যুক্তরাষ্ট্র-ইরান যুদ্ধ হলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কি হবে? by জাহিদুর রহমান
ডনাল্ড
ট্রাম্প ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই
ইরান-বিরোধী নীতিমালা মেনে চলছেন। আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান উপেক্ষা করে
ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে
নিয়েছেন। দেশটির ওপর আরোপ করেছেন অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা। মার্কিন চাপের মুখে
নেতিয়ে পড়েছে ইরানের অর্থনীতি। এর মধ্যে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যকার
উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। চলতি বছর ইরান-নিয়ন্ত্রিত হরমুজ প্রণালীতে চারটি
সৌদি তেলের ট্যাংকারে হামলা নিয়ে দেশ দু’টির মধ্যে প্রায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার
মতো অবস্থা বিরাজ করছে। অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত সেনা ও রণতরী মোতায়েন করেছেন
ট্রাম্প। হরমুজ প্রণালীতে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইরান।
ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ইরানে সামরিক হামলার নির্দেশও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নির্দেশ বাতিল করেন। এদিকে ইরান ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা পারমাণবিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ইচ্ছেমতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ শুরু করবে। ট্রাম্প এ ঘোষণার জবাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ ইরানের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে দুই দেশ। কিন্তু তা কেবল দুই রাষ্ট্রের মধ্যে থেমে থাকবে না। জড়িয়ে পড়বে দেশগুলোর আঞ্চলিক মিত্ররাও। লেবানন, তুরস্ক, ইরাক, ইয়েমেনসহ পুরো পারস্য অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে সংঘাত। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের সবচেয়ে বড় মিত্রগুলোর একটি হচ্ছে রাশিয়া। তাই প্রশ্ন উঠছে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ হলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কি হবে?
২০১৫ সালে সিরিয়া সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে দেশটির গৃহযুদ্ধে দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছিল রাশিয়া। ইরানের ক্ষেত্রেও তেমনটা হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর ভাবাচ্ছে মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার আগ দিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনকে কোনোরূপ ইঙ্গিত দেয়নি রাশিয়া।’ ইরানের ক্ষেত্রে তাই কী হতে পারে সেটা একেবারেই অনিশ্চিত। পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি দেশের মুখোমুখি অবস্থান মোটেই বিশ্ববাসীর কাম্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ উথাল-পাথাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ এখনো টাটকা আছে। রাশিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ তাই মোটেই অমূলক নয়। অনেকে ধারণা করছেন, যদি ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে তাহলে তা কেবল সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করাতেই থেমে থাকবে না, ইরানের অনুরোধে সরাসরি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করবে ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক বাহিনী।
রাশিয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য দমনে ইরান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশ। পাশাপাশি বিশ্বে তেল ও গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণ করতেও ইরানের ভূমিকা অতুলনীয়। রাশিয়ার জন্য ইরান হচ্ছে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার ও তা পরিবর্তন করার শক্তি।
মধ্যপ্রাচ্যে ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে ফাটল ধরাচ্ছে রাশিয়া। সম্প্রতি তুরস্কের কাছে তাদের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার দ্বিতীয় চালান সম্পন্ন করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল বিরোধ ও হুমকি উপেক্ষা করে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনেছে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ এর জন্য হুমকি এই এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। কিছু গণমাধ্যমের খবরে ওঠে এসেছে, ইরানের কাছেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রি করতে চায় রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি কিনতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে কাতারও। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে স্বল্প বিস্তরে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের টনক নড়েছে বেশ তীব্রভাবেই। ইরানের প্রতি কূটনৈতিক সমর্থনও রয়েছে রাশিয়ার।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিষদের ‘মিডল ইস্ট নর্থ আফ্রিকা’ অঞ্চলের কর্মসূচির সমন্বয়ক রুসলান মামেদভ জানান যে, ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে চায় রাশিয়া। তবে রাশিয়া এও চায় যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যাতে তাদের ইন্সটেক্স উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতে পারে। তাতে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। এতে কেবল ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি রক্ষাই হবে না, পাশাপাশি বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যও খণ্ডিত হবে।
