বিশেষ আলোচনা- ফিরে দেখা গঙ্গা চুক্তি by জাহিদুল ইসলাম

কটি নদীর পানির হিস্যা নিয়ে চলল দুই দেশের অর্ধ শতাব্দীর সুদীর্ঘ কূটনৈতিক যুদ্ধ। পাকিস্তান-ভারতের পর বাংলাদেশ-ভারতের এই দীর্ঘ কূটনৈতিক টানাপড়েন চলল ফারাক্কা নামের একটি ব্যারেজকে ঘিরে। বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নেই, যে এই ফারাক্কা ব্যারেজের নাম জানে না, এমন কোনো মানুষ নেই যে, এই ব্যারেজের কারণে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নয়। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশের ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গাচুক্তির মাধ্যমে আপাত সমাপ্তি ঘটে এই দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের।
গঙ্গা চুক্তি নিয়ে অনেক রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে, কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনেক বিশ্লেষণ করেছেন, কিন্তু পানি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য তেমন করে প্রকাশিত হয়নি মিডিয়ায়। পানিচুক্তির ১৪ বছর পর সম্পাদিত চুক্তিটি নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন বুয়েটের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষক এবং কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পানিসম্পদ কৌশল নিয়ে গবেষণারত পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ জাহিদুল ইসলাম
মাদের দেশে যাকে আমরা বলি প্রমত্তা পদ্মা সেটারই ভারতের অংশের নাম গঙ্গা। এই পদ্মা নদীর দুই ধারের জেলেপাড়া নিয়েই লেখা হয়েছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'পদ্মা নদীর মাঝি', পদ্মার মাঝিদের নিয়ে গাঁথা হয়েছে গান 'সর্বনাশা পদ্মা নদী রে তোর কাছে সুধাই...'; নজরুলের 'পদ্মার ঢেউ রে...' গানেও বধূয়ার রূপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে পদ্মার ঢেউয়ের । গঙ্গার পবিত্র জলে স্নান করে শুভ্র হওয়া বাঙালির কাছে তাই গঙ্গা বা পদ্মা শুধু একটি নদীর নাম মাত্রই নয় বরং তা আমাদের শাশ্বত বাঙালী সংস্কৃতির ধারক ও বাহকও বটে। গঙ্গার চুক্তির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করার আগে এই নদীটির কিছু প্রকৌশলগত তথ্য দেওয়া প্রয়োজন। পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণত এক বা একাধিক উপনদী মিলে একটি মূল নদীর ধারা উৎপন্ন হয়। হিমালয় পর্বতমালার গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী নদী আর নন্দা দেবী, ত্রিশূল, ক্যামেট ইত্যাদি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন অলকানন্দা এই দুটি উপনদী মিলেই গঙ্গার মূল ধারাটির সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে জাহ্নবী নদীও এর সঙ্গে মিলিত হয়ে সম্মিলিত প্রবাহ হিমালয়ের গিরিসঙ্কট পার হয়ে ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের গোয়ালন্দে এসে এটি যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং এই সম্মিলিত ধারাটি পরে চাঁদপুরে 'আপার মেঘনা'র (নদী-প্রকৌশলগতভাবে সুরমা আর কুশিয়ারার মিলিত প্রবাহই 'আপার মেঘনা' বা 'উপরের দিকের মেঘনা' নামে পরিচিত) সঙ্গে মিলিত হয়ে 'লোয়ার মেঘনা' ('নিচের দিকের মেঘনা' যা আমাদের কাছে মূল মেঘনা নদী নামে পরিচিত) নামেই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকেই একে পদ্মা নদী নামে ডাকা হয় কিন্তু নদী-প্রকৌশলগতভাবে গোয়ালন্দের আগ পর্যন্ত এর নাম মূলত গঙ্গা আর গোয়ালন্দ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত অংশের নাম পদ্মা।
ফারাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প
ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির নির্মাণ করা কলকাতা বন্দর ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে পুরনো বন্দর ও একসময়কার প্রধান বন্দর ছিল। হুগলী নদীর তীর ঘেঁষে এই কলকাতা বন্দরে ষাটের দশকে নদী থেকে বয়ে আসা বিপুল পলি বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। যার প্রতিকারে ভারত সরকার ১৯৫১ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয়, যাতে গঙ্গা নদীতে ব্যারেজ নির্মাণ করে একটি বিকল্প খাল দিয়ে গঙ্গার পানিকে হুগলী নদীতে প্রবাহিত করে বন্দরের সঞ্চিত পলিকে স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই পরিকল্পনাই ১৯৭৪-৭৫ সালে 'ফারাক্কা ব্যারেজ' নামে বাস্তবায়িত হয়।
গঙ্গা চুক্তির ইতিহাস
১৯৫১ সালে ফারাক্কা ব্যারেজের পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে শুরু হওয়া বিতর্ক ও আলোচনার সাময়িক অবসান হয় দীর্ঘ ৪৫ বছর পর, ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস, যা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বাইরে জনসাধারণের কাছে তেমন করে উত্থাপিত হয়নি কখনোই। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ১৯৯৬ সালে তাঁর ওসঢ়ধপঃ ড়ভ ধেহমবং ডধঃবৎ উরংঢ়ঁঃব ড়হ ইধহমষধফবংয শীর্ষক প্রবন্ধে গঙ্গার পানি চুক্তির এই ৪৫ বছরের ইতিহাসকে ছয়টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন।
প্রথম পর্যায় (১৯৫১-১৯৭৪)
এই পর্যায়ের মূল লক্ষ্য ছিল ব্যারেজ নির্মাণের আগেই গঙ্গার পানির সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা। তাই মূল আলোচনা কেন্দ্রীভূত ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের নিজস্ব দাবি-দাওয়া এবং তার যৌক্তিকতার মধ্যে। স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পর বিপরীতে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ গঙ্গার পানির সম্পূর্ণ প্রবাহের দাবিতে অটুট থাকে এবং দাবি করে যে, ফারাক্কার আরো উজানে অবস্থিত জলাধারসমূহ ভারতের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট, সেই সঙ্গে গঙ্গায় ব্যারেজ নির্মাণ করে এর প্রবাহকে বিকল্প খাল দিয়ে হুগলী নদীতে স্থানান্তর করে কলকাতা বন্দরের পলি সমস্যা সমাধানের কারিগরী দিকের পরিকল্পনারও সমালোচনা করে। অন্যদিকে ভারত দাবি করে যে, বাংলাদেশের আসলে খুব বেশি পরিমাণ পানি প্রবাহের দরকার নেই; কারণ গঙ্গায় প্রবাহিত পানির সিংহভাগই বঙ্গোপসাগরে অপচয় হয়। ভারত এই বলে নিশ্চিত করে যে, ব্যারেজ নির্মাণের আগেই বাংলাদেশ ও ভারতের নিজ নিজ হিস্যা চূড়ান্ত করা হবে। ১৯৭২ সালে আন্তসীমান্ত নদীসমূহের উন্নয়নের দিককে সামনে রেখে সংযুক্ত নদী কমিশন (জেআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৭৪-১৯৭৬)
যেহেতু গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়েই সমস্যার উৎপত্তি তাই এই পর্যায়ে 'গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির' বিষয়টি সামনে আনা হয়। বাংলাদেশ প্রস্তাব করে যে, ভারত বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমাণ পানিকে উজানের জলাধারে সঞ্চিত করে তা শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করতে পারে, অন্যদিকে ভারত একটি সংযোগ খালের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র (বাংলাদেশে যমুনার উজানে মূল নদীটির নাম ব্রহ্মপুত্র) থেকে বিপুল পরিমাণ পানি গঙ্গায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করে। এই পর্যায়ে গঙ্গার পানি বণ্টনের সমীকরণ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ব্যর্থ হয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অন্তরবর্তীকালীন মতৈক্যের ভিত্তিতেই ব্যারেজের কার্যক্রম শুরু