মৈত্রী ও বন্ধন ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে by পরিতোষ পাল
বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ভালো পাওনা বলতে দুই দেশের মধ্যে
চলাচলকারী মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসের ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।
শনিবার এই সিদ্ধান্তের কথা ছড়িয়ে পড়া মাত্র কলকাতায় বেড়াতে বাংলাদেশিরা
যেমন খুশি তেমনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এপারের মানুষও। দক্ষিণ কলকাতার
কসবার বাসিন্দা অমরেশ মজুমদার বলেছেন, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যাতায়াত এর
ফলে আরো বাড়বে। মৈত্রী এক্সপ্রেস বর্তমানে সপ্তাহে চারদিন চলে। সেখানে এবার
থেকে সপ্তাহে পাঁচদিন চলবে এই ট্রেন। কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়ে সরাসরি ঢাকা
ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছায় ট্রেনটি। আগে সীমান্তের দু’পারে শুল্ক ও অভিবাসন
পরীক্ষার জন্য তিন ঘণ্টার বেশি সময় নষ্ট হতো। অনেক আলোচনার পর গত নভেম্বর
থেকে শুল্ক ও অভিবাসন পরীক্ষার কাজ প্রান্তিক স্টেশনে হওয়ায় যাত্রার সময় ১১
ঘণ্টা থেকে কমে ৮ ঘণ্টায় নেমে এসেছে।
সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনটি ইতিমধ্যেই দুই দেশের মানুষের কাছে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছে। তবে সপ্তাহে চারদিন চলার ফলে টিকিটের জন্য যাত্রীদের প্রবল দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। বেশি অর্থ দিয়ে নিরুপায় হয়ে বাসের কষ্টকর যাত্রায় আসা-যাওয়া করতে হচ্ছিল। মৈত্রী এক্সপ্রেসের পাশাপাশি গত বছর চালু হওয়া কলকাতা ও খুলনার মধ্যে বন্ধন এক্সপ্রেস সপ্তাহে একদিন চলছিল। ফলে ট্রেনটি যাত্রীদের কাছে তেমন সমাদর পায়নি। এবার ট্রেন সংখ্যা আরো একটি বাড়ানোর ফলে যাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কলকাতায় পূর্ব রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই সাপ্তাহিক ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ইতিমধ্যেই বেশকিছু প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছে। যাত্রীদের দাবি, ফেয়ারলি প্লেসের রেল কাউন্টার ছাড়াও রিটার্ন টিকিট কাটার সুযোগ সহ টিকিট কলকাতা স্টেশন থেকে দেয়ার ব্যবস্থা করলে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমবে।
মহিষাসুরের বংশধররা শোক ভুলে পুজোর আনন্দে
বাঙালির অন্যতম প্রধান শারদোৎসব শুরু হয়েছে। চারদিকে আলোকচ্ছটার বর্ণিল আয়োজন, শিল্পের সুষমামণ্ডিত মণ্ডপ ও মূর্তি দুর্গাপুজোর বিবর্তনের ইতিহাসই বহন করে চলেছে। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, কলকাতায় পুজোয় নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। অনেক ছোটখাটো পুজোর পরিকল্পনাও আমাদের বিস্মিত করে তুলছে। তবে দেবী আরাধনার বিচারে মহিষাসুরকে বধ করার মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশেরই তারিফ করা হয়। আর তাই দুর্গাকে বলা হয়. অসুরদলনী বা মহিষাসুরমর্দিনী। কিন্তু মহিষাসুররা আজও রয়েছেন আমাদের মধ্যে। বাস্তবেই মহিষাসরের বংশধররা রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চা বাগান এলাকায়। এদের সকলেরই পদবি অসুর। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটার ক্যারন, গুরুজংঝোরার চা বাগান, আলিপুরদুয়ার জেলার মাঝেরভাবরি, নিমাতিঝোরা ও দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়ি চা বাগানে মোট ৬০০টি অসুর পরিবার বাস করেন। তবে ক্যারন চা বাগানেই থাকেন ৫০০ পরিবার। এরা চা বাগানের সাদরি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ভালো বোঝেন না। অসুরদের ৫২.৭২ শতাংশ চা বাগানের শ্রমিক। ১৫.৬৫ শতাংশ কৃষক আর ১৩.৬ শতাংশ ক্ষেতমজুর। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, অসুরদের ৪৮.৬ শতাংশ মানুষ হিন্দু, ১৫.০৫ শতাংশ খ্রিষ্টান, ৪.৭৮ শতাংশ বৌদ্ধ এবং ১ শতাংশ মুসলমান। শহুরে মানুষকে এরা এড়িয়েই চলেন। অসুর জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, মহিষাসুর তাদের পূর্বপুরুষ। তাই পূর্বপুরুষের হত্যাকারিণী দুর্গার মুখ দর্শন করা তাদের নিষেধ। আর তাই শারদোৎসবের সময় এরা শোকের চিহ্ন হিসেবে বাড়ির চারপাশ কালোকাপড়ে ঢেকে রাখেন। প্রবীণেরা আজও এই সময়ে নিজেদের গৃহবন্দি করেই রাখেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অসুর প্রজন্মের ভাবনা-চিন্তাও বদলেছে। আর তাই মহিষাসুরকে দেবতা বলে গণ্য করেও তারা দুর্গামণ্ডপে গিয়ে দুর্গাকে পুষ্পাঞ্জলিও দেন। সংস্কারকে মনে না রেখে অন্যদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবে শামিল হয়। প্রবীণ অসুরদের অনেকেই মেনে নিয়েছেন, এখন সময় বদলেছে। অসুর সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন কাজে বাইরে যাচ্ছে। লেখাপড়া শিখে তারা আধুনিক মনস্ক হয়ে উঠেছে। ফলে ভেঙে গিয়েছে পুরনো সংস্কারের সব বাঁধ।
পুজোও রাজনৈতিক সাহিত্যের জায়গা
পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কলকাতার দুর্গাপুজোর মণ্ডপের ধারে কাছে দর্শনার্থীদের সঙ্গে জনসংযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের সাহিত্য সংক্রান্ত বইয়ের স্টল দেয়ার প্রতিযোগিতা এ বছর তীব্র হয়েছে। শারদীয় বইয়ের স্টল দেয়ার রেওয়াজ বামফ্রন্ট আমল থেকে চালু হয়েছিল। সেই সময়ে বামপন্থিরাই প্র্রগতিশীল সাহিত্য ও রাজনৈতিক বইয়ের সম্ভার নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় পুজোমণ্ডপের কাছে স্টল দিতো। সেই সব স্টলে আগ্রহী মানুষের ভিড়ও লেগে থাকতো। বিক্রি হতো ভালোই। কিন্তু বামরা রাজনৈতিক জমি হারানোর পর থেকে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত কয়েক বছরে তারাই সবচেয়ে বেশি বইয়ের স্টল দিয়েছে। এবারও তারা তিনশ’র বেশি স্টল দিয়েছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সাহিত্য সম্ভার বলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ৮৮টি বই। সেই সঙ্গে দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলার’ কিছু বিশেষ সংখ্যা নিয়ে তারা স্টল সাজায়। অবশ্য আজকাল কিছু সাহিত্যিকের বইও এই সব স্টলে দেখা যায়। তবে রাজনৈতিক দলের বইয়ের স্টল দেয়ার প্রতিযোগিতায় বিজেপি এখন এগিয়ে এসেছে।
