অপরূপ জলজ নিসর্গ আড়িয়াল বিল by তানজিল হাসান
নৌকা
বা ট্রলারে খাল ধরে সামনে এগোচ্ছেন। দু’পাশে গ্রাম। যেতে যেতে চলে এলেন
বিশাল জলরাশির বুকে। যেন মিঠা পানির এক সমুদ্র! কোথাও ভেসে আছে কচুরিপানা।
কোথাও রাশি রাশি সাদা শাপলা। কিছুক্ষণ পরপর চোখে পড়বে ভেসাল জাল দিয়ে
জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। কখনও পাশ দিয়ে ঢেউ তুলে চলে যেতে পারে মালবাহী
ছোটবড় ট্রলার।
জলরাশির দিকে তাকালে পানির রঙ কখনও নীল, কখনও সাদা, কখনওবা কালো মনে হবে। শ্রাবণের আকাশের সঙ্গে রঙ বদলায় জল। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি নামে, আবার রোদ ঝকঝক করে ওঠে। কালো মেঘের ছোটবড় ভেলা চেনা পরিবেশের বাইরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কল্পনার জগতে। আড়িয়াল বিলের এই অপার সৌন্দর্য তুলনাহীন। এ যেন অপরূপ জলজ নিসর্গ।
মূহূর্তে বদলে যাওয়া চারপাশের প্রকৃতির রঙ মনে দোলা দেয়। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দু’চোখ ভরে উপভোগ না করলে বোঝা যায় না। ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদিখান জুড়ে বিস্তৃত আড়িয়াল বিল। এখানে এলেই ভ্রমণপ্রেমীরা হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে। দূরের কোনও গ্রামের প্রতিচ্ছায়ায় আটকে থাকে দৃষ্টি।
জলরাশিতে ভাসতে ভাসতে চোখ মেলে তাকালে আকাশটা বিশাল লাগে। মনে হতে পারে, এত বড় আকাশ কতদিন দেখা হয়নি! নৌকা থেকে নেমে ডেঙ্গায় হেঁটে বেড়ালে মন্দ লাগবে না। আড়িয়াল বিলে রয়েছে অনেক ডেঙ্গা। এগুলো মূলত বিশাল আকৃতির দীঘি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো সাগরদীঘি। এগুলো প্রাকৃতিক মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত।
মাছের মধ্যে আড়িয়াল বিলের সরপুঁটি ও কই বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। এছাড়া শিং, মাগুর, রুই, কাতলা, বোয়াল, পুঁটি ও টেংরা মাছসহ প্রায় সব দেশি মাছ পাওয়া যায় এতে। এখানকার প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মাছের পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে ডেঙ্গায় মাছ চাষ হয়। সংগৃহীত মাছ সরবরাহ হয় ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে। দীঘির পাড়ে আছে বৃক্ষরাজি।
হিজল, নারিকেল, বরুণ, মেহগনিসহ বিভিন্ন গাছ দেখা যায়। বিলে মাঝে মধ্যে উড়ে বেড়ায় কানিবক, মাছরাঙা, পাতিহাঁস, শঙ্খচিল, ডাহুক পাখি। বিলের পাশের গ্রামে বাবুই পাখিরও দেখা মিলবে। শোনা যায়, অতীতে আড়িয়াল বিলে কালিম পাখি দেখা যেতো। তবে অতিথি পাখি খুব একটা দেখা যায় না।
সবজি হিসেবে বাজারে আড়িয়াল বিলের শাপলা কেনাবেচা হয়। স্থানীয়দের অনেকে বিল থেকে এটি তোলে। ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। বিলে এলেই চোখে পড়বে স্থানীয় অনেকে শাপলা তুলছেন। কেউ একমনে শাপলা গোছাতে ব্যস্ত। মূলত তারা কৃষক। বর্ষা মৌসুমে ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা শাপলা তোলেন।
অম্বিকাচরণ ঘোষ ও যোগেন্দ্র নাথ গুপ্ত রচিত ‘বিক্রমপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থে আড়িয়াল বিলের দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ১২ মাইল ও প্রস্থ দক্ষিণে ৭-৮ মাইল উল্লেখ করা হয়েছে। আড়িয়াল বিলের দক্ষিণ প্রান্তে মইজপাড়া ও কোলাপাড়া, উত্তরে শ্রীধরখোলা, বারুইখালি ও শেখেরনগর। পশ্চিমে নারিশা গ্রাম, পূর্বে দয়হাটা, হাসাড়া গাদিঘাট ও প্রাণীমণ্ডল বা পরানিমণ্ডল প্রভৃতি গ্রাম।
