সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী
ওয়ারেন্ট
অব প্রিসিডেন্ট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের তীব্র
সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতরাতে জাতীয় সংসদে তিনি বলেন,
বিচারপতিদের মর্যাদা বাড়িয়ে উচ্চ আদালতের দেয়া রায় নৈতিকতাবিরোধী। কারণ
নিজেদের মর্যাদা নিজেরা বাড়িয়ে দেয়া কোনমতেই সমীচীন নয়। জেলা জজরা যদি
সচিবদের সমমর্যাদার হন, তাহলে হাইকোর্টের বিচারপতিদের মর্যাদা কি হবে? যেতে
যেতে তারাতো প্রেসিডেন্টেরও উপরে চলে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার
বিভাগের এই সিদ্ধান্তের ফলে একটি চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টির উপক্রম
হয়েছে। আমাদের সংবিধানে বলা আছে সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আইন সভা,
বিচার বিভাগ ও প্রশাসন- এই তিনটি হচ্ছে স্তম্ভ। এই তিনটি স্তম্ভের সমন্বয়ে
সব কিছু চলবে। কিন্তু কেউ যদি নিয়ম না মেনে হঠাৎ করে তাদের ইচ্ছামত একটি
ঘোষণা দিয়ে দেয়। তাহলে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আমার অবাক লাগে
সেটা সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে রয়েছে- কার কোথায় কী অবস্থান হবে। এখানে
যার যার নিজের মর্যাদা নিজে দেয়া, নিজের পক্ষে নিজের রায় দেয়া, এটা তো
সমীচীন নয়। এটা তো পার্টিজান রোল হয়ে যায়। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম
উদ্দিনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওয়ারেন্ট অব
প্রিসিডেন্ট অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল
সম্প্রতি নিষ্পত্তি করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বিরোধী দল
হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ হত্যা করছে উল্লেখ করে প্রশ্নোত্তরপর্বে
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী ও
খুনির দল। তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ প্রতিহত করতে জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় এলাকায় পাহারা বসানোর জন্য এমপিদের প্রতি
আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে
শুরু হওয়া অধিবেশনে সরকারি দলের সদস্য তাজুল ইসলাম বিএনপিকে বিরোধী দল বলে
উল্লেখ করায় তাকে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে
হবে অপকর্ম ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি সংসদে বিরোধী দলে বা সরকারি
দলে নেই। তারা এখন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল। তারা সারা দেশে অগ্নিসংযোগ ও
ভাঙচুরসহ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত। যেটা কোন রাজনৈতিক দলের কাজ হতে
পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারাকে কেউ সমর্থন করে না। অথচ
মা-বাবা, এমনকি দুই বছরের শিশুকেও পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। যেটা শুধুমাত্র
বিএনপি-জামায়াতই করতে পারে। এই সকল ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে
সাথে নিয়ে উপজেলায়-শহরে, বিশেষ করে হাইওয়ের পাশে যেখানে বেশি পেট্রলবোমা
হামলা হচ্ছে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তার (খালেদা
জিয়া) ছেলে মারা গেছে। তিনি ছেলে হারানোর ব্যথা উপলব্ধি করছেন। আমি আশা করি
আগামীতে তিনি আর সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে আর কোন মায়ের বুক খালি করবেন
না। তিনি আরো বলেন, তার ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, তাতেই তাকে ইনজেকশন
দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়েছে। এই স্বাভাবিক মৃত্যুতে যদি তাকে ইনজেকশন দিয়ে
ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়, তাহলে যাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, তাদের মায়ের ব্যথা
কী? সেটা কি তিনি বুঝবেন না? তার কি শুভ বুদ্ধির উদয় হবে না? প্রধানমন্ত্রী
বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি তাকে বুঝাতে। নির্বাচনের আগে আমি নিজে ফোন
করে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। কী ব্যবহার করেছিলেন সেটা সবারই জানা। তার
ছেলে যখন মারা গেল, আমি সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা গেটে তালা
মেরে রেখেছিল। আমি কোন কিছুর চিন্তা করিনি। নিজের নিরাপত্তার কথাও চিন্তা
করিনি। তিনি আরো বলেন, আমি যখন সেখানে যাই, বড় গেট বন্ধ দেখি। এরপর গাড়ি
থেকে নেমে ছোট গেট দিয়ে যেতে চাইলাম, পরে জানতে পারলাম ছোট গেটটিও বন্ধ।
অনেক অপমান সহ্য করেছি। আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যবহার আর কেউ কখনো করেছে
কিনা, আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশ
ভালোভাবেই চলছিল। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু বলা নেই, কওয়া নেই, গত ৫ই জানুয়ারি থেকে আন্দোলনের নামে জ্বালাও
পোড়াও, ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। তাদের এই নাশকতায় মানুষ আজ অতিষ্ঠ। একটা দেশকে
কেউ এভাবে ধ্বংস করতে পারে! তারা আবার রাজনীতি করে, রাজনৈতিক দলের নেতা।
জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ করা হবে। বিষয়টা
সময়সাপেক্ষ। আমাদের নদীগুলোতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার বিষয় আছে। সে কারণে
প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যারেজ করা হবে।
No comments