যেভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র by জোনা ব্ল্যাংক ও শেলি কালবার্স্টন
গেল
বছরের আগস্ট নাগাদ মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১০
লাখ। কিন্তু, তারপর থেকে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা সামরিক বাহিনীর
নিধন অভিযান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সামরিক বাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে বর্ণনা করেছেন। নভেম্বরের
শেষের দিকে মিয়ানমার এসব শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু তাদের
নিজগৃহে নয়। এছাড়া, ফেরত নেয়ার এই প্রক্রিয়া এত ধীরগতির যে, সব রোহিঙ্গাকে
মিয়ানমারে ফেরত নিয়ে যেতে এক প্রজন্ম লেগে যেতে পারে। মিয়ানমারের এই
প্রস্তাব উদযাপন করার মতো কিছু নয়।
কেননা, রোহিঙ্গারা যে সহিংসতার কারণে পালিয়েছে সে সহিংসতার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার নারাজ।
বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এক্ষেত্রে একটি দ্বিমুখী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত। নভেম্বরের ওই সমঝোতাকে রোহিঙ্গা সংকটের একটি সন্ধিক্ষণে পরিণত করতে, নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করতে পারে দেশটি। যাতে করে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া নিরাপদ ও স্বেচ্ছাধীন হয়। পাশাপাশি, যেসব রোহিঙ্গা ফেরত যাবে না, বাংলাদেশ যেন তাদের দেখভাল সুষ্ঠুভাবে করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
মিয়ানমার সরকার দেশটির শতাধিক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের দেয়নি। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের মাধ্যমে সাধারণত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়। বহু (সম্ভবত বেশিরভাগ) রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমার রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই সেখানে বসবাস করে আসছে। তবুও, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য থাকার বিষয়টি টেনে এনে মিয়ানমার সরকার তাদের ‘বাঙালি’ বলে চিহ্নিত করে রেখেছে। তাদের দেখা হয় অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। এমনকি তাদের নাগরিক অধিকার পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেয়া বা যে সহিংসতার কারণে রোহিঙ্গারা পালাতে বাধ্য হয়েছে, তা নিয়ে পরিষ্কার আলোচনা না করে শুধু তাদের ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বিদ্যমান সংকট নিরশনে কোনো স্থায়ী সমাধান বের করা সম্ভব নয়। উপরন্তু, এই সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনীতিবিদদের ভূমিকা বিবেচনায় নিলে, মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় জাগাই স্বাভাবিক। রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের ফেরত নেয়ার পর শিবিরে রাখার সম্ভাবনাই বেশি। পরবর্তীকালে ওইসব শিবির কার্যত বন্দিশালায় পরিণত হতে পারে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের একটি স্থায়ী সমাধান নির্ভর করে তাদের নিজগৃহে ফিরে যাওয়ার ওপর। আইনের আওতায় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে ফেরত গিয়ে তারা যেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো সহিংসতার সম্মুখীন না হয়, এটাও নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে রাখাইনের জাতিগোষ্ঠীগুলোর সম্পর্ক স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতিসংঘ ও মিয়ানমার সরকার উপরোক্ত কয়েকটি ইস্যুর সমাধান করতে একটি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু, মিয়ানমার সরকার নিজেই রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালায় বা চালানোর সুযোগ করে দেয়। সেক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির সমাধান সহজ হবে না। পাশাপাশি, এটিও মনে রাখতে হবে, এমন নির্যাতন প্রত্যক্ষ করার পর অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠানো হবে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির লঙ্ঘন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে মিয়ানমার। এর মাধ্যমে দেশটি বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বাধ্য করার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারকে তাদের স্বেচ্ছা-আরোপিত নির্বাসন থেকে বেরিয়ে আসতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। ২০১২ সালে ২০ বছর পর দেশটিতে প্রথম স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওবামা পুনরায় দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে তিনি দেশটির ওপর থাকা বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেন। হয়তো এ জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র বেশি তড়িঘড়ি করে ফেলেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মিয়ানমারকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়া যে, তাদের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এই তুরুপের তাস আছে বলেই, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সীমিত পর্যায়ে গণতন্ত্র মেনে নিতে সম্মত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মিয়ানমারের প্রবেশে সহায়তাও করতে পারে, আবার তা জটিলও করে তুলতে পারে। এই ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আবার ব্যবহারের হুমকি দেওয়া উচিত।
