কৃষি আলোচনা- 'পোষের শেষ মাঘের বারো' by ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস
'পোষের শেষ মাঘের বারো, এর মধ্যে শাইল বোরো যত পারো।' খনার বচন। বিশেষ এক বোরো ধানের জন্য এটাই ছিল খনার প্রেসক্রিপশন। তিনি এই সময়ের মধ্যে ধানের জাতটি লাগিয়ে ফেলতে বলেছেন।
আমাদের চাষিরাও এ সময় বোরো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোথাও লাগানো হয়ে যায়। কোথাও আবার বীজতলায় চারা থাকে। ধান গবেষণার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জাতভেদে পৌষের শেষ পর্যন্ত বোরো লাগানো যায়। পৌষের শেষ আর মাঘের আধা; এই সময়ে বেশি শীত পড়ার কথা। তাহলে খনা কেন এ সময়ের ভেতরেই শাইল-বোরো লাগাতে বলেছেন।
আমরা জানি, চারা অবস্থা ধান গাছের জন্য বেশ সংবেদনশীল। ঠাণ্ডায় লাগালে ধানের চারা টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। সচেতন খনার এটা জানা ছিল না নিশ্চয়ই। তো এমন হতে পারে, তাঁর সময়ে এ ধরনের ঠাণ্ডা এতটা পড়ত না। অথবা যে জাতটির কথা বলা হয়েছে, সেটি বোধ হয় ঠাণ্ডা সহনশীল জাত ছিল। তাঁর সময়ে বোরো ধান শুধু হাওর এলাকায় করা হতো বলে মনে হয়। তাই বৈশাখী ঢলে যাতে না পড়ে, সে জন্য এ সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া আরেকটা ব্যাপার তিনি নিশ্চয়ই জানতেন, দেরিতে বোরোর আবাদ করলে ফলনে বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে।
আমরা জানি, চারা অবস্থা ধান গাছের জন্য বেশ সংবেদনশীল। ঠাণ্ডায় লাগালে ধানের চারা টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। সচেতন খনার এটা জানা ছিল না নিশ্চয়ই। তো এমন হতে পারে, তাঁর সময়ে এ ধরনের ঠাণ্ডা এতটা পড়ত না। অথবা যে জাতটির কথা বলা হয়েছে, সেটি বোধ হয় ঠাণ্ডা সহনশীল জাত ছিল। তাঁর সময়ে বোরো ধান শুধু হাওর এলাকায় করা হতো বলে মনে হয়। তাই বৈশাখী ঢলে যাতে না পড়ে, সে জন্য এ সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া আরেকটা ব্যাপার তিনি নিশ্চয়ই জানতেন, দেরিতে বোরোর আবাদ করলে ফলনে বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে।
গেলবার (২০০৯) তো বোরো লাগানোর সময় জাঁকালো শীত আর কুয়াশা পড়েছে। দুই থেকে ১০ দিনের আগপাছ করে কয়েক বছর পর পর তো এমন আবহাওয়াই দেখছি। উত্তরবঙ্গে বীজতলায় ধানের চারা মরে যাওয়ার খবর ছিল অনেক। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় যেকোনো জায়গায় ধানের চারা মরে যেতে পারে। উত্তরবঙ্গে সে সময় রাতের তাপমাত্রা ১০্ন সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। একই সময়ে গাজীপুরে নেমে আসে ১০্ন-এর কাছাকাছি। ময়মনসিংহের পরিস্থিতি একটু ভালো ছিল; ১১্ন সেলসিয়াসের মতো। রাতের তাপমাত্রা যখন ১০্ন-এর কাছাকাছি, তখন দিনের তাপমাত্রা ২৫্ন সেলসিয়াস থাকার কথা। কুয়াশা হলে দিনের তাপমাত্রা আরো কমে যাবে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার অর্থ হলো, গাছের স্বাভাবিক বিপাকপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়া। এ অবস্থা দুই-এক দিন থাকলে কথা নেই। কিন্তু পাঁচ-ছয় দিন ধরে চলতে থাকলে ক্ষতি হয়। কুয়াশার কারণে (দিনের আলো কম থাকে) গাছের খাবার তৈরির ক্ষমতাও একেবারে কমে যায়।
গাছের এ দুরবস্থার জন্য দায়ী তাপমাত্রা নিয়ে জটিল অনেক কথাবার্তা আছে। আমি সে আলোচনায় যাব না। আমি শুধু এ অবস্থা হলে কী করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাই। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য চাই সুস্থ চারা। এ জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত বীজতলা ব্যবস্থাপনাই একমাত্র উপায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষিবিদরা কৃষকদের সাহায্য করতে পারেন। বীজতলায় পানি ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।
