দুঃখ প্রকাশ: নাতনিদের সঙ্গেই সময় কেটেছে শোকগ্রস্ত খালেদা by কাফি কামাল
কোকোর
অকাল মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান জিয়া পরিবার। আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে
বাক্রুদ্ধ মা খালেদা জিয়াও। গতকাল দিন শেষে এক বিবৃতিতে সহানুভূতি ও
সহমর্মিতা জানানোয় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি দেশবাসীকে। দুঃখপ্রকাশ করেছেন
অনেকের সঙ্গে দেখা না হওয়ায়। মঙ্গলবার থেকে গতকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে
ঘিরে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘদিন পুত্র, পুত্রবধু আর নাতনিরা ছিলেন
দূরে। ছেলের মৃত্যুর পর তার মরদেহের সঙ্গে দেশে ফিরেছেন কোকোর স্ত্রী
শর্মিলী রহমান ও দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান। আদরের পিতাকে
হারিয়ে শোক বিহ্বল দুই মেয়ে দাদিকে জড়িয়ে ছিলেন দিনভর। সকালে কোকোর কবর
জিয়ারত করে স্ত্রী শর্মিলী রহমান দুই মেয়েকে নিয়ে অবস্থান করেছেন গুলশান
কার্যালয়েই। বিকালে জাফিয়া ও জাহিয়া পিতার জন্য খোলা শোক বইতে লেখা
বিশিষ্টজনদের অনুভূতিগুলো উল্টে-পাল্টে দেখেন অনেক সময় ধরে। শোকবইয়ের
সামনে রাখা আরাফাত রহমান কোকোর ছবির সামনে ছোট মেয়ে জাহিয়া নীরবে
দাঁড়িয়েছিল বেশকিছুক্ষণ। পিতার আলোকচিত্রে আদরের চুম্বনও এঁকে দেন এ সময়।
বাবা-মায়ের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় সাত বছর জাফিয়া ও জাহিয়া। পিতা হারানোর শোক
নিয়েই দেশে ফেরা। পরিবারের স্বজনরা দিনভর তাদের আগলে রাখেন; সান্ত্বনা দেন।
নানা-নানী, সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী, ডা. জোবাইদা
রহমানের বড় বোন শাহীনা খান বিন্দুসহ পরিবারের সদস্যরা তাদের সময় দেন। রাতে
তারা নিজ নিজ বাসায় ফিরলেও গতকাল সকাল থেকেই দিনভর অবস্থান করেছেন গুলশান
কার্যালয়ে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও মহিলা দলের সাধারণ
সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রথম দিন থেকে কার্যালয়েই অবস্থান করছিলেন।
সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা। খালেদা জিয়ার কক্ষে ঢুকেই
তিনি জাহিয়াকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করেন। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী শাজাহান
সিরাজের স্ত্রী ও মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাবেয়া সিরাজও বিএনপি
চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ
সময় কাটিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ৩রা জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ের অবরুদ্ধ
অবস্থায় আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এই কার্যালয় থেকে ছোট ছেলেকে শেষ বিদায়
দিয়েছিলেন তিনি। ছেলের মৃত্যু সংবাদের পর থেকে দোতলায় নিজের চেম্বারে
খালেদা জিয়া একরকম শয্যাশায়ী ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন ছাড়া কেউই তার কক্ষে যেতে
পারেনি। কোকোর মরদেহ আসার পর ৪০ মিনিটের জন্য খালেদা জিয়া নিচ তলায়
নেমেছিলেন। এরপর আবার তাঁকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হয় দোতলায়। ওদিকে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহউদ্দিন আহমেদ, অগ্রনী ব্যাংকের সাবেক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসের বখতিয়ার, সাবেক কূটনীতিক খালেকুজ্জামান
বীরউত্তম, এঙপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সালাম মোশের্দীর নেতৃত্বে একটি
প্রতিনিধি, কার্টুন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউল্লাহ চৌধুরী, বিকেএমইএ’র
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম আরাফাত রহমান ও সাবেক ছাত্রনেতা
সানাউল হক নীরু কোকোর শোক বইতে স্বাক্ষর করেন। এ সময়ে চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, মোসাদ্দেক আলী ফালু, খালেদা জিয়ার বিশেষ
সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও বিজিএমইএ‘র সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল
হক প্রমুখ।
কোকোর কবরে সবুজ ঘাসের আচ্ছাদন: বনানী সিটি করপোরেশন কবরস্থানে সবুজ ঘাসে ঢেকে দেয়া হয়েছে জিয়া পরিবারের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর। মঙ্গলবার রাতেই কোকোর কবরের মাটি দিয়ে উঁচু করে দেয়া হয়েছে। সকালে তার ওপর লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। চারদিকে ঘিরে দেয়া হয়েছে বাঁশের বেড়ায়। গতকাল সকাল থেকেই জিয়ারত করতে ভিড় লেগেছিল সেখানে। অসংখ্য নেতা-কর্মীকে দেখা গেছে কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া পাঠ করতে। কেউ কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশাপাশি সবুজ ঘাসে ঢাকা কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হাজারো মানুষ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আবদুল বারী বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে হিসেবে কোকোর কবর সংরক্ষণ করা হতে পারে। তবে বিএনপির প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান জানিয়েছেন, শিগগির আরাফাত রহমান কোকোর কবর পাকা করা হবে।
