অক্ষৌহিণী শিল্পের উন্মুক্ত দুর্গ
সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক ছোট কাগজ
অক্ষৌহিণী (সম্পাদক : ড. সোলায়মান কবীর, নির্বাহী সম্পাদক : আহমেদ বাসার)
বের হল এবারের (২০১৪) বইমেলায়। দীর্ঘ বিরতির পর প্রকাশ পেল এর তৃতীয়
সংখ্যা। এই অনিয়মিত হয়ে যাওয়া লিটল ম্যাগাজিনের হরহামেশা সত্য আমাদের দেশে।
শুধু নিজেদের আকাক্সক্ষা, আগ্রহ, শিল্পের অসীম অনুরাগ ছাড়া
শিল্প-সাহিত্যের এ কাজটি সম্ভব নয়। কেননা কোনো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এখানে
নেই, নেই বিজ্ঞাপনী অর্থের সমাহার। তবুও দীর্ঘকালের একটি আগ্রহকে মনের
ভেতর পুষে রেখে সবাইকে নতুন করে জাগানো কম কৃতিত্বের কথা নয়। শিল্পের প্রতি
একান্ত আত্মনিবেদনই কেবল এখানে কার্যকর সত্য।
একটা গভীর তাৎপর্য ব্যতিরেকে সাহিত্যপত্র নামাঙ্কিত হয় না। অক্ষৌহিণীর বিরাট চক্রব্যুহে কালিক সীমানার প্রসঙ্গটি জ্বলজ্বলে। সেই সঙ্গে যাপিত মানুষের দ্রোহ, জীবনযুদ্ধ কিংবা সংগ্রামশীল সত্তা এর প্রতিটি লেখায় স্পষ্ট। আর লিটল ম্যাগাজিন তো তাই-ই। কালের সত্যকে উপস্থাপন না করে তার উপায় নেই। কোনো কথাকে বাসী করা এখানে চলে না।
আমাদের পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত গণ্ডির সঙ্গে আরও বিস্তৃত বহু বিষয়-আশয় অথবা ভূগোল এখানে সন্নিবেশিত। অক্ষৌহিণীতে এই বিচিত্রতাকে ধরার মানসিকতা সম্পাদনা পর্ষদের সুচিন্তিত ভাবনার ফসল। আর লেখক যারা কীনা এর রচনার অংশীদার বলাবাহুল্য, তারা বহুভঙ্গিম ও বহুবিধ সম্ভাবনাকে একত্রীভূত করেছেন। এটা পূর্ব ঘোষিত নয়, পুনরায় হয়ে উঠবার প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা- এই ত্রিভূবনের বাংলাভাষী লেখকরা এখানে শিল্পের সমপঙ্ক্তিতে দণ্ডায়মান। শিল্পের এত শাখায় শিল্পী-সাহিত্যিকদের লেখা অন্তর্ভুক্ত করাও রীতিমতো যুদ্ধঘোষণা করার শামিল। কারণ সম্পাদক মহাশয়দের এতে জেরবার হওয়ার অবস্থা।
তবে এখানে সত্তরের সাহিত্য মূল্যায়নের পর্বটি সংক্ষিপ্ত না হয়ে বিস্তৃত হতে পারত। তবুও আমাদের প্রতিনিধিত্বশীল ভাবুক-চিন্তক তাদের বক্তব্যে মহল যার যার বিশেষত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশেষ সংখ্যা ছাড়া এ সময়ের লিটলম্যাগ সম্পাদক নন শুধু, গ্রন্থও করতে চান না। অন্যদিকে প্রকাশকদের হৃদযন্ত্রের অবস্থা সহজগ্রাহ্য। অক্ষৌহিণী তার বর্তমান সংখ্যাটিতে আমাদের সত্তরের সাহিত্যের বিশেষ মূল্যায়ন পর্বটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। রফিকুল্লাহ খান, সুশান্ত মজুমদার, আলী রিয়াজ ও পারভীন জলি এ পর্বটি সম্পন্ন করেছেন। সত্তরের বাংলাদেশ তা সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে গৌরবান্বিত, কতটা শিল্পিতভাবে উপস্থাপিত এমনকি দুর্বলতায় অধ্যুষিত এর চমৎকার মূল্যায়ন করেছেন এবং গুরুত্ববহ সিদ্ধান্ত তারা উপস্থাপন করেছেন।
