ধ্বংসের পথে ঢাকার দুটি ক্যারাভান সরাই by শফিক রহমান
বড় কাটারা |
অযত্ন-অবহেলা
আর দখল-বেদখলে ধ্বংসের পথে ঢাকার দুটি ক্যারাভান সরাই। স্থানীয়ভাবে
‘কাটরা’ (বড় কাটরা ও ছোট কাটরা) হিসেবে পরিচিত এ স্থাপনা দুটি ঢাকায় মোঘল
যুগের সূচনার চার থেকে পাঁচ দশকের মাথায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেষে
দক্ষিণমুখী করে নির্মাণ করা হয়। আজকে নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা চারদিক থেকে
যেমন স্থাপনা দুটির গলা টিপে ধরেছে তেমনি ভবনের মধ্যেও চেপে বসেছে
দখলদাররা। যদিও বৃটিশ সরকারের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারও নানা সময়ে
স্থাপনা দুটিকে ‘হেরিটেজ ভবন’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এছাড়া সংরক্ষণের অভাবে একদিকে যেমন ভবন দুটির জৌলুস ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে। তেমনি গবেষণার অভাবে ধোয়াশা কাটছে না এর নির্মাণের প্রকৃত কারণ ও নানা সময়ে ব্যবহারের ধরন প্রকৃতি নিয়েও।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, বড় কাটরাটি ১৬৪৪ সালে নির্মিত হয় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সুবেদার শাহ সুজার নির্দেশে। নির্মাণ করেন তারই প্রধান স্থপতি (মীর-ই-ইমারত) মীর মুহম্মদ আবুল কাসেম। বলা হয়, প্রথমে এটি প্যালেস হিসেবে নির্মিত হয় এবং এখানে শাহ সুজার বসবাস করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি এখানে থাকেননি। পরে এটি ক্যারাভান সরাইতে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু এ তথ্যের সঙ্গে একমত নন আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম। গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এ স্থপতি সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, এটির লেআউট, চেহারা কোনটাই বুঝায় না যে এটি প্যালেস হিসেবে নির্মিত হয়েছে।
এদিকে তথ্যানুসন্ধানে বড় কাটরায় ফারসি ভাষায় লিখিত দুটি শিলালিপির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর একটিতে ভবনটির নির্মাণের সময় হিসেবে ১৬৪৪ সালকে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটিতে স্থাপনাটির নির্মাতা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন লেখায় যার বাংলায় অনুবাদ হিসেবে পাওয়া যায়, ‘সুলতান শাহ্ সুজা সব সময় দান-খয়রাতে মশগুল থাকিতেন। তাই খোদার করুণালাভের আশায় আবুল কাসেম তুব্বা হোসায়নি সৌভাগ্যসূচক এই দালানটি নির্মাণ করিলেন। ইহার সঙ্গে ২২টি দোকানঘর যুক্ত হইল যাহাতে এইগুলোর আয়ে ইহার মেরামতকার্য চলিতে পারে এবং ইহাতে মুসাফিরদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা হইতে পারে। এই বিধি কখনো বাতিল করা যাইবে না। বাতিল করিলে অপ্রাধী শেষ বিচার দিনে শাস্তি লাভ করিবে। শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজি কর্তৃক এই ফলকটি লিখিত হইল।’
ফলকে উল্লেখ করা দোকান কাঠামোগুলো বড় কাটরায় এখনও আছে কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়েছে সেলুন, খাবারের দোকান, মুদি দোকান, এম্ব্রয়ডারি কারখানাসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাতে হারিয়ে গেছে মোঘল স্থাপত্য কলার নির্মাণ শৈলী।
বর্তমানে বড় কাটরার উত্তরাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। পূর্ব ও পশ্চিমাংশের সামান্য কিছু এখনও আছে। কিন্তু দক্ষিণাংশের কাঠামো এখনও আছে। দক্ষিণাংশের দৈর্ঘ ৬৭.৯৭ মিটার। এ অংশের মাঝখানে রয়েছে তিন তলা গেট হাউজ।