কলকাতার সব বড় পুজোমণ্ডপে বিজেপি স্টল দিয়েছে। রাজনৈতিক বাধায় কিছু ক্ষেত্রে তাদের পিছু হটতে হলেও স্টলের সংখ্যায় তারাই দ্বিতীয়। প্রধানত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা বই এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর ভাষণ এবং কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ ও এনআরসি সংক্রান্ত বই নিয়েই তারা স্টল সাজিয়েছে। তাদের সেই স্টলে জায়গা পেয়েছে আরএসএসেরও কিছু বই। এই দুই দলের প্রতিযোগিতার মধ্যেই বামরা হারানো জমি ফিরে পেতে আগের মতোই রাজনৈতিক সাহিত্য ও রাজনীতির বই নিয়ে স্টল সাজিয়েছে বেশকিছু জায়গায়। তাদের বইয়ের স্টলের এবারের প্রধান আকর্ষণ চীন নিয়ে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের লেখা বই। দলীয় পত্রপত্রিকার শারদ সংখ্যা নিয়েও এরা বেশ আগ্রহী। প্রধান এই তিন রাজনৈতিক দলের স্টল ছাড়াও বিভিন্ন হিন্দুবাদী সংগঠন এবার পুজোয় অনেক স্টল দিয়েছে। আর ছোট দল হলেও এসইউসিআই প্রতিবারের মতোই এবার তারা তাদের দলীয় সাহিত্য নিয়ে স্টল দিয়েছে বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে।
বিসর্জনেও লাল ফিতার ব্যারিকেড
দুই বাংলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর টাকি অংশে দুই বাংলার প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে প্রতি বছর এপার বাংলা ওপার বাংলা একাকার হয়ে যেত। প্রতিমা নিয়ে আসা দুই দেশের নৌকায় থাকা মানুষ একে অপরকে আলিঙ্গন করতেন। বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতেন। এই মিলন, আনন্দঘন মুহূর্ত দেখতে ইছামতীর দুই পাড়ে দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ জড়ো হন। কিন্তু এখন আর ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জনের সুযোগে দুই বাংলার মানুষের মিলন হয় না। দু’পার থেকে স্বজনেরা চোখের পানিতে ভাসিয়ে দেন নিজেদের মধ্যেকার আত্মীয়তাকে। কয়েক বছর ধরেই দু’পারের মানুষের মেলামেশায় আপত্তি জানিয়ে নানা কড়া ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল। তবে এবার তা আরো কঠোর হয়েছে। ঠিক হয়েছে, মাঝনদী বরাবর থাকবে লাল সুতোর সীমানা ব্যারিকেড। অনুপ্রবেশ আটকাতে এই সিদ্ধান্ত বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। আরো ঠিক হয়েছে, দুই দেশের নৌকার মাঝে থাকবে প্রায় ১০০ ফুটের দূরত্ব। তবে এই কড়াকড়ি সত্ত্বেও টাকিতে ইছামতী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসছে বলে স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে। টাকির সবক’টি সরকারি, বেসরকারি হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস ‘হাউসফুল’। ইছামতীর বিসর্জন ঘিরে টাকিতে কড়া নিরাপত্তাও জারি করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনটি ইতিমধ্যেই দুই দেশের মানুষের কাছে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছে। তবে সপ্তাহে চারদিন চলার ফলে টিকিটের জন্য যাত্রীদের প্রবল দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। বেশি অর্থ দিয়ে নিরুপায় হয়ে বাসের কষ্টকর যাত্রায় আসা-যাওয়া করতে হচ্ছিল। মৈত্রী এক্সপ্রেসের পাশাপাশি গত বছর চালু হওয়া কলকাতা ও খুলনার মধ্যে বন্ধন এক্সপ্রেস সপ্তাহে একদিন চলছিল। ফলে ট্রেনটি যাত্রীদের কাছে তেমন সমাদর পায়নি। এবার ট্রেন সংখ্যা আরো একটি বাড়ানোর ফলে যাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কলকাতায় পূর্ব রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই সাপ্তাহিক ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ইতিমধ্যেই বেশকিছু প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছে। যাত্রীদের দাবি, ফেয়ারলি প্লেসের রেল কাউন্টার ছাড়াও রিটার্ন টিকিট কাটার সুযোগ সহ টিকিট কলকাতা স্টেশন থেকে দেয়ার ব্যবস্থা করলে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমবে।