মামেদভ জানান, ইরানের অন্যান্য দিকে অবশ্য রাশিয়ার আগ্রহ রয়েছে। তারা ইরানে একটি টেকসই, ধর্মনিরপেক্ষ ও শক্তিশালী সরকার দেখতে চায়। তবে লেবানন বা ইরাকে তাদের যে প্রক্সি বাহিনী রয়েছে সেগুলোর বিস্তার দেখতে চায় না। তিনি বলেন, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার উপকারই হচ্ছে। কেননা, ইরানের সম্পদের পরিমাণ যত কম থাকবে, সিরিয়ায় তাদের প্রভাবও ততটাই কম থাকবে। আর সিরিয়ায় রাশিয়ার বিস্তর স্বার্থ ও বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় লাভবান হচ্ছে রুশ তেল প্রতিষ্ঠানগুলোও। তবে এসব সত্ত্বেও, ইরানে অস্থিতিশীল সরকার চায় না রাশিয়া। সেখানে মজবুত, স্থিতিশীল সরকার রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ওয়ার কলেজের রুশ জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক অধ্যাপক স্টিফেন ব্ল্যাংক জানান, আমার মনে হয়, কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা ইরানে সরকার পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক। তবে তারা ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যেতে চায় না। তবে তারা ইরানকে চারদিক থেকে চেপে ধরতে পারে। সেক্ষেত্রে কে জানে ইরান কী করবে! হয়তো তারা হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য মিত্রদের নিয়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের ওপর হামলা চালাতে পারে। কিন্তু রাশিয়া চাইবে না যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান যুদ্ধে যাক। সেক্ষেত্রে তাদের হারার আশঙ্কা রয়েছে। রাশিয়া ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন দেবে। হয়তো সামরিকভাবেই সরঞ্জাম সরবরাহ করে সমর্থন জানাতে পারে।
২০১৭ সালের অক্টোবরে ব্ল্যাংক লিখেছিলেন, রাশিয়ার মৌলিক কৌশল হচ্ছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব বাড়িয়ে দেয়া। এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খণ্ডিত হবে ও পুরো পরিস্থিতি সামলিয়ে রাশিয়া তাদের প্রভাব বাড়াতে পারবে।
চলতি বছর আমেরিকান প্রগ্রেস একশন ফান্ডে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তেলআবিব ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত ইসরাইলি ব্রিগ্রেডার জেনারেল শ্লোমো ব্রন বলেন, রাশিয়া ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার সামরিক সংঘাতে হস্তক্ষেপ করবে না, বরং ওই সংঘাত ব্যবহার করে কীভাবে লাভবান হওয়া যায় সেদিকে নজর দেবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইরানের সঙ্গে তাদের পারমাণবিক চুক্তির সব প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের শর্ত লঙ্ঘনের ঘোষণা দিয়েছে। যুদ্ধের কিনারেই আছে দুই দেশ। ইরানকে আরো চাপ দিলে তা যেকোনো মুহূর্তে শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, এই যুদ্ধ কেবল ইরানের ভেতর আটকা থাকবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেও থাকবে না। এতে জড়িয়ে পড়বে রশিয়ার মতো পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলো।
>>(লবেলগ ডটকম ও ফরেইন পলিসি অবলম্বনে)
ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার পর ইরানে সামরিক হামলার নির্দেশও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নির্দেশ বাতিল করেন। এদিকে ইরান ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা পারমাণবিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ইচ্ছেমতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ শুরু করবে। ট্রাম্প এ ঘোষণার জবাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ ইরানের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে দুই দেশ। কিন্তু তা কেবল দুই রাষ্ট্রের মধ্যে থেমে থাকবে না। জড়িয়ে পড়বে দেশগুলোর আঞ্চলিক মিত্ররাও। লেবানন, তুরস্ক, ইরাক, ইয়েমেনসহ পুরো পারস্য অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে সংঘাত। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের সবচেয়ে বড় মিত্রগুলোর একটি হচ্ছে রাশিয়া। তাই প্রশ্ন উঠছে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ হলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কি হবে?