হয়। মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয় যে, ভারত বিকল্প খাল দিয়ে ১১,০০০ থেকে ১৬,০০০ কিউসেক (১ কিউসেক = প্রতি সেকেন্ডে ১ ঘনফুট পানির প্রবাহ) পানি গঙ্গা থেকে অপসারণ করবে আর বাকি পানি বাংলাদেশে চলে যাবে। এই পরীক্ষামূলক পানি বণ্টন মাত্র ৪১ দিন স্থায়ী হয়। ১৯৭৬ সালে আগের মতৈক্যের নবায়ন না করে ভারত একতরফাভাবে গঙ্গার পানি অপসারণ করে যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে পদ্মানদী কেন্দ্রিক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর এবং একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৭৭ সালে। বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করে এবং সাধারণ পরিষদ এ ক্ষেত্রে একটি মতৈক্যের বিবৃতি দেয়। বাংলাদেশের এ রকম শক্ত অবস্থান ও কূটনৈতিক চাপের ফলে ভারত ঢাকাতে বাংলাদেশের সঙ্গে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের ব্যাপারে সায় দেয়।
তৃতীয় পর্যায় (১৯৭৭-১৯৮২)
দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের ভিত্তিতে ১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে) গঙ্গার পানি প্রবাহ বণ্টনের বিষয়ে একটি পাঁচ বছরমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে, ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল এই ১০ দিন বাংলাদেশের জন্য ৩৪,৫০০ কিউসেক এবং ফারাক্কার বিকল্প খাল দিয়ে কলকাতা বন্দরের জন্য ২০,৫০০ কিউসেক পানি বরাদ্দ করা হয়। চুক্তিতে ১০ দিনের ভিত্তিতে পানি বণ্টনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করা হয় যাতে বাংলাদেশকে চুক্তিতে উলি্লখিত পানি প্রবাহের নূ্যনতম শতকরা ৮০ ভাগ প্রদানের অঙ্গীকার করা হয়। দুই দেশের সরকারপর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যুক্ত কমিশন গঠন করা হয়, যাঁরা তিন বছরের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তি ও ফারাক্কায় গঙ্গাতে পানি বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় আলোচনা করবেন, যা উভয় দেশ কর্তৃক আবার পর্যালোচনা করা হবে।
ফারাক্কায় গঙ্গার পানি বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল ফারাক্কার উজানে ভারতে বা নেপালে জলাধার নির্মাণ করে বর্ষা মৌসুমে পানি সঞ্চয় করা, অন্যদিকে ভারতের প্রস্তাব ছিল ব্রহ্মপুত্র থেকে সংযোগ খাল কেটে গঙ্গাতে পানি বৃদ্ধি করা। বলা বাহুল্য কোনো দেশই অপর দেশের প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। ফলশ্রুতিতে ভারত তার বড় ভাইগত স্বভাবজাত চরিত্র দিয়ে 'চুক্তির আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত হয়নি' এই অজুহাতে ১৯৭৭ সালের পানি চুক্তি ১৯৮২ সালের নভেম্বরের পরে আর নবায়ন করেনি।
চতুর্থ পর্যায় (১৯৮২-১৯৮৮)
১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালের শুষ্ক মৌসুমের পানি বণ্টনের জন্য ১৯৮২ সালেরই অক্টোবর মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্টান্ডিং '৮২) স্বাক্ষরিত হয়। এই স্মারকে 'নিশ্চিত নূ্যনতম' প্রবাহের সুযোগ না রেখে বরং 'ধারণ ক্ষমতার হিস্যা' (বারডেন শেয়ার)-এর শর্ত রাখা হয়। উভয়পক্ষকেই গঙ্গার পানি বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবের বাস্তবায়নযোগ্যতা (ফিজিবিলিটি) নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ১৯৮৩ সালে উভয়পক্ষ তাদের হালনাগাদ প্রস্তাব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে, কিন্তু আবারও মতপার্থক্যের জন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সুপারিশ অনুমোদিত হয়নি যা দ্বারা জরুরি ভিত্তিতে সর্বোত্তমভাবে ফারাক্কায় শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি বৃদ্ধি করা যায়। ১৯৮২ সালের সমঝোতা স্মারক ১৯৮৪ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায় এবং পরবর্তী বৎসরগুলোর জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক সমঝোতাই আর বাকি থাকে না।
বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যায় একটি আনুষ্ঠানিক সমঝোতার জন্য; কিন্তু ভারতের একঘেয়ে মনোভাবের জন্য উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হয়। কোনো সমঝোতা না থাকায় ১৯৮৫ সালের শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ গঙ্গার পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অব্যাহত চাপে দুই দেশ ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে আরো একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে, যা কি না ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমের জন্য বহাল থাকবে। এই সমঝোতা স্মারকেও আগের মতো নিশ্চিত নূ্যনতম প্রবাহের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি, তবে এই বারে ন্যায্য হিস্যা বণ্টনের জন্য আঞ্চলিক নদীগুলোকেও আলোচনায় নিয়ে আসা হয়। পানি বণ্টন ও গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবগুলো আলোচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষই তাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করে উপস্থাপন করে; কিন্তু যথারীতি একপক্ষ অন্য পক্ষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৫ সালের সমঝোতা স্মারক ১৯৮৮ সালের মে মাসে বন্ধ হয়ে যায়।
পঞ্চম পর্যায় (১৯৮৮-১৯৯৬)
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে কোনো চুক্তি না থাকায় ভারত একতরফাভাবে গঙ্গার পানি বিকল্প পথে হুগলী নদীতে স্থানান্তর করে; যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান স্বাদু পানির প্রবাহ গড়াই নদী শুষ্ক মৌসুমে সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যায়। ভারতের এই একচেটিয়া পানি উত্তোলনের ফলে ১৯৯২ সালের মার্চে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে গঙ্গায় ইতিহাসের সর্বনিম্ন প্রবাহ (১২ হাজার ৫২১ কিউসেক) রেকর্ড হয়; অথচ এই সময়ের গড় প্রবাহ হওয়া উচিত ছিল ৭৫ হাজার কিউসেক। এই পর্যায়ে পানি বণ্টনের জন্য আলোচনা চলতে থাকলেও তাতে কোনো সাফল্য আসেনি। ১৯৮৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে নয়াদিলি্লতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকে গঙ্গাসহ অন্য সব আন্তসীমান্ত নদীর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পানির প্রবাহ বণ্টন সমীকরণ প্রণয়নের জন্য উভয় দেশের পানিসম্পদ সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯০-এর এপ্রিল থেকে ১৯৯২-এের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই তিন বছরের মধ্যে সচিব কমিটি ঢাকা ও দিলি্লতে পরপর ছয়বার আলোচনায় বসে। তাদের মূল গুরুত্বের বিষয়টি ছিল জরুরি ভিত্তিতে গঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টন। এই কমিটিও ব্যর্থ হয়। ১৯৮৮ সালের বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যা দুই দেশের পারস্পরিক পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করে এবং গঙ্গার পানি বণ্টন ও গঙ্গার পানি বৃদ্ধির পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি একটি সংকটপূর্ণ প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ যদিও দুই দিকেই অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে; কিন্তু ভারত পানি বণ্টনের পূর্বশর্ত হিসেবে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির তাদের প্রস্তাবকে (ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি গঙ্গায় স্থানান্তর) দাঁড় করায়। যদিও ১৯৯২ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই এই মর্মে একমত হন যে বাংলাদেশের এই পানি সংকটের একটি আশু সমাধান দরকার; কিন্তু তা সত্ত্বেও পানি বণ্টনের কোনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। ১৯৯৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ষষ্ঠ পর্যায় (১৯৯৬)
