আওয়ামী লীগে খুনোখুনির নেপথ্যে ভাগ-বাটোয়ারা by নুরুজ্জামান লাবু
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে চলছে খুনোখুনি। ঘটছে একের পর এক খুনের ঘটনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠছে দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ কারণে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, ঢাকার বাইরে দেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলাতেও একই অবস্থা। এ পর্যন্ত সংঘটিত এসব দলীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ভাগবাটোয়ারার বিষয় জড়িত বলে তদন্ত সূত্র জানিয়েছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসার ভাগবাটোয়ারার বিষয়ও আছে কোন কোন হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের গত আট মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী খুন হন। নিজ দলের লোকজনের হাতেই খুন হন তারা। এসব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খুনি খুনিই। তাদের কোন দলীয় পরিচয় নেই। খুনিদের কারও ছাড় নেই- সে দলের হোক বা দলের বাইরের কেউ হোক। আইন তার নিজের গতিতে চলবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা খুনের ঘটনায় এমপিদের নামও এসেছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
গত শুক্রবার খোদ ঢাকার আজিমপুরের আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের অনুসারীদের বিরোধের জের ধরে এক কর্মী খুন হন। একটি কাঁচাবাজারের দখল নিয়ে স্থানীয় এমপি হাজী সেলিমের অনুসারীদের সঙ্গে সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন সাহাবুদ্দিন সাবু নামে এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শ্যামপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম লালুকে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ একই ইউনিয়ন ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরনবী শাওনকে ওরফে হাতকাটা নবীকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে লালুকে হত্যা করা হয়। গত ১০ই আগস্ট আগারগাঁওয়ের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার নেপথ্যেও আধিপত্য বিস্তার বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২০শে মে ফেনী শহরে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক একরামকে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার তদন্ত শেষে পুলিশ যে চার্জশিট দিয়েছে তাতে নিজাম হাজারীর নাম না থাকলেও চার্জশিটভুক্ত বেশির ভাগ আসামিই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। গত ১৫ই জানুয়ারি যশোরের বেলতলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলি ও বোমা হামলায় নিহত হন শহর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শিপন। এ মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফয়সাল খানসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনার নেপথ্যেও দলীয় নেতাকর্মী। ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন র্যাব সদস্যদের দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত র্যাব সদস্য ও নূর হোসেনের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলছে। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনেও আধিপত্য বিস্তার প্রধান কারণ বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বছরের ২৯শে জুলাই রাজধানীর গুলশানে গুলি করে হত্যা করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে। এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত একই সংগঠনের নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ দু’জন র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। তদন্ত শেষে এই ঘটনায় তারেক ছাড়া আরও ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় র্যাব। এর মধ্যে বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল বিদেশে পলাতক ও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু কারাগারে। অন্যরা অনেকেই জামিনে রয়েছেন। বর্তমানে মামলাটির অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
গত বছরের ১৮ই জানুয়ারি টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফারুককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে টাঙ্গাইলের খান পরিবারের চার ভাই সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, টাঙ্গাইলের চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাঁকন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সানিয়াত খান বাপ্পার হাত রয়েছে। মূলত জেলা সেক্রেটারির পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ফারুককে হত্যা করা হয়।
গত ২৪শে মে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুইছড়িতে আওয়ামী লীগের সুলতান গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রাণ হারান শামসুল আলম। ১৬ই মার্চ নগরীর দুই নম্বর গেটে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ফোরকান ও কামরুল। যুবলীগ নেতা আবুল বশর এই জোড়া খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত নির্বাচনের পর লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছেন চরশাহী আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, রায়পুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ, ভাঙ্গাখা ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী রিপন হোসেন, বসিকপুর যুবলীগ নেতা রোমান হোসেন, রামগঞ্জ যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম, চন্দ্রগঞ্জ বসুদহিতা ছাত্রলীগ কর্মী মামুন হোসেন, চন্দ্রগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই কর্মী রবিউল ইসলাম শিমূল এবং ফরহাদ হোসেন মামুন। তাদের মধ্যে ফরহাদ হোসেন মামুনকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-বিবাদ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা থেকেই এ সব ঘটনা ঘটেছে। দলীয় কোন্দলের কারণে নোয়াখালীর চাটখিলে ১৬ই মার্চ চাটখিল পৌর ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন প্রথমে অপহরণ ও পরে গুলিতে নিহত হন। ৭ই মে অপহরণের পর খুন হন যুবলীগ নেতা শুভংকর চন্দ্র কুঁড়ি। ২৬শে এপ্রিল যশোরের বেনাপোলে পাল্টাপাল্টি হামলায় খুন হন যুবলীগের দুই কর্মী পুটখালীর ইমান আলী ও উত্তর বারোপোতা এলাকার লালন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফোরকান উদ্দিন মৃধা ওরফে পাহাড়ি সেলিম নিহত হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দলীয় নেতাকর্মী খুনের ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মী জড়িত থাকায় তদন্ত প্রভাবিত হয়ে থাকে। অনেক সময় জড়িত নেতাকর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। এ জন্য তারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। এ কারণে বেশির ভাগ অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। কিংবা ধরা পড়লেও সহজেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। দলের ঊর্ধ্বতন নেতারাও দলীয় অবস্থান ধরে রাখার জন্য অভিযুক্তদের পক্ষ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়াউর রহমান বলেন, রাজনীতি যখন অর্থ উপার্জনের উৎস হয় তখন এমন খুনোখুনি হয়। এক শ্রেণীর লোক রাজনীতিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এলাকায় যার আধিপত্য তার হাতেই সব কিছু থাকে নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে আধিপত্য বিস্তারের কারণে নিজ দলের নেতাকর্মীকে খুন করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের তৃণমূলে যতদিন না গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন না ঘটবে ততদিন এভাবে চলতে থাকবে।