প্রবন্ধে উপনিবেশের সাহিত্য, উপনিবেশ বিরোধিতার প্রসঙ্গকে বৈশ্বিক আবহে যথেষ্ট বোধগম্য করে চিহ্নিত করেছেন মহীবুল আজিজ। কবি নুরুল হুদা তার প্রবন্ধে আমাদের কবিতা, কবিতার আন্দোলন, এর উচ্ছ্বাস কিংবা থিতিয়ে যাওয়া, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে নিমিজ্জত স্বদেশ, শিল্প-আয়োজকদের সংকীর্ণতার ত্র“টি প্রভৃতি আশা ও নিরাশার দারুণ সব সত্য কথা বলেছেন। সাইমন জাকারিয়া আমাদের দেশীয় নাট্যাঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন নাট্যজন সেলিম আলদীনকে নিয়ে। প্রসঙ্গত ভিন্ন সংস্কৃতির জনগোষ্ঠীর কথা এখানে অন্যতম বিবেচ্য। গল্পকার মঞ্জু সরকার, সেলিনা হোসেন কিংবা আরও কজনের গল্পে আমাদের বাংলাদেশের বঞ্চিত মানুষ ও সংশ্লিষ্টজনের সুখ-দুঃখের অমর প্রসঙ্গ গভীরভাবে নাড়া দেয়। রায়হান রাইনের অনুবাদ কেরালার কবি বালাচন্দ্রন চুল্লিক্কাদের কবিতা আমাদের কন্টিনেন্ট সাহিত্যের আরেক বিশ্ব।
সৃষ্টিশীল সাহিত্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অংশ কবিতাভাগ। এ ছাড়াও অনুবাদ কবিতা, মুক্তগদ্য, গল্প, গ্রন্থালোচনা প্রভৃতি নানামাত্রার লেখা অক্ষৌহিণীর এ সংখ্যায় এনে দিয়েছে বৈচিত্র্যের স্বাদ। বাংলার তিন ভূবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবিদের লেখা, কলাকুশল, ধরনের বিচিত্রতা, গুচ্ছকবিতা নানা প্রসঙ্গেই কবিতা ভাগটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমাদের কবিতার অনেক উজ্জ্বল মুখই এখানে স্থান করে নিয়েছেন। পুরাণে অক্ষৌহিণী ২১৮৭০০ সংখ্যক সেনাবিশিষ্ট বিরাট যোদ্ধাদলের নাম। আয়োজনে অক্ষৌহিণীর সম্পাদনা পর্ষদ সে বিষয়টিকে হয়ত মাথায় রেখেছিলেন। বিচিত্র প্রসঙ্গে, নানামাত্রিক ভাবনায়, বিষয় বিন্যাসে, শৈল্পিক অনুভববেদ্যতায় সংখ্যাটি আমাদের লিটলম্যাগ সাহিত্য চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলে বিবেচিত হওয়ার প্রত্যাশা রাখে। অক্ষৌহিণীর এই ধারা অব্যাহত থাকুক। তার সৈন্য সেনা দলের সংখ্যা, সাহিত্যমূল্য ও কলেবর বৃদ্ধি হয়ে শিল্পপত্রটি মহীরুহ হয়ে উঠুক এটাই চাওয়ার।
খোরশেদ আলম
একটা গভীর তাৎপর্য ব্যতিরেকে সাহিত্যপত্র নামাঙ্কিত হয় না। অক্ষৌহিণীর বিরাট চক্রব্যুহে কালিক সীমানার প্রসঙ্গটি জ্বলজ্বলে। সেই সঙ্গে যাপিত মানুষের দ্রোহ, জীবনযুদ্ধ কিংবা সংগ্রামশীল সত্তা এর প্রতিটি লেখায় স্পষ্ট। আর লিটল ম্যাগাজিন তো তাই-ই। কালের সত্যকে উপস্থাপন না করে তার উপায় নেই। কোনো কথাকে বাসী করা এখানে চলে না।
আমাদের পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত গণ্ডির সঙ্গে আরও বিস্তৃত বহু বিষয়-আশয় অথবা ভূগোল এখানে সন্নিবেশিত। অক্ষৌহিণীতে এই বিচিত্রতাকে ধরার মানসিকতা সম্পাদনা পর্ষদের সুচিন্তিত ভাবনার ফসল। আর লেখক যারা কীনা এর রচনার অংশীদার বলাবাহুল্য, তারা বহুভঙ্গিম ও বহুবিধ সম্ভাবনাকে একত্রীভূত করেছেন। এটা পূর্ব ঘোষিত নয়, পুনরায় হয়ে উঠবার প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা- এই ত্রিভূবনের বাংলাভাষী লেখকরা এখানে শিল্পের সমপঙ্ক্তিতে দণ্ডায়মান। শিল্পের এত শাখায় শিল্পী-সাহিত্যিকদের লেখা অন্তর্ভুক্ত করাও রীতিমতো যুদ্ধঘোষণা করার শামিল। কারণ সম্পাদক মহাশয়দের এতে জেরবার হওয়ার অবস্থা।