আরেকটা প্রচলিত ব্যবস্থা আছে, রাতে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়া। এতে বাইরে থেকে বীজতলার তাপমাত্রা মোটামুটি ১্ন সেলসিয়াস বেড়ে যায়। গাছের ওপর সরাসরি শিশির পড়তে পারে না। তবে বাইরের থেকে ভেতরের তাপমাত্রার খুব একটা পার্থক্য না হওয়ায় চারার উচ্চতা খুব একটা বেশি হয় না। আরেকটা পদ্ধতি সম্ভাবনাময় বলে মনে হয়। ধান গবেষণার শারীরতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত_মাঠপর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁরা একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এ পদ্ধতিতেও পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। তবে রাতে নয়, দিনে। শৈত্যপ্রবাহের সময় প্রতিদিন সকাল ১০-১১টায় স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিয়ে সন্ধ্যায় তুলে নিতে হয়। এ অবস্থায় দিনে মাটিতে শোষিত তাপ রাতেও বীজতলাকে বেশ ওম দিয়ে রাখে। এভাবে খোলা অবস্থায়ও বীজতলার তাপমাত্রা আশপাশের থেকে ২-৩্ন সেলসিয়াসের বেশি থাকে। ফলে ধানের চারার বাড়বাড়ন্ত পছন্দসই হয়। এ তো গেল বীজতলার কথা। মাঠের কথা যদি বলি। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। চারা মারা যেতে পারে। মারা গেলে নতুন করে লাগানোর বিকল্প নেই। চারা কোনোক্রমে টিকে গেলে ঠাণ্ডা কমার সঙ্গে সঙ্গেই চারার অবস্থা ভালো হয়ে যায়। এ জন্য প্রাথমিক অবস্থায় কোনো ধরনের ওষুধ, এমনকি সারও দেওয়ার দরকার নেই। চারা কিছুটা সামর্থ্য ফিরে পেলে পরবর্তী পরিচর্যা নেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো, ঠাণ্ডা সহনশীল জাতের ব্যবহার।
খনার বচন দিয়ে শুরু করেছিলাম। খনার বচন দিয়েই শেষ করছি। 'পোষে কুয়া বৈশাখে ফল। যদ্দিন কুয়া তদ্দিন জল।' অর্থাৎ পৌষে যত দিন কুয়াশা থাকবে বৈশাখে তত দিন বৃষ্টি হবে। বোরোর জন্য একটা সতর্ক সংকেত আছে এখানে।
===========================
মণিপুরি মহা রাসলীলা উৎসবের ইতিকথা by মুজিবুর রহমান প্রকৃতি- সমুদ্রে উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রবাল মড়ক মণিপুরি রাসমেলা উৎসব by আকমল হোসেন নিপু যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'মডার্ন হাম্মুরাবি এবং কাঠের ঘোড়া' by আলমগীর সাত্তার আলোচনা- 'কারাগার থেকে সংশোধনাগার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ' by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু শিল্প-অর্থনীতি 'ক্ষুদ্রঋণের বিড়ম্বনা' by আহমদ রফিক আন্তর্জাতিক- 'চীন ও দুর্লভ ধাতু নিয়ে উদ্বেগ' by পিটার কাস্টার্স আলোচনা- 'সুশাসন-সহায়ক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো' by এ এম এম শওকত আলী খবর ও ফিচার- 'মুক্তি পেল নীলকণ্ঠ পাখি' by শরীফ খান প্রকৃতি- 'বাংলাদেশে জীবিকা হারানো মানুষের ‘অগত্যা বাস্তুচ্যুতি’ আলোচনা- 'প্রসঙ্গ : দুর্নীতি উৎপাটন' by মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ইতিহাস- পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী পরিচিতি
কালের কণ্ঠ সৌজন্যে
লেখকঃ ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর।
এই লেখা'টি পড়া হয়েছে...
মণিপুরি মহা রাসলীলা উৎসবের ইতিকথা by মুজিবুর রহমান প্রকৃতি- সমুদ্রে উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রবাল মড়ক মণিপুরি রাসমেলা উৎসব by আকমল হোসেন নিপু যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'মডার্ন হাম্মুরাবি এবং কাঠের ঘোড়া' by আলমগীর সাত্তার আলোচনা- 'কারাগার থেকে সংশোধনাগার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ' by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু শিল্প-অর্থনীতি 'ক্ষুদ্রঋণের বিড়ম্বনা' by আহমদ রফিক আন্তর্জাতিক- 'চীন ও দুর্লভ ধাতু নিয়ে উদ্বেগ' by পিটার কাস্টার্স আলোচনা- 'সুশাসন-সহায়ক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো' by এ এম এম শওকত আলী খবর ও ফিচার- 'মুক্তি পেল নীলকণ্ঠ পাখি' by শরীফ খান প্রকৃতি- 'বাংলাদেশে জীবিকা হারানো মানুষের ‘অগত্যা বাস্তুচ্যুতি’ আলোচনা- 'প্রসঙ্গ : দুর্নীতি উৎপাটন' by মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ইতিহাস- পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী পরিচিতি
কালের কণ্ঠ সৌজন্যে
লেখকঃ ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর।
এই লেখা'টি পড়া হয়েছে...
No comments