দুঃখ প্রকাশ: ছেলের মৃত্যুর পর কার্যালয়ে সমবেদনা জানাতে যাওয়া রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার এই দুঃখের সময়ে তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে এবং সশরীরে আমার কার্যালয়ে এসে সহানুভূতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি ও ২০ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোটের নেতাকর্মী, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গসহ নর-নারী, শ্রেণী-পেশা ও বয়স নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমার কার্যালয়ে এসে শোক প্রকাশ ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। তারা এ সময়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে না পারায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি আশা করি, পরিস্থিতির বিবেচনায় সকলেই বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমার ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক অকাল মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই মা হিসেবে আমি গভীরভাবে শোকাহত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি কোকোর জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। দেশবাসীকে বলবো, আমি আপনাদের মাঝে আছি। যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো ইনশাআল্লাহ। খালেদা জিয়া বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের পুত্র হিসেবে আমাদের এই সন্তানটি একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও কখনও রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়নি। কেবলমাত্র সে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুধুমাত্র শহীদ জিয়া পরিবারের একজন সদস্য হওয়ার কারণেই তাকে নানামুখী জুলুম-নির্যাতন, হেনস্তা-অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, অসুস্থ হয়ে প্রবাসে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেও সে চরম প্রতিহিংসামূলক বৈরিতা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। ভাগ্যের এমনই নিষ্ঠুর পরিহাস যে, মা হিসেবে আমি প্রায় আট বছর ধরে এই অসুস্থ সন্তানটির মুখ দেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত ছিলাম। অবশেষে আমাকে সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে হলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমি এর বিচারের ভার অর্পণ করলাম। খালেদা জিয়া বলেন, এই গভীর বেদনা ও শোকের মুহূর্তে সকলের কাছ থেকে যে বিপুল সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেয়েছি তা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। কুয়ালালামপুরে কোকোর প্রথম নামাজে জানাজায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছে আমি তার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অন্যান্য দেশেও প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণে গায়েবানা জানাজার আয়োজনের জন্য আমি তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপি, আমাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ২০ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কোকোর বিদেহী রুহের মাগফিরাতের জন্য গায়েবানা জানাজা ও যারা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন আমি তাদেরকেও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার নামাজে দলমত, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ শরিক হয়ে যে অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাতে আমি গভীরভাবে অভিভূত। ধন্যবাদ প্রিয় দেশবাসীকে। জিয়া পরিবারের প্রতি গণমানুষের এই অপরিমেয় ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ আমাকে আরও একবার নতুন করে কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ করলো। বিপুল সংখ্যক মানুষের এই উপস্থিতিতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি সঞ্চয়ে সর্বস্তরের দেশবাসীর এই অংশগ্রহণ আমাকে অনেক সাহায্য করবে।
খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না আজ: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিতে আজ আদালতে যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ছেলের মৃত্যুতে খালেদা জিয়া শোকে মুহ্যমান। বর্তমানে তিনি ভীষণ অসুস্থ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে রয়েছেন। শোক কাটিয়ে উঠতে তার অনেক সময়ের প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, এ পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও নিরাপত্তাসহ অন্যান্য কারণ দেখিয়ে এক মাসের সময় চেয়ে আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করি আদালত মানবিক বিবেচনায় আমাদের সময় দেবেন। আদালতে আবেদনটি আজ উপস্থাপন করা হবে। উল্লেখ্য, গত ১৫ই জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. আবু আহমেদ জমাদার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৯শে জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
কোকোর কবরে সবুজ ঘাসের আচ্ছাদন: বনানী সিটি করপোরেশন কবরস্থানে সবুজ ঘাসে ঢেকে দেয়া হয়েছে জিয়া পরিবারের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর। মঙ্গলবার রাতেই কোকোর কবরের মাটি দিয়ে উঁচু করে দেয়া হয়েছে। সকালে তার ওপর লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। চারদিকে ঘিরে দেয়া হয়েছে বাঁশের বেড়ায়। গতকাল সকাল থেকেই জিয়ারত করতে ভিড় লেগেছিল সেখানে। অসংখ্য নেতা-কর্মীকে দেখা গেছে কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া পাঠ করতে। কেউ কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশাপাশি সবুজ ঘাসে ঢাকা কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হাজারো মানুষ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আবদুল বারী বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে হিসেবে কোকোর কবর সংরক্ষণ করা হতে পারে। তবে বিএনপির প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান জানিয়েছেন, শিগগির আরাফাত রহমান কোকোর কবর পাকা করা হবে।
