বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে by মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

দৈনন্দিন সাংসারিক বাজার করতে যাওয়াটা এখন অনেকটাই ঘাম দিয়ে জ্বর আসার মতো একটি ব্যাপার হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের জীবনে বহুদিন ধরেই এটি একটি নিত্যদিনের যন্ত্রণা। বছরের শেষ দিকে এসে এই যন্ত্রণার মাত্রায় এক অসহনীয় উলস্নম্ফন ঘটেছে। দেশের আপামর গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষকে তা দিশাহারা করে তুলেছে। চাল, তেল, পেঁয়াজসহ অতি আবশ্যক খাদ্যসামগ্রীর দাম বিস্ময়কর-ভাবে হঠাৎই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এভাবে বাজার দর বেড়ে যাওয়ার কারণ কি? 'সরবরাহ কম, তাই দাম তো বাড়বেই'_ মহল- বিশেষের এই গৎবাঁধা অজুহাত মানুষের অতি সহজ-সরল যুক্তি-বুদ্ধির সামনে ধোপে টিকছে না। সরবরাহে ঘাটতিই যদি দাম বাড়ার কারণ হবে তাহলে আমনের ভরা মৌসুমে কেন বাজারে চালের দাম কমার বদলে উল্টো প্রতিদিনই তা বাড়ছে, এই পাল্টা প্রশ্ন এ প্রসঙ্গে সব মানুষের মনে উদয় হওয়াটা স্বাভাবিক। বাজারের এহেন বৈরী খামখেয়া-লিপনার কারণ মানুষের কাছে রহস্যাবৃতই হয়ে থাকছে। হালচাল অবলোকন করে তার মনে ক্রোধান্বিত এই প্রশ্নটি উথাল-পাথাল করছে 'বাজার তবে চলে আসলে কার নিয়ন্ত্রণে?'
এ প্রশ্নের জবাবটি এক অর্থে খুবই সহজ। আবার আরেক বিচারে তা বেশ কঠিন। সহজ জবাব হলো,_ বাজার চলে 'টাকার' নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এহেন অতি সহজ জবাবের বিষয়ে জোরালো আপত্তি করা যেতে পারে এই কথা দিয়ে যে,_ 'বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে' মর্মে প্রশ্নটিই ত্রুটিপূর্ণ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় 'বাজার' এবং 'নিয়ন্ত্রণ'_ এ দুটো হলো পরস্পর বিরোধী (সঁঃঁধষষু বীপষঁংরাব) ধারণা। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাজার নিজেকেই নিজে পরিচালনা করে। বাজারের বিভিন্ন শক্তি ও উপাদানের পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে স্বতঃস্ফর্ূতভাবে বাজার পরিচালিত হয়। বাজারের তাই কোনো 'বাজার-উপাদান বহিভর্ূত' নিয়ন্ত্রক নেই। বাইরে থেকে বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হলে সেটা তখন আর বিশুদ্ধ বাজার (ঢ়বৎভবপঃ সধৎশবঃ) থাকে না।
পুঁজিবাদের তাত্তি্বকদের কথা হলো, বাজারকে তার স্বতঃস্ফর্ূত ধারায় স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে দিলেই সব সমস্যা আপনা-আপনি সমাধান হয়ে যাবে। বাজারের যে উত্থান-পতনের প্রক্রিয়া আমরা অবলোকন করি তা কোনো রোগ নয়। বরং তা হলো রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা। যেটাকে বাজারের খামখেয়ালিপনা ও নৈরাজ্য বলে মনে হয় আসলে তা হচ্ছে বাজারের স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে প্রয়োজনীয় একটি অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া মাত্র। এই উত্থান-পতনের আপাত খামখেয়ালি-পনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কোনোরূপ চেষ্টা সমস্যার সমাধান না করে তাকে শুধু আরো বাড়িয়ে তুলবে। সুতরাং প্রেসক্রিপশন হলো একটিই,_ বাজারকে তার মতো করে স্বাধীনভাবে চলতে দাও!