ঢাকা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আড়িয়াল বিল। অনেকের অনুমান, রাজশাহীর চলনবিল ও ঢাকা-মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলেই অতি প্রাচীনকালে গঙ্গা ও ব্রক্ষপুত্রের সঙ্গম হয়েছিল। পরে উভয় নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের কারণে এই স্থান শুকিয়ে বিলে পরিণত হয়। আড়িয়াল বিলের আরেক নাম ‘চূড়াইন বিল’। একসময় বর্ষায় এতে কুমির দেখা যেতো।
বিলের মধ্যে এখানে-সেখানে উঁচু মাটির ঢিবিতে ঘরবাড়ি দেখা যায়। বর্ষাকালে বিলে পানি টইটম্বুর থাকলে মনে হয়, বাড়িগুলো দ্বীপের মতো ভেসে আছে! তখন যাতায়াতের একমাত্র উপায় হয়ে ওঠে কোষা নৌকা। বর্ষার আগে ধান কেটে ঘরে তোলেন কৃষক। বিলের পাশের গ্রামগুলোতে খড়ের গাদা দেখা যায়– কারও বাড়ির উঠানে, কোথাও রাস্তার পাশে, আবার কোথাও বিলের পাশের উঁচু জমিতে।
আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বর্ষায় অনেক পর্যটক সমাগম হয়। বর্ষায় দেখতে বেশি মনোমুগ্ধকর হলেও এই বিলের সৌন্দর্য শীতেও কম নয়। আড়িয়াল বিলে ধান চাষ বেশি হয়। তবে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঢেঁড়স, পটলসহ বিভিন্ন রকম সবজি উৎপন্ন হয়। ফলে বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ নিশ্চিতভাবে সবার মন কাড়ে।
যেভাবে আসবেন
ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়াগামী বিআরটিসি ও ইলিশ পরিবহনসহ বেশকিছু বাস রয়েছে। ভাড়া নেবে ৯০-১২০ টাকা। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের শ্রীনগরের ছনবাড়ি চৌরাস্তায় বাস থেকে নেমে অটোরিকশা নিয়ে যেতে হবে গাদিঘাট গ্রাম। সেখান থেকে বিল দেখা যায়। অথবা শ্রীনগর বাজার থেকে ট্রলার ভাড়া নিয়ে বিল ঘুরে দেখা যাবে। ঢাকা থেকে সকালে রওনা দিয়ে আড়িয়াল বিলে বেড়িয়ে আবার বিকালের মধ্যে ঢাকায় ফেরা যায়। দুপুরে খাবারের উদ্দেশে মাওয়াতেও বেড়িয়ে আসতে পারেন। শিমুলিয়া ঘাটে নিতে পারেন তাজা ইলিশের স্বাদ।
জলরাশির দিকে তাকালে পানির রঙ কখনও নীল, কখনও সাদা, কখনওবা কালো মনে হবে। শ্রাবণের আকাশের সঙ্গে রঙ বদলায় জল। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি নামে, আবার রোদ ঝকঝক করে ওঠে। কালো মেঘের ছোটবড় ভেলা চেনা পরিবেশের বাইরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কল্পনার জগতে। আড়িয়াল বিলের এই অপার সৌন্দর্য তুলনাহীন। এ যেন অপরূপ জলজ নিসর্গ।
মূহূর্তে বদলে যাওয়া চারপাশের প্রকৃতির রঙ মনে দোলা দেয়। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দু’চোখ ভরে উপভোগ না করলে বোঝা যায় না। ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদিখান জুড়ে বিস্তৃত আড়িয়াল বিল। এখানে এলেই ভ্রমণপ্রেমীরা হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে। দূরের কোনও গ্রামের প্রতিচ্ছায়ায় আটকে থাকে দৃষ্টি।
জলরাশিতে ভাসতে ভাসতে চোখ মেলে তাকালে আকাশটা বিশাল লাগে। মনে হতে পারে, এত বড় আকাশ কতদিন দেখা হয়নি! নৌকা থেকে নেমে ডেঙ্গায় হেঁটে বেড়ালে মন্দ লাগবে না। আড়িয়াল বিলে রয়েছে অনেক ডেঙ্গা। এগুলো মূলত বিশাল আকৃতির দীঘি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো সাগরদীঘি। এগুলো প্রাকৃতিক মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত।
মাছের মধ্যে আড়িয়াল বিলের সরপুঁটি ও কই বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। এছাড়া শিং, মাগুর, রুই, কাতলা, বোয়াল, পুঁটি ও টেংরা মাছসহ প্রায় সব দেশি মাছ পাওয়া যায় এতে। এখানকার প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মাছের পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে ডেঙ্গায় মাছ চাষ হয়। সংগৃহীত মাছ সরবরাহ হয় ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে। দীঘির পাড়ে আছে বৃক্ষরাজি।
