ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন সীমান্ত পাড়ের জীবনযাত্রা
বাংলাদেশ
ভারত সীমান্তের ব্যাপ্তি ৪০৫৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই ২২১৬.৭
কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ১০টি জেলার ৬৪টি এলাকাজুড়ে এ সীমান্ত।
জেলাগুলি হলো- কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ
দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
পশ্চিমবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এখনও কয়েক কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত।
কাঁটাতারের বেড়া নেই। আর যেখানে তা আছে সে স্থানগুলোতে যে দূরত্বে বেড়া
স্থাপন করা হয়েছে সেটা এখন সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু। কাঁটাতারের বেড়া আর
সীমান্তের রাস্তার মধ্যে দূরত্ব হওয়ার কথা প্রকৃত জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া এখন যেভাবে রয়েছে তার দু’দেশের
মধ্যকার প্রকৃত সীমান্ত নয়। এসব ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ ১৫০ গজ থেকে শুরু করে
কোন কোন স্থানে ২০০০ গজ পর্যন্ত বিস্তৃত। কাগজে কলমে যখন এ কাঁটাতারের বেড়া
আঁকা হয়েছিল তখন মানচিত্র অঙ্কনকারীদের অগ্রাধিকারের তালিকায় একেবারে শেষে
ছিল মানুষের জীবন। কাজেই বলতে গেলে আক্ষরিকভাবেই এসব কাঁটাতারের বেড়া
মানুষের জীবনকে বিভক্ত করে দিয়েছে। এমন অনেকে আছেন যাদের বাড়িঘর পড়েছে
বেড়ার উল্টো দিকে। নো ম্যানস ল্যান্ডে। আর তাদের আবাদি জমি, জীবিকা পড়েছে
অপর দিকে। আর এরা রাষ্ট্রহীন নয়। এরা ভোটার আইডি কার্ড ও ভোটাধিকারপ্রাপ্ত
ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু তারা মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা বর্জিত এক জীবন যাপন
করে। যদিও এগুলো তাদের প্রাপ্য। প্রকৃত সীমান্ত জিরো পয়েন্টের পরিবর্তে যে
স্থানে এখন কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে সেটাকেই সীমান্ত ধরা হয়। বিএসএফ দিন রাত
এখানে টহল দেয়। কাঁটাতারের বেড়ার প্রতি কিলোমিটারে ভারতের মূল ভূখণ্ড আর নো
ম্যানস ল্যান্ডের মাঝখানে একটি ফটক রয়েছে। প্রতিদিন দু’তিন বার করে এক
থেকে দু’ঘণ্টার জন্য ফটকগুলো খোলা হয়। সীমানা পার করার জন্য ফটকগুলো প্রতি
দফায় দু’ঘণ্টা করে খোলা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। নিবাসীদের কয়েক
বছরের অভিযোগ এক ঘণ্টার বেশি তা খোলা রাখা হয় না। এই এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে
মানুষকে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে ফটক পার হতে হয়। কাউকে জীবিকার তাগিদে যেতে
হয় ভারতের ভূখণ্ডে। কারো প্রয়োজন হয় বাজার, স্কুল কলেজে যাওয়ার জন্য সীমানা
পার হওয়া। এখানকার নিবাসীদের সবসময় ভোটার কার্ড সঙ্গে রাখতে হয়। এ ছাড়া
সীমানা পেরুনোর আগে বিএসএফএর লগ বইয়ে স্বাক্ষর করতে হয়। ফটক বন্ধ হয়ে
যাওয়ার পর নো ম্যান্স লা্যন্ডে থাকা ভারতীয়রা কোন জরুরি চিকিৎসা সেবার
প্রয়োজন হলেও নির্ধারিত সময়েরর আগে ভারতে যেতে পারবেন না। এ ছাড়া বিএসএফ নো
ম্যানস ল্যাডে কোন উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয় না। এসব এলাকায় বিয়ের
মতো অনুষ্ঠানগুলোও হয় চুপিসারে। সপ্তাহে যে বাজার বসে সেখানে যাওয়ার জন্য
কৃষিজীবীদের বিএসএফ এর কাছে তাদের কাছে থাকা পণ্যের বিস্তারিত হিসাব দিতে
হয়। এতে সব থেকে বিপাকে পড়েন বাংলাভাষী কৃষকেরা। নন-বেঙ্গলি বিএসএফ
কর্মীদের বোঝাতে বোঝাতে বাজার শেষ হওয়ার সময় হয়ে যায়। যতক্ষণে হিসাব দিয়ে
বাজারে যেতে পারেন তখন পানির দামে সব কিছু বেচে আসা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
দু’দেশের মাঝে আটকে, এসব মানুষ অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এর কারণ হলো
অনেক আগে কে বা কারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এ কাঁটাতারের বেড়া দুভাগে ভাগ করে
দেবে তাদের জীবনকে। কিন্তু তাদের আকুতি কারো কানে পৌঁছায় না। সীমান্ত
রক্ষীদের ভারী বুটের শব্দে মিশে যায় তাদের কণ্ঠ।
No comments