'বিশুদ্ধ বাজার'-এর তত্ত্বের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল কখনই ঘটে না। অগণিত ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতি, পণ্যের অবাধ স্থানান্তরের সুযোগ, বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বব্যাপী ব্যাপ্ত তাৎক্ষণিক ও পরিপূর্ণ তথ্যের নিশ্চয়তা ইত্যাদি হলো বিশুদ্ধ বাজারের জন্য আবশ্যিক শর্ত। এসব শর্ত কখনই বাস্তব জীবনে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই, বিশুদ্ধ বাজার-এর তত্ত্বের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা বলে মন ভুলানো কল্পস্বর্গের চিত্র অাঁকলেও বাস্তবে পুঁজিবাদ 'অবিশুদ্ধ বাজার' (রসঢ়বৎভবপঃ পড়সঢ়বঃরঃরড়হ) কাঠামোতে পরিচালিত হয়ে থাকে। 'অবিশুদ্ধ বাজারে' টাকার শক্তির প্রভাব বাজারের চালচিত্রে অনুপার্জিত আয় আত্মসাৎসহ নানা বিকৃতি ঘটায়। তাছাড়া, এমনকি 'বিশুদ্ধ বাজারের' তত্ত্বে বিনিয়ন্ত্রণের (ফব-ৎবমঁষধঃরড়হ) ধ্বজা তুলে ধরলেও সেক্ষেত্রেও এক অদৃশ্য শক্তি বাস্তবে বাজারের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। এই অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক-শক্তি চোরাগোপ্তা পথে বাজারে তার স্থান করে নেয়। 'বাজার কার নিয়ন্ত্রণে চলে?'_ এই প্রশ্নকে ঘিরে রহস্যময়তার কারণ প্রধানত এখানেই নিহিত।
বাজার নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে যে রহস্যময়তা, তার সুযোগে চাহিদা-সরবরাহসহ বাজারের সামগ্রিক শক্তি ও উপাদানসমূহের ওপর আধিপত্য স্থাপন করে নিতে সক্ষম হয় বাজারে ক্রিয়ারত সবচেয়ে সচল উপাদান,_ বাজারের প্রবাহমান 'টাকার শক্তি'। টাকার জোরে প্রভাবিত করা সম্ভব হয় কার্যকর চাহিদা ও সরবরাহ (বভভবপঃরাব ফবসধহফ ধহফ ংঁঢ়ঢ়ষু) ইত্যাদি। এভাবেই 'টাকা' হয়ে ওঠে বাজারের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রক এবং বাজারের ওপর স্থাপিত হয় 'টাকাওয়ালাদের' আধিপত্য।
বাজারে টাকা খাটাতে পারার সামর্থ্যকে ব্যবহার করার মাধ্যমে 'টাকাওয়ালাদের' দ্বারা পণ্যের সরবরাহ বা চাহিদা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কারণ, কোনো বাজারই 'বিশুদ্ধ বাজার' নয় যে সেখানে অগণিত ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকবে। বাস্তবে যে 'অবিশুদ্ধ বাজার' নিয়ে আমাদের জীবন সেখানে টাকার ওপর মুষ্টিমেয় ধনকুবেরের আধিপত্য দ্বারা বাজারের বাস্তবতা, তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। বিক্রেতা হিসাবে টাকা দিয়ে পণ্য কিনে তা মজুদ করে কৃত্রিম সরবরাহ-সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে তারা বাজারে পণ্যের দাম অনেকটা পরিমাণেই তাদের নিজস্ব সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। কিংবা টাকা আটকে রেখে কৃত্রিম ক্রেতা সঙ্কট তৈরি করে (চালকল মালিক কর্তৃক কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা বন্ধ রেখে কৃষককে কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য করা) তারা তাদের সুবিধামতো বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়।
এভাবেই লোকচক্ষু থেকে আপাত আড়ালে অবস্থানে নিয়ে ও সাধারণ জ্ঞানে বুঝতে পারার সক্ষমতার বাইরে, অনেকটাই অদৃশ্য পরোক্ষ উপায়ে, বাজার পরিচালিত হয় 'টাকার' ও 'টাকাওয়ালাদের' নিয়ন্ত্রণে। এসব টাকা-ওয়ালারা বাজারের একটি শক্তি হিসেবে সক্রিয় থাকে তাদের মুনাফার হার আরো বেশি বাড়ানোর তাগিদে। মুনাফার হার বাড়ানো যেতে পারে প্রধানত 'টাকার ক্ষমতায়' যারা তুলনামূলকভাবে দুর্বল সেসব অগণিত গরিব ও মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে, যারা কিনা দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। সাধারণ মানুষকে, সে মেহনতি কৃষক হিসেবে খাদ্যপণ্যের বিক্রেতা হোক কিংবা ভোক্তা হিসেবে ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা হোক, যত বেশি বঞ্চিত করা যাবে বাজারের লুটেরা টাকা-ওয়ালাদের মুনাফাও তত বৃদ্ধি পাবে। এটাই পুঁজিবাদী বাজারের একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। এখানেই সাধারণ মানুষের স্বার্থের সাথে পুঁজিবাদী বাজারের মৌলিক বৈরিতার উৎপত্তিস্থল।