মহিষাসুরের বংশধররা শোক ভুলে পুজোর আনন্দে
বাঙালির অন্যতম প্রধান শারদোৎসব শুরু হয়েছে। চারদিকে আলোকচ্ছটার বর্ণিল আয়োজন, শিল্পের সুষমামণ্ডিত মণ্ডপ ও মূর্তি দুর্গাপুজোর বিবর্তনের ইতিহাসই বহন করে চলেছে। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, কলকাতায় পুজোয় নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। অনেক ছোটখাটো পুজোর পরিকল্পনাও আমাদের বিস্মিত করে তুলছে। তবে দেবী আরাধনার বিচারে মহিষাসুরকে বধ করার মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশেরই তারিফ করা হয়। আর তাই দুর্গাকে বলা হয়. অসুরদলনী বা মহিষাসুরমর্দিনী। কিন্তু মহিষাসুররা আজও রয়েছেন আমাদের মধ্যে। বাস্তবেই মহিষাসরের বংশধররা রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চা বাগান এলাকায়। এদের সকলেরই পদবি অসুর। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটার ক্যারন, গুরুজংঝোরার চা বাগান, আলিপুরদুয়ার জেলার মাঝেরভাবরি, নিমাতিঝোরা ও দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়ি চা বাগানে মোট ৬০০টি অসুর পরিবার বাস করেন। তবে ক্যারন চা বাগানেই থাকেন ৫০০ পরিবার। এরা চা বাগানের সাদরি ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ভালো বোঝেন না। অসুরদের ৫২.৭২ শতাংশ চা বাগানের শ্রমিক। ১৫.৬৫ শতাংশ কৃষক আর ১৩.৬ শতাংশ ক্ষেতমজুর। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, অসুরদের ৪৮.৬ শতাংশ মানুষ হিন্দু, ১৫.০৫ শতাংশ খ্রিষ্টান, ৪.৭৮ শতাংশ বৌদ্ধ এবং ১ শতাংশ মুসলমান। শহুরে মানুষকে এরা এড়িয়েই চলেন। অসুর জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, মহিষাসুর তাদের পূর্বপুরুষ। তাই পূর্বপুরুষের হত্যাকারিণী দুর্গার মুখ দর্শন করা তাদের নিষেধ। আর তাই শারদোৎসবের সময় এরা শোকের চিহ্ন হিসেবে বাড়ির চারপাশ কালোকাপড়ে ঢেকে রাখেন। প্রবীণেরা আজও এই সময়ে নিজেদের গৃহবন্দি করেই রাখেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অসুর প্রজন্মের ভাবনা-চিন্তাও বদলেছে। আর তাই মহিষাসুরকে দেবতা বলে গণ্য করেও তারা দুর্গামণ্ডপে গিয়ে দুর্গাকে পুষ্পাঞ্জলিও দেন। সংস্কারকে মনে না রেখে অন্যদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবে শামিল হয়। প্রবীণ অসুরদের অনেকেই মেনে নিয়েছেন, এখন সময় বদলেছে। অসুর সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন কাজে বাইরে যাচ্ছে। লেখাপড়া শিখে তারা আধুনিক মনস্ক হয়ে উঠেছে। ফলে ভেঙে গিয়েছে পুরনো সংস্কারের সব বাঁধ।
পুজোও রাজনৈতিক সাহিত্যের জায়গা
পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কলকাতার দুর্গাপুজোর মণ্ডপের ধারে কাছে দর্শনার্থীদের সঙ্গে জনসংযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের সাহিত্য সংক্রান্ত বইয়ের স্টল দেয়ার প্রতিযোগিতা এ বছর তীব্র হয়েছে। শারদীয় বইয়ের স্টল দেয়ার রেওয়াজ বামফ্রন্ট আমল থেকে চালু হয়েছিল। সেই সময়ে বামপন্থিরাই প্র্রগতিশীল সাহিত্য ও রাজনৈতিক বইয়ের সম্ভার নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় পুজোমণ্ডপের কাছে স্টল দিতো। সেই সব স্টলে আগ্রহী মানুষের ভিড়ও লেগে থাকতো। বিক্রি হতো ভালোই। কিন্তু বামরা রাজনৈতিক জমি