হিজল, নারিকেল, বরুণ, মেহগনিসহ বিভিন্ন গাছ দেখা যায়। বিলে মাঝে মধ্যে উড়ে বেড়ায় কানিবক, মাছরাঙা, পাতিহাঁস, শঙ্খচিল, ডাহুক পাখি। বিলের পাশের গ্রামে বাবুই পাখিরও দেখা মিলবে। শোনা যায়, অতীতে আড়িয়াল বিলে কালিম পাখি দেখা যেতো। তবে অতিথি পাখি খুব একটা দেখা যায় না।
সবজি হিসেবে বাজারে আড়িয়াল বিলের শাপলা কেনাবেচা হয়। স্থানীয়দের অনেকে বিল থেকে এটি তোলে। ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। বিলে এলেই চোখে পড়বে স্থানীয় অনেকে শাপলা তুলছেন। কেউ একমনে শাপলা গোছাতে ব্যস্ত। মূলত তারা কৃষক। বর্ষা মৌসুমে ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা শাপলা তোলেন।
অম্বিকাচরণ ঘোষ ও যোগেন্দ্র নাথ গুপ্ত রচিত ‘বিক্রমপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থে আড়িয়াল বিলের দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ১২ মাইল ও প্রস্থ দক্ষিণে ৭-৮ মাইল উল্লেখ করা হয়েছে। আড়িয়াল বিলের দক্ষিণ প্রান্তে মইজপাড়া ও কোলাপাড়া, উত্তরে শ্রীধরখোলা, বারুইখালি ও শেখেরনগর। পশ্চিমে নারিশা গ্রাম, পূর্বে দয়হাটা, হাসাড়া গাদিঘাট ও প্রাণীমণ্ডল বা পরানিমণ্ডল প্রভৃতি গ্রাম।
ঢাকা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আড়িয়াল বিল। অনেকের অনুমান, রাজশাহীর চলনবিল ও ঢাকা-মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলেই অতি প্রাচীনকালে গঙ্গা ও ব্রক্ষপুত্রের সঙ্গম হয়েছিল। পরে উভয় নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের কারণে এই স্থান শুকিয়ে বিলে পরিণত হয়। আড়িয়াল বিলের আরেক নাম ‘চূড়াইন বিল’। একসময় বর্ষায় এতে কুমির দেখা যেতো।
বিলের মধ্যে এখানে-সেখানে উঁচু মাটির ঢিবিতে ঘরবাড়ি দেখা যায়। বর্ষাকালে বিলে পানি টইটম্বুর থাকলে মনে হয়, বাড়িগুলো দ্বীপের মতো ভেসে আছে! তখন যাতায়াতের একমাত্র উপায় হয়ে ওঠে কোষা নৌকা। বর্ষার আগে ধান কেটে ঘরে তোলেন কৃষক। বিলের পাশের গ্রামগুলোতে খড়ের গাদা দেখা যায়– কারও বাড়ির উঠানে, কোথাও রাস্তার পাশে, আবার কোথাও বিলের পাশের উঁচু জমিতে।
আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বর্ষায় অনেক পর্যটক সমাগম হয়। বর্ষায় দেখতে বেশি মনোমুগ্ধকর হলেও এই বিলের সৌন্দর্য শীতেও কম নয়। আড়িয়াল বিলে ধান চাষ বেশি হয়। তবে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঢেঁড়স, পটলসহ বিভিন্ন রকম সবজি উৎপন্ন হয়। ফলে বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ নিশ্চিতভাবে সবার মন কাড়ে।
যেভাবে আসবেন
ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়াগামী বিআরটিসি ও ইলিশ পরিবহনসহ বেশকিছু বাস রয়েছে। ভাড়া নেবে ৯০-১২০ টাকা। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের শ্রীনগরের ছনবাড়ি চৌরাস্তায় বাস থেকে নেমে অটোরিকশা নিয়ে যেতে হবে গাদিঘাট গ্রাম। সেখান থেকে বিল দেখা যায়। অথবা শ্রীনগর বাজার থেকে ট্রলার ভাড়া নিয়ে বিল ঘুরে দেখা যাবে। ঢাকা থেকে সকালে রওনা দিয়ে আড়িয়াল বিলে বেড়িয়ে আবার বিকালের মধ্যে ঢাকায় ফেরা যায়। দুপুরে খাবারের উদ্দেশে মাওয়াতেও বেড়িয়ে আসতে পারেন। শিমুলিয়া ঘাটে নিতে পারেন তাজা ইলিশের স্বাদ।
>>>ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
No comments