দুঃখ প্রকাশ: ছেলের মৃত্যুর পর কার্যালয়ে সমবেদনা জানাতে যাওয়া রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের নেতৃবৃন্দের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার এই দুঃখের সময়ে তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা শোকবার্তা পাঠিয়ে এবং সশরীরে আমার কার্যালয়ে এসে সহানুভূতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি ও ২০ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোটের নেতাকর্মী, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গসহ নর-নারী, শ্রেণী-পেশা ও বয়স নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমার কার্যালয়ে এসে শোক প্রকাশ ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন। তারা এ সময়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে না পারায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি আশা করি, পরিস্থিতির বিবেচনায় সকলেই বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমার ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক অকাল মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই মা হিসেবে আমি গভীরভাবে শোকাহত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি কোকোর জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। দেশবাসীকে বলবো, আমি আপনাদের মাঝে আছি। যতদিন বেঁচে আছি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো ইনশাআল্লাহ। খালেদা জিয়া বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের পুত্র হিসেবে আমাদের এই সন্তানটি একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও কখনও রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়নি। কেবলমাত্র সে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুধুমাত্র শহীদ জিয়া পরিবারের একজন সদস্য হওয়ার কারণেই তাকে নানামুখী জুলুম-নির্যাতন, হেনস্তা-অপপ্রচারের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, অসুস্থ হয়ে প্রবাসে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেও সে চরম প্রতিহিংসামূলক বৈরিতা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। ভাগ্যের এমনই নিষ্ঠুর পরিহাস যে, মা হিসেবে আমি প্রায় আট বছর ধরে এই অসুস্থ সন্তানটির মুখ দেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত ছিলাম। অবশেষে আমাকে সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে হলো। সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমি এর বিচারের ভার অর্পণ করলাম। খালেদা জিয়া বলেন, এই গভীর বেদনা ও শোকের মুহূর্তে সকলের কাছ থেকে যে বিপুল সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেয়েছি তা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। কুয়ালালামপুরে কোকোর প্রথম নামাজে জানাজায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছে আমি তার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অন্যান্য দেশেও প্রবাসীদের বিপুল অংশগ্রহণে গায়েবানা জানাজার আয়োজনের জন্য আমি তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপি, আমাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, ২০ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কোকোর বিদেহী রুহের মাগফিরাতের জন্য গায়েবানা জানাজা ও যারা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন আমি তাদেরকেও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার নামাজে দলমত, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ শরিক হয়ে যে অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাতে আমি গভীরভাবে অভিভূত। ধন্যবাদ প্রিয় দেশবাসীকে। জিয়া পরিবারের প্রতি গণমানুষের এই অপরিমেয় ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ আমাকে আরও একবার নতুন করে কৃতজ্ঞতার ঋণে আবদ্ধ করলো। বিপুল সংখ্যক মানুষের এই উপস্থিতিতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি সঞ্চয়ে সর্বস্তরের দেশবাসীর এই অংশগ্রহণ আমাকে অনেক সাহায্য করবে।
খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না আজ: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিতে আজ আদালতে যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ছেলের মৃত্যুতে খালেদা জিয়া শোকে মুহ্যমান। বর্তমানে তিনি ভীষণ অসুস্থ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে রয়েছেন। শোক কাটিয়ে উঠতে তার অনেক সময়ের প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, এ পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও নিরাপত্তাসহ অন্যান্য কারণ দেখিয়ে এক মাসের সময় চেয়ে আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করি আদালত মানবিক বিবেচনায় আমাদের সময় দেবেন। আদালতে আবেদনটি আজ উপস্থাপন করা হবে। উল্লেখ্য, গত ১৫ই জানুয়ারি ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. আবু আহমেদ জমাদার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৯শে জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
No comments