সিরিয়ায় সরাসরি হামলার মতলব করছে যুক্তরাষ্ট্র? by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সিরিয়ার
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নতুন করে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি
নিচ্ছেন—এমন একটা অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের এক
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আবার রাসায়নিক হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন
বাশার। বিষয়টি তারা শনাক্ত করেছে। বাশারের দিকে তর্জনী তুলে কড়া হুঁশিয়ারিও
দিয়েছে তারা। বলেছে, রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে আগ বেড়েছো তো মরেছো। কোনো ছাড়
দেওয়া হবে না। এ জন্য ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
তাদের এই হুঁশিয়ারি ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতন আর ইরাকের দুর্গতির কথা মনে করিয়ে দেয়। তৎকালীন সাদ্দাম ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুত রেখেছেন, এই ধোয়া তুলে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী। ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের পর দেখা গেল, সাদ্দামের গণবিধ্বংসী কোনো অস্ত্রই নেই। মাঝখান থেকে ইরাক পরিণত হলো যুদ্ধের ডামাডোলে ভরা এক ধ্বংসের দেশে। যার জের এখনো চলছে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। মার্কিন মাতব্বরির ছড়ি চরকির মতো ঘুরতে ঘুরতে যেদিকেই গেছে, সেখানের জনপদ আর জনমানবের সাড়ে সর্বনাশ করে ছেড়েছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে ইঙ্গো-মার্কিন জোট কীভাবে উৎখাত করেছে, দুনিয়ার মানুষ তা দেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যেসব দেশে শাসকদের বিরুদ্ধে উৎখাত আন্দোলন হয়েছে, সশস্ত্র বিদ্রোহ হয়েছে, প্রতিটিতেই কম-বেশি মার্কিন মদদ রয়েছে। তারা গলা ফুলিয়ে রব তুলেছে—এরা স্বৈরাচার, এদের হটাও। কিন্তু অন্তরালে থাকা সুপ্ত বাসনার কথা তারা প্রকাশ করেনি। যদিও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে এখন তাদের অভিলাষ দিবালোকের মতো ফকফকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পদক্ষেপের মূলে ছিল তেলসম্পদ বাগানো আর অস্ত্র-বাণিজ্য করা। কাতারকে ঘিরে সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সংকটেও যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমা মদদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সারা বিশ্বে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। ইরান এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে মদদ এবং অর্থসহায়তা দেওয়ার অভিযোগে কাতারকে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো একঘরে করেছে। দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন। কাতারের সঙ্গে তারা স্থলভাগ, আকাশপথ ও নৌপথে সব ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করেছে। কাতার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, তাদের সার্বভৌমত্ব আর পররাষ্ট্রনীতিকে খর্ব করতেই এ নিষেধাজ্ঞা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরুতে কাতারকে একঘরে করার বিষয়টিকে সমর্থন করলেও পরে অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন তো বলেই দিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশগুলো যে ১৩টি শর্ত দিয়ে কাতারকে একঘরে করেছে, এর কিছু শর্ত পূরণ করা সতি৵ই কঠিন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাতারের যোগসূত্র থাকার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এটা আসলে তাদের অস্ত্র বিক্রির ধান্দা। সৌদি আরবে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে বলে ঠিক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে এর মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্রের প্রস্তুতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারিকে অনেকেই বাঁকা দৃষ্টিতে দেখছে। সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাশিয়া এর মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলছে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতির কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র আসলে দামেস্কে হামলা চালাতে চাইছে। বাশার এর মধ্যে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যা বলেছ, তা অতিরঞ্জিত। এর আগে ২০১৩ সালে বাশারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জোরালো অভিযোগ ওঠে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সরাসরি হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেয়। তখন রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়া তার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করে। পরে এসব ধ্বংস করে ফেলা হয়।
গত এপ্রিলেও সিরিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র। দাবি করা হয়, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাশারের সেনারা এ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। যে বিমানঘাঁটি থেকে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ প্রকাশ করে, সেখানে তারা ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। সিরিয়ায় এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলা। রাশিয়া মনে করছে, এবারও যুক্তরাষ্ট্র কোনো ছলছুতো করে সিরিয়ায় হামলা চালাতে চাইছে। ক্রেমলিন এর মধ্যে বলেছে, বাশারের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা পাশে আছে তাঁর।
মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়াই একমাত্র দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উৎখাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তেমন সুবিধা আদায় করতে পারেনি। ২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে নতুন করে হামলার চেষ্টা চলালে সংঘাত আরও বাড়বে বই কমবে না। কারণ, এখন রাশিয়া আছে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন বাশারের পাশে। বাশারকে টিকিয়ে রাখতে তারা যে চেষ্টার ত্রুটি করবে না, তা এর আগে তারা বহুবার জানান দিয়েছে।
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
sharifrari@gmail. com
তাদের এই হুঁশিয়ারি ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতন আর ইরাকের দুর্গতির কথা মনে করিয়ে দেয়। তৎকালীন সাদ্দাম ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুত রেখেছেন, এই ধোয়া তুলে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী। ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের পর দেখা গেল, সাদ্দামের গণবিধ্বংসী কোনো অস্ত্রই নেই। মাঝখান থেকে ইরাক পরিণত হলো যুদ্ধের ডামাডোলে ভরা এক ধ্বংসের দেশে। যার জের এখনো চলছে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। মার্কিন মাতব্বরির ছড়ি চরকির মতো ঘুরতে ঘুরতে যেদিকেই গেছে, সেখানের জনপদ আর জনমানবের সাড়ে সর্বনাশ করে ছেড়েছে। লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে ইঙ্গো-মার্কিন জোট কীভাবে উৎখাত করেছে, দুনিয়ার মানুষ তা দেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যেসব দেশে শাসকদের বিরুদ্ধে উৎখাত আন্দোলন হয়েছে, সশস্ত্র বিদ্রোহ হয়েছে, প্রতিটিতেই কম-বেশি মার্কিন মদদ রয়েছে। তারা গলা ফুলিয়ে রব তুলেছে—এরা স্বৈরাচার, এদের হটাও। কিন্তু অন্তরালে থাকা সুপ্ত বাসনার কথা তারা প্রকাশ করেনি। যদিও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে এখন তাদের অভিলাষ দিবালোকের মতো ফকফকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পদক্ষেপের মূলে ছিল তেলসম্পদ বাগানো আর অস্ত্র-বাণিজ্য করা। কাতারকে ঘিরে সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সংকটেও যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমা মদদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সারা বিশ্বে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। ইরান এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে মদদ এবং অর্থসহায়তা দেওয়ার অভিযোগে কাতারকে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো একঘরে করেছে। দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইন। কাতারের সঙ্গে তারা স্থলভাগ, আকাশপথ ও নৌপথে সব ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করেছে। কাতার অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, তাদের সার্বভৌমত্ব আর পররাষ্ট্রনীতিকে খর্ব করতেই এ নিষেধাজ্ঞা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরুতে কাতারকে একঘরে করার বিষয়টিকে সমর্থন করলেও পরে অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন তো বলেই দিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশগুলো যে ১৩টি শর্ত দিয়ে কাতারকে একঘরে করেছে, এর কিছু শর্ত পূরণ করা সতি৵ই কঠিন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাতারের যোগসূত্র থাকার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এটা আসলে তাদের অস্ত্র বিক্রির ধান্দা। সৌদি আরবে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে বলে ঠিক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে এর মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্রের প্রস্তুতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারিকে অনেকেই বাঁকা দৃষ্টিতে দেখছে। সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাশিয়া এর মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলছে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতির কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র আসলে দামেস্কে হামলা চালাতে চাইছে। বাশার এর মধ্যে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যা বলেছ, তা অতিরঞ্জিত। এর আগে ২০১৩ সালে বাশারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জোরালো অভিযোগ ওঠে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সরাসরি হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেয়। তখন রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়া তার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করে। পরে এসব ধ্বংস করে ফেলা হয়।
গত এপ্রিলেও সিরিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র। দাবি করা হয়, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাশারের সেনারা এ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। যে বিমানঘাঁটি থেকে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ প্রকাশ করে, সেখানে তারা ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। সিরিয়ায় এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলা। রাশিয়া মনে করছে, এবারও যুক্তরাষ্ট্র কোনো ছলছুতো করে সিরিয়ায় হামলা চালাতে চাইছে। ক্রেমলিন এর মধ্যে বলেছে, বাশারের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা পাশে আছে তাঁর।
মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়াই একমাত্র দেশ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উৎখাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তেমন সুবিধা আদায় করতে পারেনি। ২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে নতুন করে হামলার চেষ্টা চলালে সংঘাত আরও বাড়বে বই কমবে না। কারণ, এখন রাশিয়া আছে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন বাশারের পাশে। বাশারকে টিকিয়ে রাখতে তারা যে চেষ্টার ত্রুটি করবে না, তা এর আগে তারা বহুবার জানান দিয়েছে।
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
sharifrari@gmail. com
No comments