সক্রিয় আন্তর্জাতিক জঙ্গিরা -আঞ্চলিকভাবে সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন

জঙ্গি সমস্যার নতুন এক পর্বে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এত দিন সরকারিভাবে বলা হতো, বাংলাদেশের জঙ্গি তত্পরতা নিতান্তই স্থানীয় বিষয়, আন্তর্জাতিক জঙ্গি তত্পরতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াও তাঁর আমলে জঙ্গি দমন অনেকটা সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। গত রোববারের প্রথম আলোর সংবাদ জানাচ্ছে, একাধিক বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশে অবস্থান করে দেশ-বিদেশে নাশকতার পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় ও পাকিস্তানি কয়েকজন জঙ্গি নিরাপত্তা সংস্থার হাতে আটকও হয়েছে। এরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের অংশ। সুতরাং আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশকে তাদের সদস্য সংগ্রহের পশ্চাদ্ভূমি হিসেবে ব্যবহার করছে কি না, কিংবা উপমহাদেশে তাদের প্রভাব বিস্তারের মঞ্চ হিসেবে বাংলাদেশের খোলামেলা পরিবেশকে তারা কাজে লাগাচ্ছে কি না, সেটা ভাবার বিষয়।
দুজন শীর্ষ জঙ্গিনেতার ফাঁসি কার্যকর এবং অনেকের আটক হওয়ার পর ভাবা হয়েছিল, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদী তত্পরতার হুমকি থেকে রেহাই পেয়েছে। তবে সাম্প্রতিক অনুসন্ধান বলছে, কেবল ডুবো পাহাড়ের ডগাটুকুই দৃশ্যমান, মূল দেহ রয়ে গেছে আড়ালে। সেই আড়ালের জগতে নানা জায়গায় তারা তাদের ঘাঁটি, প্রশিক্ষণের কেন্দ্র, যোগাযোগের কেন্দ্র, জাল মুদ্রার কারখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। দেশ থেকে প্রায় ২০০ জন জঙ্গি কর্মী ইরাক ও আফগানিস্তানে প্রেরিত হয়েছে বলে প্রথম আলোয় সংবাদ এসেছে। গত মঙ্গলবার ভারতের কলকাতায় তিন বাংলাদেশি জঙ্গি জাল টাকাসহ আটক হয়েছে। এর আগে ভারতের হায়দরাবাদ ও মুম্বাই শহরে নাশকতার ঘটনায় বাংলাদেশি জঙ্গিদের যোগসাজশ থাকার অভিযোগও উঠেছিল। সম্প্রতি ঢাকায় দুটি বিদেশি দূতাবাসে এদের হামলার পরিকল্পনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে ধরা পড়ে এবং তা ঠেকানো হয়। সর্বশেষ পাকিস্তানি ও ভারতীয় জঙ্গিদের বাংলাদেশে সক্রিয় থাকার কথাও জানা গেল।
বাংলাদেশে ভারতীয় ও পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠকদের আনাগোনার একটি কারণ, সেসব দেশের চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযান। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে তারা তাদের আশ্রয়কেন্দ্র ও ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে থাকতে পারে। দ্বন্দ্বমুখর গণতন্ত্র এবং সমাজজীবনে নানা ভাঙাগড়া ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আবহে বাংলাদেশের মতো দেশে চরমপন্থী মনোভাব দানা বাঁধার সুযোগ রয়েছে। তবে সংঘবদ্ধ চক্র ছাড়া শক্তিশালী তত্পরতা চালানো কঠিন। বিশেষ করে ব্যাংক, হুন্ডি ইত্যাদির মাধ্যমে এরা বিদেশ থেকেও তহবিল পেয়ে থাকে। এ জন্য বিদেশ থেকে আসা অর্থের লেনদেনে সরকারি নজরদারি প্রয়োজন।
এ অবস্থায় সরকারসহ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি নতুন করে ভাবা দরকার। আন্তসীমান্ত জঙ্গি সমস্যা মোকাবিলায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ ও তথ্য আদান-প্রদানও জরুরি। জঙ্গি তত্পরতার বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। রাষ্ট্রীয় কোনো স্তর থেকে জঙ্গিরা যাতে সহায়তা না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার বিকল্প নেই। তবে এসব ব্যবস্থা যাতে মানবাধিকার খর্ব না করে, সেই বিবেচনাও রাখা শ্রেয়।

No comments

Powered by Blogger.