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেরই সরকার পরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে পানি বণ্টনের বিষয়টি পুনরালোচনায় আসে এবং শিগগিরই এই বিষয়ে একটি সমাধানের ক্ষেত্রে উভয় দেশ একমত হয়। দীর্ঘ সময়ের উত্তেজনাপূর্ণ কার্যক্রমের পর ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তিটি ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। চুক্তিতে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির প্রসঙ্গেরও একটি শর্ত রাখা হয়। যদিও চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়।
এক নজরে চুক্তির মূল কথা
'৯৬-এর গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তিটিতে মূল যে বিষয়গুলো এসেছে তা অনেকটা এ রকম :
প্রথমত, চুক্তির প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধারাটিতে বলা আছে, এই পানি বণ্টন নির্ভর করবে 'ফারাক্কায় পানির প্রবাহের ওপর'। অর্থাৎ ফারাক্কায় পানির প্রবাহ যদি কমে যায় তাহলে বাংলাদেশ চুক্তি মেনেই পানি কম পাবে।
দ্বিতীয়ত, এই চুক্তি বলবৎ থাকবে শুধু শুষ্ক মৌসুমে, পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত, বছরের বাকি সময়ের জন্য অর্থাৎ আর্দ্র মৌসুমে কোনো চুক্তি থাকবে না।
তৃতীয়ত, কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য যে সংযোগ খাল দিয়ে পানি হুগলী নদীতে স্থানান্তর করা হয় তার ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার কিউসেক। ভারতের প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ যে প্রবাহ ফারাক্কা ব্যারেজ ডাইভার্ট করতে পারে তা এই ৪০ হাজার কিউসেক। এ জন্যই লক্ষ করে দেখা যাবে যে পানির প্রবাহ ৭৫ হাজারের বেশি হলে ভারত ৪০ হাজার রেখে বাদবাকি সব পানি ভাটি তথা বাংলাদেশে ছেড়ে দিচ্ছে।
চতুর্থত, যদি পানির প্রবাহ ৭০ হাজার থকে ৭৫ হাজার কিউসেকের মধ্যে থাকে, তাহলে ভারত বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক দিয়ে বাকিটা বিকল্প খাল দিয়ে হুগলী নদীতে নিয়ে যাচ্ছে। এই ৩৫ হাজার কিউসেক ধরা হচ্ছে গঙ্গা ও এর শাখা নদীদের বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের নূ্যনতম প্রয়োজন হিসেবে। এ ক্ষেত্রে ভারতকে তার প্রয়োজনের কম পরিমাণ পানি নিতে হচ্ছে।
পঞ্চমত, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মার্চ থেকে মের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রবাহ ৭০ হাজারের কম থাকে এবং এই সময় পানির বণ্টন প্রায় ৫০-৫০ অনুপাতে হবে। তবে তা ১০ দিন পর পর পরিবর্তিত হবে, যা একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়:
ধরা যাক মার্চের ১১-২০_এই ১০ দিনের গড় প্রবাহ ৬৭ হাজার তাহলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার এবং ভারত পাবে ৩২ হাজার কিউসেক। এরপর মার্চের ২১-৩১-এর ১০ দিনের প্রবাহ ধরা যাক ৬৬ হাজার কিউসেক, তাহলে এই সময়ে ভারত পাবে ৩৫ হাজার এবং বাদবাকি ৩১ হাজার কিউসেক পাবে বাংলাদেশ। এ ভাবে প্রবাহ ৭০ হাজারের কম হলে প্রতি ১০ দিন পর ভারত ও বাংলাদেশ পালা করে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে এবং বাদবাকি পানি সেই অনুযায়ী বণ্টন করা হবে।
বড় চুক্তির ছোট দুর্বলতা