তাইমুর ইসলাম বলেন, বড় কাটরার নির্মাণ কাঠামোর অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে গেট হাউজটা। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যার বাইরে থেকে দেখলে পুরা তিন তলা উচ্চতাটা দেখা যায়। কিন্তু কাটরার প্রাঙ্গনের ভিতরের অংশে ঢুকলে তখন আর বাইরের মাপের ওই উচ্চতাটা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ভিতরের অংশে ‘স্পেস মেনুপুলেশন’ করা হয়েছে। এটাকে ‘মোঘল স্থাপত্য রীতি’ উল্লেখ করে উদাহরণ হিসেবে বুলন্দ দরওয়াজ, আগ্রাফোর্ট ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করেন তাইমুর ইসলাম।
এছাড়া সংরক্ষণের অভাবে একদিকে যেমন ভবন দুটির জৌলুস ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে। তেমনি গবেষণার অভাবে ধোয়াশা কাটছে না এর নির্মাণের প্রকৃত কারণ ও নানা সময়ে ব্যবহারের ধরন প্রকৃতি নিয়েও।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, বড় কাটরাটি ১৬৪৪ সালে নির্মিত হয় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সুবেদার শাহ সুজার নির্দেশে। নির্মাণ করেন তারই প্রধান স্থপতি (মীর-ই-ইমারত) মীর মুহম্মদ আবুল কাসেম। বলা হয়, প্রথমে এটি প্যালেস হিসেবে নির্মিত হয় এবং এখানে শাহ সুজার বসবাস করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি এখানে থাকেননি। পরে এটি ক্যারাভান সরাইতে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু এ তথ্যের সঙ্গে একমত নন আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) প্রধান নির্বাহী স্থপতি তাইমুর ইসলাম। গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এ স্থপতি সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, এটির লেআউট, চেহারা কোনটাই বুঝায় না যে এটি প্যালেস হিসেবে নির্মিত হয়েছে।
এদিকে তথ্যানুসন্ধানে বড় কাটরায় ফারসি ভাষায় লিখিত দুটি শিলালিপির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর একটিতে ভবনটির নির্মাণের সময় হিসেবে ১৬৪৪ সালকে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটিতে স্থাপনাটির নির্মাতা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন লেখায় যার বাংলায় অনুবাদ হিসেবে পাওয়া যায়, ‘সুলতান শাহ্ সুজা সব সময় দান-খয়রাতে মশগুল থাকিতেন। তাই খোদার করুণালাভের আশায় আবুল কাসেম তুব্বা হোসায়নি সৌভাগ্যসূচক এই দালানটি নির্মাণ করিলেন। ইহার সঙ্গে ২২টি দোকানঘর যুক্ত হইল যাহাতে এইগুলোর আয়ে ইহার মেরামতকার্য চলিতে পারে এবং ইহাতে মুসাফিরদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা হইতে পারে। এই বিধি কখনো বাতিল করা যাইবে না। বাতিল করিলে অপ্রাধী শেষ বিচার দিনে শাস্তি লাভ করিবে। শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজি কর্তৃক এই ফলকটি লিখিত হইল।’
ফলকে উল্লেখ করা দোকান কাঠামোগুলো বড় কাটরায় এখনও আছে কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়েছে সেলুন, খাবারের দোকান, মুদি দোকান, এম্ব্রয়ডারি কারখানাসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাতে হারিয়ে গেছে মোঘল স্থাপত্য কলার নির্মাণ শৈলী।
বর্তমানে বড় কাটরার উত্তরাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। পূর্ব ও পশ্চিমাংশের সামান্য কিছু এখনও আছে। কিন্তু দক্ষিণাংশের কাঠামো এখনও আছে। দক্ষিণাংশের দৈর্ঘ ৬৭.৯৭ মিটার। এ অংশের মাঝখানে রয়েছে তিন তলা গেট হাউজ।
তাইমুর ইসলাম বলেন, বড় কাটরার নির্মাণ কাঠামোর অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে গেট হাউজটা। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যার বাইরে থেকে দেখলে পুরা তিন তলা উচ্চতাটা দেখা যায়। কিন্তু কাটরার প্রাঙ্গনের ভিতরের অংশে ঢুকলে তখন আর বাইরের মাপের ওই উচ্চতাটা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ভিতরের অংশে ‘স্পেস মেনুপুলেশন’ করা হয়েছে। এটাকে ‘মোঘল স্থাপত্য রীতি’ উল্লেখ করে উদাহরণ হিসেবে বুলন্দ দরওয়াজ, আগ্রাফোর্ট ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করেন তাইমুর ইসলাম।
