বইমেলার অন্যপিঠ by মুহম্মদ জাফর ইকবাল

দেখতে দেখতে আমরা বইমেলার একেবারে শেষে পৌঁছে গেছি। মেলাটি যখন শেষ হয়ে আসে প্রতিবারই আমার একটু মন খারাপ হয়ে যায়, এবারও হচ্ছে। আমি সিলেটে থাকি, ছুটিছাঁটায় ঢাকা যেতে পারি, তার ভেতর থেকে সময় বের করে বইমেলায় যেতে হয়। সব সময়ই সময় নিয়ে একটা টানাটানি থাকে। তাই কোনোবারই তৃপ্তি করে মেলায় ঘোরাঘুরি করতে পারি না, শখের বইগুলো কিনতে পারি না। আমি জানি, মেলার এই কয়েক সপ্তাহই শুধু দেশের সবগুলো বই আমাদের নাগালের ভেতর থাকবে। মেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় দুই-চারজনের কিছু বই ছাড়া সব বই-ই এক বছরের জন্য অদৃশ্য হয়ে যাবে। চেষ্টা করলেও সেগুলো আমরা খুঁজে পাব না। প্রতিবারই ভাবি সামনের বার চুটিয়ে বইমেলা উপভোগ করব, সেই সামনের বার আর আসে না।
তারপরও বইমেলা নিয়ে নানা রকম স্মৃতি আছে। নানা রকম অভিজ্ঞতা আছে। সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা পাঠকদের নিয়ে, আমার লেখালেখি প্রায় সবই বাচ্চাদের নিয়ে। তারা মানুষ হিসেবে আমাদের ছোট হলেও অত্যন্ত কঠিন পাঠক, ফাঁকি দেওয়ার জো নেই। প্রতি মুহূর্তে তাদের নানা অভিযোগ-অনুযোগ শুনতে হয় এবং উত্তর দিতে হয়। বইমেলাটি নতুন লেখকদের জন্যও একটি উত্তেজনাপূর্ণ জায়গা। অনেকবার এমন হয়েছে, একটা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে গিয়ে নতুন নতুন লেখকদের আধ ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে ফেলেছি। খারাপ অভিজ্ঞতা যে হয় না তাও নয়, গত বছর মেলায় আমার পাশে বসে থাকা চালবাজ ধরনের একজন বলে ফেলল, ‘আরে! এই দেশটা তো আসলে পাকিস্তান!’ ব্যস আর যায় কোথায়, আশপাশে যারা ছিল তারা গরম হয়ে উঠে একেবারে আক্ষরিক অর্থে সেই চালবাজ ছেলেটিকে ঘাড় ধরে বের করে দিল। এ বছর বটতলায় বসে আছি, সামনে নানা বয়সী ছেলেমেয়ের জটলা, পাশে আমার স্ত্রী বসে আছে, হঠাত্ করে সে চিত্কার করে উঠল, ‘ধরো ওই সাদা শার্টকে!’ সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে সাদা শার্টকে ধরে ফেলল, কী তার অপরাধ? সে ভিড়ের মধ্যে একটা মেয়ের ঘাড়ে চুমু খাবার চেষ্টা করছে! মানুষটি পাবলিকের কিল খেয়ে ভর্তা হয়ে যাওয়ার আগেই তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হলো।
তবে বইমেলার সবচেয়ে মধুর গল্পটি আমি শুনেছি আমাদের পরিবারের বাচ্চা কয়েকটা মেয়ের কাছে। তাদের বাবা-চাচা-মামারা সবাই লেখক, তাই তারা মেলায় ঘোরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করে। ছোট ছোট তিনজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাত্ তারা দেখতে পেল, একটা ছোট বাচ্চা একটা বই কেনার বায়না ধরেছে। বাবা-মা নেহাতই নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ, বইটা উল্টিয়ে ভেতরে দাম দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাচ্চাটার হাত ধরে বের হয়ে এলেন। ছোট বাচ্চাটি ঠোঁট উল্টিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
আমাদের ছোট ছোট তিনটি মেয়ে তখন তখনই ঠিক করে ফেলল বাচ্চাটিকে এই বইটি কিনে দিতে হবে, কিন্তু সেটি এমনভাবে করতে হবে যেন বাবা-মা কোনোভাবেই অপ্রস্তুত না হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়ে গেল। একজন ছুটে এল আমার কাছে বই কেনার টাকা নিতে, অন্যজন ছোট বাচ্চা আর তার বাবা-মাকে চোখে চোখে রাখল, অন্যজন রইল মাঝখানে। একজন দ্রুত বইটি কিনে নেয়, তারপর তিনজন মিলে এই পরিবারটির কাছে হাজির হলো, শুরু হলো একটি নাটক।
যে বইটি কিনে এনেছে সে বইটি অন্য দুজনকে দেখিয়ে বলল, ‘এই দ্যাখ, আমি এটা কিনে এনেছি!’