গত শুক্রবার খোদ ঢাকার আজিমপুরের আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের অনুসারীদের বিরোধের জের ধরে এক কর্মী খুন হন। একটি কাঁচাবাজারের দখল নিয়ে স্থানীয় এমপি হাজী সেলিমের অনুসারীদের সঙ্গে সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন সাহাবুদ্দিন সাবু নামে এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শ্যামপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম লালুকে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ একই ইউনিয়ন ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরনবী শাওনকে ওরফে হাতকাটা নবীকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে লালুকে হত্যা করা হয়। গত ১০ই আগস্ট আগারগাঁওয়ের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার নেপথ্যেও আধিপত্য বিস্তার বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২০শে মে ফেনী শহরে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক একরামকে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার তদন্ত শেষে পুলিশ যে চার্জশিট দিয়েছে তাতে নিজাম হাজারীর নাম না থাকলেও চার্জশিটভুক্ত বেশির ভাগ আসামিই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। গত ১৫ই জানুয়ারি যশোরের বেলতলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলি ও বোমা হামলায় নিহত হন শহর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শিপন। এ মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফয়সাল খানসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনার নেপথ্যেও দলীয় নেতাকর্মী। ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন র্যাব সদস্যদের দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত র্যাব সদস্য ও নূর হোসেনের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলছে। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনেও আধিপত্য বিস্তার প্রধান কারণ বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত বছরের ২৯শে জুলাই রাজধানীর গুলশানে গুলি করে হত্যা করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে। এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত একই সংগঠনের নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ দু’জন র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। তদন্ত শেষে এই ঘটনায় তারেক ছাড়া আরও ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় র্যাব। এর মধ্যে বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল বিদেশে পলাতক ও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু কারাগারে। অন্যরা অনেকেই জামিনে রয়েছেন। বর্তমানে মামলাটির অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
গত বছরের ১৮ই জানুয়ারি টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফারুককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে টাঙ্গাইলের খান পরিবারের চার ভাই সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, টাঙ্গাইলের চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাঁকন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সানিয়াত খান বাপ্পার হাত রয়েছে। মূলত জেলা সেক্রেটারির পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ফারুককে হত্যা করা হয়।
গত ২৪শে মে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুইছড়িতে আওয়ামী লীগের সুলতান গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রাণ হারান শামসুল আলম। ১৬ই মার্চ নগরীর দুই নম্বর গেটে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ফোরকান ও কামরুল। যুবলীগ নেতা আবুল বশর এই জোড়া খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত নির্বাচনের পর লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছেন চরশাহী আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, রায়পুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ, ভাঙ্গাখা ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী রিপন হোসেন, বসিকপুর যুবলীগ নেতা রোমান হোসেন, রামগঞ্জ যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম, চন্দ্রগঞ্জ বসুদহিতা ছাত্রলীগ কর্মী মামুন হোসেন, চন্দ্রগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই কর্মী রবিউল ইসলাম শিমূল এবং ফরহাদ হোসেন মামুন। তাদের মধ্যে ফরহাদ হোসেন মামুনকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-বিবাদ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা থেকেই এ সব ঘটনা ঘটেছে। দলীয় কোন্দলের কারণে নোয়াখালীর চাটখিলে ১৬ই মার্চ চাটখিল পৌর ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন প্রথমে অপহরণ ও পরে গুলিতে নিহত হন। ৭ই মে অপহরণের পর খুন হন যুবলীগ নেতা শুভংকর চন্দ্র কুঁড়ি। ২৬শে এপ্রিল যশোরের বেনাপোলে পাল্টাপাল্টি হামলায় খুন হন যুবলীগের দুই কর্মী পুটখালীর ইমান আলী ও উত্তর বারোপোতা এলাকার লালন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফোরকান উদ্দিন মৃধা ওরফে পাহাড়ি সেলিম নিহত হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দলীয় নেতাকর্মী খুনের ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মী জড়িত থাকায় তদন্ত প্রভাবিত হয়ে থাকে। অনেক সময় জড়িত নেতাকর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। এ জন্য তারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। এ কারণে বেশির ভাগ অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। কিংবা ধরা পড়লেও সহজেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। দলের ঊর্ধ্বতন নেতারাও দলীয় অবস্থান ধরে রাখার জন্য অভিযুক্তদের পক্ষ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়াউর রহমান বলেন, রাজনীতি যখন অর্থ উপার্জনের উৎস হয় তখন এমন খুনোখুনি হয়। এক শ্রেণীর লোক রাজনীতিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এলাকায় যার আধিপত্য তার হাতেই সব কিছু থাকে নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে আধিপত্য বিস্তারের কারণে নিজ দলের নেতাকর্মীকে খুন করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের তৃণমূলে যতদিন না গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন না ঘটবে ততদিন এভাবে চলতে থাকবে।
No comments