প্রথমত, '৯৬ এর পানি চুক্তির বণ্টন নির্ধারিত হয়েছে ১৯৪৯-১৯৮৮ এই ৪০ বছরের শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় প্রাপ্ত পানির দশ-ভিত্তিক গড় প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এই ৪০ বছর কিন্তু আসলে দুটো পর্যায়ে বিভক্ত : ফারাক্কা ব্যারাজ পূর্ব (১৯৪৯-১৯৭৩) এবং ফারাক্কা ব্যারাজপরবর্তী (১৯৭৫-১৯৮৮)। খোদ ফারাক্কাতেই এই দুই পর্যায়ে গড় পানি প্রবাহ কিন্তু এক নয়, দেখা গেছে যে ফারাক্কা ব্যারাজের ফলে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারে সেচের জন্য পানি উত্তোলন করা হয়েছে, যা ফারাক্কাতেই পানির পরিমাণ হ্রাস করেছে।
চিত্র-১
ভারতের ফারাক্কায় ব্যারাজের আগে ও পরে গঙ্গার প্রবাহ
চিত্র ১ দেখলে ব্যপারটি আরো পরিষ্কার হবে যা প্রকাশিত গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে তৈরি করা হয়েছে। এখানে ফারাক্কায় পানির প্রবাহকে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এই তিন মাসকে ১০ দিনভিত্তিক পর্যায়ে বিভক্ত করে মোট ১৫টি সময়ে ভাগ করা হয়েছে। কালো রঙের লাইনগুলো ফারাক্কা ব্যারাজপূর্ব (১৯৪৯-১৯৭৩) এবং ধূসর রঙের লাইনগুলো ফারাক্কা ব্যারাজপরবর্তী (১৯৭৫-১৯৮৮) প্রবাহ নির্দেশ করে (ভারতের ফারাক্কায় গঙ্গার প্রবাহ, বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহ নয়)। দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারেিজর ফলে খোদ ফারাক্কাতেই পানির প্রবাহ কমেছে অথচ চুক্তি করার সময় এই দুই পর্যায়ের গড় পানির প্রবাহ নিয়ে সমীকরণ তৈরি করা হয়েছে, যা কোনোমতেই গঙ্গায় পানি প্রবাহের বাস্তব চিত্র হতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশে গঙ্গার পানি মাপা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে।
চিত্র-২
বাংলাদেশে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে গঙ্গার প্রবাহ
ওপরের এই ছবিটি (চিত্র-২) লক্ষ করুন। এখানে বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবাহকে আগের মতোই জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এই তিন মাসকে ১০ দিনভিত্তিক পর্যায়ে বিভক্ত করে মোট ১৫টি সময়ে ভাগ করা হয়েছে। ধূসর লাইনগুলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে ফারাক্কা ব্যারাজপূর্ব প্রবাহকে (১৯৩৪-১৯৭৫) নির্দেশ করে এবং কালো লাইনগুলো '৯৬-এর চুক্তি অনুসারে প্রাপ্তব্য পানির প্রবাহকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশ ফারাক্কা ব্যারাজের আগের প্রাকৃতিকভাবে শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ পানি রপত, চুক্তি করেও তার থেকে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ পানি কম পাচ্ছে। সুতরাং এই চুক্তি শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের বাংলাদেশের সমস্যা নিরসনে কতটা উপযোগী হয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
তৃতীয়ত, ১৯৭৭ সালে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ের জন্য পানি বণ্টন অনুপাত ছিল বাংলাদেশের ৬০ ভাগ ও ভারতের ৪০ ভাগ। অথচ ১৯৯৬ সালের চুক্তিতে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে বাংলাদেশের ৫২ ভাগ আর ভারতের ৪৮ ভাগ। সেই বিচারে '৭৭-এর মতৈক্য থেকে '৯৬-এর চুক্তিতে বাংলাদেশের শতকরা আট ভাগ পানির হিস্যা কমেছে।
চতুর্থত, '৯৬-এর চুক্তির পানি বণ্টন নির্ভর করে ফারাক্কায় পানি প্রবাহের ওপর, কিন্তু ফারাক্কার উজানে যদি পানি উত্তোলন করা হয় তাহলে কী হবে? এর উত্তর চুক্তিতে রয়েছে (অনুচ্ছেদ-২ ধারা-২) : 'ফারাক্কায় পানির প্রবাহ গত ১০ বছরের গড় প্রবাহের সমান নিশ্চিত করার জন্য এর উজানের নদীর পানি ব্যবহাকারীদের সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে।'
