ বৈঠকের মাধ্যমে ঝোঁক যদি জোরালো হয়ে ওঠে, তাহলে বুঝতে হবে, যারা মন্দার অজুহাতে সহায়তা বাড়াতে কুণ্ঠিত ছিল, তারা বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মন্দার ক্ষতি পূরণের আরেকটি ব্যবস্থা করে নিয়েছে।
চিত্রটি অবশ্য এখনোই পরিষ্কার হবে না। বরং আগামী কয়েক মাসে কোন কোন খাতে কী ধরণের ঋণ-অনুদান চুক্তি হয়, তা জানা গেলে বোঝা যাবে কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছি আমরা। বলা দরকার, অনুদানের বদলে ঋণ বা স্বল্প সুদের বদলে বেশি ঋণে বিষয়টির পেছনে অস্বচ্ছ বা গোপন লেনদেনের একটি বিষয় থেকে যায়।
চিন্তার আরেকটি দিক আছে। সরকার প্রয়োজনগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরলেও কোনো কোনোটিতে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো গুরুত্ব হারাতে পারে। জলবায়ুর অভিঘাতের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি বা অভিযোজনের জন্য সহায়তা চাওয়া একটি উদাহরণ হতে পারে।
এটা ঠিক যে বাংলাদেশের সহায়তার জন্য প্রচারণার ক্ষেত্রে জলবায়ু একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কিন্তু কথিত সাহায্যদাতারা এখনো এ বিষয়ে অর্থবহ ও কার্যকর সহায়তার জন্য মনস্থির করেছে বলে মনে হয় না। তাই এ হাতিয়ার ব্যবহারে সতর্কতাটাই কাম্য।
সর্বোপরি চাহিদা চিহ্নিত করার পর তা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত কতটা নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় থেকেছে, তাও একটু খতিয়ে দেখা দরকার। উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের অনেক প্রয়োজনের সঙ্গেই একমত পোষণ করে। তবে প্রয়োজন মেটানোর পদ্ধতি-প্রক্রিয়ায় তাদের ভাবনা সব সময়ই বাংলাদেশের অনুকূল হয় না। আর প্রয়োজন বা চাহিদা উপস্থাপন যদি তাদের মনমতো করে হয়, তাহলে তা মেটানোর জন্য সহায়তার জোগানও তাদের মতো করে হবে। বাংলাদেশের এখন এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার সময় চলে এসেছে।
সে কারণেই বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামে (বিডিএফ) আর্থিক সাহায্যের পরিমাণগত প্রতিশ্রুতির বিষয়টি অনেক আগেই বাদ পড়েছে। সরকার আর এখন নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতির জন্য উদ্বিগ্ন নয়। অন্যদিকে কথিত উন্নয়ন সহযোগীরাও তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য নির্দিষ্ট না করে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে আগ্রহী।
এই বাস্তবতার পাশাপাশি এবার বিডিএফের জন্য বৈশ্বিক প্রেক্ষিতটিও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণটি হলো বিশ্বমন্দা। ২০০৮ সালের শেষ ভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে আর্থিক সংকট দেখা দেয়, তার জের ধরে বিশ্বমন্দা তৈরি হয়। যদিও বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলো এখন মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
আবার আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে থাকা এবং মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ সৃষ্টি হওয়ার মধ্য দিয়ে এটাও প্রতিফলিত হচ্ছে যে বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ছে। তার মানে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য বিশ্বমন্দার বিষয়টি দুভাবে দেখার অবকাশ আছে। একটি হলো, মন্দায় রপ্তানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। অন্যটি হলো, মন্দা কাটতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে আমদানি ব্যয়বহুল হওয়ার আশঙ্কা।
কিন্তু এ দুই সীমিত পরিসর ছাড়িয়ে যেটা আরও বড় করে দেখার সুযোগ আছে, সেটা হলো বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক সহায়তার পটপরিবর্তন। মন্দার অজুহাতে সহায়তা কমানো বা অন্তত না বাড়ানোর যে প্রয়াস উন্নত দেশগুলোর তরফ থেকে রয়েছে, তা বাংলাদেশের বিদেশি সাহায্য সমীকরণে সংগত কারণেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিডিএফকে আমরা সাহায্যের চাহিদা ও জোগানের সমঝোতা করার কাঠামোয় বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে।
বাংলাদেশকে যে সহায়তা দেওয়া হবে বা হতে পারে, তা অর্থনীতির পরিভাষায় বাড়তি সম্পদের স্থানান্তর। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ধনী বা উন্নত দেশগুলো যে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত সম্পদের অধিকারী হয়, তার কিছু সাহায্যের নামে পুনর্বণ্টন হয় অভাবি বা গরিব দেশগুলোতে।
সুতরাং, উদ্বৃত্ত সম্পদ যদি কম হয়, তাহলে তা স্থানান্তরের সুযোগও কমে যায়। ফলে যাদের প্রয়োজন, তারা তা পায় না। যা পায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিশ্বমন্দার জের ধরে উদ্বৃত্ত সম্পদের ঘাটতির বিষয়টি উন্নত দেশগুলো সম্প্রতি বিভিন্নভাবেই বলে আসছে। বিডিএফেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এটা বলা হবে।