হারানোর পর থেকে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত কয়েক বছরে তারাই সবচেয়ে বেশি বইয়ের স্টল দিয়েছে। এবারও তারা তিনশ’র বেশি স্টল দিয়েছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সাহিত্য সম্ভার বলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ৮৮টি বই। সেই সঙ্গে দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলার’ কিছু বিশেষ সংখ্যা নিয়ে তারা স্টল সাজায়। অবশ্য আজকাল কিছু সাহিত্যিকের বইও এই সব স্টলে দেখা যায়। তবে রাজনৈতিক দলের বইয়ের স্টল দেয়ার প্রতিযোগিতায় বিজেপি এখন এগিয়ে এসেছে।
কলকাতার সব বড় পুজোমণ্ডপে বিজেপি স্টল দিয়েছে। রাজনৈতিক বাধায় কিছু ক্ষেত্রে তাদের পিছু হটতে হলেও স্টলের সংখ্যায় তারাই দ্বিতীয়। প্রধানত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা বই এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর ভাষণ এবং কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ ও এনআরসি সংক্রান্ত বই নিয়েই তারা স্টল সাজিয়েছে। তাদের সেই স্টলে জায়গা পেয়েছে আরএসএসেরও কিছু বই। এই দুই দলের প্রতিযোগিতার মধ্যেই বামরা হারানো জমি ফিরে পেতে আগের মতোই রাজনৈতিক সাহিত্য ও রাজনীতির বই নিয়ে স্টল সাজিয়েছে বেশকিছু জায়গায়। তাদের বইয়ের স্টলের এবারের প্রধান আকর্ষণ চীন নিয়ে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের লেখা বই। দলীয় পত্রপত্রিকার শারদ সংখ্যা নিয়েও এরা বেশ আগ্রহী। প্রধান এই তিন রাজনৈতিক দলের স্টল ছাড়াও বিভিন্ন হিন্দুবাদী সংগঠন এবার পুজোয় অনেক স্টল দিয়েছে। আর ছোট দল হলেও এসইউসিআই প্রতিবারের মতোই এবার তারা তাদের দলীয় সাহিত্য নিয়ে স্টল দিয়েছে বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে।
বিসর্জনেও লাল ফিতার ব্যারিকেড
দুই বাংলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর টাকি অংশে দুই বাংলার প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে প্রতি বছর এপার বাংলা ওপার বাংলা একাকার হয়ে যেত। প্রতিমা নিয়ে আসা দুই দেশের নৌকায় থাকা মানুষ একে অপরকে আলিঙ্গন করতেন। বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতেন। এই মিলন, আনন্দঘন মুহূর্ত দেখতে ইছামতীর দুই পাড়ে দুই দেশের লাখ লাখ মানুষ জড়ো হন। কিন্তু এখন আর ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জনের সুযোগে দুই বাংলার মানুষের মিলন হয় না। দু’পার থেকে স্বজনেরা চোখের পানিতে ভাসিয়ে দেন নিজেদের মধ্যেকার আত্মীয়তাকে। কয়েক বছর ধরেই দু’পারের মানুষের মেলামেশায় আপত্তি জানিয়ে নানা কড়া ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল। তবে এবার তা আরো কঠোর হয়েছে। ঠিক হয়েছে, মাঝনদী বরাবর থাকবে লাল সুতোর সীমানা ব্যারিকেড। অনুপ্রবেশ আটকাতে এই সিদ্ধান্ত বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। আরো ঠিক হয়েছে, দুই দেশের নৌকার মাঝে থাকবে প্রায় ১০০ ফুটের দূরত্ব। তবে এই কড়াকড়ি সত্ত্বেও টাকিতে ইছামতী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসছে বলে স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে। টাকির সবক’টি সরকারি, বেসরকারি হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস ‘হাউসফুল’। ইছামতীর বিসর্জন ঘিরে টাকিতে কড়া নিরাপত্তাও জারি করা হয়েছে।
No comments