যেভাবে সুন্দরবনে বাঘগণনা by চৌধুরী আকবর হোসেন
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনে বর্তমানে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। (ছবি: রয়টার্স) |
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই ম্যানগ্রোভ বনে
বর্তমানে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। ২০১৫ সালের জরিপে এ সংখ্যা ১০৬ বলা হয়েছিল। বন
অধিদফতরের সঙ্গে যৌথভাবে জরিপ করেছে ওয়াইল্ড টিম, যুক্তরাষ্ট্রের
স্মিথসোনিয়াম কনজারভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউট। তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন
তৈরিতে সহযোগিতা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশ্ন হলো, ভয়ংকর এই
বন্যপ্রাণী কীভাবে গোনা হয়?
গতবারের মতো এবারও ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনে বাঘ গোনা হয়েছে। ক্যামেরা ট্র্যাপিং কী, কীভাবে এটি কাজ করে কিংবা এ কাজে সময়ই বা লাগে কত দিন?
বন অধিদফতর জানিয়েছে, ইউএস এইডের আর্থিক সহযোগিতায় Bengal Tiger Conservation Activity (BAGH) প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চারটি ধাপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও শরণখোলা রেঞ্জের তিনটি ব্লকের ১ হাজার ৬৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ পরিচালনা করা হয়। মোট ২৪৯ দিন জরিপ পরিচালনা করা হয়।
গতবারের মতো এবারও ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনে বাঘ গোনা হয়েছে। ক্যামেরা ট্র্যাপিং কী, কীভাবে এটি কাজ করে কিংবা এ কাজে সময়ই বা লাগে কত দিন?
বন অধিদফতর জানিয়েছে, ইউএস এইডের আর্থিক সহযোগিতায় Bengal Tiger Conservation Activity (BAGH) প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চারটি ধাপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও শরণখোলা রেঞ্জের তিনটি ব্লকের ১ হাজার ৬৫৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ পরিচালনা করা হয়। মোট ২৪৯ দিন জরিপ পরিচালনা করা হয়।
বাঘ
জরিপের সময় ওয়াইল্ড টিমের ওয়াইল্ড লাইফ টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট হিসেবে
কাজ করেন মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘গণনার কাজে
৪৯১টি Cudde back ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। চার ধাপে ২৪৯ দিন সময়
নিয়ে এই জরিপ হয়েছে। সুন্দরবনে জরিপে কাজ করছেন ৮৫ জন। জরিপে বাঘের ২ হাজার
৪৬৬টি ছবি পাওয়া যায়।’
শামসুদ্দোহা বলেন, ‘বাঘ যেসব এলাকায় থাকে, যেসব স্থান দিয়ে চলাচল করতে পারে সম্ভাব্য সেসব স্থানে ক্যামেরা বসানো হয়। ক্যামেরাগুলো টানা ৪৫ দিন সচল থাকে। ১০-১৫ দিন পরপর আমরা ক্যামেরার মেমোরি কার্ড, ব্যাটারি পরিবর্তন করা হতো।’
ছবি দেখে কীভাবে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘মানুষের হাতের আঙুলের ছাপ যেমন সবার ভিন্ন ভিন্ন হয়, সেরকম বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগও আলাদা হয়।’
বাঘের ডোরাকাটা ছাপের বিশ্লেষণ করে তাদের পৃথক করা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘Spatially explicit capture recapture (SECR) পদ্ধতিতে ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিটি বাঘ শনাক্ত করা হয়। এরপর প্রতিটি বাঘ কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন ক্যামেরায় কতবার ধরা পড়ছে তার ওপর ভিত্তি করে একটা তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা ব্যবহার করে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
শামসুদ্দোহা বলেন, ‘বাঘ যেসব এলাকায় থাকে, যেসব স্থান দিয়ে চলাচল করতে পারে সম্ভাব্য সেসব স্থানে ক্যামেরা বসানো হয়। ক্যামেরাগুলো টানা ৪৫ দিন সচল থাকে। ১০-১৫ দিন পরপর আমরা ক্যামেরার মেমোরি কার্ড, ব্যাটারি পরিবর্তন করা হতো।’
ছবি দেখে কীভাবে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘মানুষের হাতের আঙুলের ছাপ যেমন সবার ভিন্ন ভিন্ন হয়, সেরকম বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগও আলাদা হয়।’
বাঘের ডোরাকাটা ছাপের বিশ্লেষণ করে তাদের পৃথক করা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘Spatially explicit capture recapture (SECR) পদ্ধতিতে ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিটি বাঘ শনাক্ত করা হয়। এরপর প্রতিটি বাঘ কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন ক্যামেরায় কতবার ধরা পড়ছে তার ওপর ভিত্তি করে একটা তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা ব্যবহার করে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
সুন্দরবনে
বাঘের মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘বেশ কয়েকবারই বাঘের খুব
কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল, বাঘকে আতংকিত না করলে কোনও
ক্ষতি হবে না। ফলে বাঘের খুব কাছাকাছি আসলেও বিপদ হয়নি।’
জরিপের কাজে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ক্যামেরা চুরি হয়েছিল বলে জানান শামসুদ্দোহা। বলেন, ‘কারা নিয়েছে সেটি আমরা ধরতে পারিনি। তবে কয়েকটি ক্যামেরা চুরি হয়।’