২০১৫ সালে সিরিয়া সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে দেশটির গৃহযুদ্ধে দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছিল রাশিয়া। ইরানের ক্ষেত্রেও তেমনটা হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর ভাবাচ্ছে মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার আগ দিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনকে কোনোরূপ ইঙ্গিত দেয়নি রাশিয়া।’ ইরানের ক্ষেত্রে তাই কী হতে পারে সেটা একেবারেই অনিশ্চিত। পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি দেশের মুখোমুখি অবস্থান মোটেই বিশ্ববাসীর কাম্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ উথাল-পাথাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ এখনো টাটকা আছে। রাশিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ তাই মোটেই অমূলক নয়। অনেকে ধারণা করছেন, যদি ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে তাহলে তা কেবল সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করাতেই থেমে থাকবে না, ইরানের অনুরোধে সরাসরি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করবে ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক বাহিনী।
রাশিয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য দমনে ইরান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশ। পাশাপাশি বিশ্বে তেল ও গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণ করতেও ইরানের ভূমিকা অতুলনীয়। রাশিয়ার জন্য ইরান হচ্ছে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার ও তা পরিবর্তন করার শক্তি।
মধ্যপ্রাচ্যে ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে ফাটল ধরাচ্ছে রাশিয়া। সম্প্রতি তুরস্কের কাছে তাদের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার দ্বিতীয় চালান সম্পন্ন করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল বিরোধ ও হুমকি উপেক্ষা করে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনেছে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ এর জন্য হুমকি এই এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। কিছু গণমাধ্যমের খবরে ওঠে এসেছে, ইরানের কাছেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রি করতে চায় রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি কিনতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে কাতারও। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে স্বল্প বিস্তরে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের টনক নড়েছে বেশ তীব্রভাবেই। ইরানের প্রতি কূটনৈতিক সমর্থনও রয়েছে রাশিয়ার।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিষদের ‘মিডল ইস্ট নর্থ আফ্রিকা’ অঞ্চলের কর্মসূচির সমন্বয়ক রুসলান মামেদভ জানান যে, ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে চায় রাশিয়া। তবে রাশিয়া এও চায় যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যাতে তাদের ইন্সটেক্স উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতে পারে। তাতে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। এতে কেবল ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি রক্ষাই হবে না, পাশাপাশি বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যও খণ্ডিত হবে।
মামেদভ জানান, ইরানের অন্যান্য দিকে অবশ্য রাশিয়ার আগ্রহ রয়েছে। তারা ইরানে একটি টেকসই, ধর্মনিরপেক্ষ ও শক্তিশালী সরকার দেখতে চায়। তবে লেবানন বা ইরাকে তাদের যে প্রক্সি বাহিনী রয়েছে সেগুলোর বিস্তার দেখতে চায় না। তিনি বলেন, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার উপকারই হচ্ছে। কেননা, ইরানের সম্পদের পরিমাণ যত কম থাকবে, সিরিয়ায় তাদের প্রভাবও ততটাই কম থাকবে। আর সিরিয়ায় রাশিয়ার বিস্তর স্বার্থ ও বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় লাভবান হচ্ছে রুশ তেল প্রতিষ্ঠানগুলোও। তবে এসব সত্ত্বেও, ইরানে অস্থিতিশীল সরকার চায় না রাশিয়া। সেখানে মজবুত, স্থিতিশীল সরকার রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ওয়ার কলেজের রুশ জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক অধ্যাপক স্টিফেন ব্ল্যাংক জানান, আমার মনে হয়, কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা ইরানে সরকার পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক। তবে তারা ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যেতে চায় না। তবে তারা ইরানকে চারদিক থেকে চেপে ধরতে পারে। সেক্ষেত্রে কে জানে ইরান কী করবে! হয়তো তারা হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য মিত্রদের নিয়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের ওপর হামলা চালাতে পারে। কিন্তু রাশিয়া চাইবে না যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান যুদ্ধে যাক। সেক্ষেত্রে তাদের হারার আশঙ্কা রয়েছে। রাশিয়া ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন দেবে। হয়তো সামরিকভাবেই সরঞ্জাম সরবরাহ করে সমর্থন জানাতে পারে।
২০১৭ সালের অক্টোবরে ব্ল্যাংক লিখেছিলেন, রাশিয়ার মৌলিক কৌশল হচ্ছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব বাড়িয়ে দেয়া। এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খণ্ডিত হবে ও পুরো পরিস্থিতি সামলিয়ে রাশিয়া তাদের প্রভাব বাড়াতে পারবে।
চলতি বছর আমেরিকান প্রগ্রেস একশন ফান্ডে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তেলআবিব ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত ইসরাইলি ব্রিগ্রেডার জেনারেল শ্লোমো ব্রন বলেন, রাশিয়া ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার সামরিক সংঘাতে হস্তক্ষেপ করবে না, বরং ওই সংঘাত ব্যবহার করে কীভাবে লাভবান হওয়া যায় সেদিকে নজর দেবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইরানের সঙ্গে তাদের পারমাণবিক চুক্তির সব প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের শর্ত লঙ্ঘনের ঘোষণা দিয়েছে। যুদ্ধের কিনারেই আছে দুই দেশ। ইরানকে আরো চাপ দিলে তা যেকোনো মুহূর্তে শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, এই যুদ্ধ কেবল ইরানের ভেতর আটকা থাকবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেও থাকবে না। এতে জড়িয়ে পড়বে রশিয়ার মতো পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলো।
>>(লবেলগ ডটকম ও ফরেইন পলিসি অবলম্বনে)
No comments