বড় কাটারা, মুঘল আমলের স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ |
গেট
হাউজের নিচ তলায় দুই পাশে চারটি করে মোট ৮টি বিশাল আকারের চেম্বার রয়েছে।
যেগুলোতেও রয়েছে মোঘল স্থাপত্য রীতির ফোর পয়েন্ট আর্চের অনুকরণে পয়েন্টেড
ভল্ট। যেই চেম্বারগুলোর উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট এবং লম্বায় ও চওড়ায় প্রায় ৬০ ও
৫০ ফুট আকারের প্রতিটি। যেগুলোতে বর্তমানে সাদা পলেস্তরা করা হয়েছে। উভয়
দিকেরই শেষ দুটি কক্ষ থেকে উত্তর দিকের কিছু অংশ কেটে নিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে
১টি করে আলাদা কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া বড় কাটরার মূল কাঠামো জুড়ে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলূম বড় কাটারা মাদরাসা নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকায় বড় কাটরার অবয়বটা এখনও আছে। না হলে এটির অবস্থা ছোট কাটরার চেয়েও খারাপ হতো।’
মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাউথ এশিয়ান মনিটরকে জানান, ১৯০৮ সালে খান বাহাদুর হাফেজ মোহাম্মদ হোসাইন রেকর্ড সূত্রে বড় কাটরার মালিক হন। ১৯৩১ সালে ওয়াকফ করেন এবং ওই বছরই মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার নেতৃত্বে ছিলেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা যফর আহমদ উসমানী, আবদুল ওয়াহ্হাব পীরজী হুজুর, শামছুল হক ফরিদপুরী এবং মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর।
বর্তমানে মাদরাসাটিতে প্রাথমিক থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান) শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে সাত শতাধিক এবং শিক্ষকের সংখ্যা ৪৫ জন।
ছোট কাটরা
বড় কাটরা হতে প্রায় ১৮৩ মি. পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরেই শায়েস্তা খানের সময় নির্মিত হয়েছিল ছোট কাটরা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৬৬৩ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৬৬৬ সালের দিকে শেষ হয়। তাইমুর ইসলাম জানান, ক্যারাভান সরাইর আদলে এটি নির্মিত হলেও আসলে কি কাজে ব্যবহার হতো তার কোন প্রামাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে বড় কাটরার সঙ্গে ছোট কাটরার নির্মাণ শৈলীর পার্থক্য টেনে তিনি বলেন, বড় কাটরার প্রত্যেকটি চেম্বারে যেমন পয়েন্টেড ভল্ট পাওয়া যাচ্ছে ছোট কাটরাতে কিন্তু সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। সেখান স্লিংটা ফ্লাট আর কর্ণারগুলো কার্ভ করা। যাকে ‘শায়েস্তা খান স্টাইল’ হিসেবেই উল্লেখ করলেন স্থপতি তাইমুর ইসলাম।
কিন্তু দখল আর বেদখলে ছোট কাটরার অস্তিত্বও আজ খুঁজে পাওয়া কষ্টের। চারদিকেই রয়েছে নানা ধরনের স্থাপনা। এসব ঠেলে এগুলে দেখা যাবে উত্তর ও দক্ষিণ অংশে রয়েছে দুটি প্রবেশপথ। এর মধ্যে দক্ষিণেরটি প্রধান গেট হাউজ। সম্প্রতি ওই তিন তলা গেট হাউজের ভাঙ্গা-নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা গেল দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। তিন তলায় রয়েছে ‘সাপ লুডু’ তৈরির কারখানা। এছাড়া নিচ তলাও রয়েছে ভাঙ্গারির দোকানসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া বড় কাটরার মূল কাঠামো জুড়ে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলূম বড় কাটারা মাদরাসা নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকায় বড় কাটরার অবয়বটা এখনও আছে। না হলে এটির অবস্থা ছোট কাটরার চেয়েও খারাপ হতো।’
মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাউথ এশিয়ান মনিটরকে জানান, ১৯০৮ সালে খান বাহাদুর হাফেজ মোহাম্মদ হোসাইন রেকর্ড সূত্রে বড় কাটরার মালিক হন। ১৯৩১ সালে ওয়াকফ করেন এবং ওই বছরই মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার নেতৃত্বে ছিলেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা যফর আহমদ উসমানী, আবদুল ওয়াহ্হাব পীরজী হুজুর, শামছুল হক ফরিদপুরী এবং মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর।
বর্তমানে মাদরাসাটিতে প্রাথমিক থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান) শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে সাত শতাধিক এবং শিক্ষকের সংখ্যা ৪৫ জন।
ছোট কাটরা
বড় কাটরা হতে প্রায় ১৮৩ মি. পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরেই শায়েস্তা খানের সময় নির্মিত হয়েছিল ছোট কাটরা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৬৬৩ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৬৬৬ সালের দিকে শেষ হয়। তাইমুর ইসলাম জানান, ক্যারাভান সরাইর আদলে এটি নির্মিত হলেও আসলে কি কাজে ব্যবহার হতো তার কোন প্রামাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে বড় কাটরার সঙ্গে ছোট কাটরার নির্মাণ শৈলীর পার্থক্য টেনে তিনি বলেন, বড় কাটরার প্রত্যেকটি চেম্বারে যেমন পয়েন্টেড ভল্ট পাওয়া যাচ্ছে ছোট কাটরাতে কিন্তু সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। সেখান স্লিংটা ফ্লাট আর কর্ণারগুলো কার্ভ করা। যাকে ‘শায়েস্তা খান স্টাইল’ হিসেবেই উল্লেখ করলেন স্থপতি তাইমুর ইসলাম।
কিন্তু দখল আর বেদখলে ছোট কাটরার অস্তিত্বও আজ খুঁজে পাওয়া কষ্টের। চারদিকেই রয়েছে নানা ধরনের স্থাপনা। এসব ঠেলে এগুলে দেখা যাবে উত্তর ও দক্ষিণ অংশে রয়েছে দুটি প্রবেশপথ। এর মধ্যে দক্ষিণেরটি প্রধান গেট হাউজ। সম্প্রতি ওই তিন তলা গেট হাউজের ভাঙ্গা-নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা গেল দ্বিতীয় তলার তিনটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। তিন তলায় রয়েছে ‘সাপ লুডু’ তৈরির কারখানা। এছাড়া নিচ তলাও রয়েছে ভাঙ্গারির দোকানসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ছোট কাটারায় বই বাঁধাইয়ের দোকান |
বিভিন্ন
লেখা থেকে জানা যায়, ১৮১৬ সালে মিশনারি লিওনারদ ছোট কাটরায় খুলেছিলেন
ঢাকার প্রথম ইংরাজি স্কুল। ১৮৫৭ সালে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকার
প্রথম নরমাল স্কুল। পরে এটি ছিল ঢাকার নবাব পরিবারের দখলে এবং তাতে তখন
কয়লা ও চুণার কারখানার কাজ চলত।
হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বপ্রথম ১৯০৮ সালে বড় কাটরাটিকে হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বৃটিশ সরকার। যদিও ১৯১২ সালের দিকে তা আবার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৫৭ সালে আবার হেরিটেজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এবং ২০০৯ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বড় কাটরা ও ছোট কাটরাকে হেরিটেজ হিসেবে তালিকা ভুক্ত করে। কিন্তু সরকারের ওই দুটি সংস্থার কোন সংস্থাই স্থাপনা দুটির সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে না। অথচ, এখনও উদ্যোগ নিলে পর্যায়ক্রমে স্থাপনা দুটির সংরক্ষণ সম্ভব বলে বিশ্বাস তাইমুরের। তিনি বলেন, বড় কাটরা ও ছোট কাটরার সংরক্ষণের উদ্যোগ আরবান ডিজাইনেরই অংশ হিসেবে হওয়া উচিত এবং আর্কিটেক্ট, প্লানারসহ নানা পেশাজীবীর সমন্বয়ে একটি টিম করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ওখানে যারা দখলে আছেন তাদের মধ্যে তিন চার ধরনের মালিকানা দাবি করছেন। কেউ দখলে আছেন ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে, কেউ অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে। আবার কেউ ব্যক্তিগত মালিকানাও দাবি করছেন। এই সব কিছু নিয়েই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি জরিপ করা উচিত।