একজন তখন চোখ কপালে তুলে বলল, ‘এই বইটা কিনেছিস? এটা তো আমাদের বাসায় আছে।’ অন্যজন বলল, ‘নেই!’ তখন দুজন মিলে ঝগড়া শুরু করে দিল এবং অনেকেই এই বাচ্চা মেয়েগুলোর দিকে তাকাল, তাদের ভেতর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা শিশু এবং তার বাবা-মাও আছেন।
তিনজনের ভেতর যে বড় সে তখন মধ্যস্থতা করার ভঙ্গি করে বলল, ‘ঝগড়া করে কী হবে? আয়, মাকে জিজ্ঞেস করি।’ তখনই মোবাইল ফোন বের করে মাকে ফোন করার অভিনয় করে জানা গেল, আসলেই বইটা বাসায় আছে এবং দ্বিতীয় একটা বই কেনা হয়ে গেছে।
যে বইটা কিনেছে তাকে যথেষ্ট গালমন্দ করা হলো এবং এই বাড়তি বইটি নিয়ে কী করা যায় সেটা নিয়ে তিনজনই উচ্চকণ্ঠে ভাবনাচিন্তা শুরু করে এবং তখন তারা আবিষ্কার করে, ছোট একটা শিশু লোভাতুর দৃষ্টিতে বইটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ে তিনজনের একজন তখন শিশুটির বাবাকে বলল, ‘ভুল করে এই বইটা কিনে ফেলেছি। এখন এটা আমাদের বাড়তি হয়ে গেছে। আপনার ছেলে কি এটা নেবে মনে হয়?’
কথা শেষ হওয়ার আগেই শিশুটি ঝাঁপিয়ে বইটা নিয়ে নেয়, তার মুখে এ-গাল ও-গাল জোড়া হাসি। তাই দেখে বাবা-মায়ের মুখে হাসি এবং সবকিছু দেখে আমাদের তিন মেয়ের মুখেও হাসি।
সেই গল্প যখন মনে পড়ে তখন আমার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।

২.
আমার ধারণা ছিল, বইমেলার পুরো ব্যাপারটি বুঝি এ রকম ছোটখাটো আনন্দ-অভিজ্ঞতা দিয়ে বোঝাই। কিন্তু আমি আবিষ্কার করেছি এটি সত্যি নয়। বইমেলার মধ্যে একটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক অধ্যায় রয়েছে এবং সেই অধ্যায়টি হচ্ছে নতুন কিংবা নামীদামি নন সে রকম লেখকদের নিয়ে।
আমি ব্যাপারটি জানতাম না, মাত্র কিছুদিন আগে জেনেছি। আমার বাসায় একজন টেলিভিশন সাংবাদিক এসেছেন, তাঁর নাম বললে সবাই তাঁকে চিনবে, তাই তার নাম বলছি না। তিনি অত্যন্ত চমত্কার একজন লেখক। খুব সুন্দর সুন্দর কয়েকটা গল্পের বই রয়েছে। মেলার আগে এক লেখকের সঙ্গে অন্য লেখকের দেখা হলে লেখালেখি নিয়ে কথা বলার রেওয়াজ, আমরা তাই আমাদের লেখালেখি নিয়ে কথা বললাম এবং কার বই কোন প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে সেটা নিয়ে আলাপ করলাম। আলাপটা কীভাবে কীভাবে জানি লেখকের রয়্যালটির দিকে ঘুরে গেল এবং হঠাত্ করে আমি জানতে পারলাম এই অত্যন্ত ভালো একজন লেখক যার অনেকগুলো বই প্রকাশ হয়েছে তিনি জীবনে একটি কানাকড়িও রয়্যালটি পাননি! তাঁর প্রকাশক কোনোদিন তাঁকে কোনো রয়্যালটি দেননি, আমাকে বেশ কয়েকবার প্রকাশকের নাম জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হতে হলো। কারণ এই প্রকাশক বাংলাদেশের সবচেয়ে নামীদামি প্রকাশকদের একজন। তারা আমার বইয়েরও প্রকাশক। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রকাশক আমার বই প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাসায় এসে রয়্যালটির চেক তুলে দেন, কখনো তার উনিশ-বিশ হয়নি। আমি লেখকের নামটি বলিনি, প্রকাশকের নামও বলছি না, এ মুহূর্তে কাউকে অপ্রস্তুত করতে চাই না। তবে প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে অপ্রস্তুত করব না তার গ্যারান্টি দিচ্ছি না।
আমি তারপর খোঁজখবর নিতে শুরু করেছি এবং আবিষ্কার করেছি বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় দু-চারজন লেখক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু-চারজন ব্যক্তিত্ব ছড়া প্রকাশকেরা আর কোনো লেখককে কোনো রয়্যালটি দেন না। ব্যাপারটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল এবং আমি খোঁজখবর করে নিশ্চিত হয়েছি।