ওবামা মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ওপর থেকে যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন তা পুনরায় আরোপ করা যেতে পারে। কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্ট একাই আরোপ করতে পারেন। আর কয়েকটিতে কংগ্রেসের সহায়তা প্রয়োজন হবে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরিধি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এতে একই সঙ্গে দেশটিতে বেসামরিক নেতৃত্বের প্রভাবও বৃদ্ধি পাবে। মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক অস্ত্র পাঠায় না। কিন্তু এর কিছু মিত্রদেশ, যেমন- ইসরাইল, জার্মানি, ফ্রান্স ও ভারত পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশকে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে চাপ দিতে পারে। কিছু বিশ্লেষকের ভাষ্য, মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হচ্ছে চীন। কিন্তু মিয়ানমার ইতিমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা চীনের হাতের পুতুল হতে চায় না।
মিয়ানমারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি শুধু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পর অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মতো তাদের সুরক্ষা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিও যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপন করা উচিত। আর এই বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অন্যান্য বড় খেলুড়ে দেশগুলোর উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দেয়া। আর তা না হলে, ১০ লাখ মানুষকে চিরতরে গৃহহীন করে দেয়া হবে। সেটা বাংলাদেশেও হতে পারে, মিয়ানমারেও হতে পারে। আর তা থেকে উৎপত্তি ঘটতে পারে চরমপন্থার ও অস্থিতিশীলতার।
রুয়ান্ডার টুতসিতে ১৯৯৪ সালের গণহত্যার পর বিশ্ব সম্প্রদায় বলেছিল: নেভার এগেইন (আর কখনো নয়)। সাবেক যুগোস্লোভিয়া রিপাবলিকস অব বসনিয়া, সার্বিয়াতে ১৯৯২-৯৫ এর জাতিগত নিধন এবং ২০০৩ থেকে পরবর্তী সাত বছরজুড়ে সুদানের দারফুর অঞ্চলের জাতিগত নিধনের পরেও একই কথা শোনা গেছে। আর বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে দেখার জন্য যে, আদৌ বিশ্ব সম্প্রদায়ের এসব প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য আছে কিনা! কয়েক সপ্তাহ আগে মিয়ানমার সরকার দুনিয়াকে ফের আরেকটি ট্র্যাজেডি এড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।
(যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত থিংকট্যাংক র্যান্ড করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ রাজনীতি বিজ্ঞানী জোনা ব্ল্যাংক ও জ্যেষ্ঠ পলিসি গবেষক শেলি কালবার্স্টনের লেখাটি ফরেইন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি অনুবাদ করেছেন মাহমুদ ফেরদৌস।)
কেননা, রোহিঙ্গারা যে সহিংসতার কারণে পালিয়েছে সে সহিংসতার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার নারাজ।
বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এক্ষেত্রে একটি দ্বিমুখী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত। নভেম্বরের ওই সমঝোতাকে রোহিঙ্গা সংকটের একটি সন্ধিক্ষণে পরিণত করতে, নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করতে পারে দেশটি। যাতে করে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া নিরাপদ ও স্বেচ্ছাধীন হয়। পাশাপাশি, যেসব রোহিঙ্গা ফেরত যাবে না, বাংলাদেশ যেন তাদের দেখভাল সুষ্ঠুভাবে করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
মিয়ানমার সরকার দেশটির শতাধিক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের দেয়নি। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের মাধ্যমে সাধারণত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়। বহু (সম্ভবত বেশিরভাগ) রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমার রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই সেখানে বসবাস করে আসছে। তবুও, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য থাকার বিষয়টি টেনে এনে মিয়ানমার সরকার তাদের ‘বাঙালি’ বলে চিহ্নিত করে রেখেছে। তাদের দেখা হয় অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। এমনকি তাদের নাগরিক অধিকার পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেয়া বা যে সহিংসতার কারণে রোহিঙ্গারা পালাতে বাধ্য হয়েছে, তা নিয়ে পরিষ্কার আলোচনা না করে শুধু তাদের ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বিদ্যমান সংকট নিরশনে কোনো স্থায়ী সমাধান বের করা সম্ভব নয়। উপরন্তু, এই সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনীতিবিদদের ভূমিকা বিবেচনায় নিলে, মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় জাগাই স্বাভাবিক। রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের ফেরত নেয়ার পর শিবিরে রাখার সম্ভাবনাই বেশি। পরবর্তীকালে ওইসব শিবির কার্যত বন্দিশালায় পরিণত হতে পারে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের একটি স্থায়ী সমাধান নির্ভর করে তাদের নিজগৃহে ফিরে যাওয়ার ওপর। আইনের আওতায় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে ফেরত গিয়ে তারা যেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো সহিংসতার সম্মুখীন না হয়, এটাও নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে রাখাইনের জাতিগোষ্ঠীগুলোর সম্পর্ক স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতিসংঘ ও মিয়ানমার সরকার উপরোক্ত কয়েকটি ইস্যুর সমাধান করতে একটি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু, মিয়ানমার সরকার নিজেই রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালায় বা চালানোর সুযোগ করে দেয়। সেক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির সমাধান সহজ হবে না। পাশাপাশি, এটিও মনে রাখতে হবে, এমন নির্যাতন প্রত্যক্ষ করার পর অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠানো হবে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির লঙ্ঘন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে মিয়ানমার। এর মাধ্যমে দেশটি বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বাধ্য করার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারকে তাদের স্বেচ্ছা-আরোপিত নির্বাসন থেকে বেরিয়ে আসতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। ২০১২ সালে ২০ বছর পর দেশটিতে প্রথম স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওবামা পুনরায় দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে তিনি দেশটির ওপর থাকা বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেন। হয়তো এ জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র বেশি তড়িঘড়ি করে ফেলেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মিয়ানমারকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়া যে, তাদের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এই তুরুপের তাস আছে বলেই, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সীমিত পর্যায়ে গণতন্ত্র মেনে নিতে সম্মত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মিয়ানমারের প্রবেশে সহায়তাও করতে পারে, আবার তা জটিলও করে তুলতে পারে। এই ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আবার ব্যবহারের হুমকি দেওয়া উচিত।
ওবামা মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ওপর থেকে যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন তা পুনরায় আরোপ করা যেতে পারে। কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্ট একাই আরোপ করতে পারেন। আর কয়েকটিতে কংগ্রেসের সহায়তা প্রয়োজন হবে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরিধি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এতে একই সঙ্গে দেশটিতে বেসামরিক নেতৃত্বের প্রভাবও বৃদ্ধি পাবে। মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক অস্ত্র পাঠায় না। কিন্তু এর কিছু মিত্রদেশ, যেমন- ইসরাইল, জার্মানি, ফ্রান্স ও ভারত পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশকে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে চাপ দিতে পারে। কিছু বিশ্লেষকের ভাষ্য, মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হচ্ছে চীন। কিন্তু মিয়ানমার ইতিমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা চীনের হাতের পুতুল হতে চায় না।
মিয়ানমারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি শুধু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পর অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মতো তাদের সুরক্ষা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিও যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপন করা উচিত। আর এই বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অন্যান্য বড় খেলুড়ে দেশগুলোর উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দেয়া। আর তা না হলে, ১০ লাখ মানুষকে চিরতরে গৃহহীন করে দেয়া হবে। সেটা বাংলাদেশেও হতে পারে, মিয়ানমারেও হতে পারে। আর তা থেকে উৎপত্তি ঘটতে পারে চরমপন্থার ও অস্থিতিশীলতার।
রুয়ান্ডার টুতসিতে ১৯৯৪ সালের গণহত্যার পর বিশ্ব সম্প্রদায় বলেছিল: নেভার এগেইন (আর কখনো নয়)। সাবেক যুগোস্লোভিয়া রিপাবলিকস অব বসনিয়া, সার্বিয়াতে ১৯৯২-৯৫ এর জাতিগত নিধন এবং ২০০৩ থেকে পরবর্তী সাত বছরজুড়ে সুদানের দারফুর অঞ্চলের জাতিগত নিধনের পরেও একই কথা শোনা গেছে। আর বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে দেখার জন্য যে, আদৌ বিশ্ব সম্প্রদায়ের এসব প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য আছে কিনা! কয়েক সপ্তাহ আগে মিয়ানমার সরকার দুনিয়াকে ফের আরেকটি ট্র্যাজেডি এড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।
(যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত থিংকট্যাংক র্যান্ড করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ রাজনীতি বিজ্ঞানী জোনা ব্ল্যাংক ও জ্যেষ্ঠ পলিসি গবেষক শেলি কালবার্স্টনের লেখাটি ফরেইন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি অনুবাদ করেছেন মাহমুদ ফেরদৌস।)
No comments