তবে সেই উদ্যোগটিই নেয়া হচ্ছে না বলে জানালেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা ডিভিশন) রাখী রায়। তিনি বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ হেরিটেজ হিসেবে স্থাপনা দুটিকে তালিভুক্ত করেছে। কিন্তু ছোট কাটরা নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখলে, বড় কাটরাও একটি মাদ্রাসাসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখলে। তাদেরকে উচ্ছেদ করে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সংরক্ষণ বলতে যেটা বুঝায় সেটা এখনও হয়ে ওঠেনি। বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পরিদর্শনে যাচ্ছি। কেউ কোন ভাবে ক্ষয়-ক্ষতি করছে কিনা সেটা দেখছি।’
তারপরওতো দেখা যাচ্ছে যে যার মতো ব্যবহার করছে, তাতে ধ্বংসও হচ্ছে। সেটা আকটাবেন কিভাবে? জানতে চাইলে রাখী রায় বলেন, ধ্বংস যা হওয়ার আগে হয়েছে। এখন আর হচ্ছে না।
হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বপ্রথম ১৯০৮ সালে বড় কাটরাটিকে হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বৃটিশ সরকার। যদিও ১৯১২ সালের দিকে তা আবার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৫৭ সালে আবার হেরিটেজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এবং ২০০৯ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বড় কাটরা ও ছোট কাটরাকে হেরিটেজ হিসেবে তালিকা ভুক্ত করে। কিন্তু সরকারের ওই দুটি সংস্থার কোন সংস্থাই স্থাপনা দুটির সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে না। অথচ, এখনও উদ্যোগ নিলে পর্যায়ক্রমে স্থাপনা দুটির সংরক্ষণ সম্ভব বলে বিশ্বাস তাইমুরের। তিনি বলেন, বড় কাটরা ও ছোট কাটরার সংরক্ষণের উদ্যোগ আরবান ডিজাইনেরই অংশ হিসেবে হওয়া উচিত এবং আর্কিটেক্ট, প্লানারসহ নানা পেশাজীবীর সমন্বয়ে একটি টিম করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ওখানে যারা দখলে আছেন তাদের মধ্যে তিন চার ধরনের মালিকানা দাবি করছেন। কেউ দখলে আছেন ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে, কেউ অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে। আবার কেউ ব্যক্তিগত মালিকানাও দাবি করছেন। এই সব কিছু নিয়েই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি জরিপ করা উচিত।
তবে সেই উদ্যোগটিই নেয়া হচ্ছে না বলে জানালেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা ডিভিশন) রাখী রায়। তিনি বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ হেরিটেজ হিসেবে স্থাপনা দুটিকে তালিভুক্ত করেছে। কিন্তু ছোট কাটরা নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখলে, বড় কাটরাও একটি মাদ্রাসাসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দখলে। তাদেরকে উচ্ছেদ করে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সংরক্ষণ বলতে যেটা বুঝায় সেটা এখনও হয়ে ওঠেনি। বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পরিদর্শনে যাচ্ছি। কেউ কোন ভাবে ক্ষয়-ক্ষতি করছে কিনা সেটা দেখছি।’
তারপরওতো দেখা যাচ্ছে যে যার মতো ব্যবহার করছে, তাতে ধ্বংসও হচ্ছে। সেটা আকটাবেন কিভাবে? জানতে চাইলে রাখী রায় বলেন, ধ্বংস যা হওয়ার আগে হয়েছে। এখন আর হচ্ছে না।
ছোটকাটার মধ্য দিয়ে চলে গেছে একটি পায়ে চলা পথ |
No comments