এখানে এই 'সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে' বা ইংরেজিতে উল্লেখিত ঊাবৎু বভভড়ৎঃ-এর সঠিক সংজ্ঞায়ন চুক্তিতে উল্লেখ নয়। সুতরাং এখানে ফারাক্কার উজানে উত্তর প্রদেশ, বিহার বা পশ্চিমবাংলায় গঙ্গার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পানি উত্তোলন বন্ধের ক্ষেত্রে ভারতের কোনো পরিষ্কার ভূমিকার কথা বলা নেই। কিন্তু উজানে পানির অধিক ব্যবহারের ফলে ফারাক্কায় প্রবাহ যদি ঐতিহাসিক সূত্রে পাওয়া গড় প্রবাহের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় তাতে চুক্তি ভঙ্গ হবে; কারণ চুক্তিতেই এই গড় প্রবাহ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আলোচনার ও পরবর্তীতে তৃতীয় পক্ষ বা আন্তর্জাতিক আদালতের দারস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
পঞ্চমত, চুক্তির অনুচ্ছেদ ১১ লক্ষ করলে আরো একটি জিনিস বের হয়ে আসে, 'চুক্তি সময়কালীন অনুচ্ছেদ ১০-এ উলি্লখিত পুনর্নিরীক্ষণ দ্বারা প্রয়োজনীয় উপযোজনের (এডজাস্টমেন্ট) ক্ষেত্রে যদি দুই দেশ এক মত না হয় তবে পরবর্তী মতৈক্যে পেঁৗছানোর আগ পর্যন্ত ভারত ফারাক্কার ভাটিতে 'অনুচ্ছেদ ২'-এ উলি্লখিত সমীকরণ অনুসারে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার নূ্যনতম শতকরা ৯০ ভাগ পানি ছেড়ে দেবে।'
তার মানে কোনো কারণে চুক্তি অনুযায়ী পানি না পেলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ বণ্টন সমীকরণ অনুযায়ী প্রাপ্য পানির শতকরা ১০ ভাগ পানি কম পাবে, যার কোনো যুক্তি নেই। ব্যাপারটা কিছুটা এ রকম যে আমার কাছে একজন ১০০ টাকা পায়, আমি তাকে টাকা না দেওয়ায় সে বিচার দিল মোড়লের কাছে। আর এ জন্য আমি তাকে ১০ টাকা কমিয়ে ৯০ টাকা দিলাম। অর্থাৎ আমি দোষও করলাম আবার সুবিধাও পেলাম।
চুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে
একটি দেশ গড়ে ওঠে রাজনৈতিকভাবে, ফলে তার একটি রাজনৈতিক গণ্ডি বা সীমারেখা থাকে। অন্যদিকে নদীর জন্ম হয় ভূপ্রকৃতি আর জলবায়ুকে কেন্দ্র করে, ফলে তার বিস্তৃতিও হয় প্রাকৃতিকভাবে। প্রাকৃতিকভাবে নদীঅববাহিকা বা নদীর গতিপথ ও প্রবাহ রাজনৈতিক সীমারেখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। একটি নদীর গতিপথ যখন রাজনৈতিকভাবে দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে বিভক্ত হয় তখন তাকে আন্তসীমান্ত বা ট্রান্সবাউন্ডারি রিভার বলে। এই ট্রান্সবাউন্ডারি নদীগুলোর প্রবাহকে যখন রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস আসে তখনই ওই দেশগুলোর মধ্যে তা নিয়ে সমস্যা শুরু হয়, যা আস্তে আস্তে দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে মোট ৫৮টি ট্রান্সবাউন্ডারি নদী রয়েছে, যার মধ্যে সাঙ্গু, মাতামুহুরী আর নাফ বাদে বাকি ৫৫টিই এসেছে ভারত থেকে। ভারতের সঙ্গে এই ট্রান্সবাউন্ডারি নদীগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সংকট নিরসনে দীর্ঘ আলোচনার ইতিহাসের কিছুটা আঁচ করা যায় গঙ্গাচুক্তির পর্যায়গুলোতে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে নিয়ে গত ৩৮ বছর ধরে আলোচনা চলছে, মেঘনার উজানে ভারতের বরাক নদীতে নির্মিতব্য টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সাম্প্রতিককালে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে, মনু ও ফেনী নদী নিয়ে সাম্প্রতিককালে বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া সমপ্রতি ব্রহ্মপুত্র নদীতে চীনের বাঁধ নির্মাণ নিয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও গঙ্গাচুক্তি বাংলাদেশের পানিসম্পদের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিশেষ করে এই চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯-এ উল্লেখ আছে 'পক্ষপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীর চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে একমত', সে ক্ষেত্রে সাম্যতা বজায় রেখে ও শুধু এক পক্ষের ক্ষতি সাধন না করে অন্যান্য নদী, যেমন তিস্তা বা বরাক (সুরমা ও কুশিয়ারা) নদীর সমস্যা সমাধান করাটা দুই দেশের জন্যই কিছুটা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পড়ে। তবে এই চুক্তি স্বাক্ষরের ১৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও এর পূর্ণ সুফল বাংলাদেশ নিতে পারেনি, বিশেষত তিস্তা নদীর ক্ষেত্র গত ১৪ বছরে আলোচনা চললেও কোনো গ্রহণযোগ্য চুক্তির পথে বাংলাদেশে আজও যেতে পারেনি। সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে নিকট ভবিষ্যতে এই চুক্তির সদ্ব্যবহার যেন বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে পারে।
==============================
আলোচনা- 'সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক'  আলোচনা- 'উইকিলিকসে বাংলাদেশ, তারপর?  আলোচনা- 'ওয়াংগালাঃ গারোদের জাতীয় উৎসব'  স্মরণ- 'বাঘা যতীনঃ অগ্নিযুগের মহানায়ক'  খবর, কালের কণ্ঠের- আগেই ধ্বংস মহাস্থানগঃ হাইকোর্টের নির্দেশে কাজ বন্ধ  কেয়ার্নের সঙ্গে স্বার্থবিরোধী চুক্তির পেছনেও জ্বালানি উপদেষ্টা  উইকিলিকস জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আত্মসমর্পণ  সবুজ মাঠ পেরিয়ে  আলোচনা- 'আরো অনুদানের টাকা সরিয়েছিলেন ইউনূস'  আলোচনা- 'একটি 'উজ্জ্বল ভাবমূর্তির' এভারেস্ট থেকে পতন  গল্পালোচনা- 'আসি আসি করে আশিতে আসবে!'  রাষ্ট্র ও রাজনীতিঃ সবুজ মাঠ পেরিয়ে  স্মরণ- 'রবীন্দ্রনাথ—সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে'  স্মরণ- 'জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী'  আলোচনা- 'প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্যায়'  আলোচনা- 'কর্মপরিবেশঃ স্বর্গে তৈরি'  গল্পালোচনা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...’  আন্তর্জাতিক- উইকিলিকসঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল  শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই  জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অর্থের মূল উৎস সৌদি আরব  রাজনৈতিক আলোচনা- এমন বন্ধু থাকলে...  শিল্প-অর্থনীতি শেয়ারবাজারের সুন্দরী প্রতিযোগিতা-তত্ত্ব  সাক্ষাৎকার- খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতা হবে  খবর, প্রথম আলোর-  দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখবেন না  মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তাঃ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলে ১০-১৫ বছর লাগবে  অধ্যাপক ইউনূসের অর্থ স্থানান্তর : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা  শিল্প-অর্থনীতি 'সময় এসেছে মাথা তুলে দাঁড়াবার'  প্রকৃতি- 'কিয়োটো প্রটোকল ভেস্তে যাচ্ছে, কানকুনে কী হবে?  আলোচনা- 'মেয়েদের লাঞ্ছনা বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আগ্নেয়গিরির ওপরে পিকনিক'  আলোচনা- 'হিমালয়ের কোলে এক টুকরো দক্ষিণ এশিয়া'  স্মরণ- 'মানুষের জন্য যিনি জেগে থাকতেন'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আবার আসিব ফিরে!'


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যর
লেখকঃ জাহিদুল ইসলাম
বুয়েটের পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষক এবং কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পানিসম্পদ কৌশল নিয়ে গবেষণারত পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ।


এই অলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.