বাংলা একাডেমী বইমেলায় ঠিক কত টাকার বই বিক্রি হয় তা সঠিক জানা নেই, সংখ্যাটি ২০ কোটির কাছাকাছি। জনপ্রিয় ধারার লেখকদের বই সব মিলিয়ে হয়তো কয়েক কোটি। বাংলা একাডেমীর খুব প্রয়োজনীয় কিছু বই রয়েছে, সেগুলো কত বিক্রি হয় আমার জানা নেই, যদি কয়েক কোটি ধরে নিই তাহলে অন্তত ১০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয় জনপ্রিয় নন সে রকম লেখকদের। তাদের প্রাপ্য প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার রয়্যালটি, বাংলাদেশের কয়েক শ লেখক যদি তাঁদের সেই রয়্যালটি পেতেন তাহলে সবাই অনেকগুলো করে টাকা পেতেন। এই লেখকেরা কেউ কখনো সেই টাকার মুখ দেখেননি।
শুধু যে তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য টাকার মুখ দেখেননি তা নয়, লেখক হিসেবে তাঁদের বই ছাপা হওয়ার পর বইমেলা চলাকালীন প্রকাশকেরা লেখকদের হাতে তাঁদের প্রাপ্য বইগুলোও তুলে দেন না। তার পেছনে একটা কারণও আছে, একজন লেখকের বই ছাপা হওয়ার পর তাঁর বন্ধু-বান্ধবেরা সবার আগে সেই বইটি কেনেন। লেখকের হাত থেকে উপহার হিসেবে পেয়ে গেলে তাঁরা আর সেই বইটি কিনবেন না—তাই কোনোভাবেই লেখকের হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে না। কী নিদারুণ ছোটলোকি ব্যবহার।
আমার ভুল হতে পারে, আমি যেহেতু সাংবাদিক নই তাই সব রকম তথ্য আমার কাছে নাও থাকতে পারে। তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, আমি যতটুকু জানি এ দেশের প্রকাশকদের ভেতর শুধু ইউপিএল এবং বর্তমানে ‘প্রথমা’ এই দুটি প্রকাশনী লেখকদের সঙ্গে এক ধরনের চুক্তি করেন, অন্যরা কেউ এ রকম ঝামেলায় যান না। চেষ্টা করেও তাঁদের দিয়ে চুক্তি করানো যায় না। তাঁরা যে লেখকদের বই বের করেন তাতেই লেখকদের কৃতার্থ হয়ে থাকার কথা। অন্তত প্রকাশকেরা তাই ভাবেন।

৩.
আমার মনে হয় এই দেশের প্রকাশকদের পুরো ব্যাপারটি নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে। তাঁরা যখন একজন লেখকের বই বের করেন তখন কাগজের বিলটুকু পরিশোধ করেন, ছাপাখানার বিল পরিশোধ করেন, বাইন্ডারের বিলও পরিশোধ করেন। এই বিলগুলো পরিশোধ না করার মতো দুঃসাহস তাঁরা কখনো দেখান না। তাঁদের ধরে নিতে হবে লেখকদের রয়্যালটি ঠিক সে রকম একটি বিল, সেটাও তাঁদের পরিশোধ করতে হবে। লেখকেরা সৃজনশীল মানুষ, সৃষ্টি করার মাঝে তাঁদের এক ধরনের আনন্দ আছে বলে তাঁরা গল্প, কবিতা, উপন্যাস লেখেন, বই হিসেবে সেটা প্রকাশিত হতে দেখে তাঁদের ভালো লাগে। তাঁরা নেহায়তই ভদ্র মানুষ, তাই কখনোই টাকাপয়সা নিয়ে খিটিমিটি করেন না। কিন্তু প্রকাশকদের অবশ্যই তাঁদের রয়্যালটি পরিশোধ করতে হবে। ছাপাখানার মালিক, কাগজ ব্যবসায়ী বা বুক বাইন্ডার থেকে তাঁরা কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নন।
এই বইমেলা থেকেই সেটা শুরু করা যেতে পারে। মেলা শেষে প্রকাশকেরা যখন টাকার বান্ডিল নিয়ে ঘরে ফিরবেন তখন তাঁরা যেন হিসাব করে দেখেন কোন কোন লেখকের বই বিক্রি করে তাঁরা এই টাকার বান্ডিল ঘরে এনেছেন, একটা কাগজে হিসাব করে তাঁদের রয়্যালটি বের করে লেখকদের কাছে যেন পৌঁছে দেন।
টাকার পরিমাণটুকু গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু চমত্কার একটা উপন্যাস লিখে তা থেকে যে রয়্যালটি এসেছে সেটা দিয়ে একজন লেখক যদি তাঁর পরিবারের সবাইকে নিয়ে একদিনও চাইনিজ খেতে যান, সেই আনন্দটুকু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের সেই সম্মানটুকু দিতেই হবে।

৪.
এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রতিবছরই বইমেলায় প্রচুর বই ছাপা হয় যেগুলো আসলে ছাপা না হলেই ভালো হতো। অনেক সময় সেগুলো কোনো একটি প্রকাশনীর নামে বের হয়, যদিও আসলে লেখক নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সেগুলো বের করেন। গ্রন্থকার হওয়ার এক ধরনের আনন্দ আছে—ছাত্রজীবনে কপোট্রনিক সুখদুঃখ নামে আমার প্রথম বইটি যখন প্রকাশ হয় এবং বাঁধাই হওয়া বইটি হাতে নিয়ে আমি যে উত্তেজনা অনুভব করেছিলাম তার কথা এখনো মনে আছে। কিন্তু যদি কোনো লেখক নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বইটি বের করেন তাহলে তাঁর মাঝে কোনো আনন্দ নেই। যাঁরা লিখতে শুরু করেছেন তাঁদের সবাইকে শুরুতে পত্রপত্রিকায় লিখতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো পত্রপত্রিকার সাহিত্য পাতায় তাঁদের লেখা ছাপা না হচ্ছে তাঁদের কোনোভাবেই একটা বই ছাপিয়ে ফেলা উচিত নয়। নতুন লেখকেরা অভিযোগ করে থাকেন অপরিচিত লেখকের লেখা পত্রিকার সম্পাদকেরা ছাপতে চান না, এটি পুরোপুরি সত্যি নয়। ভালো লেখার গুরুত্ব দেবেন না এ রকম মানুষ খুব বেশি নেই। এই কথাটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রজীবনে প্রমাণ করেছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে তিনি ‘অতসী মামী’ নামে একটা গল্প লিখে সেই সময়কার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত সাহিত্য পত্রিকায় ছাপিয়েছিলেন। সেটি ছিল তাঁর প্রথম লেখা।
আজকাল নতুন লেখকদের আরও একটি ভিন্ন ধরনের সুযোগ হয়েছে, সেটি হচ্ছে ‘ব্লগ’। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্লগে লেখালেখি করলে মুহূর্তেই অসংখ্য পাঠক সেই লেখালেখির মূল্যায়ন করে ফেলবেন। আমার মনে হয় ব্লগের পাঠকেরা যদি প্রতিবছরই এক-দুজন লেখককে নির্বাচন করে দেন এবং পত্রপত্রিকা তাঁদের কথা একটু প্রচার করে তাহলে নতুন লেখকদের একটু প্রাথমিক সাহায্য হয়।
বইমেলা শেষ হওয়ার পর প্রথম আলো প্রতিবছরই ‘সৃজনশীল’, ‘মননশীল’ বইগুলোর একটা মূল্যায়ন করে। চুল পাকা লেখকদের পাশাপাশি তারা তরুণ লেখকদের লেখালেখিরও একটা মূল্যায়ন করে, দুর্ভাগ্যক্রমে যখন সেটি বের হয় তখন বইগুলো আর কেনা যায় না। জনপ্রিয় দু-চারজনের এবং পাইরেটেড ভারতীয় বই ছাড়া আর কোনো বই সারা বছর কিনতে পাওয়া যায় না। কাজেই বইমেলা চলাকালীন যদি এই বইগুলোর নাম আবার নতুন করে সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া যেত তাহলে এই লেখকদের খুব উপকার হতো। প্রতিবছরই আমি ভাবি, বইমেলার শুরুতে আমার প্রিয় বইগুলোর একটা তালিকা দিয়ে আমি একটা কলাম লিখে ফেলব, আমার রুচিতে যদি কারও বিশ্বাস থাকে তাহলে তাঁরা হয়তো সেই বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। এখন পর্যন্ত আমি সেটা পারিনি, সামনের বছর অবশ্যই করব। আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে রাখলাম।
এই দেশের বিবেক হচ্ছেন আমাদের লেখকেরা, তাঁদের আমাদের প্রয়োজনীয় সম্মানটুকু দিতে হবে। প্রতিষ্ঠিত লেখকেরা জীবনের শুরুতে যে ধাক্কাগুলো খেয়েছেন, নতুন প্রজন্মের লেখকদের যেন সে ধাক্কাগুলো খেতে না হয়, সেটি দেখার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের রয়েছে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.