প্রশ্ন হলো, এ দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত? একটু আগেই বিশ্বপণ্যের বাজারের দাম বাড়ার যে কথা বলা হয়েছে, তাতে কিন্তু এটা বোঝা যায় যে আবারও বাড়তি সম্পদ সৃষ্টির সুযোগটা চলে এসেছে। আর তাই সহায়তা সম্প্রসারণে যারা রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করবে, তা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরির একটা কৌশল হিসেবেই আসবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মোটামুটি স্পষ্টভাবেই চাহিদার দিকটি তুলে ধরা হচ্ছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। অর্থাৎ কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কী কী কারণে আমরা সহায়তা চাইছি, তা অনেকটাই স্পষ্ট।
এখানে উল্লেখ্য, সরকার দারিদ্র্য হ্রাসের কৌশলপত্রের (পিআরএসপি) সঙ্গে সংগতি রেখে সহায়তার বিষয়ে আলোচনার টেবিলে বসলেও দ্বিতীয় এই পিআরএসপি কথিত দাতাগোষ্ঠী ও সংস্থার মন জুগিয়ে সেভাবে প্রণীত হয়নি, যেমনটা প্রথমটিতে হয়েছিল।
সুতরাং, চাহিদা উপস্থাপন করলেই যে মেনে নিয়ে তা পূরণের জন্য জোগান দেওয়ার জন্য কথিত উন্নয়ন সহযোগীরা এগিয়ে আসবে, এটা ভাবার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। তাই প্রয়োজন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দরকষাকষির দক্ষতা দেখানো।
মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বৃত্ত সম্পদ স্থানান্তরের তথা সহায়তা দেওয়ার সুযোগ কমে যাওয়ার যুক্তি মেনে নিলেও বাংলাদেশের প্রয়োজন কিন্তু হ্রাস পাবে না। তার মানে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যতটুকু পারা যায় সহায়তা আদায় করা। সে ক্ষেত্রে সমঝোতার কাজটি অন্য মাত্রা পাবে। আর তা হলো, ব্যয়বহুল সাহায্য নেওয়ার চিন্তা।
যেহেতু চূড়ান্ত বিচারে সাহায্য-সহায়তার নির্ণায়ক টাকার অঙ্কেই বিবেচনা করা হয়, সেহেতু তা ঋণ, না অনুদান সেটা গুরুত্বপূর্ণ। অনুদান যখন নানা ধরনের শর্তযুক্ত হয়ে আসে, তখন তাকে ব্যয়বহুল বিবেচনা করা হয়।
আবার অনুদান ও ঋণের মধ্যে ফেরতযোগ্যতার কারণে ঋণকেই ব্যয়বহুল বিবেচনা করা হয। আর ঋণের ক্ষেত্রেও শর্তের বিষয়টি প্রযোজ্য। এর পাশাপাশি চলে আসে সুদের বিষয়টি। যে ঋণে সুদের হার বেশি, সে ঋণ তত বেশি ব্যয়বহুল।
বস্তুত মন্দা-পরবর্তী সময়ে অপ্রতুলতার কারণে যখন সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে অনীহা ভাব দেখানো হচ্ছে, তখন অনুদানের বদলে ঋণ দিতে আগ্রহী হলে তা বাংলাদেশের জন্য ব্যয়বহুল সহায়তা হিসেবেই পরিগণিত হবে। অনিবার্যভাবেই এখানে ঋণের সুদ হার একটি বড় বিবেচ্য বিষয়।
ইতিমধ্যে তুলনামূলক বেশি সুদে বিদেশি ঋণ নেওয়ার একটি ঝোঁক ইদানীং পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা ঋণদানে আগ্রহীদের নজর এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। বিডিএফ বৈঠকের মাধ্যমে ঝোঁক যদি জোরালো হয়ে ওঠে, তাহলে বুঝতে হবে, যারা মন্দার অজুহাতে সহায়তা বাড়াতে কুণ্ঠিত ছিল, তারা বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মন্দার ক্ষতি পূরণের আরেকটি ব্যবস্থা করে নিয়েছে।
চিত্রটি অবশ্য এখনোই পরিষ্কার হবে না। বরং আগামী কয়েক মাসে কোন কোন খাতে কী ধরণের ঋণ-অনুদান চুক্তি হয়, তা জানা গেলে বোঝা যাবে কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছি আমরা। বলা দরকার, অনুদানের বদলে ঋণ বা স্বল্প সুদের বদলে বেশি ঋণে বিষয়টির পেছনে অস্বচ্ছ বা গোপন লেনদেনের একটি বিষয় থেকে যায়।
চিন্তার আরেকটি দিক আছে। সরকার প্রয়োজনগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরলেও কোনো কোনোটিতে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো গুরুত্ব হারাতে পারে। জলবায়ুর অভিঘাতের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি বা অভিযোজনের জন্য সহায়তা চাওয়া একটি উদাহরণ হতে পারে।
এটা ঠিক যে বাংলাদেশের সহায়তার জন্য প্রচারণার ক্ষেত্রে জলবায়ু একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কিন্তু কথিত সাহায্যদাতারা এখনো এ বিষয়ে অর্থবহ ও কার্যকর সহায়তার জন্য মনস্থির করেছে বলে মনে হয় না। তাই এ হাতিয়ার ব্যবহারে সতর্কতাটাই কাম্য।
সর্বোপরি চাহিদা চিহ্নিত করার পর তা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত কতটা নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় থেকেছে, তাও একটু খতিয়ে দেখা দরকার। উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের অনেক প্রয়োজনের সঙ্গেই একমত পোষণ করে। তবে প্রয়োজন মেটানোর পদ্ধতি-প্রক্রিয়ায় তাদের ভাবনা সব সময়ই বাংলাদেশের অনুকূল হয় না। আর প্রয়োজন বা চাহিদা উপস্থাপন যদি তাদের মনমতো করে হয়, তাহলে তা মেটানোর জন্য সহায়তার জোগানও তাদের মতো করে হবে। বাংলাদেশের এখন এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার সময় চলে এসেছে।
No comments