তবে এখানে সত্তরের সাহিত্য মূল্যায়নের পর্বটি সংক্ষিপ্ত না হয়ে বিস্তৃত হতে পারত। তবুও আমাদের প্রতিনিধিত্বশীল ভাবুক-চিন্তক তাদের বক্তব্যে মহল যার যার বিশেষত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশেষ সংখ্যা ছাড়া এ সময়ের লিটলম্যাগ সম্পাদক নন শুধু, গ্রন্থও করতে চান না। অন্যদিকে প্রকাশকদের হৃদযন্ত্রের অবস্থা সহজগ্রাহ্য। অক্ষৌহিণী তার বর্তমান সংখ্যাটিতে আমাদের সত্তরের সাহিত্যের বিশেষ মূল্যায়ন পর্বটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। রফিকুল্লাহ খান, সুশান্ত মজুমদার, আলী রিয়াজ ও পারভীন জলি এ পর্বটি সম্পন্ন করেছেন। সত্তরের বাংলাদেশ তা সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে গৌরবান্বিত, কতটা শিল্পিতভাবে উপস্থাপিত এমনকি দুর্বলতায় অধ্যুষিত এর চমৎকার মূল্যায়ন করেছেন এবং গুরুত্ববহ সিদ্ধান্ত তারা উপস্থাপন করেছেন।
প্রবন্ধে উপনিবেশের সাহিত্য, উপনিবেশ বিরোধিতার প্রসঙ্গকে বৈশ্বিক আবহে যথেষ্ট বোধগম্য করে চিহ্নিত করেছেন মহীবুল আজিজ। কবি নুরুল হুদা তার প্রবন্ধে আমাদের কবিতা, কবিতার আন্দোলন, এর উচ্ছ্বাস কিংবা থিতিয়ে যাওয়া, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে নিমিজ্জত স্বদেশ, শিল্প-আয়োজকদের সংকীর্ণতার ত্র“টি প্রভৃতি আশা ও নিরাশার দারুণ সব সত্য কথা বলেছেন। সাইমন জাকারিয়া আমাদের দেশীয় নাট্যাঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন নাট্যজন সেলিম আলদীনকে নিয়ে। প্রসঙ্গত ভিন্ন সংস্কৃতির জনগোষ্ঠীর কথা এখানে অন্যতম বিবেচ্য। গল্পকার মঞ্জু সরকার, সেলিনা হোসেন কিংবা আরও কজনের গল্পে আমাদের বাংলাদেশের বঞ্চিত মানুষ ও সংশ্লিষ্টজনের সুখ-দুঃখের অমর প্রসঙ্গ গভীরভাবে নাড়া দেয়। রায়হান রাইনের অনুবাদ কেরালার কবি বালাচন্দ্রন চুল্লিক্কাদের কবিতা আমাদের কন্টিনেন্ট সাহিত্যের আরেক বিশ্ব।
সৃষ্টিশীল সাহিত্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অংশ কবিতাভাগ। এ ছাড়াও অনুবাদ কবিতা, মুক্তগদ্য, গল্প, গ্রন্থালোচনা প্রভৃতি নানামাত্রার লেখা অক্ষৌহিণীর এ সংখ্যায় এনে দিয়েছে বৈচিত্র্যের স্বাদ। বাংলার তিন ভূবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবিদের লেখা, কলাকুশল, ধরনের বিচিত্রতা, গুচ্ছকবিতা নানা প্রসঙ্গেই কবিতা ভাগটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আমাদের কবিতার অনেক উজ্জ্বল মুখই এখানে স্থান করে নিয়েছেন। পুরাণে অক্ষৌহিণী ২১৮৭০০ সংখ্যক সেনাবিশিষ্ট বিরাট যোদ্ধাদলের নাম। আয়োজনে অক্ষৌহিণীর সম্পাদনা পর্ষদ সে বিষয়টিকে হয়ত মাথায় রেখেছিলেন। বিচিত্র প্রসঙ্গে, নানামাত্রিক ভাবনায়, বিষয় বিন্যাসে, শৈল্পিক অনুভববেদ্যতায় সংখ্যাটি আমাদের লিটলম্যাগ সাহিত্য চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলে বিবেচিত হওয়ার প্রত্যাশা রাখে। অক্ষৌহিণীর এই ধারা অব্যাহত থাকুক। তার সৈন্য সেনা দলের সংখ্যা, সাহিত্যমূল্য ও কলেবর বৃদ্ধি হয়ে শিল্পপত্রটি মহীরুহ হয়ে উঠুক এটাই চাওয়ার।
খোরশেদ আলম
No comments