বাজার যেভাবে 'টাকা' ও 'টাকাওয়া-লাদের' নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার চূড়ান্ত উপায় হলো তাদের জন্য এই নিয়ন্ত্রণকে অসম্ভব করে তোলা। সেজন্য প্রয়োজন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণ করা। সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু সেই লক্ষ্যে আপাত কিছু স্বস্তিও যদি গরিব-মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য প্রদান করতে হয় তাহলে তার জন্য একটিই পথ রয়েছে। সে পথ ও পদক্ষেপ হলো 'টাকার' নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে বাজারের ওপর একই সাথে সামাজিক স্বার্থের কার্যকর হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করা। এ কাজটি করতে হবে সরকার ও রাষ্ট্রকে। আর করতে হবে সরকারের সহযোগিতায় জনগণের সমবায়কে।
এখন বাস্তব জীবনে আসলে কি ঘটে চলেছে সে দিকেও একটু তাকিয়ে দেখা যাক। চাল, তেল, পেঁয়াজের বাজারে কি ঘটছে? গত পক্ষকালের মধ্যে চালের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা। অথচ তা বাড়ছে। এই অস্বাভাবিকতার একটি কারণ হলো উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত চালের সরবরাহ লাইনে স্তরে স্তরে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের উপস্থিতি। প্রধানত ধানকলের মালিকরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার পর সিন্ডিকেট করে ব্যাপক পরিমাণ ধান-চালের মজুদ গড়ে তুলেছে। ধান-চালের স্বাভাবিক সরবরাহ লাইনকে শর্ট-সার্কিট করে তারা ভোক্তা স্তরে কৃত্রিম সরবরাহ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। পাইকারি স্তরেও রয়েছে এ ধরনের বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। এসব লুটেরা টাকাওয়ালারা টাকার জোরে তাদের সুবিধামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে দেদারছে 'মুনাফা' কামিয়ে নিচ্ছে। ধান-চালের সরবরাহ লাইনের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ, হস্তক্ষেপ ও সরাসরি কার্যক্রম পরিচালনার কোনো ব্যবস্থা সরকার নিজের হাতে রাখেনি। সরকারের ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রমও পরিচালিত হয় হাস্কিং মিল মালিকদের মাধ্যমে। এসব মিল মালিকদেরকে (যারা অবৈধভাবে অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবেও ভূমিকা পালন করে থাকে) মজুদ গড়ে তোলার জন্য সরকারের অনুগ্রহে ব্যাংক থেকে উদারভাবে ঋণসহ আর্থিক মদদ দেয়া হচ্ছে। ভোক্তা স্তরেও রেশনিং ব্যবস্থা, ন্যায্যমূলের দোকান ইত্যাদি ধরনের কোনো স্থায়ী কার্যক্রম সরকারের নেই। অস্থায়ীভাবে স্বল্পকালীন যে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি কার্যক্রম আছে তা খুবই স্বল্প পরিসরে হওয়ায় সেটা দিয়ে বাজারের ওপর 'টাকাওয়ালাদের' প্রভাব খর্ব করা সম্ভব হয় না।
ভোজ্যতেলের বাজারকে কেন্দ্র করে 'টাকাওয়লাদের' কারসাজি চলছে বছরের পর বছর ধরে। দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা ১৪ লক্ষ টন। তার মধ্যে ১২ লক্ষ টনই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে সোয়াবিন তেল ও পামঅয়েল প্রধান। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও তেলের শোধনাগারসমূহ অল্প সংখ্যক টাকাওয়ালাদের মালিকানায় পরিচালিত। তাদের মধ্যে আবার দু'চার জন আছেন যাদেরকে এই খাতের রুই-কাতলা বলে আখ্যায়িত করা যায়। বস্তুত মাত্র ৯টি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেলের পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও সেই সূত্রে তার বাজারদর কার্যত প্রায় পরিপূর্ণভাবে তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ভোজ্যতেল আমদানি, পরিশোধন, পাইকারি ও খুচরা সরবরাহ প্রভৃতি কোনো পর্যায়েই সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যে ধমক দেন, গরম গরম কথা বলেন, মালিক সমিতির সাথে উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠক করেন। চারদিকে হৈচৈ ফেলে দেন। আর তারপর? মালিক সমিতিকে সন্তুষ্ট রাখার মতো নূ্যনতম দাম নির্ধারণ করে একটি ঐক্যমতের ঘোষণা জারি করা হয়। ভোজ্যতেলের লুটেরা আমাদানিকারী-পরিশোধনকারী কোম্পানির নির্ধারিত ফুলানো-ফাঁপানো মূল্যকেই এভাবে সরকারি বৈধতার সিল দিয়ে দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও দু'দিনের জন্য বাজার সেই নির্ধারিত দাম অনুযায়ী চললেও অচিরেই তেলের দাম আরেক দফা লাফ দিয়ে বৃদ্ধি পায়। চক্রাকারে আবার শুরু হয়ে যায় বাজার নিয়ে আরেক দফায় একই খেলা।
সরকার কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ভোজ্যতেল ও চিনির ক্ষেত্রে ডিও প্রথা বাতিল করে ডিলারশিপ অথবা পরিবেশক প্রথার প্রচলন ঘটাবে। দু'বছর ধরে এসব খাতে বাজার প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণকারী এই টাকাওয়ালা চক্রের কারণে এসবের কোনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। কয়েকদিন আগে সরকার ভোজ্যতেলের পাইকারি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর পরপরই মিলগুলো তেলের সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। মনিটরকৃত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারপ্রতি ১০টাকা বেশি দামে তা বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার ঘোষণা করেছে যে, আমদানিকারক ও তেলকল মালিকদের সাথে আলোচনা করে প্রতি ১৫ দিন অন্তর-অন্তর ভোজ্য তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হবে। মিল মালিকরা যেভাবে সব সময়ই ভোজ্যতেলের প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ঘোষিত দামের চেয়ে ৮/১০ টাকা বেশি রাখার ব্যবস্থা করছে তাতে সরকারকেও প্রতিবারই ঘোষিত দাম বাড়িয়ে চলতে হবে। ভোজ্যতেলের ওপর বর্তমানে যে ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য আছে তা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্যও মিল মালিকরা আবদার শুরু করেছে। এজন্য তারা নানাভাবে চাপ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার হলে তেলের দাম বর্তমানের চেয়ে কমপক্ষে ১০ টাকা কমে ভোক্তাদের পাওয়ার কথা। এই যুক্তিতে তারা এই দাবি তুলেছে। কিন্তু তা যে ঘটবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? শুল্ক রেয়াতের সুবিধাটা ভোক্তাদের কাছে পেঁৗছাবে না, তার সর্বাংশই মিল মালিকদের স্ফীত মুনাফাকে আরো স্ফীত করবে মাত্র। কারণ, বাজার নিয়ন্ত্রণ করে জনগণ ও সাধারণ ভোক্তগণ নন, তাদের পক্ষে সরকার কিংবা ভোক্তাদের সমবায় সংস্থা নয়,_ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে টাকাওয়ালা আমদানিকারক ও তেল শোধনাগারের মালিকরা। শুল্ক রেয়াতের সুবিধা তাই তাদের পকেটেই যাবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে বাজারের ওপর জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাটা জনস্বার্থে একটি ফরজ কর্তব্য। এই অত্যাবশ্যক কাজটিকে পাশ কাটিয়ে যত হুমকি-ধামকি বা তোয়াজ-তদবিরই করা হোক না কেন, বাজার হয়ে থাকবে টাকা ও টাকাওয়ালাদের নিয়ন্ত্রিত ও তাদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট লুটপাটের ক্ষেত্র। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার ঊধর্্বশ্বাস-দৌড়ে গরিব-মধ্যবিত্ত জনগণের পকেট খালি হতে থাকবে এবং দিন দিন তাদের দুর্গতির মাত্রা বাড়তেই থাকবে। এটা চলতে দেয়া যায় না। তাই প্রয়োজন বাজার-ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন র্যাডিক্যাল ভাবনা ও পদক্ষেপ।
=========================

দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

No comments

Powered by Blogger.