জাল সুপারিশ তৈরি করাই তাদের কাজ by দীন ইসলাম
মন্ত্রী,
সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান বা এমপি’র সুপারিশ। এমপি’র আধা সরকারি পত্র (ডিও
লেটার) নিতেও কোনো ঝক্কি-ঝামেলা নেই। তবে এসব সুপারিশ জাল। টাকা দিলেই
মিলছে। এতে জড়িত কয়েকটি শক্তিশালী চক্র। এসব সুপারিশ নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্য
করছে তারা। এজন্য জাতীয় সংসদ ভবন এবং দেশের প্রশাসনযন্ত্র সচিবালয়ের
আশেপাশে জাল কাগজপত্র বানানোর কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে মানবজমিন। ওই
চক্রের সদস্যরা বলছে, ফোনে চুক্তি করে বিকাশে টাকা পাঠালে ও কাগজটি ই-মেইলে
পাঠালে এক বা দুই দিনের মধ্যেই সুপারিশ করিয়ে দেয়া হবে। অনুসন্ধানে জানা
গেছে, জাতীয় সংসদের আশেপাশে বেশ কয়েকটি জাল ‘সুপারিশ চক্র’ সক্রিয়। এর
মধ্যে একটি চক্রের প্রধান সাইফুল মালেক বুলবুল নামের এক ব্যক্তি। তার সঙ্গে
মুঠোফোনে কথা বললে তিনি মানবজমিনকে বলেন, মন্ত্রী বা সংসদীয় কমিটির
চেয়ারম্যানের সুপারিশ এনে দেয়া সমস্যা নয়। আপনি দুইদিন সময় দিলে সুবিধা
অনুযায়ী তা যোগাড় করে দেয়া যাবে। এমপিদের ডিও লেটার নিতেও কোনো সমস্যা হবে
না। বুলবুল বলেন, কাজ অনুযায়ী সুপারিশের অর্থেও হেরফের হয়। সুপারিশ করিয়ে
দিলে এক রকম এবং ডিও লেটার নিলে আরেক রকম অর্থ খরচ করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা
বলছেন, চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, বিদেশে প্রশিক্ষণ বা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
কাজে এসব সুপারিশ ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় জাল সুপারিশ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে
ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। একাধিক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা
গেছে, জাল সুপারিশ চক্রের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দ্বিতীয় বা তৃতীয়
শ্রেণির কর্মচারীদের টার্গেট করছে। এরপর টার্গেট করা কর্মচারীদের কাছে অর্থ
দাবি করা হয়। চাহিদা মতো অর্থ না দিলে বিভিন্ন নামে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের
কাছে অভিযোগ দেয়া হয়। এসব অভিযোগের চারপাশে থাকছে মন্ত্রী বা এমপিদের
সুপারিশ। যাতে লেখা থাকে, ‘সুপারিশ করছি’, ‘জোর সুপারিশ করছি’ বা ‘সুপারিশ
করা হইলো’- এসব বিভিন্ন বাক্য। সুপারিশ জাল চক্রের এক সদস্য সূত্রে জানা
গেছে, অভিযোগের গায়ে মন্ত্রী বা এমপি’র জাল সুপারিশ করে তা সংশ্লিষ্ট
দপ্তরে দাখিল করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে
এজন্য জাল সুপারিশ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সুপারিশ নিয়ে সুবিধা পেতে আগ্রহী
ব্যক্তি ঝামেলায় পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ চক্রটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ
নাসিম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল
ইসলাম, রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর
রহমান ফিজার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
টিপু মুনশি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী
কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেনসহ কয়েক জন ডাকসাইটের মন্ত্রী-এমপি’র
স্বাক্ষর জাল করতে স্বস্তিবোধ করে। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, ডাকসাইটের
মন্ত্রীদের সুপারিশ থাকলে সহজেই কাজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এদিকে দেশের
প্রশাসনযন্ত্র সচিবালয়ের আশেপাশে রয়েছে মন্ত্রী-এমপিদের জাল সুপারিশ তৈরির
চক্র। এ চক্রের সদস্যদের সঙ্গে সচিবালয়ের কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের
কর্মচারীদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের
কর্মচারীদের জাল সুপারিশ দিয়ে কাজ করার প্রমাণ মিলেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন
সূত্রে জানা গেছে, সুপারিশ দিয়ে চাকরি বা বদলির প্রবণতা রোধ করতে এরই মধ্যে
প্রধানমন্ত্রীর সায় চেয়েছেন তারা। বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
No comments