সুন্দরবনের ডাকাতের উৎপাত বা অন্য কোনও ঝামেলায় পড়েছিলেন কিনা, জানতে চাইলে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘প্রথমেই আমরা একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, আমাদের কাজ বাঘগণনা, অন্যকিছু নয়। ফলে ডাকাত বা জলদস্যু আমাদের কোনও টার্গেট নয়। সে কারণে খুব বেশি একটা বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়নি।’
জরিপে রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন আবু সাঈদ নিশান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমে আমাদের কাজ ছিল বাঘের পায়ের ছাপ, মলমূত্র দেখে শনাক্ত করা। পরে যেসব পথে বাঘের চলাচলের বেশি সম্ভাবনা, সেসব স্থানে ক্যামেরা বসানো হয়। বসানোর সময় মাথায় রাখতে হয়েছিল, ক্যামেরা এমনভাবে বসানো হয় যাতে সাইড থেকে পুরো ভাগের ছবি যেন আসে। কারণ শরীরের পুরো অংশে ডোরাকাটা ছাপের ছবি না আসলে কোনও ফলাফল পাওয়া যাবে না।’
জরিপের কাজে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ক্যামেরা চুরি হয়েছিল বলে জানান শামসুদ্দোহা। বলেন, ‘কারা নিয়েছে সেটি আমরা ধরতে পারিনি। তবে কয়েকটি ক্যামেরা চুরি হয়।’
সুন্দরবনের ডাকাতের উৎপাত বা অন্য কোনও ঝামেলায় পড়েছিলেন কিনা, জানতে চাইলে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘প্রথমেই আমরা একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, আমাদের কাজ বাঘগণনা, অন্যকিছু নয়। ফলে ডাকাত বা জলদস্যু আমাদের কোনও টার্গেট নয়। সে কারণে খুব বেশি একটা বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়নি।’
জরিপে রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন আবু সাঈদ নিশান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমে আমাদের কাজ ছিল বাঘের পায়ের ছাপ, মলমূত্র দেখে শনাক্ত করা। পরে যেসব পথে বাঘের চলাচলের বেশি সম্ভাবনা, সেসব স্থানে ক্যামেরা বসানো হয়। বসানোর সময় মাথায় রাখতে হয়েছিল, ক্যামেরা এমনভাবে বসানো হয় যাতে সাইড থেকে পুরো ভাগের ছবি যেন আসে। কারণ শরীরের পুরো অংশে ডোরাকাটা ছাপের ছবি না আসলে কোনও ফলাফল পাওয়া যাবে না।’
আবু
সাঈদ নিশান বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে বড় একটি লঞ্চে সবাই থাকতাম। বনের ভেতরে
যেতাম ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে। কাজ শেষে আবার লঞ্চে ফিরতাম। আমাদের সঙ্গে
স্থানীয় মানুষজনও ছিলেন, তারা আমাদের বনের ভেতরে পথ চিনতে সহায়তা করেছেন।’
বন অধিদফতর জানিয়েছে, জরিপে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এ ৬৩টি পূর্ণবয়স্ক বাঘ, ৪টি জুভেনাইল বাঘ এবং ৫টি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাঘের সর্বমোট ২ হাজার ৪৬৬টি ছবি পাওয়া যায়। SECR মডেলে তথ্য বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনের প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাঘের আপেক্ষিক ঘনত্ব পাওয়া যায় ২.৫৫+০.৩২। সুন্দরবনে বাঘের বিচরণক্ষেত্র ৪ হাজার ৪৬৪ কিলোমিটার এলাকাকে আপেক্ষিক ঘনত্ব দিয়ে গুণ করে বাঘের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে ১১৪টি। এ হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৮টি বেড়েছে। ব্লক অনুযায়ী বাঘের ঘনত্ব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শরণখোলা রেঞ্জে বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি (৩.৩৩ বাঘ/১০০ বর্গ কিলোমিটার) এবং খুলনা রেঞ্জে বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে কম (১.২১ বাঘ/১০০ বর্গ কিলোমিটার)। ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। সে হিসাব অনুযায়ী বাঘের ঘনত্ব ছিল প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে ২.১৭টি এবং মোট বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।
বন অধিদফতর জানিয়েছে, জরিপে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এ ৬৩টি পূর্ণবয়স্ক বাঘ, ৪টি জুভেনাইল বাঘ এবং ৫টি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাঘের সর্বমোট ২ হাজার ৪৬৬টি ছবি পাওয়া যায়। SECR মডেলে তথ্য বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনের প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাঘের আপেক্ষিক ঘনত্ব পাওয়া যায় ২.৫৫+০.৩২। সুন্দরবনে বাঘের বিচরণক্ষেত্র ৪ হাজার ৪৬৪ কিলোমিটার এলাকাকে আপেক্ষিক ঘনত্ব দিয়ে গুণ করে বাঘের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে ১১৪টি। এ হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৮টি বেড়েছে। ব্লক অনুযায়ী বাঘের ঘনত্ব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শরণখোলা রেঞ্জে বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি (৩.৩৩ বাঘ/১০০ বর্গ কিলোমিটার) এবং খুলনা রেঞ্জে বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে কম (১.২১ বাঘ/১০০ বর্গ কিলোমিটার)। ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। সে হিসাব অনুযায়ী বাঘের ঘনত্ব ছিল প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে ২.১৭টি এবং মোট বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।
No comments